নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু রংপুরের মিঠাপুকুরের ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে ছড়িয়ে পড়েছে এক ভয়াবহ রোগ। এই রোগটি একদিকে যেমন সামাজিক মূল্যবোধের ধ্বংস, অন্যদিকে আবার নকলের ম্যানেজমেন্ট।

ইত্তেফাকের রিপোর্ট অনুযায়ী, রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম, যিনি শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনি এখন অন্য দায়িত্ব নিয়েছেন—নকল সরবরাহের ব্যবসা ! এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের দাম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর সেই নকল ব্যবসায় তার সহকারী হিসেবে কাজ করছেন বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও শিক্ষকরা। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সরবরাহের কারণে এক নতুন ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে ছাত্ররা নিয়মিত শিক্ষার বদলে পরীক্ষায় পাস করার জন্য টাকা খরচ করে।

এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবেদন করার কারণে সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলামের ওপর ‘হাঁটু ভেঙে পঙ্গু’ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ঘটনা প্রকাশের পর অধ্যক্ষ নিজে স্বীকার করেছেন যে, তিনি এই মন্তব্য করেছেন, কিন্তু তা কেবল ‘নিজের পাশের বাড়ির চেনা পরিচিত হওয়ার কারণে '’—এটা যেন সব কিছু মাফ করে দেয় ! এক শিক্ষকের এমন আচরণকে কখনওই সোজা চোখে দেখা যায় না। এর মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষকদের মধ্যে দ্বৈত চরিত্রের কী ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে। একদিকে তারা শিক্ষা দেওয়ার ‘হালাল’ পেশায় আছেন, অন্যদিকে তারা প্রশ্নপত্র ব্যবসার ‘হারাম’ কাজেও যুক্ত হচ্ছেন।

এটি শুধুই একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, পুরো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট। স্কুল-কলেজে সরকার নির্ধারিত ফি থেকে বেশি ভর্তি ফি নেয়া , অতিরিক্ত পরীক্ষা ফি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রুম ভাড়া দেয়া কোচিং বাণিজ্যের জন্য —এগুলো তো সারা বছরই চলে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয় ! এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, শিক্ষকেরা এখন ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য নয়, ব্যবসা করার জন্যই বেশি আগ্রহী। প্রাইভেট পড়ানো, ফেল করলে টেস্টে পাস করিয়ে দেয়ার জন্য অর্থ নেয়া, সেমিস্টার শেষে পাসের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়া—এই গন্ডির বাইরে এখন প্রশ্নপত্র বিক্রি করার মতো চরম অপ্রত্যাশিত অবস্থা তৈরি হয়েছে।

এ ঘটনার মূল কথা হলো, শিক্ষা এখন আর শুধু মেধার বিষয় নয়। এটি এখন হয়ে উঠেছে টাকার খেলা। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছাত্রদের পড়ানোর পরিবর্তে, শিক্ষকরা তাদের নিজেদের ব্যবসায়ের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। শিক্ষকরা যে ছাত্রদের মধ্যে সঠিক মূল্যবোধ এবং মেধা তৈরি করতে সক্ষম হওয়ার কথা, তারা আজ সেই শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নের ব্যবসা বিক্রি করছে। ক্লাসরুমে পড়ানোর পরিবর্তে, এখন তারা পরীক্ষা ভীতি তৈরি করে তার বিপরীতে টাকার বিনিময়ে উত্তরের ব্যবসা করছেন।

শিক্ষকরা তো এখন কেবল ছাত্রদের দায়িত্বে নেই। তারা নিজে একটি ' ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ' হয়ে উঠেছেন , যেখানে রুম ভাড়া থেকে শুরু করে, নকল সরবরাহ পর্যন্ত সব কিছুর অর্থ তাদের পকেটে ঢুকে যায়। আর আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এটাকে চুপ করে দেখে যাচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সমর্থন এবং শিক্ষকদের এই কর্মকাণ্ডের সমালোচনার অভাব—সব কিছুই শিক্ষার বেহাল দশা সৃষ্টি করেছে।

তবে সবার শেষে কথা থাকে, একটি শিক্ষিত শ্রেণী (শিক্ষক) কখনই এমন দুর্নীতির মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে না। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেওয়া এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন করা। শিক্ষা যদি তার মৌলিক উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে ব্যবসায় পরিণত হয়, তবে তা হবে জাতির জন্য অশনিসংকেত।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৬

যামিনী সুধা বলেছেন:



ইসলামিক স্কলার নকীব সাহেব বলছেন যে, তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র; ঢাকা ইউনিভার্সিটি তো মক্তব হয়ে গেছে বলে মনে হয়।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনি তো আমাদের প্রশ্নফাঁস বলেন কিন্তু দেখেছেন তো কারা প্রশ্ন ফাঁস করছে ! এসব শিক্ষক নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতা ছাড়া অধ্যক্ষ হন নি।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:




শিক্ষক যখন শিক্ষা বিক্রি করেন, তখন সেটা শুধু একজন ছাত্রের ক্ষতি নয়, একটি প্রজন্মের সম্ভাবনা ধ্বংস করে দেয়। আপনি যেভাবে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন—চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ পর্যন্ত সকলেই এক অদৃশ্য সিন্ডিকেটের অংশ—তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলামের ওপর হুমকির বিষয়টিও যথার্থভাবে তুলে ধরেছেন। এই ধরনের প্রতিবেদনই প্রমাণ করে, সৎ এবং সাহসী মানুষ এখনো আছেন, কিন্তু তারা হুমকির মুখে।

সবশেষে, আপনি যেভাবে সমস্যার মূল জায়গা চিহ্নিত করে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন—"শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, শিক্ষকদের শাস্তি, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ"—তা যথার্থ ও বাস্তবসম্মত।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৭

যামিনী সুধা বলেছেন:



আপনি কি শিক্ষার উপর বড় কোন ডিগ্রি করেছেন যে, "শিক্ষা ব্যবস্হা" নিয়ে কথা বলছেন?

শিক্ষক প্রশ্নফাঁস করে "ক্রাইম করছে"; আপনি সেটাকে "হারাম, হালাল"এর ভাষায় লিখছেন? আপনি কি মক্তবের ছাত্র?

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বড়ো ডিগ্রী নেয়া লাগবে কেন ? নাম সর্বস্ব ডিগ্রীর চেয়ে অভিজ্ঞতা অনেক সময় বেশি কাজে লাগে। হালাল এবং হারাম এসব শব্দ হরহামেশা ব্যবহার বাংলাদেশে। আমি লিখে অনেক বড়ো অপরাধ করেছি। এখন সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দেন। আপনি ঢাবির মক্তব হওয়া নিয়ে চিন্তিত কিন্তু ২০১৬ সালের ঘটনা কি ভুলে গেছেন নাকি ?

৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৮

কামাল১৮ বলেছেন: শিক্ষাকে বিজ্ঞান ভিত্তিক করতে হবে।পৃথিবীর এমন কোন দেশ নাই যেখানে বিবর্তনত্ত্ত্ব পড়ানো হয় না।কিন্তু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।সত্য জানতে দিতে চায় না আমাদের মৌলবাদীরা।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই।

৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৭

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে এনেছেন। এমন ঘটনা শুধু মিঠাপুকুরে নয়, বাংলাদেশে এমন অসংখ্য ঘটনার অস্তিত্ব বিদ্যমান, যুগ যুগ ধরে এই অবৈধ কর্মযজ্ঞ দেশে চলে আসছে, শুধু মফস্বলে নয় অনেক বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এহেন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে মাঝে মাঝে শোনা যায়।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস মানে তো বুঝেন ? অত্যন্ত বাজে সময় আসছে ।

৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৩

যামিনী সুধা বলেছেন:



সব ধরণের ডিগ্রির নিজের পরিভাষা আছে।

শিক্ষা ব্যবস্হা নিয়ে কথা বলতে হলে, সেই রকম ব্যাকগ্রান্ড থাকতে হয়।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ব্লগে যে সব অনিয়মের কথা উল্লেখ করেছি সবকিছুই নিজের চোখে দেখেছি। আমি যা দেখেছি যদি জাফর ইকবাল এবং কায়কোবাদ দেখতে পেতেন তবে নিজেদের প্রনীত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নিজেরাই কপাল চাপড়াইতো। :-B

৭| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৮

যামিনী সুধা বলেছেন:


মব ছাত্র ও শিবিরদের পড়ানোর জন্য মিলিটারী দরকার।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: :-*

৮| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: ২০০০ সালের পর থেকেই বাংলাদেশে শিক্ষার মান নেমে গেছে। সেটা আজও অব্যহত আছে।

২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৫৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ২০০৮ সালের পর থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটাইজেশন যত নষ্টের গোড়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.