![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
আমরা কোথায় যাচ্ছি ? না, এই প্রশ্নটিই ভুল। আমরা আদৌ কোথাও যাচ্ছি কিনা, সেই নিশ্চয়তাই আজ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা যে সমাজে বাস করি, সেটিকে আর সমাজবিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না—এটা এক ‘চেতনাহীন রাষ্ট্র-মানসিকতা’র অসুখ, যেখানে মানুষ জন্মায় ভয়ে, বড় হয় আনুগত্যে, বাঁচে নির্লজ্জতায়, আর মরেও যায় ভুল ব্যাখ্যায়।
নিৎসে যদি বাংলাদেশে জন্মাতেন , এই জাতিকে দেখে বলতেন —"তোমাদের ঈশ্বর মৃত, কিন্তু তোমরা এখনো তার শবদেহ পূজা করছো।" এই ঈশ্বর কেবল ধর্মীয় নয়—এই ঈশ্বর হল ন্যায়বোধ, বিবেক, ইতিহাস, স্বাধীনতা, প্রশ্ন করার সাহস। জাতি হিসেবে আমরা আজ সেই ‘নীতি-নির্ভর’তাকে বদলে ফেলেছি ‘নীরব-নির্ভরতায়’। আমাদের প্রাচীন ধ্যান ধারণার মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু সমাজ এখনো শবদেহ বয়ে নিয়ে চলছে বিজয় মিছিলের মতো।
আমরা যে সত্যে বিশ্বাস করি, সেটি আর বাস্তব থেকে জন্ম নেয় না। সেটা রাষ্ট্রের মুখপাত্রদের দ্বারা নির্মিত, উপস্থাপকদের মুখ থেকে উচ্চারিত শব্দ , হুজুরদের কণ্ঠে পবিত্র করা এক কৃত্রিম ডিসকোর্স। ঠিক যেমন ফুকো বলেছিলেন—"জ্ঞান মানে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান নয়, বরং ক্ষমতার ভাষ্য।" বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন ‘দেশপ্রেম’ মানে সরকারের সমর্থক হওয়া, ‘ধর্মভক্তি’ মানে মৌলবাদের সাথে আপস করা, আর ‘অভিজ্ঞান’ মানে শাসকের পা চাটার রুচিশীল কায়দা।
রাষ্ট্র আমাদের যা ভাবতে বলে, আমরা তাই ভাবি। সংবাদ যা বলে, আমরা সেটাকেই সত্য ধরি। একসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল এক প্রেরণা—এখন সে চেতনা বিক্রি করে চলছে হরিলুট । একসময় ধর্ম ছিল আত্মিক মুক্তির পথ—এখন তা রাজনৈতিক অস্ত্র। একসময় শিক্ষা ছিল আত্মার আলোকিত বিস্তার—এখন তা চাকরির সার্টিফিকেট।
এখানেই ফ্রয়েডের থিওরি কাঁপিয়ে তোলে। এই জাতি এক ‘collective neurosis’-এর শিকার। অবদমিত যৌনতা, ধর্মীয় গিল্ট, নারীবিদ্বেষ, আত্মসমালোচনার অনুপস্থিতি—সব মিলিয়ে আমরা এমন এক জাতি গড়ে তুলেছি, যার মানসিক অবস্থাটা হচ্ছে—না বুঝে রাগ, না বুঝেই অনুগত, আর না বুঝেই গর্বিত। মানুষ শিখে গেছে কিভাবে কথা না বলতে হয়, কিভাবে প্রশ্ন না করতে হয়, আর কিভাবে অন্ধ আনুগত্যকে বুদ্ধিবৃত্তির পরাকাষ্ঠা বলে চালাতে হয়।
মার্ক্স বলতেন, শাসক শ্রেণি নিজেদের চিন্তাকেই সাধারণ মানুষের "কমন সেন্স" বানিয়ে তোলে। এখন এই দেশে যা কমন সেন্স—তা হচ্ছে: উন্নয়ন মানে রাস্তা, জাতীয়তাবাদ মানে ভারতবিরোধিতা, ধর্ম মানে নারীকে পেছনে রাখা, স্বাধীনতা মানে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা। আসলে এই জাতিকে ‘শ্রমিক’ নয়, 'চিন্তাহীন শ্রমদাস' বানিয়ে ফেলা হয়েছে—যারা শুধু উৎপাদন করে, ভোগ করে, আর ক্ষমতার গান গায়।
আর মিডিয়া ? তারা আর সংবাদ পরিবেশক নয়—তারা এখন জাতির মনস্তত্ত্ব নির্মাণকারী কনসালট্যান্ট। তারা ভয় দেখায়, ঘৃণা বিক্রি করে, বিশ্বাস নামক ইমোশনকে মাল্টিন্যাশনাল পণ্যে রূপ দেয়। তারা ফুকোর সেই ‘bio-power’ এর আধুনিক রূপ—যেখানে জোর করে নয়, হাসিমুখে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তাহলে গন্তব্য কোথায়?
নিৎসে বলতেন, “যে নিজের ভিতরের নরককে সঙ্গী করতে পারে, সে-ই একদিন তার নিজের আকাশ খুঁজে পায়।”আমরা কি সেই সাহস রাখি ? নিজের চিন্তা করার, নিজের সত্য খোঁজার, নিজের রাষ্ট্র ও প্রাচীন ভাবনা চিন্তাকে প্রশ্ন করার ?
ফুকো বলেছিলেন, “যেখানে ক্ষমতা আছে, সেখানেই প্রতিরোধের সম্ভাবনা। ”আমরা কি সেই প্রতিরোধের ভাষা গড়তে পারি—যেখানে প্রশ্ন করা অপরাধ নয়, পবিত্র দায়িত্ব ?
ফ্রয়েড বলতেন, “আত্মজ্ঞান ছাড়া স্বাধীনতা এক প্রহসন।” আমরা কি সাহস করব নিজেদের চিন্তাজগতে ঢুকে সত্যের মুখোমুখি হতে?
মার্ক্স বলতেন, “দুনিয়ার সব দার্শনিকরা পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করেছেন, এখন সময় এসেছে তা বদলানোর। ”আমরা কি কেবল আর ব্যাখ্যাকারী হতেই থাকব, না কি বদলের দাবিদার হয়ে উঠব ?
আমরা এখনো সময়ের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমাদের চোখে এখনো যদি নৈতিকতা, স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার ছায়া জেগে থাকে—তবে রাষ্ট্র ও সমাজের এই অসুখের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এখনো সম্ভব। যদি না দাঁড়াই, তবে চেতনার কবরেই লেখা থাকবে— "এরা একসময় মানুষ ছিল। এখন তারা পোস্টার, স্লোগান আর হ্যাশট্যাগে বেঁচে থাকে।"
০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:১১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: নাগরিক কম, গোত্রীয় সেন্স বেশি কাজ করছে।
০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:২০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বিগত সতেরো বছরে সমাজে বিভিন্ন ক্লেনে বিভক্ত হয়ে গেছে।
২| ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৮
কামাল১৮ বলেছেন: আপনি পড়ে আছেন সতের বছর নিয়ে।জাতি বিভক্ত হয়েছে বহু বছর আগে যখন সাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তি গঠিত হয়।
এই জাতিকে সঠিক পথে আনতে আরেকটা যুদ্ধ লাগবে।সেই যুদ্ধে মেহনতি শ্রেনী শোষক শ্রেনীর হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিবে।তারা প্রস্তুত হচ্ছে।
০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:৫৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: যুদ্ধে কাজ হবে না। পলিটিশিয়ান লাগবে।
৩| ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০২
কামাল১৮ বলেছেন: “এখন সময় এসেছে তা বদলানোর”এই তা বলতে মার্ক্স বুঝিয়েছেন, পৃথিবীকে বদলানোর।শোষক শ্রীর হাত থেকে ক্ষমতা শোষিতের হাতে নেয়ার।এই জন্য প্রয়োজন শ্রেনীসংগ্রাম গড়ে তেলা।শোষক আর শোষিতের সংগ্রাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮
যামিনী সুধা বলেছেন:
জাতি যাযাবর বেদুইনদের লেভেলে নেমে এসেছে; আমাদের জাতির প্রোফাইল পাকিদের মতোই হয়ে গেছে।