নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসাদের পতনের পর নতুন ভূ-রাজনীতির মুখোমুখি সিরিয়া !

১২ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৪১


সিরিয়ার দীর্ঘকালীন শাসক বাশার আল-আসাদের পতন কেবল একটি স্বৈরাচারী সরকার পরিবর্তনের ঘটনা নয়; বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রব্যবস্থার ভাঙনের প্রতিচ্ছবি। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ছায়ায় শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এক দশকের বেশি সময় ধরে যে মানবিক বিপর্যয় ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্ম দিয়েছিল, তার চূড়ান্ত পরিণতি আজ মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিকে নতুন করে রূপ দিচ্ছে।

২০২৫ সালের রাজনৈতিক বাস্তবতা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, আসাদের পতনের ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং এটি আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যকার ক্ষমতার ভারসাম্য, প্রভাব বলয়, এবং কৌশলগত অবস্থান পুনর্বিন্যাসের এক বিস্তৃত অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

আসাদের পতন ইরানের জন্য একটি বহুমাত্রিক পরাজয়। দশকের পর দশক ধরে সিরিয়া ছিল ইরানের ভূকৌশলগত ছায়া সাম্রাজ্যের (strategic proxy architecture) প্রধান ভিত্তি। সিরিয়া হয়ে তৈরি হওয়া ‘ল্যান্ড করিডোর’—যার মাধ্যমে ইরান থেকে লেবানন পর্যন্ত অস্ত্র ও যোদ্ধা সরবরাহ সম্ভব হতো—সেটি কার্যত ছিন্ন হয়েছে। এর ফলে হিজবুল্লাহর মতো শিয়া মিলিশিয়াদের সক্ষমতা দুর্বল হয়েছে, এবং তথাকথিত ‘Shia Crescent Doctrine’ এক অর্থে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ইরান এখন ইসরায়েল ও সৌদি নেতৃত্বাধীন ব্লকের কাছে তার একক আধিপত্য হারানোর দ্বারপ্রান্তে।

সিরিয়ার ভূখণ্ড ছিল হিজবুল্লাহর অস্তিত্বের জন্য রক্তনালির মতো—যেখানে সরবরাহ, প্রশিক্ষণ এবং রক্ষিত অঞ্চল ছিল নিরবচ্ছিন্ন। আসাদের পতনে এই করিডোর ধসে পড়েছে, যার ফলে হিজবুল্লাহ এখন একেবারে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ লড়ছে। ইসরায়েলের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘targeted leadership elimination’ কৌশল ইতিমধ্যেই সংগঠনটিকে নেতৃত্ব সংকটে ফেলেছে, যা সামগ্রিকভাবে তাদের মনোবল ও সামরিক দাপটকে বিপর্যস্ত করেছে।

তুরস্কের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন—সিরিয়ার সীমান্তে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা—এখন আরও বাস্তব। আসাদের পতনের ফলে তুর্কি বাহিনী এখন উত্তর সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তারে অনেক বেশি স্বাধীন ও কৌশলগত সুবিধাপ্রাপ্ত। কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপ এবং ভবিষ্যত সিরিয়ান পুনর্গঠনে অংশগ্রহণের সুযোগ আঙ্কারাকে মধ্যপ্রাচ্যের কৌশল মানচিত্রে একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

বাশার আল-আসাদ ছিল রাশিয়ার অন্যতম বিশ্বস্ত ক্লায়েন্ট শাসক। তার সরকার পতনের পর রাশিয়ার একমাত্র মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সামরিক ঘাঁটি, ‘তারতুস নৌঘাঁটি’, অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এতে রাশিয়ার ‘Power Projection Doctrine’ কার্যত আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত রাশিয়ার জন্য এটি একটি কৌশলগত বিপর্যয়, যা তার বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতাকে ক্ষয়িষ্ণু করে তুলছে।

সিরিয়ায় ইরান ও হিজবুল্লাহর প্রভাব কমে যাওয়ায় ইসরায়েল কার্যত এক ‘geostrategic windfall’-এর মুখোমুখি হয়েছে। সিরিয়ার আকাশপথে রুশ প্রতিরক্ষা উপস্থিতি দুর্বল হওয়ায় ইসরায়েল তার ‘air superiority’ অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি, গোয়েন্দা ও সাইবার আধিপত্য বৃদ্ধি পেয়ে ইরানবিরোধী প্রতিরোধ কৌশল আরও কার্যকর হয়েছে। যদিও HTS ও অন্যান্য সুন্নি মিলিশিয়ার উত্থান একটি নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখা দিচ্ছে।

আসাদের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া প্রশ্নে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ না করে কূটনৈতিক ও মানবিক সহায়তার পথে এগোচ্ছে। প্রেসিডেন্ট শারাআ-এর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক এই পুনর্বিন্যাসের দিকেই ইঙ্গিত করে। এখন যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে নতুন জোট গঠন, কৌশলিক অংশীদারিত্ব, এবং গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব স্থাপন করতে চাইছে।

‘Axis of Resistance’-এর পতন আরব বিশ্বের জন্য একটি প্রতীকী বিজয়। ইরানের ভূরাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পাওয়ায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তনের এক সম্ভাব্য সূচক, যা আরব জোটের ঐক্য ও কূটনৈতিক প্রাসঙ্গিকতাকে পুনরায় জাগিয়ে তুলছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দামেস্ক সফর, ২০০৭ সালের পর এই প্রথম, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এক নতুন সম্পর্ক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। হামাসের প্রভাব ও নতুন সিরিয়ান নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা—এই প্রেক্ষাপটে আব্বাসের সফর রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার একটি কৌশল। তবে এটি এখনো একটি প্রতীকী উদ্যোগ মাত্র, যার বাস্তব ফলাফল অনিশ্চিত।

২০২৫ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ-এর নেতৃত্বে গঠিত ২৩ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার সিরিয়ার পুনর্গঠনের পথে একটি নতুন সূচনা। সংবিধান অনুযায়ী ইসলামি আইন বিচারব্যবস্থার প্রধান উৎস হলেও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি সংযোজিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং দামেস্কে মার্কিন পতাকা উত্তোলন এই সরকারকে একটি প্রাথমিক আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রদান করেছে।

বাশার আল-আসাদের পতন কেবল একটি শাসকের বিদায় নয়—এটি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্য পুনর্গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব যেখানে ধসে পড়ছে, সেখানে তুরস্ক, ইসরায়েল, এবং যুক্তরাষ্ট্র নতুন জোট ও কৌশলিক পথরেখা নির্মাণে মনোযোগী। আরব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ ঐক্য, কুর্দি জাতীয়তাবাদ, ইসলামি দলগুলোর পুনঃউত্থান, এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রশ্ন—এই সবই সিরিয়ার নতুন ইতিহাসকে মধ্যপ্রাচ্যের এক অনিশ্চিত, জটিল ও উত্তেজনাপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৫৩

ফেনিক্স বলেছেন:



আব্বাসের সিরিয়া যাওয়ার মাঝে আপনি কি খুঁজতেছেন?

২| ১২ ই জুন, ২০২৫ রাত ১১:৩১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: @ফেনিক্স, আমার ধারণা হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দলগুলোর আয়াথে নতুন রেজিমের সম্পর্ক আসাদের সময়ের মতো হবে না। এক্ষেত্রে রামাল্লাতে পিএলওর রাজনৈতিক কাঠামোর সাপোর্ট নিতে সিরিয়া এসেছে আব্বাস মিয়া। সবাই মিলে চেষ্টা করছে PLO কে পুনরায় দৃশ্যপটে আনতে।

৩| ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:২৫

ফেনিক্স বলেছেন:



ঠিক, আব্বাস চেষ্টা করছে পিএলও'কে সামনে আনতে। তবে, ওয়েষ্ট ব্যাংকের ফিলিস্তিনীরা হামাসে পরিণত হয়েছে।

৪| ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৪৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ফেনিক্স@ধন্যবাদ।

৫| ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫২

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: তাহলে আমাদের বাংলাদেশের কি হবে?

৬| ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: জ্যাক স্মিথ@বাংলাদেশে যারা হামাস সাপোর্টার তাদের রিয়েলিটি মেনে নিতে হবে যে সিরিয়াতে বিপ্লব হয়েছে আমেরিকা-ইসরায়েলের যৌথ প্রযোজনায়।

৭| ১৩ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:৫৬

আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: পড়লাম।

৮| ১৩ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আধুনিক চিন্তাবিদ@ ধন্যবাদ।

৯| ১৩ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

নাহল তরকারি বলেছেন: আপনি তো রাজনৈতিক বিশ্রেষণ করেছেন।

১০| ১৩ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:৫১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: নাহল তরকারি@সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.