![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
বিগত দশ মাসে ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একাধিক আন্তর্জাতিক সফর সম্পন্ন করলেও, এর মধ্যে লন্ডন সফরটি ছিলো সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে রহস্যাবৃত এবং একইসাথে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এই সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইন্টেরিম সরকারের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান না করায়, একটি পলাতক রাজনৈতিক দলের প্রোপাগাণ্ডা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি জটিলতর হয় যখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
আরও বিতর্ক জন্ম নেয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের অসংলগ্ন ও দ্ব্যর্থপূর্ণ বক্তব্যে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয়—এই সফর কি ছিলো ব্যক্তিগত? নাকি এটি ছিলো রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বের অংশ? তবে বিতর্ক যখন চূড়ান্তে, তখনই উঠে আসে তারেক রহমানের সাথে প্রধান উপদেষ্টার একটি ‘ বৈঠক’-এর খবর। অদ্ভুতভাবে, সেই বৈঠকের পর রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ কিছুটা নিম্নগামী হয়। ফলে অনেকেই ধরে নেন, ইন্টেরিম সরকার ও বিএনপির মধ্যে একটি প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে—যা অন্তত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে একটি ছায়াতলে আশ্বাস তৈরি করে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস। বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েনে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এক নতুন মোড়ে এসে দাঁড়ায়। ঠিক সেই সময়েই বাংলাদেশ সফরে আসেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। একদিকে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ভাঙন, অন্যদিকে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃনির্মাণের চেষ্টা। এই প্রেক্ষাপটে ম্যাক্রোঁর সফর হয়ে ওঠে এক কূটনৈতিক ইঙ্গিতবাহী ঘটনাক্রম। ফ্রান্স ও বাংলাদেশ মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। একটি ছিলো দশটি Airbus A350 কেনা সংক্রান্ত এবং অন্যটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পে ফরাসি সহায়তা। বিমান কেনা—এই শব্দটি শুনতে যতই নিরীহ মনে হোক, এর পেছনে জড়িয়ে থাকে কর্পোরেট লবিং, কূটনৈতিক কড়চা, এবং বহুজাতিক স্বার্থের জটিল ছক।
Airbus—বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমান নির্মাতা। তাদের নাম যেমন উদ্ভাবনের প্রতীক, তেমনি দুর্নীতির ইতিহাসেও বারবার উচ্চারিত হয়েছে। ২০১৭ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স একযোগে Airbus-এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। প্রকাশ্যে আসে ২৫ বছর ধরে ২০টিরও বেশি দেশে মিডলম্যান ও ছদ্মপরিচয়ধারী কনসালট্যান্টদের মাধ্যমে কোটি কোটি ইউরোর ঘুষ বিতরণের কাহিনি। ২০২০ সালে Airbus-কে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সম্মিলিতভাবে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে—যা বাণিজ্যিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ দুর্নীতির নিষ্পত্তি। এই প্রতিষ্ঠান যখন ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হয়ে ঢাকায় আসে, তখনই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন জাগে—এটি কি কেবল একটি সফর, না কি এক সুপরিকল্পিত করপোরেট কূটনীতি?
বিমান বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো Boeing-এর পরিবর্তে Airbus-এর দিকে ঝুঁকছে—এমন ঘোষণা আসে ২০২৩ সালে। যুক্তরাজ্যের Export Finance এর মাধ্যমে ৮৫% ঋণ সহায়তায় প্রস্তুত হয় চুক্তির খসড়া। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের টেকনিক্যাল ও ফিনান্সিয়াল কমিটি জানায়—এই চুক্তি দেশের জন্য আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে আত্মঘাতী। Airbus-এর A350 ফ্লিটের জন্য নতুন ক্রু, মেইনটেন্যান্স সুবিধা, ট্রেনিং, এমনকি যন্ত্রাংশের জন্য আলাদা অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ‘Mixed Fleet Penalty’-এর কারণে ২৫ বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৪৩০ কোটি টাকা।
এই প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়লে একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, “বিমান কিনতে গিয়ে কেলেঙ্কারি”, “প্রশাসনের দ্বিমত” ইত্যাদি। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই গঠিত হয় একটি নতুন কমিটি, যারা দাবি করে, A350 দিয়ে যদি নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক রুটে ৯২% আসন পূর্ণ থাকে, তবে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার লাভ হতে পারে। কিন্তু এই দাবির পেছনে কোনো বাস্তবভিত্তিক ট্র্যাক রেকর্ড নেই। বিমান বাংলাদেশের গড় ক্যাবিন ফ্যাক্টর কখনোই ৬০–৭০% এর বেশি যায় না। ফলে দ্বিতীয় কমিটির হিসাব ছিলো আদতে একটি লিপ্সাসিক্ত অনুমাননির্ভর চিত্র।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁর সফরের নেপথ্যে থাকা এয়ারবাস কূটনীতি এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের সক্রিয় ভূমিকা অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়। অভিযোগ উঠে—ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মাসদুপুয়েই'র সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক এতটাই সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিলো যে, ফ্রান্স একপ্রকার ‘নিওকোলোনিয়াল’ মডেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছিলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ‘নরম মনোভাব’ দেখিয়ে পশ্চিমা অনুমোদন অর্জনের কৌশল নিয়েছিলেন। ফ্রান্সও চায় ইউরোপীয় নেতৃত্বে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। তাই এশিয়ায় নিজেদের স্বতন্ত্র বলয় গড়তে বাংলাদেশ ছিলো তাদের এক কৌশলগত ‘ফুটপ্রিন্ট’।
ফ্রান্স সফরের আগেই শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা হারায়। কিন্তু ফরাসি দূতাবাস যে এই চুক্তির ধারা ধরে রাখতে ইন্টেরিম সরকারের সাথেও যোগাযোগ রাখছে, তা বলাই যায়। এই প্রেক্ষাপটেই সামনে আসে ইন্টেরিম প্রধানের লন্ডন সফর। রাষ্ট্রীয় সফরের রূপ না থাকলেও সফরের গুরুত্ব ছিলো স্পষ্ট। প্রধান উপদেষ্টা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করলেও এয়ারবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে তার বৈঠক হয়। এই বৈঠকেই তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাব দেন । এই বৈঠক কি কেবলমাত্র একটি করপোরেট বিষয় ছিলো? নাকি বোয়িং-এর স্বার্থও সেখানে পরোক্ষভাবে প্রতিনিধিত্ব পেয়েছিলো? এই প্রশ্ন এখনো উন্মুক্ত।
ব্রিটেনের পক্ষ থেকে সদ্য ঘোষিত সহায়তা কমানোর ঘোষণা—লন্ডন সফরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। অনেকে মনে করছেন, Airbus চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা, ইন্টেরিম সরকারের মনোভাব ও রাজনৈতিক অবস্থান—সব মিলিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব নতুন করে তাদের হিসাব-নিকাশ করছে। তবে যা স্পষ্ট, তা হলো—এই সফর আর পাঁচটি অনুদান-সহায়তা চাও্য়ার সফর ছিলো না। এটি ছিলো এক অন্তরালের কূটনৈতিক সফর, যেখানে এয়ারবাস চুক্তি, ক্ষমতার ভবিষ্যৎ হিসাব, এবং আন্তর্জাতিক ভারসাম্যের একটি সূক্ষ্ম সমীকরণ একসাথে হাজির হয়েছিলো।
১৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:৩৪
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ধন্যবাদ ।
২| ১৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:০০
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: গুরুতর বিষয়।
১৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:৩৬
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশের এয়ারবাস কোম্পানি থেকে বিমান কেনার কোনো দরকার ছিল না। শেখ হাসিনা এটা ঘুষ হিসেবেই দিতে চেয়েছিলেন—যাতে করে নির্বাচনের পর পশ্চিমা শক্তিগুলো তাকে সমর্থন দেয়। পুরো ১৬ বছরের রাজনীতিই এই নাটকের অংশ।
৩| ১৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:২০
কামাল১৮ বলেছেন: তারেকের সাথে দেখাকরার জন্য এতো ঢাক ঢোল পিটিয়ে সরকারী সফর বলার দরকার ছিলো না।যেখানে বৃটিশ সরকারের কেউ তার সাথে দেখাই করলেন না।মিথ্যারো একটা সীমা থাকে।
সফরে কি অর্জিত হলো।লম্বা একটা ছুটি ছিলো।দলবলনিয়ে পালানোর পথ করে আসলো কিন্তু শেষ রক্ষা হবে না।
১৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:৩৬
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশের এয়ারবাস কোম্পানি থেকে বিমান কেনার কোনো দরকার ছিল না। শেখ হাসিনা এটা ঘুষ হিসেবেই দিতে চেয়েছিলেন—যাতে করে নির্বাচনের পর পশ্চিমা শক্তিগুলো তাকে সমর্থন দেয়। পুরো ১৬ বছরের রাজনীতিই এই নাটকের অংশ।
৪| ১৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:২২
রাজীব নুর বলেছেন: তারেক চায় ক্ষমতা। এজন্য সে ইউনুস সাহেবকে রাষ্ট্রপতি করতে রাজী।
তারেক সাহসী হলে বুক ফুলিয়ে দেশে আসতো।
১৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:৪৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শেখ হাসিনা এরকম আর কি কি কাজ করে গেছেন কে জানে ?
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুন, ২০২৫ রাত ৩:৫৮
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম