নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেখ হাসিনার ছায়া কি এখনো শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে? র‍্যাগ ডে’র স্লোগান, প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতি এবং ‘নাটকীয়’ বাংলাদেশ

২১ শে জুন, ২০২৫ রাত ১০:৪৭


বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে এখন একদিকে আন্তর্জাতিক উত্তেজনার কুয়াশা, অন্যদিকে ঘরোয়া সার্কাসের সারি। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তপ্ত, তখন বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিদিনই ঘটে যাচ্ছে নাটক, মেলো-ড্রামা আর চিত্রনাট্য-বিহীন ধারাবাহিক। যদিও মিডিয়ার আলো ইরানের দিকে ঝুঁকে আছে, বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক মুহূর্ত এখন নাটকীয় মোড় নিচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরের সময় বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেন—আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি, শুধুমাত্র তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। একইসাথে, আওয়ামী লীগ ছাড়াও নির্বাচন ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হতে পারে বলে দাবি করেন তিনি। জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরের উদ্ধৃতি টেনে বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক মানে কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণ।”

এই বক্তব্য শুনে মনে হয়, নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানটি এখন চূড়ান্ত নির্ধারক। বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে উপদেষ্টার এই বক্তব্য যেন কাঁচা হাসির খোরাক—বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন যে সরকার নির্ধারিত রিমোট কন্ট্রোলে চলে, তা কেবল টেলিভিশনের দর্শক না, পাড়ার চায়ের দোকানের ছেলেটাও জানে।

একসময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে গলা ফাটানো এনসিপি আজ যেন নিস্তব্ধ। সরকার আর প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক অবস্থান কি তাহলে এনসিপি-সরকার সম্পর্কের ছায়া ফেলে দিয়েছে ? প্রশ্নটা উঠছে কারণ তারেক রহমান ও উপদেষ্টার বৈঠকের পর হাসনাত-সারজিস গং দৃশ্যপটে প্রায় অদৃশ্য। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—আওয়ামী লীগ কি সত্যিই নিষিদ্ধ হবে? না, সচেতনদের কাছে এটা ছিল একটা রাজনৈতিক টোটকা, যার লক্ষ্য ছিল চাপ সৃষ্টি ও একটি বিকল্প পথ খুলে রাখা। এখন জাতিসংঘের ‘পল্টি’ কূটনীতি স্পষ্ট—আগে যাদের আইন সংশোধন সঠিক মনে হয়েছিল, এখন সেটাকেই বলছে “উদ্বেগজনক”। অতএব, নাটক চলছে—কিন্তু ক্লাইম্যাক্স এখনো আসেনি।

আমাদের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু এখন রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একটি র‍্যাগ ডে ভিডিও। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে—শিক্ষার্থীরা একে অপরের টি-শার্টে লিখছে, “শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাঁসবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু !” প্রশ্ন হলো—এটা কি ছাত্রদের আন্তরিক অনুভব নাকি সাজানো প্রপাগান্ডার রিফ্লেক্স ? কারণ বিগত ১৬ বছরে এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা সাধারণত র‍্যাগ ডে-তে বন্ধুত্ব, স্মৃতি আর মজার কথা লিখে থাকে, রাজনৈতিক স্লোগান নয়। আরেকটি প্রশ্ন—এই ঘটনা কি আদৌ স্বতঃস্ফূর্ত? নাকি কেউ পরিকল্পিতভাবে এই স্লোগান ‘ইনফ্লুয়েন্স’ করেছে ? আমরা জানি, এই কলেজের নিয়ম-কানুন কতটা কড়া। কেউ র‍্যাগ ডেতে রাজনৈতিক বার্তা লিখছে—এমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগ ভেবেছিলো, শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে তরুণদের মগজ ধোলাই করে শেখ হাসিনা-মুজিববাদী প্রজন্ম তৈরি করবে। প্রাথমিক পাঠ্যবই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বই—সবখানেই আওয়ামী ন্যারেটিভ। শিশু দিবসে শেখ মুজিবের জন্মদিন, শোক দিবসে নাচ-গানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বন্দনা, শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া ইতিহাসের অতিরঞ্জন—এসবই ছিল শেখ হাসিনা সরকারের কাল্পনিক রাষ্ট্র গড়ার অংশ। কিন্তু, ডিজিটাল যুগের জেন-জি এতটা সহজ ছিল না। তারা ফেসবুক-ইউটিউব-টিকটক ঘাঁটতে ঘাঁটতে ‘রিয়েলিটি’ বুঝে গেছে। তারা বুঝে গেছে, শেখ হাসিনার রাজত্ব মানেই—চাকরির ঘুষ, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের টর্চার, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জঞ্জাল। তাই তারা এক সময় প্রতিরোধে নেমেছে।

সামান্য ভিডিও বলে হালকা করে দেখলে ভুল হবে। এটি হতে পারে একটি ডমিনো—যেখানে অন্যরাও ভাইরাল হওয়ার আশায় এমন রাজনৈতিক বার্তা নিজেদের ফেয়ারওয়েলেও ব্যবহার করতে পারে। সুশাসনের নামে যাঁরা আজ ইন্টারিম সরকার চালাচ্ছেন, তাদের কি এতটুকু দায়িত্ব নেই ? র‍্যাগ ডে ভিডিও থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে অবশ্যই তদন্ত করতে হবে। যদি এটি পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা হয়, তবে সেটা দৃষ্টান্তমূলকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, আগামী দিনে যদি ছাত্রদের ফেয়ারওয়েলও হয়ে ওঠে কোনো দলের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম, তাহলে সুশাসনের স্বপ্ন এক ব্যর্থ ব্যঙ্গচিত্রে পরিণত হবে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক অদ্ভুত রাজনৈতিক থিয়েটারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে সরকারের নাটকীয় নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জন্ম নিচ্ছে নতুন ‘স্লোগান সংস্কৃতি’। এই দ্বৈত বাস্তবতা আমাদের ভাবায়—আসলে কি সত্যিই পরিবর্তন এসেছে, নাকি পুরনো রূপ বদলে আবারও ফিরে আসছে সেই চেনা ছায়া?


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:১৬

ফারমার২ বলেছেন:



আপনি কি সবকিছুতে শেখ হাসিনার ছায়া }দেখেন? শেখ হাসিনা ১টা ফ্যাক্টর ছিলো এক সময়।

২১ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:২৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমি যা দেখি তা বড় কথা নয়। আমি চাই না স্কুল-কলেজের পোলাপান বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতিতে ঢুকে পড়ুক। এজন্য এনসিপি’র মেম্বারশিপ বয়স নিয়ে আমার কনসার্ন, ‘ছাত্রশিবির’ ক্লাস ফাইভ থেকে শিবিরে ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো ওয়াজ-নসিহত নিয়ে কনসার্ন। আর আমার একজন শিক্ষককে স্কুল থেকে জোড় করে তাড়িয়ে দেওয়া ছোট ছোট বাচ্চারা যারা নিজেদের ছাত্রদল দাবি করেছে , সাংবাদিকদের কাছে এসব নিয়ে আমার কনসার্ন। ছোট বয়সে কোনো রাজনীতি দরকার নেই।"

২| ২২ শে জুন, ২০২৫ রাত ১:৫০

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: নুতুন এবং আরও বেশি একনায়কতন্ত্র ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.