![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
গতকাল ছিলো ২০ই অক্টোবর। ঠিক এই দিনেই, ২০১১ সালে, একটি নর্দমার পাইপের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন এমন এক মানুষ, যিনি একসময় পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেন। যার হুকুমে নাচত লাখো মানুষ। যিনি জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন জাতিসংঘ সনদের কপি। সেই মানুষটির নাম মুয়াম্মার গাদ্দাফি। লিবিয়ার মরুভূমিতে একটি বেদুইন পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ছেলেটি কীভাবে হয়ে উঠলেন আফ্রিকার সবচেয়ে বিতর্কিত নেতা? কীভাবে টিকে রইলেন ৪২ বছর ক্ষমতায়? আর শেষে কেনই বা তাঁকে লুকাতে হলো একটি নোংরা পাইপের ভেতরে ?
১৯৪২ সালের এক গ্রীষ্মকালে, লিবিয়ার সিরতে শহরের কাছাকাছি এক বেদুইন তাঁবুতে জন্ম নেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। পিতা আবু মানিয়ার ছিলেন একজন সাধারণ মেষপালক। তাঁবুতে থাকা, রোদে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া সেই ছেলেটির স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই গাদ্দাফি ছিলেন ভিন্ন ধাঁচের। যখন অন্য ছেলেরা ফুটবল নিয়ে মাতত, তখন তিনি শুনতেন মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের বক্তৃতা। নাসের ছিলেন তাঁর আইডল। আরব জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতা - এসব ধারণায় মুগ্ধ হয়ে পড়েন কিশোর গাদ্দাফি।
১৯৬১ সালে যোগ দেন লিবিয়ান সামরিক একাডেমিতে। পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ব্রিটেনে। কিন্তু সামরিক প্রশিক্ষণের চেয়েও তাঁর মাথায় ঘুরপাক খেত একটাই চিন্তা - লিবিয়ার বাদশাহ ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। কেন? কারণ তখনকার লিবিয়া ছিল পশ্চিমাদের পুতুল। তেলসম্পদে ভরপুর দেশটির সম্পদ চলে যাচ্ছিল বিদেশি কোম্পানিগুলোর পকেটে। সাধারণ মানুষ থাকত দারিদ্র্যে। ব্রিটেন ও আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি বসেছিল লিবিয়ার মাটিতে।
১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর। লিবিয়ার বাদশাহ ইদ্রিস তখন চিকিৎসার জন্য তুরস্কে। দেশের দায়িত্বে তাঁর ভাইপো যুবরাজ সাইদ হাসান অর রিদা। ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগান ২৭ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন গাদ্দাফি। মাত্র ৭০ জন তরুণ সামরিক অফিসারের একটি দল নিয়ে দখল করে নেন রাজধানী ত্রিপোলির মূল স্থাপনাগুলো - রেডিও স্টেশন, সরকারি ভবন, সেনানিবাস। আশ্চর্যের বিষয়, একটি গুলিও ছোড়া হয়নি। রক্তপাত হয়নি একফোঁটাও। ভোরবেলা যখন লিবিয়ার মানুষ ঘুম থেকে জাগল, তখন রেডিওতে ভেসে আসছে তরুণ এক অফিসারের কণ্ঠস্বর: "লিবিয়ার জনগণ! আজ থেকে তোমাদের দেশ স্বাধীন। রাজতন্ত্রের অবসান হয়েছে।" অভ্যুত্থানের পরদিনই ক্যাপ্টেন গাদ্দাফি নিজেকে উন্নীত করলেন কর্নেল পদে। এই 'কর্নেল গাদ্দাফি' নামটাই পরে হয়ে উঠবে তাঁর পরিচয়।
১৯৭০-এর দশক। গাদ্দাফির শাসনের প্রথম দশক। এই সময়টা লিবিয়ার জন্য ছিল রূপকথার মতো। প্রথমেই তিনি জাতীয়করণ করলেন তেলশিল্প। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বলে দিলেন - "তেল আমাদের, মুনাফাও আমাদের হবে।" তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে তিনি হয়ে উঠলেন অগ্রদূত। OPEC-এর মধ্যে প্রথম তিনিই দাবি তুললেন তেলের দাম বাড়ানোর। তেলের টাকায় শুরু হলো দেশ গড়ার কাজ। বিনামূল্যে শিক্ষা, বিনামূল্যে চিকিৎসা, আবাসনের জন্য সুদমুক্ত ঋণ। বিয়ে করলে পাবেন ৫০ হাজার ডলার। সন্তান জন্মালে আরও পাঁচ হাজার। বেকারত্ব ভাতা চালু হলো। কৃষকদের দেওয়া হলো বিনামূল্যে জমি, বীজ, সার।
গাদ্দাফির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ছিল "গ্রেট ম্যান-মেড রিভার"। সাহারা মরুভূমির নিচে প্রাচীন জলাধার থেকে পানি তুলে সারা দেশে সরবরাহের জন্য তৈরি হলো বিশাল পাইপলাইন নেটওয়ার্ক। ২৫ বিলিয়ন ডলার খরচের এই প্রকল্পটিকে বলা হতো "বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য"। লিবিয়া হয়ে উঠল আফ্রিকার সবচেয়ে উন্নত দেশ। মাথাপিছু আয় ছিল ১৪ হাজার ডলারের বেশি। সাক্ষরতার হার উঠে গেল ৮৮ শতাংশে - যা ছিল আফ্রিকার সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে লিবিয়া ছিল আফ্রিকার এক নম্বর দেশ। এশিয়া-আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে লাখো মানুষ কাজের খোঁজে ছুটে আসত লিবিয়ায়। বাংলাদেশ থেকেও হাজার হাজার শ্রমিক গিয়েছিলেন লিবিয়ায়, আর ফিরে এসেছিলেন বস্তাবস্তা ডলার নিয়ে।
১৯৭৫ সালে গাদ্দাফি প্রকাশ করলেন তাঁর বিখ্যাত "গ্রিন বুক"। এতে তিনি তুলে ধরলেন এক নতুন রাজনৈতিক দর্শন - "জামাহিরিয়া" বা জনগণের রাষ্ট্র। গাদ্দাফির যুক্তি ছিল - পুঁজিবাদ শোষণ করে, সমাজতন্ত্র স্বাধীনতা হরণ করে। তাই দরকার তৃতীয় একটি পথ। যেখানে জনগণই সরাসরি শাসন করবে, কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই। লিবিয়ায় চালু হলো "পিপলস কমিটি" ব্যবস্থা। স্থানীয় পর্যায়ে হাজারো কমিটি, যারা সরাসরি সিদ্ধান্ত নেবে। গাদ্দাফি নিজে কোনো সরকারি পদ নিলেন না। তাঁর পরিচয় হলো শুধুই বিপ্লবের নেতা এবং "ভাই নেতা" (Brother Leader)। তাত্ত্বিকভাবে এটা ছিল সরাসরি গণতন্ত্র। কিন্তু বাস্তবে? বাস্তবে সব সিদ্ধান্ত নিতেন গাদ্দাফি নিজে।
গাদ্দাফিকে বোঝা ছিল কঠিন। তিনি ছিলেন রহস্যময়, অপ্রত্যাশিত, আর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। তাঁর পোশাক-আশাক ছিল বর্ণাঢ্য। কখনো সাধারণ বেদুইন পোশাক, কখনো উজ্জ্বল রঙের সামরিক ইউনিফর্ম, কখনো আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী পোশাক। তাঁর তাঁবুতে বসে রাষ্ট্রীয় কাজ করার অভ্যাস ছিল - এমনকি বিদেশ সফরেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন তাঁর বেদুইন তাঁবু। সবসময় পাশে থাকত তাঁর মহিলা দেহরক্ষী দল আমাজন গার্ড। উজ্জ্বল লাল লিপস্টিক, হাই হিল, আর হাতে AK-47 নিয়ে এই মহিলা দেহরক্ষীরা ছিল গাদ্দাফির ট্রেডমার্ক।
২০০৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাদ্দাফির বক্তৃতা এখনও কিংবদন্তি। ৯৬ মিনিটের সেই বক্তৃতায় তিনি জাতিসংঘ সনদের একটি কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন, মঞ্চে পানির বোতল ছুড়ে মেরেছিলেন, আর দাবি করেছিলেন যে এইচওয়ানএন (H1N1) ফ্লু হলো জৈববিমানের ফল। পশ্চিমারা বলত তিনি পাগল। কিন্তু আফ্রিকার অনেক নেতা তাঁকে দেখতেন সাহসী বিদ্রোহী হিসেবে, যিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে ভয় পান না। (চলবে)
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৫০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশের সাথেও লিংক আছে উনার ।
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৪৭
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
মরুভুমির কঠিন জীবন থেকে সৃষ্ট সোস্যালিষ্ট।
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৫২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এসব কঠিন মানুষদের story আমাদের জানা উচিত ।
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:২৫
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমাদের দেশেও আমেরিকার ঘাঁটি বসতে যাচ্ছে
কি করবেন এখন ???
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:২৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প কাকুর কোনো মাথাব্যথা নেই।
৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৯
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
চিন্তার খোরাক আছে।
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৭:৪২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৭:০৮
কামাল১৮ বলেছেন: উনিও কি আপনার মতো জামাতি ছিলো।
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৭:৪৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: রাজাকার ছিলেন।
৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো কথা বলেছেন- দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৪৬
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
গামায়েল নাসেরের শিষ্য; ভুল করেছিলো জাতিংঘে আমেরিকা ও ইউরোপ-বিরোধী বক্তৃতা দিয়ে ও পশ্চিনের বিপক্ষের জংগীদের ( লেবানন, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ান ) সাহায্য করে।