নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্দরের রমরমা আয়োজন: বিএনপি-জামায়াত নীরব কেন?

২০ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৯


বন্দরের জেটি থেকে ভেসে আসছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবাস, আর সেই সুবাসে দেশের তাবত রাজনীতিবিদদের নাক বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম আর পানগাঁওয়ের টার্মিনালগুলো যখন তড়িঘড়ি করে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হলো, তখন সরকারের মুখপাত্ররা এলেন ঢাল-তলোয়ার নিয়ে। তাঁরা বললেন, "দেখুন, আমরা কী দারুণ কাজ করছি! ৪০৫টি বন্দরের মধ্যে আমাদের অবস্থান ৩৩৪তম—এটা তো দারুণ লজ্জার! এখন ডেনমার্কের ড্রাইভাররা আমাদের গাড়ি চালাবে, আর গাড়িটা কিন্তু আমাদেরই থাকবে !

শ্রীলঙ্কা ঋণের জালে ফেঁসেছিল, আমরা তো ধার নিচ্ছি না—আমরা তো বরং 'বিনিয়োগ' নিচ্ছি ! আর যারা এর বিরোধিতা করছে, তারা হয় 'বিশেষ অজ্ঞ' অথবা বন্দর থেকে তোলা চাঁদার অভাবে মন খারাপ করে আছে।" এই বক্তব্যের সারকথা হলো: দেশের সক্ষমতা বাড়াতে চাইলে দেশের সব কিছু বিদেশিদের হাতে তুলে দাও, আর দুর্নীতি রুখতে চাইলে মাশুল ৪০ গুণ বাড়িয়ে দাও। দুর্নীতির নতুন সংজ্ঞা আর কী!

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই সরকারের গতির কাছে হাঁটু গেড়ে বসেছেন। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ চিৎকার করে বলছেন, "এ যে বিশ্বাসঘাতকতা! যে অন্তর্বর্তী সরকারের নিজেরই মাসখানেকের বেশি আয়ু নেই, সে কী করে ৩০ বছরের জন্য দেশের সম্পদ বন্ধক রেখে দেয়? আর সেই বন্ধক রাখার কাজটিও হয় ছুটির দিনে, বোর্ডের মাত্র দুই জন সদস্যকে দিয়ে, এমন গোপনীয়তায় যে যেন মনে হচ্ছে তারা কোনো জাতীয় নিরাপত্তা নয়, বরং প্রেমপত্র লিখছেন!" কিন্তু সরকারের কানে সেই কথা পৌঁছায় না। সরকার তখন ব্যস্ত থাকে বিদেশি লবিস্টদের প্রশংসা করতে, যাদের সাফল্যের নজির নাকি এই চুক্তি। বিশেষজ্ঞরা যখন গ্যারান্টি, ইনডেমনিটি আর আদানির চুক্তির ভূত দেখতে পান, সরকার তখন বলে: "আহা, সব প্রকাশ করলে তো পরের দর কষাকষিতে আমরা ব্যাকফুটে চলে যাব! দেশের স্বার্থ রক্ষার কৌশল কী আপনারা বুঝবেন না?"

এদিকে, দেশের রাজনৈতিক মাঠের প্রধান খেলোয়াড় বিএনপি-জামায়াত জোট যেন এই 'জাতীয় স্বার্থের খেলায়' গ্যালারিতে বসে পপকর্ন খাচ্ছে। যদি চুক্তিগুলো সত্যিই দেশের জন্য ভালো হয়, যেমনটা সরকার দাবি করছে—দুর্নীতি দূর হবে, সক্ষমতা বাড়বে, আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশ এগিয়ে যাবে: তাহলে বিএনপি-জামায়াতের উচিত ছিল এই সুযোগটি লুফে নেওয়া। তারা বলতে পারত, "দেখুন, আমরা ক্ষমতায় না থেকেও অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে কাজ করাচ্ছি। আপনারা সরকারকে বিশ্বাস না করলেও আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, এই চুক্তি দেশের জন্য ভালো।" কিন্তু তারা তা না করে নীরব। এই নীরবতা থেকে বোঝা যায়, হয়তো তারা সরকারের যুক্তিতে সম্পূর্ণ আস্থাশীল নয়, কিন্তু প্রতিবাদ করলে যদি সেই 'সুষ্ঠু নির্বাচন' আয়োজনকারী পশ্চিমা শক্তিগুলো বেঁকে বসে, সেই ভয়ে তাদের মুখ সেলাই করা।

অন্যদিকে, যদি এই চুক্তিগুলো অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বা ১২-দলীয় জোটের অভিযোগ অনুসারে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতো, তাহলে বিএনপি-জামায়াতের উচিত ছিল রাস্তায় নেমে সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা। তারা বলতে পারত, "এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে, যা জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা! আমরা ক্ষমতায় এলে এই চুক্তি বাতিল করব।" কিন্তু সেই প্রতিবাদও উধাও। এর গভীরে লুকিয়ে আছে এক কুটিল রাজনৈতিক কৌশল: ক্ষমতায় গেলে যদি এই লাভজনক চুক্তিগুলো বাতিল করতে হয়, তবে কোটি কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ কে দেবে ?

আর যদি বাতিল না-ই করা হয়, তাহলে এই নীরবতা দিয়ে তারা বিদেশিদের কাছে প্রমাণ করে দিল যে তারা চুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের নীরবতা প্রমাণ করে, দেশের লাভ/ক্ষতির চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়িটা তাদের কাছে অনেক বেশি দামি। তারা অপেক্ষা করছে, সরকার যখন দেশটাকে একটা 'গলার কাঁটা' উপহার দিয়ে চলে যাবে, তখন তারা এসে ঘোষণা করবে, "দেশের স্বার্থে এই কাঁটা আমরা হজম করলাম," বিনিময়ে আন্তর্জাতিক মহলের সাধুবাদ নেবে।

বন্দরের টার্মিনাল চুক্তি নিয়ে এই রাজনৈতিক নীরবতা আসলে এক ট্র্যাজেডি। এর মাধ্যমে বিরোধী দল জনগণকে এই বার্তা দিল: জাতীয় স্বার্থের এই ডামাডোলে তাদের ভূমিকা হয় অজ্ঞতা থেকে নীরব থাকা, নয়তো ক্ষমতার লোভ থেকে কৌশলগতভাবে চুপ থাকা। এই পরিস্থিতিতে জনগণের সন্দেহ দূর করার কোনো পথই খোলা রইল না ।


মুল সংবাদ: লালদিয়া ও পানগাঁও বন্দরের দায়িত্বে বিদেশি প্রতিষ্ঠান, চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন..বিবিসি বাংলা । আদানির মতো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চুক্তি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের?.....বণিক বারতা । চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি অপারেটর বিতর্ক: যে ব্যাখ্যায় মিলল ...চট্টগ্রাম প্রতিদিন


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৫৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: Click This Link
https://www.bonikbarta.com/bangladesh/xa3xxPD41h6e6z1I

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:০৫

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: মনে হচ্ছে তারা কোনো জাতীয় নিরাপত্তা নয়, বরং প্রেমপত্র লিখছেন!"
....................................................................................................
দেশ যখন সঠিক পথে চলবে না
তখন বানরের শাসন উপভোগ করতে হবে !

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:০৭

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও একসময় শুধু বিজনেস করতেই এসেছিল, তারপরের ঘটনা আমরা সবাই জানি। একটা প্যাসেজ পড়েছিলাম, অনেক সফল কিছু মানুষ যারা নিজের এরিয়ায় খুবই ভালো করতে পেরেছিল, তাদেরকে যখন সেইম পলিসি নিয়ে অন্য একটা রিজিয়ন এ পাঠানো হয়, তারা ভয়ংকর রকমভাবে ব্যর্থ হয়। সব জায়গায় একই কৌশল কাজে আসবেনা। এই লোকটাকে নিয়ে কিছু বলবো না। চাঁদগাজী যে বলে প্রফেসর ইউনুস একজন অসৎ লোক, কথা আসলেই সত্য। উনি এদেশের মানুষের ভালোবাসা অতীতেও কোনোদিন পাননি, ভবিষ্যতেও কোনোদিন পাবেন না।
বিএনপি হচ্ছে একটা অপদার্থ দল, আর জামাত হচ্ছে ভন্ড, মিথ্যুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.