নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্য মানে যদি অসহায়ত্ব হয় আমি তবে অসহায় এক নিরবচ্ছিন্ন পথিক
পড়ন্ত বিকেলে ছাদের রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে থেকে সূর্যাস্ত দেখছে রুদ্র আর মেঘকেও কারো সাথে কথা বলছে না। শুধু পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ওরা। মেঘের হাতের দিকে চোখ পড়তেই রুদ্র বলে উঠল
- মেঘ,তোর হাতে আংটি কোথায়?
- খুলে রেখেছি।
- কেন?
- ভাল লাগে না তাই।
- ভাল লাগতে হবে।
- সবসময় কি তোর কথা শুনতে হবে!
- তুই আমাকে কি কথা দিয়েছিলি মনে আছে?
- হ্যাঁ মনে আছে।
- তাহলে হাতে আংটি পড়ে আয় যা। আমি তোর হাত ধরব।
- তো ধর না। আংটি কেন লাগবে?
- তুই আমাকে বলেছিলি যে পরেরবার হাত ধরলে আংটি বাজবে। আমি এই বাধাটা অনুভব করতে চাই। তাছাড়া তোর এই খালি হাত এখন ধরতে আমার ইয়েতে বাজবে।
- তাহলে ধরিস না। আমি তাও পড়ব না।
আরো কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা। চারদিক নিস্তব্ধ, শুধুমাত্র বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
- মেঘ, তুই কি জানিস যে তোর সাথে দেখা হলে আমি হাত না ধরে থাকতে পারি না?
- দেখ তুই যা চাস তা কোনোদিন সম্ভব না। তাছাড়া আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। কাল বাদে পরশু বিয়ে। তুই নিজেই তো বিয়ে খেতে এসেছিস।
- আমি চাই তোর হাত ধরতে। এটা কি অসম্ভব কিছু?
কোনো কথা বলে না মেঘ। চুপচাপ হাত বাড়িয়ে দেয় সে। রুদ্র ওর হাত ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে রাখে আর কি যেন ভাবতে থাকে। মেঘ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। কেও জানে না তারা কি ভাবছে।
- রুদ্র , এই রুদ্র
কোনো সাড়া দেয় না সে। মেঘ জোড়ে একটা ধাক্কা মারলে তবে মুখ খুলে।
- কিছু বলবি?
- আমি নিচে থেকে দুকাপ চা বানিয়ে আনি। তুই এখানেই থাক।
- ঠিক আছে যা।
- হাত ধরে থাকলে কি করে যাব আমি, তুই বল?হাত কেটে দিয়ে যাই?
- তাহলে তো ভালোই হত।
- পাগল একটা তুই। এখন হাতটা ছেড়ে দে।
হাত ছেড়ে দেয় রুদ্র। সে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে লাল শাড়ি পড়ে। তারপর কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ দেয় আর চোখে গাঢ় করে কাজল। রুদ্র একদিন বলেছিল-" লাল শাড়ি, ছোট কালো টিপ আর কাজল কালো চোখে তোকে খুব সুন্দর লাগে। ঠিক যেন রুপকথার রাজকন্যা।" তারপর দৌঁড়ে ছাদে চলে আসল।
কিন্তু ছাদে রুদ্র নেই। কোথায় গেল সে! এসময় রাস্তায় মানুষের চিৎকার শুনতে পেল সে। ছাদ থেকে উকি দিল নিচের দিকে। বাড়ির নিচে রাস্তায় রুদ্রের লাশ পড়ে আছে। এই নিষ্ঠুর সত্যকে সহজে মেনে নিতে পারল না সে। সে দৌঁড়ে নিচে নেমে লাশের কাছে গেল। তারপর সেখানেই বসে থেকে কাদতে থাকল। হঠাৎ লক্ষ করে দেখল রুদ্রর হাতের মুঠোয় একটা চিরকুট। ভয়ে ভয়ে সেটা খুলল সে।
" কি যেন বললি তুই; অসম্ভব তাই না? সত্যিই কি তাই!আমি যা চাচ্ছিলাম তা কি সত্যিই অসম্ভব?কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবি আমি কি চাচ্ছিলাম। আর এটাও বুঝতে পারবি যে আমি তা সম্ভব করেছি। সূর্যের সাথে তোর রুদ্রও আজ অস্ত যাচ্ছে। শেষ দেখা, শেষ কথা,শেষ হাত ধরা সবই তো হল। শুধু বাদ থাকল শেষ ইচ্ছা পূরণ। তাই পা বাড়ালাম আমি। আমাকে যদি কখনো দেখতে ইচ্ছে হয় তবে রাতে একবার ছাদে উঠিস। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটাই হব আমি। আর তা না হলে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি অবাস্তব রুদ্র তো তোর কাছে আছেই। বিদায় আমার কৃষ্ণকলি। ভাল থাকিস।"
সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল। সেদিন সারারাত এমনকি পরেরদিনও কাদল মেঘ। বাসার অনেকেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল ওর দিকে আর ভাবল- " কাল মেয়ের বিয়ে, আর সে কিনা অন্য একটা ছেলের জন্য কাদছে! তাও আবার হিন্দু ছেলে!"
হয়তো মানুষের এই ভাবনার কথা ভেবেই মেঘ প্রথমেই তাদের সম্পর্ককে অসম্ভবের মধ্যে স্থান দিয়েছিল।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৯
রাফি বিন শাহাদৎ বলেছেন: তা নির্ভর করবে কার সাথে জীবন কাটাবে তার উপর
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: সেদিন সারারাত এমনকি পরেরদিনও কাদল সুহা - তার পরে হয়তো আর কাঁদবে না।