নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘড়ির টিকটিক শব্দে হাত চেপে ধরা মেয়েটা আর ভুতের ভয় পায় না।

রাফি বিন শাহাদৎ

সাহিত্য মানে যদি অসহায়ত্ব হয় আমি তবে অসহায় এক নিরবচ্ছিন্ন পথিক

রাফি বিন শাহাদৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল্লাহ যা করে আপনার ভালর জন্যই করে

১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪


মাঝে মাঝে মনে হয়- "আল্লাহ কি আমার দিকে ফিরে তাকায় না! আল্লাহ কি চায় না আমি সফল হই আমার ক্যারিয়ারে?" তারপরেই একটা কথা মাথায় আসে- "আল্লাহ যা করে ভালর জন্যই করে।" আজকাল প্রচন্ড মুড সুইং হয়। কখনো মনে হয় বেশ তো আছি খেয়েপড়ে, আবার কখনো ভাবি কবে পড়াশোনা শেষ হবে, কবে লাইফটা গুছিয়ে উঠবে! একটু ভেঙ্গে বলি?

২০২৪ সালের মার্চ মাসে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলাম একটা পাব্লিক ইউনিভার্সিটি থেকে। ইচ্ছা ছিল দেশে থাকব, ফ্যামিলি নিয়ে থাকব, বিদেশের কৃত্রিম জীবনব্যবস্থা কখনই আমার পছন্দ ছিল না। যেহেতু দেশে থাকার প্ল্যান, এমন সাব্জেক্ট নিয়ে পড়তে হবে যেটার দেশে ডিমান্ড ভাল। তাই ভার্সিটির কথা না ভেবে সাব্জেক্টের কথা ভেবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলাম। শুরু থেকে দেশে থাকার প্ল্যান, তাই ভার্সিটি লাইফে খুব একটা রিসার্চে ফোকাস করা হয়নি, থিসিসটাও কোনোরকমে পার করছি। এই জিনিসটা এখনও আমাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার বদঅভ্যাসটা আমার নেই। তাই রিসার্চ, স্কিল এসবের এক্সপিরিয়েন্স কম থাকলেও ভাল একটা রেজাল্ট নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলাম।

গ্র্যাজুয়েশন শেষ, এখন চাকরি খোঁজার পালা। কিন্তু দেশে তো ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরি নাই, যা আছে সেসবে এক্সপিরিয়েন্স চায় মিনিমাম ৫ বছর; বেতন ২০০০০ টাকা। যেহেতু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আমার পড়াশোনা, এক্সপিরিয়েন্সের প্রায়োরিটি আরো বেশি। জিনিসটা স্বাভাবিকভাবেই নিলাম। কারণ কাজের এক্সপিরিয়েন্স ছাড়া কেও কিভাবে একটা ১০ তলা বাড়ি ডিজাইন করবে, সেটার স্ট্রাকচারাল প্ল্যান করবে! আবার মাথায় এটাও ঘুরপাক খাচ্ছিল যাদের এক্সপিরিয়েন্স আছে তারাও তো একসময় ফ্রেশারই ছিল। এসব ভেবে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা কম্পানিতে সিভি পাঠানো শুরু করলাম। কিন্তু একটা জিনিস ভুলেই গিয়েছিলাম, বাংলাদেশে মামা-চাচা না থাকলে কম্পানির জব হয়না, আমারও হল না। দেখতে দেখতে জুলাই অভ্যুত্থান হল, সরকার চেঞ্জ হল, ইন্টেরিম সরকার দায়িত্ব নিল। আমি মনে করি এই সময়টায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের একটা বিশাল লস হয়ে গেছে। একটা দেশের যখন সরকার পরিবর্তন হয় তখন কিছু মাসের জন্য রানিং প্রোজেক্টগুলা বন্ধ থাকে। নেতা চেঞ্জ হয়, চাঁদাবাজ চেঞ্জ হয়, ঠিকাদার চেঞ্জ হয়, এমনকি পুরা প্রোজেক্টই চেঞ্জ হয়ে যায়। সরকার পরিবর্তনের পরে সরকারি জবের সার্কুলার আসা বন্ধ হয়ে গেল। জুলাই- আগস্টে যেসব সার্কুলার হবার কথা, সেসব পিছানো শুরু করল। নিজেকে বোঝালাম দেশ সংস্কারের দিকে যাচ্ছে, একটু ধৈর্য না হয় ধরি আমি। কিন্তু নভেম্বর মাস যখন আসলো তখন হাল ছেড়ে দিলাম। তখনও একটাও সার্কুলার বের হয়নি। সিদ্ধান্ত নিলাম বাইরে পড়াশোনার জন্য যাব। প্রত্যেকটা মানুষের অনেকগুলা প্ল্যান থাকে। এটাও ছিল আমার একটা প্ল্যান, বলতে পারেন প্ল্যান বি। এর পিছনের কারণটা পরে বলতেছি।

প্ল্যান মোতাবেক ইমেইল শুরু করলাম ফান্ডিং এর জন্য। মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকে সেলফ ফান্ডে পড়ার মত সাহস অথবা ইচ্ছা কোনোটাই ছিল না আমার। ফুল ফান্ডিং নিয়ে পড়তে যাওয়ার জন্য আমেরিকার উপরে কোনো দেশ নেই। তাই মেইল শুরু করলাম আমেরিকার ভার্সিটিগুলাতে। মোটামুটি ১০ দিনের একটা প্রিপারেশন নিয়ে আইএলটিএস দিয়ে দিলাম। মিনিমাম যে স্কোর থাকতে হয় ভার্সিটিগুলোতে এপ্লিকেশনের জন্য, সেটা আমার ছিল। কিন্তু প্রব্লেমটা ফেস করলাম অন্য জায়গায়। ইমেইল করি, রিপ্লাই আসেনা। দিনে প্রায় ১০ টা করে ইমেইল করতাম, রিপ্লাই আসতো ১ টা। তাও প্রফেসর লিখতেন তার কাছে নাকি এখন ফান্ডিং নাই। ৩ টার মত ভাইবা দিলাম, লাভ হল না। দুই সেমিস্টার ধরে মেইল করলাম, রেজাল্ট সেম। লাস্ট সেমিস্টারে একটা ফান্ডিং পাইলাম, কিন্তু পার্শিয়াল। হিসাব করে দেখলাম, এই ফান্ডিং দিয়ে আমার গিয়ে লাভ নাই। সবসময় টাকা নিয়ে একটা মেন্টাল প্রেশারে থাকতে হবে। তারপর আবার প্রফেসরের ফিল্ড আমার ইন্টারেস্টের সাথে যায়না। নিজের মনের উপর জোর দিয়ে এভাবে পিএইচডি করা আমার পক্ষে সম্ভব না। প্রফেসরকে ইমেইল করে না করে দিলাম অফারটা। তারপর মনে হল, কাজটা কি ঠিক করলাম! এখন আর ইমেইল করতে ইচ্ছা করে না। সময় পাই, তাও করিনা। জানিনা কি হইছে আমার, হয়ত মন উঠে গেছে বারবার রিজেকশন ইমেইল দেখে। আবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমেরিকাতে একের পর এক ফান্ডিং কাট হচ্ছে। অনেকেরই এপ্লিকেশন ডেফার করে আরেক সেমিস্টারে চলে যাচ্ছে। এত নেগেটিভিটি নিয়ে কার ইচ্ছা করে ধৈর্য ধরে ইমেল করে যেতে! কিন্তু করতে হবে, হয়ত আজকের এই লেখার পর আমি একটা মানসিক শক্তি পাব ইমেইল করার। শুনেছি মনের ভিতরের চাপা কথা শেয়ার করলে হালকা লাগে। হয়ত এই জায়গা থেকেই শক্তিটা আমি পাব আবার। জীবনের এই সময়টায় আরো অনেক চড়াই উৎরাই পার করছি। সেসব না হয় অন্য আরেকটা ব্লগে লিখব।

এবার আসি মূল কথায়। এত হতাশা, এত মানসিক অশান্তির মাঝেও যখন দেখি আমার জীবনের ব্যর্থতা হচ্ছে আল্লাহর দেওয়া উপহার, তখন একটা শান্তি লাগে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবার এক-দুইমাস আগে আমার বাবার প্রাইমারি স্টেজের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরিবারের সবাই তখন পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম। বাবার মুখের দিকে তাকানো যায়না, মা কান্নাকাটি করে সারাদিন। আমি বাসায় বুঝালাম যেহেতু প্রাইমারি স্টেজ, দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বাবাকে নিয়ে ইন্ডিয়া গেলাম, চিকিৎসা করালাম। আলহামদুলিল্লাহ সে এখন সুস্থ। ঠিক এই জায়গাতে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। এই রোগটা যদি আমার ভার্সিটি লাইফে ধরা পড়ত, তাহলে হয়ত একটা সেমিস্টার ড্রপ দিতে হত আমার। আবার যদি প্রাইমারি স্টেজে ধরা না পড়ে, আরো পরে ধরা পড়ত, তাহলে সে এখন পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারতো কী! এরই মাঝে আমার বিয়ে হয়, বাবা ইন্ডিয়া যাওয়ার আগেই সেই কাজটা সম্পন্ন করেন। গ্র্যাজুয়েশনের এক মাসের মাথায় মাত্র দশদিনের নোটিশে আল্লাহর ইচ্ছায় আমি জীবনের বড় একটা কাজ সেড়ে ফেলি।

এবার আসি পার্শিয়াল ফান্ডিং এর জন্য যে মনের মধ্যে খচখচ করে সেটার কথায়। দুইমাস আগে বাবার হঠাৎ বুকে ব্যাথা, বুক চেপে আসে হাঁটতে গেলে। চেকাপ করাতে গিয়ে দেখলাম ৩ টার বেশি ব্লক, বাইপাস সার্জারী করতে হবে। তার মত একজন নিয়মকানুন করা মানুষের যে এতগুলা ব্লক হতে পারে এটা মেনে নিতেই আমাদের অনেক কষ্ট হইহচে। এবার আর প্রাইমারী স্টেজে না, মোটামুটি ফাইনাল স্টেজেই ধরা পড়ল রোগটা। তবে রেগুলার চেকাপে ধরা পড়ায় কিছুটা হলেও ভরসা পেলাম। ডাক্তার বলল হার্ট ঠিক থাকতে থাকতেই সার্জারীটা করা ভাল। বাইরে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা বাতিল করে দিলাম। দেশে অহরহ বাইপাস সার্জারী হয় এখন। আল্লাহ আর ডাক্তারের উপর ভরসা রেখে ল্যাবএইড হাসপাতালে বাইপাসের জন্য ভর্তি করিয়ে দিলাম বাবাকে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ , সে এখন অনেকটা সুস্থ। যত দিন যাচ্ছে তার শারীরিক উন্নতি হচ্ছে। আমি যদি পার্শিয়াল ফান্ডিংটা নিয়ে আমেরিকায় চলে যেতাম, তাহলে তার পাশে কিভাবে থাকতাম এই সময়ে! মার বয়স হয়েছে, সে কি পারতো একা এই মানুষটার দেখাশোনা করতে! যে খারাপ লাগাটা কাজ করত ফান্ডিংটা ক্যান্সেল করা নিয়ে সেটা একেবারেই চলে গেল মন থেকে।

বেকার অবস্থায় বিয়ে করেছিলাম। লজ্জায় বউয়ের বাপের বাড়ির আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যেতাম না। আল্লাহ বলছে তোমরা বিয়ে কর, রিজিকের ব্যবস্থা আমি করে দিব। সত্যিই তাই হল আমার জীবনেও। এপ্রিলের ২০২৪ সালে বিয়ে করলাম, আগস্ট মাসে একটা চাকরি হল। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির লেকচারার হিসেবে জয়েন করলাম। একটু আগে যে প্ল্যান বি এর কথা বলেছিলাম, এই প্ল্যান বি তে শিফট করার পিছনে আমার এই জবটা অনেকটাই দায়ী। আমি দেখলাম আমার পড়াতে ভাল লাগে, অনেক বেশি ভাল লাগে। তাই প্ল্যান করলাম হায়ার স্টাডি করে পৃথিবীর নামকরা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হব। বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্টদের ফান্ড দিব, তাদের ইমেইলের রিপ্লাই দিব। অন্তত ফান্ডিং নাও দিতে পারলে তাদেরকে যেভাবে পারি হেল্প করব।

আলহামদুলিল্লাহ্‌, অনেক ভাল আছি আমরা। তাই জীবনে কি পেলাম, কি হারালাম, এসব নিয়ে আর ভাবি না। হয়ত কিছুদিন পর আবার এই লেখাটা পড়ব, হয়ত আল্লাহর প্ল্যান অনুযায়ী জীবনের বেস্ট একটা সময়ে আমার হায়ার স্টাডি কমপ্লিট হবে। তারপর হাজারো চাকরির ভিড়ে যে চাকরিটা আমার জন্য ভাল হবে, আল্লাহ সেই চাকরিই আমার কপালে রাখবেন। আমি তখন আমার ফ্যামিলি গুছাতে পারব, ফ্যামিলির হাল ধরতে পারব। দোয়া করবেন সবসময় আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য। আর সবসময় একটা কথা মাথায় রাখবেন- "আল্লাহ যা করে আপনার ভালর জন্যই করে"

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এ যে সবকিছুই রিঝিকের অন্তগত। রিঝিক তিঁনিই দান করে থাকেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.