নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

অগ্নিপাখি

প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরই একজন। ভালবাসি বই পড়তে, বই সংগ্রহ করতে, স্ট্যাম্প জমাতে, ভাল চলচ্চিত্র দেখতে, মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে, ভালবাসি কবিতা আর ভালবাসি একা একা পুরনো ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে। হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের বইও ভালো লাগে। অন্যান্য লেখকদের মধ্যেঃ আহমদ ছফা, রশিদ করিম, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, নিমাই ভট্টাচার্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাহানারা ইমাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শহীদ জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, সমরেশ , খূশবন্ত সিং, এলান পো, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, ভিক্টর হুগো, ফ্রাঞ্জ কাফকা, পাওলো কোয়েলহো, হারুকি মুরাকামির লেখাও অনেক বেশী ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলে কবিতায় ডুবে যাই। আবুল হাসান, শহীদ কাদরি এবং জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম পছন্দের একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা যে কোন বই পেলে কিনে পড়ি। ঘৃণা করি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের। এইতো এই আমি।

অগ্নিপাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭১ এ ঢাকার গেরিলা অপারেশনগুলো। পর্ব ০১ -মিশন ইন্টারকন

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:১৭

কিছু পূর্ব কথাঃ

এই বছরের মার্চ এর প্রথম দিকের কথা। এপ্রিল থেকে মাস্টার্স ফাইনাল, পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করছি। সেই কাজেই একটা এন জি ও তে সি ভি দেবার জন্য বনানী যাওয়া। যাই হোক কাজ শেষ করে কাকলী বাস স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে আছি। এইখানে এমনিতেই অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। আবার এই সময়টায় ছাত্র ছাত্রীদের ভিড় থাকে অনেক। অনেকটা কৌতূহলের বশেই এগিয়ে গেলাম বাস স্ট্যান্ড এর সামনেই ফুটপাথের একটা টং দোকানে যেখানে পাশেরই একটা নামকরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলে-মেয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম, বললাম আমার মাস্টার্স এর একটা পেপার এর জন্য একটা রিসার্চ করছি- বর্তমান প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সচেতনতা, জানার আগ্রহ কি রকম তার উপর। তাদের কে প্রশ্ন করবার পর যে উত্তর গুলো পেলাম- তা শুধু হতাশাব্যাঞ্জকই নয় আমাকে অবাক করেছে। তাদের কি একটুও জানতে ইচ্ছা করে না নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে, আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরই তারা দায়সারাভাবে দিয়েছিল এবং এড়িয়ে গিয়েছিল। আমি সবার কথা বলছি না- কিন্তু এখন বেশিরভাগ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীর এই অবস্থা। তারা হয় জানতে চায় না আর না হলে এগুলোকে নিয়ে আলোচনাকে আতলামি আর ব্যাকডেটেড মনে করে। আগেই বলেছি- মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম আগ্রহের বিষয়। আমি বলবনা আমি অনেক কিছু জানি কিন্তু প্রতিদিনই জানার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা করি। ঢাকার গেরিলা অপারেশন সম্পর্কে প্রথম পড়ি- শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর ৭১ এর দিনগুলি বইতে এরপর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অনেক বই আর চলচ্চিত্রে এই গেরিলাদের উল্লেখ দেখি। ২ নম্বর সেক্টর এর কিংবদন্তী মেজর খালেদ মোশাররফ এই সাহসী গেরিলাদের বলতেন- কোন স্বাধীন দেশ জীবিত গেরিলা চায় না; চায় রক্ত স্নাত শহীদ। তাঁর মতে- এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ হবে। এর জন্য দরকার রেগুলার আর্মির পাশাপাশি গেরিলা বাহিনী। আমার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম লেখা এটা। আমার বলব না- বই থেকে পড়ে তারপর লেখা। এই পর্বের সব লেখাগুলোই সেলিনা হোসেন এর ৭১ এর ঢাকা বই থেকে সংক্ষেপিত করে নিজের ভাষায় লেখা হয়েছে। অনেকেই এখন বই কিনতে চান না। নাগরিক ব্যাস্ততায় হয়ত বই পড়া হয়ে উঠে না। অনেক তরুন তরুণীই এখন দিনের একটা বড় সময় ব্যয় করে ফেসবুক আর ব্লগ এর জগতে। তাদের কেউ যদি এই লেখা পড়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস আর অর্জন সম্পর্কে সামান্যতম আগ্রহী হন তাহলেই আমার এ পরিশ্রম সার্থক।



মিশন ইন্টারকনঃ

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি জানোয়ারদের কাছে ত্রাস ছিল “ক্রাক প্লাটুন”। পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিছু অসাধারণ সাহসী অপারেশন সম্পন্ন করে এর গেরিলারা। তাদের প্রথম সাফল্য ছিল তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (পরবর্তীতে হোটেল শেরাটন এবং বর্তমান হোটেল রূপসী বাংলা) এ গ্রেনেড হামলা।



মে মাসের শেষের দিকে আগরতলার এক ক্যাম্পে মেজর খালেদ মোশাররফ এর নির্দেশে একটি সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করা হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় এই স্কোয়াড এর ১৬ জনের একটি দলকে ঢাকায় পাঠানো হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ জনের দলটি ঢাকার দিকে রওয়ানা দেয়। এই ১৬ জনের প্রত্যেক এর কাছে ৪ টি গ্রেনেড ও ২০ পাউনড বিস্ফোরক ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র ছিল না।

ঢাকায় তখন বিশ্বব্যাংক মিশন পূর্ব পাকিস্তান সফরে। ইয়াহিয়া সরকার তখন তাদের এইটা বোঝাতে ব্যাস্ত যে পূর্ব পাকিস্তান এ যা হচ্ছে তা কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন মাত্র!!

বিশ্বব্যাংক মিশন এর সবাই তখন অবস্থান করছেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এ- যা মার্চ এর শুরু থেকেই ছিল আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। এই হোটেলেই ৯ জুন, ১৯৭১ এ সামরিক শাসকেরা বিদেশি সাংবাদিক ও সাহায্যদাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সম্মানে ডিনার এর আয়োজন করে। গেরিলারা এ সময়কেই আক্রমণের উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে।

শুধুমাত্র গ্রেনেড ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ৬ জনের একটি দল গঠন করা হয়। এই দলে ছিল- বাদল, চুল্লু, স্বপন, মায়া, জিয়া এবং আলম। ওইদিন ৬.৩০ মিনিট এ এরা গুলশান থেকে একজন অবাঙ্গালীর গাড়ি হাইজ্যাক করে। এরপর সিদ্ধেশ্বরীর এক বাসায় এসে ৮ টি গ্রেনেড নেয়। এরপর হোটেলের সামনের দিকে গাড়ি থামিয়ে তিনজন নামে এবং দেয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন হোটেল এর সামনের দিকে কয়েকটি বড় গাছ ছিল। হোটেলের মুল প্রবেশপথে তিনটি গ্রেনেড ছোড়া হয়। একটি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল হোটেলে রাখা বিশ্বব্যাংক এর গাড়ির উপর এবং অপর দুটি হোটেলের সামনের বারান্দার দুপাশে।

ইন্টারকন এ হামলা শেষে গেরিলারা গাড়ি নিয়ে মুসলিম লীগ নেতা ও শান্তি কমিটির কর্মকর্তা এ.কিউ.এম. শফিকুল ইসলাম এর বাসায় তিনটি গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা অফিসেও গ্রেনেড হামলা হয়। গেরিলারা তারপর পুরানা পল্টনের গলিতে গাড়ি ফেলে নিজেদের আশ্রয়ে ফিরে যায়।

এই সফল অপারেশন এর মাধ্যমেই শুরু হয় বর্বর পাকিস্তানি জানোয়ারদের বিপক্ষে ঢাকার গেরিলা অপারেশন। (চলবে)

( ২য় পর্ব ঃ অপারেশন গ্যানিজ ও ভোগ)



মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৬

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: চমৎকার একটি পোস্ট । কাজ চালিয়ে যান । পরের পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম । অনুসরনে ।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৫

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ আদনান শাহরিয়ার :)

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮

সোজা কথা বলেছেন: ভালো লাগল।সত্যিই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।চালিয়ে যান।

৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯

ড. জেকিল বলেছেন: পরের পোস্ট তাড়াতাড়ি পাবো আশা করি। সুন্দর লাগলো।

ভালো থাকবেন।

৫| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: ৭১ এ ঢাকার গেরিলা অপারেশনগুলো -মিশন ইন্টারকন্টিনেনটাল হোটেল।
অনেক আগেই আমি পড়েছি।
তার পরও ধন্যবাদ ছোটদের জানানোর জন্য।

৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৮

রাজীব বলেছেন: বাদল, চুল্লু, স্বপন, মায়া, জিয়া এবং আলম

এই মায়া হলো সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া,
বাকীদের পরিচয় দিলে ভালো হতো।

৭| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৩

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লাগল।

৮| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব। বাকিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছি বিভিন্ন বই পড়ে। আশা করি জানাতে পারব।

৯| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ সোজা কথা, ড. জেকিল মহামহোপাধ্যায়। আপনারাও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক লেখা দিন না এই ডিসেম্বর মাস উপলক্ষে।

১০| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১১

ফলক বলেছেন: ধন্যবাদ অগ্নিপাখি আমাদের গৌরবময় ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার জন্য। গর্বিত কাজ।

১১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



দারুণ একটি সিরিজ, চলুক

১২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

আমিতপু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। বিজয়ের মাসে আপনার লেখাটা পড়ে দুর্দান্ত লাগলো। ক্র্যাক প্লাটুন দের নিয়ে আরো জানতে চাই।

আগ্রহী পাঠকদের জন্য আপনি সেলিনা হোসেন এর ৭১ এর ঢাকা বইটার PDFলিঙ্ক দিতে পারেন

১৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০

অগ্নিপাখি বলেছেন: পি ডি এফ লিঙ্ক টা দিব। সবাইকে ধন্যবাদ।

১৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: চমৎকার পোস্ট! আপনি অনুসারিত, পোস্ট প্রিয়তে, এবং পরবর্তী লেখাগুলোর অপেক্ষায়!

শুভকামনা!

১৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২

পাখা বলেছেন: চলুক সাথে আছি...

১৬| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৩

অগ্নিপাখি বলেছেন: ফলক , কান্ডারি অথর্ব , ৎঁৎঁৎঁ, পাখা- আপনাদের ধন্যবাদ

১৭| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: সুন্দর সিরিজ, একে একে সব পড়বো

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.