নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

অগ্নিপাখি

প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরই একজন। ভালবাসি বই পড়তে, বই সংগ্রহ করতে, স্ট্যাম্প জমাতে, ভাল চলচ্চিত্র দেখতে, মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে, ভালবাসি কবিতা আর ভালবাসি একা একা পুরনো ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে। হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের বইও ভালো লাগে। অন্যান্য লেখকদের মধ্যেঃ আহমদ ছফা, রশিদ করিম, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, নিমাই ভট্টাচার্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাহানারা ইমাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শহীদ জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, সমরেশ , খূশবন্ত সিং, এলান পো, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, ভিক্টর হুগো, ফ্রাঞ্জ কাফকা, পাওলো কোয়েলহো, হারুকি মুরাকামির লেখাও অনেক বেশী ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলে কবিতায় ডুবে যাই। আবুল হাসান, শহীদ কাদরি এবং জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম পছন্দের একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা যে কোন বই পেলে কিনে পড়ি। ঘৃণা করি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের। এইতো এই আমি।

অগ্নিপাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭১ এ ঢাকার গেরিলা অপারেশনগুলো। পর্ব ০৭- ইন মেমোরি অফ ২৫ মার্চ ১৯৭১

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:১৪

২৫ শে আগস্ট ১৯৭১; এ দিন ২৫ মার্চ গণহত্যার কালো রাতের পুরো তিন মাস পূর্ণ হল। দিনটি ছিল অন্যান্য দিনের মতই। পশ্চিম পাকি হানাদার সরকার নিরন্তর চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে এইটা বোঝাতে যে- পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। যা ঘটছে টা কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছুই নয়! অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও আস্তে আস্তে সংগঠিত হতে শুরু করেছে। শুরু হয়ে গেছে জায়গায় জায়গায় পাকি হানাদার জানোয়ার বাহিনীর বিপক্ষে বীর বাঙ্গালীর প্রতিরোধ যুদ্ধ। ২৫ শে মার্চ এর গণহত্যার সূচনার ৩ মাস পূর্তির দিনে গেরিলারা পাকিদের শিক্ষা দেবার জন্য অপারেশনের প্রস্তুতি নেয়।

এবার চলুন চলে যাই ১৯৭১ সালের ধানমণ্ডিতে। ধানমণ্ডি ২০ নম্বর রোডের কোন এক বাসায় চীনা দূতাবাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাস করত। সেই চীন যে দেশ বাঙ্গালীদের উপর পশ্চিম পাকি জানোয়ারদের এত বড় গণহত্যার পরেও নির্লজ্জ ভাবে পশ্চিম পাকিস্তান কে সমর্থন দিয়ে আসছিল। এছাড়াও ১৮ নম্বর রোড এ একজন ব্রিগেডিয়ার থাকত এবং দুটো জায়গাতেই পাহারাতে ছিল কিছু পশ্চিম পাকি মিলিটারি পুলিশ। গেরিলাদের কাছে কিন্তু এ খবর অজানা ছিল না।

দুটো বাড়িকে টার্গেট করে গেরিলারা দুটো দলে ভাগ হয়ে যায়। চলুন তাহলে আমাদের প্রথম দলের সাথে পরিচিত হইঃ আলম, বদি, কাজী, রুমি, স্বপন এবং সেলিম। আর দ্বিতীয় দলে ছিলঃ হ্যারিস, জিয়া, মুক্তার, আনু এবং আরও দুজন ছেলে।

এই দুটি দলই কিন্তু অপারেশনের সময় দুটি গাড়ি হাইজ্যাক করে। প্রথম দল ধানমণ্ডি ৪ নম্বর থেকে একটি মাজদা আর দ্বিতীয় দল ধানমণ্ডি ২২ নম্বর থেকে একটি ফিয়াট-৬০০ হাইজ্যাক করে।

চলুন ৪২ বছর পিছিয়ে যাই। সন্ধ্যা ৭-২৫, কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যা নেমে গেছে। ধানমণ্ডির রাস্তা গুলো নীরব। ধানমণ্ডি ২৮ নম্বর রোড থেকে বের হয়ে এলো একটি মাজদা গাড়ি। ভেতরে ৬ টি অস্পষ্ট অবয়ব। গাড়িটি চীনা দুতাবাসের কর্মকর্তার বাসার সামনে দিয়ে ১৮ নম্বর রোডে এসে গতি কমিয়ে দেয়। ব্রিগেডিয়ার এর বাসার সামনের পুলিশরা তখন সান্ধ্যকালীন আড্ডা দেয়ায় ব্যাস্ত। বাড়িটার সামনে দিয়ে কম গতিতে চলবার সময়ই ভেতরে আলমের কমান্ডিং ভয়েস ভেসে এলোঃ “ফায়ার!!!” মুহূর্তেই সন্ধ্যার বিষণ্ণ অন্ধকার আর নীরবতা ভেদ করে দুটি স্টেনগান থেকে দুটি পজিশন এ গুলি ছুটে যায় পাকি পুলিশদের দিকে। বদি ও কাজীর পজিশন ছিল যথাক্রমে পাকি পুলিশদের পেট আর বুক। মুহূর্তেই সব পুলিশ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনাটি ঘটে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে।

মাজদা গাড়িটি এরপর ধানমণ্ডির বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে ৭ নম্বর রোডের ভেতর দিয়ে মিরপুর রোড এ উঠে। ততক্ষনে গেরিলাদের হামলার খবর ঝড়ের মতো ছড়িয়ে গিয়েছে। মিরপুর রোড এ তাঁরা দেখতে পায় ট্রাক ও জীপ দিয়ে রাস্তা ব্যারিকেড দেয়া এবং রাস্তার উপরে এল.এম.জি নিয়ে পজিশন নিয়ে আছে ২ জন পুলিশ। গেরিলারা মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

হটাৎ বদি, রুমি আর আলম এর সম্মিলিত চিৎকার ঃ “ফায়ার!”...... মুহূর্তেই পুলিশ দুজন ঝাঁজরা হয়ে যায়।

গাড়িটি ৫ নম্বর রোডে ঢোকবার পরে রুমি খেয়াল করে একটি মিলিটারি জীপ ওদের পিছে ধাওয়া করছে। হঠাৎ কাঁচ ভাঙবার আওয়াজে ড্রাইভিং এ থাকা আলম ভয় পেয়ে যায়। না, আমাদের গেরিলাদের কিছু হয়নি! গাড়ির পেছনের কাঁচ ভেঙ্গে স্টেন দিয়ে গুলি করে রুমি, বদি আর স্বপন। জীপটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটা ল্যাম্পপোস্ট এ প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে উল্টিয়ে যায়। আমাদের গেরিলারা ততক্ষনে হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।

সফল হয় গেরিলাদের এই অপারেশন।

কিন্তু এই আগস্ট মাসের শেষেই অনেক গেরিলারা পাকি জানোয়ারদের এক অভিযানে বন্দি হন। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর বড় ছেলে রুমি কেউ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, সাথে ছিল তাঁর বাবা, ছোট ভাই। বাবা আর ছোট ভাই ফিরে আসলেও রুমি আজও ফিরে আসে নি। রুমিরা ফিরে আসে না। রুমিরা চলে যায় আর দিয়ে যায় আমাদের এই স্বাধীন দেশ। আর ধ্রুব তারার মতই উজ্জ্বল হয়ে থাকে আমাদের হৃদয়ে। (চলবে)



তথ্যসূত্রঃ সেলিনা হোসেন, "একাত্তরের ঢাকা", আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, ১৯৮৯।



পর্ব ৮ ঃ অপারেশন “টেরর দ্যা সিটি”











মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০৯

গোলক ধাঁধা বলেছেন: চলুক +

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৪

মামুন রশিদ বলেছেন: বিজয়ের গল্প চলুক ।

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: গোলক ধাঁধা, মামুন রশিদ - ধন্যবাদ আপনাদের

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৪২

সোজা কথা বলেছেন: অসাধারণ গেরিলা অভিযান।সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম বাংলা মায়ের এই সাহসী দামাল ছেলেদের অভিযান পড়ে।এই পর্বটা অনেক ভালো লেগেছে।

৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩

অগ্নিপাখি বলেছেন: সোজা কথা, পর্বটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম।
ভালো থাকবেন।

৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: আমাদের গর্বিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য সেইসব সাহসি বীরদের চির সালাম । আপনাকে ধন্যবাদ ।

৭| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১

অগ্নিপাখি বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ আদনান শাহরিয়ার

৮| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: অসাধারণ গেরিলা অভিযান।সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম বাংলা মায়ের এই সাহসী দামাল ছেলেদের অভিযান পড়ে। আমিও পড়লাম অসাধারন মুগ্ধতায় আর সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে গেলাম আমাদের সাহসী যোদ্ধাদের স্মরনে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.