নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

অগ্নিপাখি

প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরই একজন। ভালবাসি বই পড়তে, বই সংগ্রহ করতে, স্ট্যাম্প জমাতে, ভাল চলচ্চিত্র দেখতে, মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে, ভালবাসি কবিতা আর ভালবাসি একা একা পুরনো ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে। হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের বইও ভালো লাগে। অন্যান্য লেখকদের মধ্যেঃ আহমদ ছফা, রশিদ করিম, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, নিমাই ভট্টাচার্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাহানারা ইমাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শহীদ জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, সমরেশ , খূশবন্ত সিং, এলান পো, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, ভিক্টর হুগো, ফ্রাঞ্জ কাফকা, পাওলো কোয়েলহো, হারুকি মুরাকামির লেখাও অনেক বেশী ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলে কবিতায় ডুবে যাই। আবুল হাসান, শহীদ কাদরি এবং জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম পছন্দের একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা যে কোন বই পেলে কিনে পড়ি। ঘৃণা করি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের। এইতো এই আমি।

অগ্নিপাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াতঃ সম্রাট হুমায়ূন এর জীবনী

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:৩২

জীবনী গ্রন্থগুলো বরাবরই আমার পড়ার তালিকার শীর্ষে থাকে। এই ধরনের বইগুলোর একটা আলাদা আকর্ষণী শক্তি রয়েছে। পড়ার সময় মনে হয় যেন ওই ব্যাক্তির পুরো জীবনটাই চোখের সামনে ভাসছে। আর সেই জীবনী গ্রন্থ যদি হয় কোন প্রতাপশালী মোঘল বাদশাহর তাহলে বলাই বাহুল্য যে বইপ্রেমিদের আগ্রহ তখন বেড়ে যায় বহুগুন। গত সপ্তাহেই তাই শেষ করলাম দ্বিতীয় মোঘল সম্রাট “নাসিরুদ্দিন মুহাম্মাদ হুমায়ূন” এর জীবনী গ্রন্থ “তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াতে হুমায়ূনী” বা “সম্রাট হুমায়ূন এর কাহিনী” যার মূল লেখক “জওহর আফতাবচী”।







“নাসিরুদ্দিন মুহাম্মাদ হুমায়ূন” [১৫০৮-১৫৫৬] প্রতাপশালী মোঘল সম্রাট যিনি ১৫৩০-১৫৪০ এবং ১৫৫৫-১৫৫৬ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষ শাসন করেছিলেন। মাঝখানের ১৬ বছর তিনি ছিলেন সিংহাসনচ্যুত। “চউসা” এবং “কনৌজ” এর যুদ্ধে শের শাহের কাছে পরাজয়ের পরে তিনি সিংহাসন হারান। পিতা সম্রাট বাবর এর মৃত্যুর তিন দিন পরে ১৫৩০ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। হুমায়ূন এর ভাইদের মধ্যে পিতা বাবর এর নির্দেশ অনুসারে “কামরান”কে কাবুল এবং কান্দাহার এর শাসনভার, “আসকারি”কে সম্বল এর শাসনভার এবং “হিন্দাল” কে আলোয়ার এবং মেওয়াট এর শাসনভার অর্পণ করেন।



দীর্ঘ সংগ্রামের পড়ে দিল্লীর সিংহাসন পুনরুদ্ধার করবার ১ বছরের মাথায় ১৫৫৬ সালের ১৭ই জানুয়ারি তারিখে মাগরিবের নামাজের সময় সম্রাট সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে যান এবং ২৪শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হুমায়ুনের মৃত্যুসংবাদ জওহর বর্ণনা করেছেন এইভাবে ঃ



"খবর পাওয়া গেলো যে সম্রাট হুমায়ূন মৃত্যুর শরবৎ পান করে এ পার্থিব জগত থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। এ মানবিক অস্থিত্ত চিরস্থায়ী নয়। জীবনের পোশাক যিনি পরিধান করেছেন, তাকে অবশ্যই মরনের পেয়ালায় চুমুক দিতে হবে।"



সম্রাটের জীবনী লেখক “জওহর আফতাবচী” ছিলেন মুলত হুমায়ূন এর জলপাত্রবাহক ভৃত্য। তিনি এ গ্রন্থ রচনা করা শুরু করেন ৯৯৫ হিজরি সনে। জওহর যদিও সম্রাটের ভৃত্য ছিল তবুও তাঁর জানাশোনার পরিধি ছিল বিস্তৃত যা এই গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায়গুলো পড়লেই বোঝা যায়।



সম্রাট হুমায়ূন এর ভৃত্যদের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত হবার কারনে তিনি সম্রাটকে অনেক কাছ থেকে এবং ঘনিষ্ঠভাবে দেখবার সুযোগ পান। ফলে তাঁর রচিত এই গ্রন্থে সম্রাটের সিংহাসনারোহন থেকে শুরু করে যুদ্ধ বিগ্রহ, বিদ্রোহ ও পুনরায় মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং হুমায়ূন এর মৃত্যু পর্যন্ত যে সকল ঘটনা বর্ণিত রয়েছে তাই ঐতিহাসিক এবং গবেষকগণ অধিকতর প্রামাণ্য বলে গ্রহন করেছেন।



লেখক জওহর কে সম্রাটের “আফতাবা” বা “ভৃত্য” রূপেই কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় কাটাতে হলেও দ্বিতীয়বার সম্রাট হুমায়ূন রাজ্য লাভের পরবর্তীতে তাঁকে “পাঞ্জাব” এবং “মুলতান” প্রদেশের “খাজাঞ্চি” বা “রাজস্ব কর্মচারী” এর গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হয়েছিলো এবং সম্রাট আকবরের সময়েও তিনি একই পদে বহাল থাকেন। জওহর এর ভাষায় ঃ



“এ অধম জওহর মহামহিম সম্রাট আকবরের দরবারের এক অতি নগণ্য খাদেম”।



“তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াত” বাংলায় অনুবাদ করেন চৌধুরী শামসুর রহমান ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে যা “কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড” থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো। দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে “দিব্যপ্রকাশ” থেকে বর্তমান সংস্করনটি বের হয় ২০০২ সালে।



পুরো বইটি মোট ৩৩ টি অধ্যায়ে বিভক্ত এবং বই এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫৫। “তাজকিরাতুল ওয়াকিয়াত” নিছক কোন জীবনীগ্রন্থ নয় বরং তা “জওহর আফতাবচী” এর অসাধারণ রচনাশৈলীর কারনে তা শুধুমাত্র ইতিহাস গ্রন্থ হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে হয়ে উঠেছে এক অপূর্ব সাহিত্যকর্ম। বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ইতিহাস এবং সাহিত্যর সংমিশ্রণে এক অসাধারণ অনুভুতি পাওয়া যায়।



দেরি না করে পড়ে ফেলতে পারেন এই বইটি। ইতিহাসের পাতায় পাতায় সময়টা ভালই কাটবে এইটুকু বলতে পারি।



লেখাটি শেষ করছি জীবনীর শুরুতে ভুমিকায় “জওহর আফতাবচী” এর লেখা একটি কবিতা দিয়ে ঃ



“কথার মালা সাজিয়ে দিলাম লেখনীর মুখে,

মানুষের স্মৃতি সঞ্চিত থাকে কথারই বুকে”।











মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।


শুভ জন্মদিন।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:২৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা।
ভালো থাকবেন।

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:০৭

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো রিভিউ । জীবনী গ্রন্থ আমারও অনেক প্রিয় । এবং ঐতিহাসিক কোন ব্যাক্তির হলে সেটা আরও বেশি ভালো লাগে । বইটা পড়তে হবে তালিকায় যোগ করলাম ।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

অগ্নিপাখি বলেছেন: আমার ভালো লেগেছে পড়ে।
সম্রাট জাহাঙ্গীর এর জীবনীটাও পড়তে পারেন।

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:৩৫

উপপাদ্য বলেছেন: ভালো লাগলো,

অনেক ধন্যবাদ

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২

অগ্নিপাখি বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।

৪| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ ভোর ৬:৫৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো। পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩

অগ্নিপাখি বলেছেন: বইটা নীলক্ষেতের পুরনো বই এর দোকানে পাবেন।
দেরি না করে কিনে ফেলুন।
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.