নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

অগ্নিপাখি

প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরই একজন। ভালবাসি বই পড়তে, বই সংগ্রহ করতে, স্ট্যাম্প জমাতে, ভাল চলচ্চিত্র দেখতে, মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে, ভালবাসি কবিতা আর ভালবাসি একা একা পুরনো ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে। হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের বইও ভালো লাগে। অন্যান্য লেখকদের মধ্যেঃ আহমদ ছফা, রশিদ করিম, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, নিমাই ভট্টাচার্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাহানারা ইমাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শহীদ জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, সমরেশ , খূশবন্ত সিং, এলান পো, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, ভিক্টর হুগো, ফ্রাঞ্জ কাফকা, পাওলো কোয়েলহো, হারুকি মুরাকামির লেখাও অনেক বেশী ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলে কবিতায় ডুবে যাই। আবুল হাসান, শহীদ কাদরি এবং জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম পছন্দের একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা যে কোন বই পেলে কিনে পড়ি। ঘৃণা করি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের। এইতো এই আমি।

অগ্নিপাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেটামরফোসিসঃ পরাবাস্তবতার সন্ধানে

৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪২

তাঁর সাহিত্যর দুর্বোধ্যতা, হতাশাবাদিতা এবং বাস্তবতা বিবর্জিত কাহিনীচিত্রের জন্য “ফ্রাঞ্জ কাফকা” বিশ্বসাহিত্যর একটি আলোচিত নাম। সাহিত্য সমালোচকেরা তাঁর সাহিত্যকর্মের ধোঁয়াশা চিত্র এবং দুর্বোধ্যতার জন্য তাঁর রচনাকে অস্থিত্তবাদী, অ্যাবসার্ড সহ বিভিন্ন অভিধায় অভিহিত করেছেন। মূলত কাফকার গল্পের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি পাঠকের কাছ থেকে অত্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক মনোযোগ দাবী করে তা গল্পগুলো পড়লেই বোঝা যায়।



প্রাগের এক সচ্ছল ইহুদি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৮৮৩ সালে কাফকা জন্মগ্রহণ করেন। প্রাগের জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের পাঠ সমাপ্ত করেন ১৯০৬ সালে এবং একটি বীমা কোম্পানিতে কয়েক বছর চাকরী করেন। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। পরবর্তীতে জীবনের অনিশ্চয়তা, ক্ষুধা এবং দারিদ্রপীড়িত হয়ে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে এক প্রতিভাময়ী ইহুদি অভিনেত্রী “ডোরা ডাইমান্ট” এর সাথে পরিচয় হবার সুবাদে তিনি এই বোধ কাটিয়ে উঠেছিলেন। প্রাগ ত্যাগ করে তিনি তাঁর স্ত্রী কে নিয়ে বার্লিনে বসবাস করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সময়ের দুরারোগ্য ব্যাধি যক্ষ্মায় অসহ্য কষ্ট এবং যন্ত্রণা ভোগের পড়ে মাত্র ৪১ বছর বয়সে ১৯২৪ সালের মাঝামাঝি প্রতিভাবান এই লেখক মৃত্যুবরণ করেন।















এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস ( দি ট্রায়াল, দি কাসল এবং আমেরিকা) ছাড়াও অত্যন্ত উচ্চমানের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সমৃদ্ধ কিছু ছোটগল্প রচনা করেছেন। তবে বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে কাফকার নামের সাথে যে গল্পের (মূলত উপন্যাসিকা) নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে তা হলো – “মেটামরফোসিস” বা “রূপান্তর”। কোন কোন বিদগ্ধ সমালোচক এই গল্পের প্রথম বাক্যটিকে বর্ণনা করেছেন আধুনিক বিশ্ব সাহিত্যর সবচাইতে চমক সৃষ্টি করা বাক্য হিসেবেঃ



“নানা আজেবাজে স্বপ্ন দেখার পর একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে গ্রেগর সামসা দেখলো সে এক বিশাল পতঙ্গে রুপান্তরিত হয়ে তার বিছানায় শুয়ে আছে।“



গল্পের নায়ক গ্রেগর সামসা একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কর্মী। মধ্যবিত্ত পরিবারে সে তার বাবা-মা এবং তরুণী ছোট বোনকে নিয়ে থাকে। সংসারের সব দায়িত্ব তার হাতে। কঠিন জীবনযুদ্ধ, একঘেয়ে নিরানন্দ কাজ, দুশ্চিন্তা এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদাসীনতা শর্তেও গ্রেগরের একটি লুকায়িত গর্ববোধ রয়েছে কেননা সেই সংসারটা চালাচ্ছে। ছোটবোনকে সে অসম্ভব ভালবাসে এবং তাকে সঙ্গীতবিদ হবার সুযোগ করে দিতে সে বদ্ধপরিকর। অপ্রত্যাশিত বাক্যটি দিয়ে গল্পটি শুরু হবার পড়েই পাঠকের চোখে গল্পের অগ্রগতির সাথে সাথে এই বিষয়গুলো ধরা পড়বে।



গ্রেগর সামসা প্রথমে ভেবেছিল পতঙ্গে রূপান্তরিত হবার ব্যাপারটা হয়তোবা তার “স্বপ্নের সম্প্রসারণ”। কিন্তু না, গ্রেগর আসলেই বড় একটি আরশোলায় পরিনত হয়। এই সময় লেখক গ্রেগরের যে বর্ণনা দিয়েছেন ঃ আরশোলায় রুপান্তরের পড়ে গ্রেগরের কি কি পরিবর্তন হয়েছিলো, কিভাবে সে তার অঙ্গপ্রতঙ্গ নাড়াচাড়া করবার কৌশল রপ্ত করলো- তার উজ্জ্বল বর্ণনা এক কথায় বিস্ময়কর, অসাধারণ।



আরশোলায় রূপান্তরের পড়ে গ্রেগর তার চেনা জগত থেকে এক সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার বাবার এবং বোনের আচরন দিনে দিনে তাকে হতাশাতে নিমজ্জিত করে। গ্রেগরের ট্র্যাজিক অবস্থার উজ্জ্বল চিত্র ফুটে উঠে তার আদরের ছোটবোনের আচরন এবং দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দিয়ে। তার করুন পরিনতি ফুটে উঠে গল্পের শেষ বাক্যটির মধ্যে দিয়েঃ



“......তার মাথা আপনা থেকেই মেঝের উপর লুটিয়ে পড়লো আর তার নাক থেকে নির্গত হলো তার শেষ নিঃশ্বাসের মৃদু মন্থর বায়ু”।



গল্পটি এক পর্যায়ে হয়তো অবিশ্বাস্য; কারন কোন মানুষই বাস্তবে আরশোলাতে রূপান্তরিত হতে পারে না! মানুষের হতাশা, কষ্ট, দুর্দশার এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটে উঠেছে নায়ক গ্রেগরের মাধ্যমে। পতঙ্গে রূপান্তরিত গ্রেগরের প্রাত্যহিক জীবনের হতাশা তাই পাঠককে মুহূর্তেই নিয়ে যায় পরাবাস্তবতার জগতে।



“কাফকার গল্পসমগ্র” অনেক আগেই সংগ্রহে ছিল।“মেটামরফোসিস” এর নাম অনেক শুনলেও আগে এই গল্পটি পড়া হয়ে উঠেনি। যারা এখনও পড়েননি তারা পড়ে ফেলতে পারেন। এক ভিন্ন রকম পরাবাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন এটুকু বলতে পারি।



মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট।

৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৩

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ৩০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০১

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: প্রথমেই ভালোলাগা (+) দিয়ে মার্ক করলাম...
ধন্যবাদ এমন একজন লেখকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য...
আচ্ছা, একটা কোয়েরী আছে, তাঁর অন্যান্য লেখা কি অনলাইনে পাওয়া যাবে, লিংক দিলে উপকৃত হতাম...

আমি আজকেই পরিচিত হলাম উনার সাথে আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে ...

তবে যে জিনিসটা আমাকে আকর্ষণ করলো তা হচ্ছে, পোস্টে বর্ণিত তাঁর লেখার দুর্বোধ্যতা ...
যে জিনিসটা আমাকে টানে ...

৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৮

অগ্নিপাখি বলেছেন: আপনার ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম। হ্যা, কাফকার সব লেখাই অনলাইন এই পাবেন। তবে অধ্যাপক কবির চৌধুরীর অনূদিত "কাফকার শ্রেষ্ঠ গল্প" বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন।
কাফকার সবগুলো গল্পতেই কেমন জানি একটা মন খারাপ করা হতাশা ছুঁয়ে থাকে (আমি এখন পর্যন্ত যে কয়টা গল্প) পড়েছি। আর প্রত্যেকটা গল্পই অনেক দুর্বোধ্য; কিন্তু সেই দুর্বোধ্যতার মধ্যেই একটা গল্পের অর্থ আর মূল বিষয়বস্তু লুকানো থাকে।

ভালো থাকবেন।

৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

অগ্নিপাখি বলেছেন: Click This Link

মেটামরফোসিস এর লিঙ্ক।


Click This Link ALFREDO Kafka_The_Complete_Stories.pdf

কাফকার সব ছোটগল্পের লিঙ্ক।

৩| ৩০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১০

সোহানী বলেছেন: হাঁ কাফকার নাম শুনেছি কিন্তু লেখা পড়া হয়নি। আপনার রিভিউ এর সুবাধে অবশ্যই বই কালেক্ট করবো শীঘ্রই।

রিভিউ ++++++

৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১৫

অগ্নিপাখি বলেছেন: অধ্যাপক কবির চৌধুরীর অনূদিত "কাফকার শ্রেষ্ঠ গল্প" বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন।

প্লাস এর জন্য ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

৪| ৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: জাদুবাস্তবতার পাঠ দিয়েছিলেন যিনি বিশ্বকে সেই কাফকা দ্বারা আমি প্রবল প্রভাবিত। ভালো লাগলো পোস্ট।

৩০ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:১০

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন।

৫| ৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৪

এম মশিউর বলেছেন: “নানা আজেবাজে স্বপ্ন দেখার পর একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে গ্রেগর সামসা দেখলো সে এক বিশাল পতঙ্গে রুপান্তরিত হয়ে তার বিছানায় শুয়ে আছে।“

বাক্যটিতে সত্যিই অনেক চমক!!


পোস্ট অনেক ভালো লেগেছে।

৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

৬| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬

ফা হিম বলেছেন: এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে পড়েছিলাম বইটা। কি অদ্ভূত!! এবং অবাস্তব একটা গল্প, কিন্তু পড়তে পড়তে গিয়ে মোটেও মনে হয়নি, বরং এটাই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল।

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৬

অগ্নিপাখি বলেছেন: এই গল্পের মজাটা এখানেই। এক পর্যায়ে মনে হয় যে এইটা অসম্ভব। কিন্তু পরে লেখকের অদ্ভুত বর্ণনাতে তাই মনে হয় স্বাভাবিক।
ভালো থাকবেন।

৭| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২৮

আহসানের ব্লগ বলেছেন: +

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৮

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।

৮| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: মাসসেরা সংকলনে যাচ্ছে...
অভিনন্দন অগ্রীম ...

২২ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.