![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যেকোন সমালোচনা, আলোচনা, যেকোন কিছু জানাতে পারেন [email protected] ঐক্যবদ্ধ লড়াই ই মুক্তির একমাত্র পথ।
আমরা এমন একটা সময়ে বেচে আছি, যে সময়ে মানুষ মরে গিয়েও প্রমান করতে থাকে যে সমাজে অনেকগুলি কঠোর স্তরায়ন আছে। আশুলিয়ার মৃত শ্রমিকেরা সেই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন অনবরত।
জুরাইন কবরস্থানে বাকীসবগুলো কবরে সবার পরিচয় দেয়া আছে, নিজের নাম পিতার নাম এবং কোথায় ছিল তাদের ঘর ইত্যকার সকল পরিচয়; কিন্তু এই কটা কবরের কোন পরিচয় নেই এনারা শুধুই সংখ্যা।
বি১ থেকে বি৫৮ পর্যন্ত তাদের নাম, এমনকি তাদের পরিচয়ও।
জিয়ারুল নামের এক যুবক এমনি একটি নম্বর নিয়ে জুরাইন গোরস্থানে ঘুরছেন, সাভারে তাজরীন গার্মেন্টে পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাওয়া তার স্ত্রীর মৃতদেহের কবর। নম্বর ৫১।
ডি.এন.এ টেস্ট করে পুড়ে,প্রায় গলে যাওয়া লাশের পরিচয় নির্ধারণ করা গেছে,নম্বর ৫১। .ইনিই জিয়ারুলের স্ত্রী।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বি৫১ নম্বর লাশটা কবরস্থানে পাওয়া যাচ্ছে না,৫০ আছে ৫২ আছে কিন্তু ৫১ নেই।
নভেম্বরের ২৪ তারিখে তাজরীন গার্মেন্টের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পরে জিয়ারুল লাশ শনাক্ত না করতে পেরে নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিলেন, সে হয়তো কোথায় হারিয়ে গেছে। ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে একান্ত মানুষটি মারা গেছে এটি ভাবতে মন সায় দিচ্ছিলো না। পোড়া , খোবলা ওঠা লাশগুলোর মধ্যে তার স্ত্রী থাকতে পারে এটা মেনে নেয়া উনার জন্য অসম্ভব।
কিন্তু ডি.এন.এ টেস্টের রেজাল্ট তাকে ভাবতে বাধ্য করলো; না সে বেচে নেই। ছেলেটা, মেয়েটা মাকে হারিয়ে দিশেহারা। বাবা কাছে থাকলে এই বাচ্চাদের খাওয়া দাওয়া হয়, না হলে হয়না। বাবা জিয়ারুল সব কাজ ফেলে প্রায় দুমাস বাড়িতে, মেয়ে কান্না শুরু করলে বাবা কান্না করেন, আর বাবা যখন কাদে সবাই এক সাথে কান্না শুরু করে।
দু দিন আগে একটা দৈনিক থেকে ফোন করে জিয়ারুলকে জানানো হলো তার স্ত্রীর লাশের নম্বর। কিন্তু কবরস্থানে লাশটা নেই।
লাশটা মরে গিয়ে হয়তো বেচে ছিল জিয়ারুলের মনে, কিন্তু আজকে কবরস্থানে আসতে আসতে সে সত্যিই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল তার স্ত্রী নেই। কিন্তু এইবার লাশ হারিয়ে যাওয়াটা তাকে প্রচন্ড বেদনাতুর করে তুলল, তার গাল বেয়ে নেমে আসা পানি আর যে বাধ মানছে না।
কবর কর্তৃপক্ষ জানালেন আসার কথা ৫৮ টা লাশের মধ্যে ৫৩টা লাশ তারা আনজুমান মুফিদুল ইসলাম মারফত পেয়েছেন, বাকী ৫ টা লাশ কোথায় তারা তা বলতে পারেন না। তারা আনজুমান মুফিদুল ইসলাম এ যোগাযোগের পরামর্শ দিলেন জিয়ারুলকে।
জিয়ারুল ভাবছেন যার লাশ নয় সে লাশ নিয়ে কি করবে, তার সঙ্গে আসা প্রতিবেশী তাকে বার বার শোনাচ্ছেন ”যে চলে গেছেন সে তো মরে বেচেই গেছে কিন্তু যারা বেচে আছেন তাদের ফেলে গেছে জ্বালায়”।
জিয়ারুলদের এই খোজাখুজি করার ঝামেলাটুকু নেয়াও কর্ঠিন, কাজ না করলে অন্ন জোটানোই তো দায়। জিয়ারুল এর একজন প্রতিবেশীর তিন মেয়ে মারা গেছে তাজরীনে, লাশ পাওয়া গেছে একজনের বাকী দু’জনকে খোজার ইচ্ছাও তিনি রাখেন না। তিনি বলছেন ”যে গেছে তো গেছেই এখন তো আমাদেরই যাওয়ার দশা”।
কিন্তু জিয়ারুল খুজে বেড়াচ্ছেন, মুফিদুল ইসলাম থেকে তিনি জানতে পারলেন তারা ৫৩ টি লাশ ঢাকা মেডিকেল মর্গ থেকে পেয়েছেন বাকীগুলোকে শনাক্তকারীদের নিকটে ম্যাজিস্ট্রেট হস্তান্তর করেছেন।
জিয়ারুল আরো একজনকে খুজে পেয়েছেন যিনি একটি নাম্বার নিয়ে ঘুরছেন, তার লাশও জুরাইন গোরস্থানে নেই। নম্বর ৫৯। .ডি.এন.এ টেস্টের ফলাফল মিলে যাবার পরও তিনি লাশ পাচ্ছেন না।
ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে উনারা জানতে পারলেন সবকটা লাশ পুলিশকে দেয়া হয়েছে পুলিশ কাদেরকে দিয়েছে এটা মর্গের কতৃপক্ষ জানেন না।
সবারই দায় সারার প্রাণান্ত চেষ্টা।
কিভাবে ডি.এন.এ ফলাফল মিলে যাবার পর, তার নাম ঠিকানা পরিচয় সবকিছু নথিতে থাকার পরও লাশ অন্য কেউ নিয়ে যেতে পারে এটা জিয়ারুল বুঝে উঠতে পারেনা। সে হয়তো কোনদিন স্কুলেও যায়নি, কিন্তু পৃথিবীর পাঠশালা তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয় এরা মানুষ না; যারা মৃত মানুষকে নিয়ে অবহেলা করে, ব্যাবসা করে কিবা কটা টাকার জন্য জালিয়াতি করে তারা কিভাবে মানুষ হতে পারে?
জিয়ারুল পুলিশের কাছে যায়, পুলিশ জানায় ”জেলা প্রশাসকের কাছে দরখাস্ত করতে হবে”।
তাজরীনে পুড়ে যাওয়া মারা যাওয়া মানুষদের নিয়ে দেশের রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন যে নজীরবিহীন মিথ্যাচার, অবহেলা আর ফাসেকী আচরণ করল তা সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রবল নীরবতা সুযোগ নিয়ে। প্রশাসন জানে জিয়ারুলরা হয়তো এতদুর আসবেনা, ন্যায্য হিস্যা না দিলেও চুপচাপ চলে যাবে কিন্তু সময় খুব দ্রুতই পাল্টায়, দেশের প্রধানতম আইনপ্রনেতাগণ এটা আমলে নেন না।
জিয়ারুলরা আজকে নিজেদের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছেন এই দেশ, এই রাষ্ট্র তার নয়। এখানকার প্রশাসকেরা তার প্রভু একইসঙ্গে শত্রুও।
জিয়ারুলদের এই বদলে যাওয়া অনুভুতির প্রচন্ড ধাক্কা সইবার ক্ষমতা আমাদের শাসকগোষ্ঠীর নেই।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫
হোরাস বলেছেন: হুম
২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪১
শূন্য পথিক বলেছেন:
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
হোরাস বলেছেন: হুম হুম
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৪৬
۞ বলেছেন: