![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যেকোন সমালোচনা, আলোচনা, যেকোন কিছু জানাতে পারেন [email protected] ঐক্যবদ্ধ লড়াই ই মুক্তির একমাত্র পথ।
গত ৩০সেপ্টেম্বর ২০১৩ প্রতিবছরের মতো সমাজ-রুপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র আয়োজন করে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ একাদশ স্মারক বক্তৃতা।বিষয় ছিল যশোর অঞ্চলের ১৯৭১ সালের সংগঠিত প্রতিরোধযু্দ্ধ। বক্তা নূর মোহাম্মদ ভাই গল্পের ছলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া অবিশ্বাস্য সব ঘটনার বয়ান দিয়েছেন।হলরুমের অধিকাংশ লোকই বোধহয় ৭১ এর যশোর,মাগুরা কিবা লহুড়িয়া, পেড়লিতে চলে গিয়েছিলেন। সম্মুখযুদ্ধ, রাজাকারদের নির্মম নির্যাতন কিংবা যোদ্ধাদের অসামান্য ত্যাগের বর্ননায় সকলেই মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলন। নূর মোহাম্মদ ভাই ১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন, পরবর্তীতে পার্টি সভ্য হন।৬২ থেকে ৬৯ বিভিন্ন আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ছয়বার জেলে ছিলেন।৭১ সালে পুর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি(এম.এল) এর পক্ষে যশোর জেলা কমিটির সদস্য ও সামরিক কমিশনের আহবায়ক ছিলেন।নূর ভাইয়ের সে দিনের বর্নিত কয়েকটা ঘটনা বলবো,
১.হেলেনের পুরো নাম ছিল লুৎফুননাহার হেলেন, হেলেনকে রাজাকাররা ধরে মাগুরা নিয়ে হত্যা করে।সে ছিল এক মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক হত্যাকান্ড। এই ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্ত দেশে ঐ সময় খুবই কম ছিল। হত্যা ও হত্যা পরবর্তী দৃশ্য ছিল অন্যান্য হত্যাকান্ড থেকে বেশ আলাদা।১৯৬৮ সালে মাগুরা বি.এ পাশ করে মাগুরা গার্লস হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন । নিয়মিতভাবে সংগঠন ইপিসিপি(এম.এল) এর সাথে যোগাযোগ সংসার আর ছোট সন্তান লালন এক হাতেই করতেন।বয়ানকারীর (নূর মোহাম্মদ) সাথে তার স্কুল জীবন থেকেই পরিচয় ছিল। উনার স্বামী আলী কদম জানান অক্টোবরের প্রথম দিকে রাজাকারদের গুপ্তচরের সহায়তায় মহম্মদপুর থানার এক গ্রামে ধরা পরেন হেলেন ও তার ২বছর ৫মাস বয়সী শিশুপুত্র দিলীর। তাকে মাগুরায় পাক বাহীনি কমান্ডারের কাছে নিয়ে আসা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। আলোচনায় জামাতপন্থী ঘাতক দালালরা পাক কর্মকর্তাকে জানায়,হেলেন মাগুরার বামপন্থী নেতা মাহমুদুল হক সাহেবের বোন এবং মহম্মদপুর এলাকার মুক্তিবাহীনির প্রধান বামপন্থী নেতা আলী কদরের স্ত্রী।সূতরাং তার মুক্তির প্রশ্নই ওঠেনা।ঘাতক দালালদের ইচ্ছাই কার্যকর হয়।হেলেনের মৃত্যু হয় ১৯৭১ এর ৫ অক্টোবর রাত্রিবেলা, ঐ রাত ছিল মুসলিমদের পবিত্র রাত শব-ই-বরাত।হেলেনের শিশুপুত্র দীলিরের অনবরত করুন কান্নাকে উপেক্ষা করে অমানবিক নির্মম শারীরীক নির্যাতন চালিয়ে পাকবাহীনি ও রাজাকাররা হত্যা করে হেলেনকে। আর তার লাশ জীপের পেছনে বেধে রাস্তার উপর টানতে টানতে নিয়ে যায় মাগুরা শহরের অদূরে নবগঙ্গার ডাইভারশন ক্যানেলে.....।
২. জুলাই মাসে শালিখা থানার অন্তর্গত পুলুম গ্রামে (যশোর২২কি.মি,নড়াইল১০কি.মি,মাগুরা১৮কি.মি দুরত্বে অবস্থিত) গ্রামে ঘাটি এলাকা তৈরী করতে সমর্থ হয় ইপিসিপি(এম.এল) এর সামরিক বাহীনি।ইপিসিপি(এমএল) মানে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি(মাক্সিস্ট লেনিনিস্ট); সেখানকার কৃষকদের প্রধান করে তেভাগা চালু করে পার্টির সামরিক বাহীনি, জনগণের বিপুল সমর্থনে এগিয়ে চলে যুদ্ধ প্রশিক্ষন ও ছোটখাট যু্দ্ধ ।শরনার্থীদের ভারতে নিরাপদে আশ্রয় নিতে এই বাহীনি আর ঘাটি বিপুল অবদান রেখেছিল।১২ অক্টোবর এই এলাকার পতন ঘটাতে পাক-বাহীনি ও রাজাকার বিপুল শক্তি নিয়ে চিত্রা নদীর দক্ষিন পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে তীব্র আক্রমন করে।বেলা তিনটা পর্যন্ত অত্যন্ত অল্প যুদ্ধ সরন্জাম নিয়ে রাজাকারদের ঠেকিয়ে রাখে,পরে কৌশলে বাহীনি চিত্রা নদী পার হয়ে এপারে চলে আসে।রাজাকারদের হাতে মধুখালির লাল মিয়া ও ওহাব ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।নূর মোহাম্মদ ভাই বলছেন," আমার কাছে একটা এস.এল .আর একটি রিভলবার ও একটা পিস্তল কোমরে দুতিন পেটি গুলি আর একটা অতিরিক্ত ম্যাগজিন। পালানোর পথে পাট খেতে একজন খোড়া মুক্তিযোদ্ধার সাথে দেখা হলো,পড়ে আছে।আমি ওই খোড়া মনিরকে কাধে তুলে নিলাম এবং যু্দ্ধের প্রচন্ড শারীরীক মানসিক পরিশ্রম আর শরীরের ভারের কারনে ধীরগতিগত কারনে পথ হারিয়ে ফেললাম।এগিয়ে যাওয়া একটি সেকশনের কর্মীরা ২ থেকে ৩বার ফিরে এসে আমাকে উদ্ধার করেছিল। আমি মুনীরকে জিজ্ঞাসা করলাম, বল তুই কেন এসেছিলি লাহুড়িয়া থেকে? বলল, বিপ্লব করতে। বললাম এখন বিপ্লবের স্বার্থেই তোকে গুলি করা দরকার।কারন তুই জীবিত থাকলে রাজাকারদের রাস্তা বলে দিবি তোর একার জন্য আমরা সব মরব।আর আমার পক্ষে তোকে নিয়েও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, দুইবার অনেক পিছনে পড়ে গেছি ওরা ধরে ফেলতে পারে।ও বলল আপনার এই কষ্ট দেখে আমারও তাই মনে হচ্ছে, দেন আমারে গুলি কইরা দেন। গর্জে ওঠলাম চোওওপ....বলে কপালে পিস্তল ঠেকালাম। কয়েকদিনের এত্ত চাপ , সারাদিনের ক্লান্তি তার উপর আমার অস্ত্রের ওজন।
আবার মুনীরকে কাধে তুলে হাটা দিলাম।" বিমল বিশ্বাসের লেখায় এই রাতের ঘটনার উল্লেখ আছে।
সেই মুনীর এখন এলাকার আ.লীগের চেয়ারম্যান(নূর ভাই কোন এলাকার কথা বলেছে খেয়াল নাই)।
(যশোরের প্রতিরোধযুদ্ধের নুর ভাইয়ের লেখা এরকম আরো খুটিনাটি ঘটনা আর আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক দ্বন্ধ , আওয়ামীলীগের ভুমিকা নিয়ে একটা পুস্তিকা বের করেছে সমাজ-রুপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র।
আগামী বছর যশোর প্রতিরোধের আনুপূর্বিক সব ঘটনা নিয়ে সংহতি প্রকাশন বইমেলায় এটা বই আকারে বের করবে।)
৭১ সাল এমন একটা প্রজন্মের জন্ম দিয়েছিল যাদেরকে অর্থনৈতিক তুল্যমূল্যে বিচার করা যাবেনা টাকার দামে পাওয়া যাবেনা, যে মানুষটা জীবনটাই দেশের জন্য দিয়ে দিতে কার্পণ্য করছেনা তার আবার পিছুটান কি? আমরা এই মানুষদের কাজে লাগাতে পারিনাই, উপরন্তু তারা নিগৃহিত হয়েছেন।এই ব্যর্থতার এক গভীর ছায়াপাত আমাদের রাষ্ট্রের উপর পড়ে আছে।
©somewhere in net ltd.