নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হুমায়ূন আহমেদের বই যখন পড়ি, তখন আমার লেখার ইচ্ছাটা জেগে উঠে। আপাতত ছোট গল্প দিয়ে না হয় শুরু করলাম..

রব্বানী রবি

রব্বানী রবি

রব্বানী রবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহরের চেনা গলি

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:১৯

সেদিন কেনো জানি বুক ফাটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছিলো। ইচ্ছা করছিলো খেলার মাঠটা সঙ্গে করে নিয়ে যাই। বন্ধুগুলা সেদিন এসে বলেছিলো, চল পালিয়ে যাই আজ ! তাহলে, তোদের ফ্লাইট ক্যানসেল হয়ে যাবে। আর তোরাও থেকে যাবি !

চেষ্ঠা করেছিলাম, তাও কান্না লুকাতে পারি নি। দাদীর কাছে গ্রাম্য গল্প শোনাটা আর হবে কিনা,কে জানে ! দাদী অসম্ভব রকমের ভালো। বিশেষ করে পরিক্ষায় যখন কম নাম্বার পাই, তখন দাদী আমাকে একটু বেশী রকমের সার্পোট দেয়। না হলে বাবাটা যে সেই কবে আমাকে কেটে কুঁটে খেয়ে ফেলতো কে জানে !

আজ সেই জাঁদরেল বাবাটাও কাঁদছেন নিঃশব্দে। কতো যে মার খেয়েছি হিসেব নেই। বাবা অফিস থেকে ফিরার সময় একটা না একটা ইস্যু নিয়ে বাড়ি ফিরবেনই। সেদিন মাঠে শিবলু ভ্যাইয়াটা বললো, তোদের আজ খেলায় নেওয়া যাবে না, টেপের টাকা দেস নাই। যা ভাগ ! প্রতিদিন কি মা থেকে বলের টেপের জন্য টাকা চাওয়া যায় !

তাই সিহাবদের বাসার সামনে ইট বসিয়ে ফাটা টেনিস বল দিয়ে আমরা খেলতে লাগলাম। আজাদটা একটা বল এতো জোরে মারলো, বল ৩য় তলায় থাকা দিয়া আপুর রুমের জানালা দিয়ে ডুকে আপুর তিব্বত কদুর তেলের কৌটাতে গিয়ে লাগল। দিয়া আপু তখনি চুলে তেল দিচ্ছিলেন, তেলের কৌটা খোলা রেখে।

ততক্ষণে সবাই পালিয়েছে। আর ঠিক তখনি আমার স্যান্ডেলের সুসাইড করা লাগলো ! এই ছেঁড়া স্যান্ডেল নিয়ে কি দৌড়ানো যায় ! আপু ভাবলো বলটা আমিই মেরেছি।

ঠিক তখনি কেনো 'বুইড়া কানা' অফিস থেকে ফিরলো ! বুইড়া কানা, দিয়া আপুর বাবা। চোখে ভারি চশমা আর পাড়ার গলির ছেলেদের সাথে ক্যাট ক্যাট করে বলেই আমাদের কাছে বুইড়া কানা নামে তিনি পরিচিত।

রাতে রহিম চাচার দোকানে বাবাকে বলেছেন, আমার খেলার আর দিয়া আপুর তেল পড়ে যাওয়া কীর্তির কথা। সেই সেরেছে। বাড়িতে ডুকেই ঝড়ের কান্ড ঘটিয়ে চলেছেন। দাদীর জন্য তো আমাকে মারতে পারে না, তখন ঝড় উঠে আমার পড়ালেখার ব্যাপার নিয়ে। হে, সারাদিন খেলাধুলা, পাড়ার লোকের বদনামি পড়ালেখার তো বালাই নাই। আরো যে কতো কি !

সেই দিয়া আপুটা আজ মাথায় হাত রেখে বলছেন,ভালো করে পড়াশোনা করবি। খবরদার দুষ্টুমি করবি না। আরো অবাক করা ব্যাপার, বুইড়া কানা আমাকে একটা " ফাউন্টেনপেন " উপহার দিয়েছে।

আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো রাসেলকে। কখনো আমাদের সাথে তেমন খেলতো না। যেদিন খেলতো সেদিন দেখতাম ও ঠিকমতো বলও করতে পারে না। আর ব্যাট করতে গেলে হয় বোল্ড হতো আর না হয় ব্যাটসম্যান হয়ে ক্যাচ শিখাতো ! যেদিন ও খেলতে আসতো না, সেদিন ও গল্পের বইয়ে গুঁজে থাকতো।

একদিন হুট করে আসা বৃষ্টির দিনে, আশ্রয় নি রাসেলের ঘরের সামনে। রাসেল টের পেয়ে আমাকে তার ঘরে নিয়ে যায়। এই প্রথম তার ঘরে যাওয়া। ঘরে ডুকে আমি খুব অবাক হই,ঘর ভর্তি গল্পের বই। রাসেল তখন তিন গোয়েন্দা সিরিজের ভলিউম - ৩৭ পড়ছিলো। ওর কাছ থেকেই আমার বইয়ের জগতে আসা। তবে ওর মতো হয়ে বিকেলে, খেলাটা মিস দিতাম না। বইয়ের মাঝে বই রেখে রাতে তিন গোয়েন্দা পড়তাম,কেউ টেরই পেতো না। সবাই ভাবতো আর বলতো আমি এতো বদলে গেলাম কি করে ! আমার এতো পড়ুয়া হয়ে উঠার পেছনে তারা কারণটা খুঁজে পাচ্ছে না।

রাসেলটাকে আজ কাছে পেলাম না। তার বাবার সরকারি চাকুরী। বদলে হয়ে তারা সবাই চট্টগ্রাম চলে গেছে। সে থাকলে নিশ্চয় আজ ২ - ১ টা বই দিয়ে বলতো,সময় পেলে পড়িস বন্ধু। আর না পড়লেও সমস্যা নেই,টেবিলে রাখবি বই, তাহলে দেখবি আমার কথা ঠিক মনে পড়ে যাবে।

আজ ঠিক ১৫ বছর পরে এসব স্মৃতি বুকে আগলে রেখে আবার ফিরে এসেছি,আমার প্রিয় ঢাকা শহরে। আমার প্রিয় শহরের গলির মুখে দাঁড়িয়ে ভাবছি, পুরনো সেই সব দিনের কথা। ব্যাগের সাইড পকেটে রেখেছি ভলিউম - ১১২। হয়তো রাসেলের কথা ভেবে। দেখা হলে বলবো, বিদেশে সময় পেলে বই পড়েছি রে, এই দেখ ব্যাটা !

কিন্তুু গলিটা অচেনা লাগছে। যেখানে খেলার মাঠটা থাকার কথা সেটা নেই। নেই সেই রহিম চাচার দোকান। এখনো মনে পড়ে, এখানে মুরব্বীরা চা খেতেন। চা খেতেন আমার বাবা, সেই বুইড়া কানাও।

তাহলে কি আমি ভুল গলিতে প্রবেশ করছি ! এই হতেই পারে না। আমার পা তো চলছে ঠিকঠাক। বাড়ির নাম ফলকে বাবার নামটা ঠিকই লেখা। তাহলে গলিটা অচেনা লাগছে কেনো !

একটা মহিলা এসে বললো, রিফাত না? তখনো বাড়ির সামনে। হে,কিন্তুু আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।

আরে চিনবা কেমনে ! ১৫ বছর দেশের বাহিরে ছিলা,১৫ বছর আগে কি তুমি দেখতে এইরকম ছিলা ?

আরে হে, তাই তো, ১৫ বছর আগে তো এই গলিটাও এমন ছিলা না। আমার সাথে সাথে গলিটাও বদলে গেলো !

আমি তোর ছোটবেলার দিয়া আপু রে। চিনতে পারলি না ! আমি কিন্তুু তোকে ঠিকই চিনে নিলাম, অবশ্য অনুমান করে ! কারণ জানতাম, তুই আজ দেশে ফিরবি।

বিকালে দিয়া আপু ছাদে এলেন গল্প করতে। বাপের বাড়িতে বেড়াতে এলেন। একটা সময় বললেন, তুই চলে গেলি,তোর বন্ধুদের মন খারাপ হয়ে গেলো। একটা সময় তোর বন্ধুরাও কোথায় যেনো একে একে চলে গেলো। খেলার মাঠটাও বিল্ডিং হয়ে হারিয়ে গেলো।

রয়ে গেলো শুধু, শহরের এই চেনা পথ, এই চেনা গলি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.