নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হুমায়ূন আহমেদের বই যখন পড়ি, তখন আমার লেখার ইচ্ছাটা জেগে উঠে। আপাতত ছোট গল্প দিয়ে না হয় শুরু করলাম..

রব্বানী রবি

রব্বানী রবি

রব্বানী রবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নগরফুল

০৯ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৮

কিরে উঠ। সকাল হয়ে গেলো তো। তাড়াতাড়ি না গেলে আজকে আর কপালে খাবার জুটবে না। উঠ না শিমুল, দেরী হয়ে গেলো তো।

শিমুল আর আমি অয়ন, থাকি চট্টগ্রামে এক ফ্লাইওভারের নিচে। আমার মা-বাবা আছে কিনা তাও আমার জানা নেই। যখন থেকে বুঝ হলো আমার, এই শিমুলের সাথেই আছি। শিমুলেরও একই অবস্থা। সেও আমার মতোই। তারপরও মনে হয় আমরা বেশ ভালোই আছি।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের কাজ হলো বস্তা হাতে নিয়ে ডাস্টবিনে ডাস্টবিনে ঘুরে বেড়ানো। আর ঘুরে ঘুরে কাগজ সংগ্রহ করা। মাঝে মাঝে চুম্বকে রশি লাগিয়ে ময়লার ভেতর চুম্বক ছেড়ে দি। যদি লোহার টুকরা পাওয়া যায় এই আশায়। লোহার টুকরা পেলে আমাদের দিনটা রাজকীয় ভাবে কাটে। কারণ, লোহা বিক্রি করে অনেকগুলা টাকা পাওয়া যায়।

মাঝে মাঝে রশি দিয়ে চুম্বক বেঁধে ড্রেনেও ছেড়ে দি। যদি লোহা পাওয়া যায় এই আশায়। অবশ্য মাঝে মাঝে পেয়েও যাই।

সকাল দশটার দিকে, এক ভাঙ্গারির দোকানে কাগজসহ বস্তা জমা দিলে ২০ টাকা করে আমাদের দেয়। এতে আমরা সকালে কিছু খেয়ে নিতে পারি।

আমি আর শিমুল হয়তো হতভাগা। কতো ছেলে মেয়ে তার বাবা মার সাথে রিক্সায় চড়ে স্কুলে যায়, আর আমরা তাকিয়ে দেখি শুধু।

আমাদের মার্কেটেও ঢুকতে দেওয়া হয় না। টোকাই বলে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। কতো বড় বড় মার্কেট। রঙ্গীন বাতি জ্বলে। কি আছে এসব মার্কেটে ! দেখতে বড়ই ইচ্ছা করে।

তারপরও মনে হয় আমরা ভালো আছি। আমাদের যখন যেখানে খুশি, আমরা হেঁটে হেঁটে চলে যেতে পারি। আমার আর শিমুলের মতো আরো অনেক হতভাগা আছে এই শহরে । দেখা হলে তাদের খোঁজ-খবর নি। আমাদের মতো ওরাও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। ওদেরও কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। এই শহরের রাজপথই আমাদের ঠিকানা। আমাদের ডাক দেওয়ারও কেউ নেই।

মাঝে মাঝে শীতের রাতে আমাদের কাছে কিছু বড় ভাই - আপু আসে। আমাদের শীতের জামা দেয়। কেউবা কম্বল দেয়। আমাদের হাসিমুখের ছবি তুলে নিয়ে যায়। এখনো এদের মতো অনেক মানুষ আমাদের কষ্টের কথা ভাবে। শীতের রাতে এই মানুষগুলার জন্য আমাদের কষ্ট অনেক কমে যায়।

অনেক সময় ভাবি, এই শহরে তো আমাদের মতো বেশী মানুষ নেই। অন্তত এই শহরে যত পরিবার বাস করে, তার থেকে আমাদের সংখ্যা অনেক কম। প্রতিটা পরিবার যদি আমাদের এক এক জনকে এক এক পরিবারে নিয়ে যেতো, তাহলে আমাদের জীবনটা কতোই না সুন্দর হতো।

আমরা স্কুলে যেতে পারতাম। আমরা মার্কেটে যেতে পারতাম। কাউকে না কাউকে বাবা ডাকতে পারতাম। মা ডাকতে পারতাম। আরো কতো কিছুই না করতে পারতাম। কিন্তুু মানুষগুলা আমাদের এই ভিতরের কান্না শুনতে পায় না। আর শুনতে পায় না বলেই, আমরা এখনো পথে পথে ঘুরে বেড়াই।

একদিন আমার মতো আরো অনেক হতভাগাকে নিয়ে কয়েকজন ভাইয়া-আপু আসলো, আমার আর শিমুলের কাছে। অবশ্য রাহাতের কাছে জানতে পেরেছে আমার আর শিমুলের কথা। রাহাতও আমাদের মতোই আরেক হতভাগা। রাতের বেলা রাহাত একটা মার্কেটের সামনে থাকে।

ভাইয়া আর আপুরা বললো,আমাদের সবাইকে নিয়ে যাবে একটা রেস্টুরেন্টে। আমাদের ভালো ভালো খাবার খাওয়াবে। ওইদিন আমরা অনেক ভালো ভালো খাবার খেয়েছিলাম। আর তৃপ্তি নিয়ে ভাইয়া আর আপুদের দিকে তাকাচ্ছিলাম। মানুষ এতো ভালো হতে পারে!

তারা আমাদের ছবি তুললো। ভিডিও করে আমাদের অনুভূতি রেকর্ড করলো। তারা নাকি বন্ধুসভা করে। আল্লাহ এসব মানুষকে অনেক সওয়াব দান করুক। এসব সংগঠনের জন্য মাঝে মাঝে আমাদের মধ্যে আনন্দ জেগে উঠে।

একদিন সকালে বস্তা নিয়ে জিইসি মোড়ের ডাস্টবিনে কাগজ কুঁড়াচ্ছিলাম। হলুদ গেন্জি পড়া দুজন এলো আমার আর শিমুলের সাথে কথা বলতে। তারা নাকি আমাদের মতো হতভাগাদের নিয়ে অনেক কাজ করে। তারা একদিন আমাদের যেতে বললো ষোলশহর রেলস্টেশনে। ওখানে নাকি আমাদের দুজনের মতো আরো অনেকে আসবে।

সেদিন শুক্রবার ছিলো। আমরা আমাদের কাগজ কুঁড়ানো শেষ করে রেললাইন ধরে রওনা দিলাম ষোলশহর রেলষ্টেশনের দিকে। আমি আর শিমুল দেখার জন্যই গেলাম, ওখানে আসলেই কি হয়, সেটা জানার জন্য।

গিয়ে দেখি ওখানে আরো অনেকজন হলুদ গেন্জি পড়া বড় ভাই - বোন আসছে। আমাদের মতো অনেক হতভাগা ছেলে মেয়েও আসছে।

তারা আমাদের ভালো ভালো কথা বলেছে। আমি আর শিমুল সবচেয়ে বেশী খুশি হয়েছি, যখন আমাদের দুপুরের খাবার দিলো। আমাদের মতো ওইদিন সকলেই বেশ খুশি হয়েছিলো।

সেদিন জানতে পারি তারা নগরফুল সংগঠন করে। তারা বলে, আমরা নাকি এই চট্টগ্রাম নগরের এক একটা ফুল, কথাগুলা শুনতে কি যে ভালো লাগে !

তারা আমাদের নাকি লেখাপড়া শিখাবে। কোন টাকা পয়সা লাগবে না। ভালো ভালো খাবারও দিবে।

আমি আর শিমুল ভাবলাম মন্দ কি, একটা দিন অন্তত খেতে তো পারবো পেট ভরে।

প্রতি শুক্রবার নগরফুলের ভাইয়া আর আপুরা পুরা দিন পড়াশোনা করাতেন। আমি আর শিমুল ধীরে ধীরে একটু একটু করে পড়াশোনা শিখে যেতে লাগলাম।

রাস্তায় যখন হাঁটতে হাঁটতে যেতাম কোথাও,বানান করে বিভিন্ন জায়গার লেখাগুলা পড়তাম । ট্রাফিক পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে বানান করে তার নাম পড়তাম। আর নাম জোরে উচ্চারন করে দিতাম দৌড়। পেছন ফিরে দেখি হাসি মুখে ট্রাফিক পুলিশ ইউনুস আহমেদ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।

এভাবে আমরা শিখতে শিখতে বাংলা পড়াটা খুব ভালো করে শিখে গেলাম। তখন আমার কি যে আনন্দ হতে লাগলো !

এরপর আমাদের জীবনে একের পর এক আরো অনেক মজার মজার ঘটনা ঘটে যেতে লাগলো। একদিন একটা ভাইয়া এসে বললো,আমি জানি তোমার নগরফুলে পড়াশোনা করে বাংলা পড়া অনেক শিখে গেছো। তাই আমরা তোমাদের কিছু গল্পের বই দিবো। যা পড়ে তোমরা এই পৃথিবীর অনেক কিছুই জানতে পারবে। তবে শর্ত হচ্ছে বই পড়া শেষ করে, আবার আমাদের ফেরত দিতে হবে।ফেরত দিয়ে আরো মজার মজার নতুন বই নিতে পারবে।

তখন জানলাম ভাইয়া এসেছেন "প্রজেক্ট বই টোকাই " সংগঠন থেকে। এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ যদি এদের মতো ভালো হতো, তাহলে আমরা অনেক ভাইয়া আপু পাওয়ার সাথে সাথে, অনেক মা-বাবাও পেয়ে যেতাম। যারা আমাদের এদের মতো করেই আদর করতো।এদের মতো করেই আমাদের ভালোবাসতো।

আমি রাতের বেলা ল্যাম্পপোস্টের আলোতেই গল্পের বইগুলা পড়তাম। কখনো জানতাম বিভিন্ন দেশের পাহাড় সম্পর্কে, কখনো বা সমুদ্রের কথা। কখনো বা বিভিন্ন বড় মানুষদের আত্নজীবনি পড়তাম।

নগরফুল আমাদেরকে ঈদে জামা উপহার দিতো।আমরা নতুন জামা পেতাম বন্ধুসভা থেকেও। আমাদের ঈদটা আর আগের মতো কাটে না। ঈদ কাটে আগের চেয়েও অনেক আনন্দে।

আমরা হতভাগারা হয়ে উঠলাম যেনো, এই শহরের, এই নগরের এক একটা নগরফুল।









মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ভেরি গুড।

০৯ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫

রব্বানী রবি বলেছেন: জ্বি

২| ০৯ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: অব্যাহত রাখতে হবে। নাহলে এরা বিপথে চলে যাবে...

০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:০৪

রব্বানী রবি বলেছেন: জ্বি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.