![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আপনারা Eat That Frog! বইটির নাম শুনে থাকবেন। বইটি লিখেছেন Brian Tracy.
Procrastination কাটিয়ে উঠে কীভাবে আপনি কাজে আরো ইফেক্টিভ হবেন এবং কন্টিনিউয়াস মোটিভেশন ধরে রেখে কাজ করে সফলতা পাবেন এসব ব্যাপারে এই বইতে একুশটা পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে।
Procrastination বিট করার ব্যাপারে এটা বিখ্যাত একটা বেস্ট সেলিং বই। বইটি এ পর্যন্ত দেড় মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে।
লেখক এ বইতে Procrastination কাটিয়ে উঠতে একুশটা পদ্ধতি বয়ানের পাশাপাশি সুন্দর একটা ভূমিকা লিখেছেন। এ বইয়ের ভূমিকার নিয়ে এ লেখাটিতে কিছু কথাবার্তা বলবো।
এটা প্রায় স্বতসিদ্ধ যে, বেকার জনের কাজ বেশি।
বেকার তথা যারা হুদাই ঘুরে বেড়ায় তাদের আপনি কোন কাজে ডাকলে সাধারণত পাবেন না। তারা সব সময় কোন না কোন (অ)কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
আর যারা জীবন জীবিকার তাগিদে বা অন্য কোন তাগিদে কোন চাকরি বাকরি বা রুটিন মাফিক কাজ করেন তারা তো এমনিতেই ব্যস্ত। কারো সপ্তাহে একদিন ছুটি বা কারো দুইদিন। এ ছুটির দিনগুলোতে কর্মজীবীদের কাজকাম আরো বেড়ে যায়।
মুল কথা হচ্ছে সবার সময়ের সংকট। সময় ম্যানেজ করা খুব কঠিন।
আপনার যত কাজ আছে তা সব সম্পন্ন করার সময় আপনি কখনই পাবেন না। সেটা প্রফেশনাল কাজ বা পারসোনাল কাজ যাই হোক।
তো যেহেতু আমরা কাজের চাপে সব সময় অতিষ্ঠ, সেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় টাইম মেনেজমেন্ট পড়ানো হয়েছে। চাকরি জীবনে টাইম মেনেজমেন্টের উপর ট্রেইনিং ও হয়ে থাকে। টাইম মেনেজমেন্টের ভিডিওতে ইউটিউবে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ আছে। এত কিছুর পরেও দিনান্তে, সপ্তাহান্তে বা বছরান্তে দেখা যায় অনেক বড় বড় কাজ আমরা মিস করে ফেলেছি। আমরা জানি এ কাজগুলো করা উচিৎ ছিলো কিন্তু সময় পাইনি।
দৈনন্দিন জীবনে অনাদিকাল থেকে আমাদের উপর অবিরত যে কাজের প্রেশার চলে আসছে তা সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করার পদ্ধতি হলো আমাদের চিরাচরিত চিন্তাভাবনার প্যাটার্ন পরিবর্তন করা। আমরা কাজ সম্পাদনের জন্য টাইম ম্যানেজ করতে যেভাবে চিন্তা করি বা পরিকল্পনা করি সেখানে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসা।
সেটা কীভাবে?
যেমন ধরেন, যেহেতু সময় সর্বদা লিমিটেড, সেহেতু আপনি সময়ের উপর রাজত্ব বা কর্তৃত্ব করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি আপনার কাজের উপর রাজত্ব করতে পারবেন।
আপনি ইচ্ছা করলে কিছু কাজ ছেড়ে দিতে পারেন, কিছু কাজ করতে পারেন।
কিছু কাজে সময় বেশি দিতে পারেন, কিছু কাজে সময় কম দিতে পারেন।
যে কাজ আপনার ক্যারিয়ারে বা জীবনে বড় পার্থক্য তৈরী করে দিবে বা যে কাজের মাধ্যমে আপনি মনে করেন আপনার প্রকৃত সফলতা আসবে সে কাজে আপনি বেশি সময় দিবেন। যে কাজ আপনার সফলতার পরিপূর্ণতায় যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে কাজে আপনার দেওয়া সময়টাও ঠিক ততটুক বেশি হতে হবে।
কাজকে প্রায়োরিটাইজ করতে হবে। সেভাবে সময় দিতে হবে।
Brian Tracy টাইম মেনেজমেন্টের উপর ত্রিশ বছরাধিক সময়ব্যাপী ব্যাপক লেখাপড়া করেছেন, গবেষণা করেছেন, সেমিনার করেছেন, শত শত আর্টিকেল পড়েছেন, বই পড়েছেন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি যা শিখেছেন এই বইটি হলো তার নির্যাস।
এই বইয়ের আইডিয়াগুলো মহাজাগতিক কিছু না। এই আইডিয়াগুলো আপনার হয়ত পরিচিত। কিন্তু এই বইটা চমৎকার এই আইডিয়াগুলো আপনার অবেচেতন মন থেকে সচেতন মনে এনে দিবে। আইডিয়াগুলো ব্যবহারের বাস্তব পথ বাতলে দিবে।
আপনি যখন এই আইডিয়াগুলো আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বার বার এপ্লাই করতে থাকবেন তখন সেগুলো আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে, আর এ অভ্যাসের মাধ্যমেই আপনি আপনার জীবনে ব্যাপক এক ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবেন।
গ্যালিলিও বলেছেন, “আপনি কাউকে এমন কিছু শেখাতে পারেন না যা সে জানে না, বরং যা সে জানে সেটাই শুধুমাত্র আপনি তার অচেতন মন থেকে সচেতন মনে নিয়ে আসতে পারেন।”
ভূমিকার কিছু অংশে লেখক তার নিজের জীবনের গল্প বলেছেন। তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন এবং বলেছেন এই বইটার জন্মের কথা।
খুব সাধারন একজন মানুষ হিসেবে লেখকের জীবন শুরু হয়েছিলো। তিনি ভালো ছাত্র ছিলেন না এবং গ্রাজুয়েট না করেই তিনি তার পড়াশুনার ইতি টেনেছিলেন। স্কুল ছেড়ে তিনি কয়েক বছর শ্রমিকের কাজ করেছিলেন।
এরপর তিনি একটি জাহাজে চাকরি পান। আট বছর তিনি সে জাহাজে চাকরি করেছিলেন। এ সময়ে তিনি পাঁচটি মহাদেশের আশিটি দেশে ভ্রমণ করেন।
আট বছর পর ফিরে এসে যখন তিনি আর শ্রমিকের কাজ করতে পারছিলেন না তখন তিনি সেলস তথা মার্কেটিংয়ে কাজ শুরু করেন। এখানে সফল হতে তিনি প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন। যখন তিনি এ কাজে টিকে থাকতে নিজের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তখন তার হঠাৎ মনে হলো — অন্য অনেকেই কেন একাজে আমার চেয়ে অনেক ভালো করছে! আমি কেন পারছি না!
এ অবস্থায় তার ছোট্ট একটা চিন্তা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো।
সে চিন্তাটা কী?
যারা সেলসে সফল তিনি তাদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন তারা আসলে কীভাবে সেল করে। তাদের কাছ থেকে তিনি তাদের সেলসের পদ্ধতি জেনে নিলেন এবং সে অনুযায়ী আমল করা শুরু করলেন।
এবং এই ছোট্ট কিন্তু ইফেক্টিভ পদ্ধতিটা অবলম্বন করে তার সেলসের ভলিউম বাড়তে থাকে। একসময় তাকে সেলস ম্যানেজারও বানানো হয়। সেলস ম্যানেজার হয়েও তিনি একই ট্রিকস ফলো করলেন। সফল ম্যানেজারদের কাছ থেকে তিনি জানলেন তারা কীভাবে কাজ করেন সে অনুযায়ী তিনিও কাজ করা শুরু করলেন। খুব সিম্পল।
এই ছোট্ট কৌশলটি অনুসরণ করেই তার জীবন বদলাতে শুরু করে। খুব স্বাভাবিক একটা আইডিয়া। তিনি সফলদের কাছ থেকে তাদের কাজ করার পদ্ধতি জানছেন এবং একইভাবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না তিনি উক্ত সফল ব্যক্তির মত সফলতা পান।
স্বাভাবিকভাবে বলতে গেলে, একজন আরেকজনের চেয়ে ভালো করার একমাত্র কারন হচ্ছে যিনি বেশি ভালো করছেন তিনি কম ভালো করা ব্যক্তি থেকে কিছু কাজ ডিফরেন্ট ওয়েতে করছেন। বেশি ভালো করা ব্যক্তি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করছেন। বিশেষতঃ বেশি ভালো করা ব্যক্তিরা তাদের সময় এভারেজ ব্যক্তিদের থেকে খুব ভালোভাবে ইউটিলাইজ করছেন।
লেখকের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো ছিলনা ফলে তিনি সব সময় হীনমান্যতায় ভুগতেন। তিনি মনে করতেন যারা তাদের নিজ নিজ ফিল্ডে ভালো করছে তারা আসলে স্পেশাল। তারা বাইবর্ন ই এই মেধা নিয়ে আসছে।
কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন তার এই ধারনা ভুল।
যাদের তিনি স্পেশাল মনে করে আসছেন তারা আসলে স্পেশাল না। তারা শুধু নিজেদের কাজগুলো সাধারণ ব্যক্তিদের থেকে একটু আলাদাভাবে করেন। তাদের কাজ করার ধরনটাই আলাদা।
তারা যেভাবে কাজ করেন, তারা যেভাবে চিন্তা করেন বা তারা এই কাজ করার জন্য যা শিখেছেন, সেটা তিনিও শিখতে পারেন, তিনিও একইভাবে কাজ করে সফল হতে পারেন।
তার এই শিক্ষাটাই তিনি তার পরবর্তী জীবনে কাজে লাগান।
তিনি বিশ্বাস করেছিলেন শুধুমাত্র এই পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি যে কোন গোলই এচিভ করতে পারবেন। এবং তিনি সফলও হয়েছিলেন।
সেলসে চাকরি শুরু করার এক বছরের মধ্যে তিনি টপ সেলসম্যান হয়ে যান।
তারপর তিনি সেলস ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পান।
সেলস ম্যানেজার হওয়ার বছরখানেকের মধ্যেই ছয়টা দেশব্যাপী পঁচানব্বই জন মেম্বর বিশিষ্ট সেলস ফোর্সের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান।
এরপর কয়েকবছরের মধ্যেই তিনি বিভিন্ন কম্পানীতে বাইশটি জব করেন, কয়েকটি কোম্পানী নিজে প্রতিষ্ঠা করেন এবং রেপুটেড ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় শিক্ষার উপর বড় ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি একাধিক ইউরোপিয়ান ভাষা শেখেন, পাঁচশতাধিক কম্পানীর ট্রেইনার এবং কনসাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। তিনি প্রতি বছর তিন লক্ষাধিক মানুষের সামনে বিভিন্ন সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।
তিনি তার সমগ্র ক্যারিয়ারে একটা সাধারণ সত্য শিখেছেন বলে তিনি মনে করেন।
আপনার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কাজটায় সিংগেল মাইন্ডেডলি কনসেন্ট্রইট করা এবং সেটা ততোধিক আন্তরিকতার সাথে সম্পাদন করার ক্ষমতাটাই হলো আপনার সব সফলতা, অর্জন, সম্মান এবং সুখী জীবন যাপনের চাবিকাঠি। এই উপলব্ধির বিস্তৃতি এবং সেটা অর্জন করার কলা কৌশলই এই বইয়ের মূল উপজীব্য।
....
এই লেখাটি ১৯.০৮.২০২১ তারিখে আমার নিউজলেটারে প্রকাশিত। আমার পুরানো লেখা পেতে নিউজলেটারে সাবস্ক্রাইব করার আমন্ত্রণ রইলো।
©somewhere in net ltd.