![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবী সাদাসিধে একজন মানুষ অনেকটাই সহজ-সরল।
রিন তার দাদুর একমাত্র নাতি সে একাদশ শ্রেনীতে পড়ে খুব ভাল একজন ছাত্র তাই তার দাদুসহ বাড়ির সবাই তাকে খুব ভালবাসে। রিনের দাদু অনেক সম্পদশালী এবং প্রভাবশালীও এখানের সবাই খুব শ্রদ্ধা করে উনাকে। উনার একটি বাগান আছে, সেখানে অনেক ফলমূল সহ অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে এর মধ্যে একটি অন্যতম গাছ রয়েছে তেঁতুল গাছ সেটা রিনের খুবই পছন্দের। রিন তেঁতুল খেতে তেমন পছন্দ করেনা তবে তেঁতুলগুলোরে লটকানো দেখতে অনেক পছন্দ করে।
::
রিন প্রতিদিন বিকালবেলা তাদের বাগানে এসে গল্পের বই পড়ে, আজ বৃহস্পতিবার কলেজ থেকে কিছুক্ষন আগে ফিরেছে রিন,এখন ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-ধাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে প্রতিদিনের মতো আজও বাগানের একটি বেঞ্চিতে বসে শরৎচন্দ্র এর একটি গল্পের বই পড়তেছে হটাৎ পড়ার মধ্যে আসছে মেয়েটি তেঁতুল খেতে খুব পছন্দ করে এমনি রিনের পছন্দের তেঁতুলের ঝন্টাটির দিকে থাকাল, দেখলো ঝন্টাটি নেই মন্টা খুব খারাপ হয়ে গেলো, পাকাও ছিলনা যে পড়ে যাবে।
::
তাহলে কি কেউ পেরে নিছে? কে পারছে বাসাইতো আমি আর দাদু ছাড়া আর কেউ নেই,বাকি সবাই শীতকালীন ছুটি পেয়ে বেড়াতে গেছে, রিনের জরুরী কয়েকটা প্রাইভেট থাকাই যাইনি। তাহলে কি দাদু পাড়ছে দুরর কি ভাবছি দাদুকি তেঁতুল খাই আর দাদুর খাওয়ার ইচ্ছে হলে তো আমাকেই বলতো পেড়ে দেওয়ার জন্যে। তাহলে অবশ্যই বাহিরের কেউ পেড়েছে কে সে তাকে ধরতে হবে, এমনিতি রিনের হটাৎ মনে পড়ে গেল কোথায় যেন একবার দেখছিল,
আমি যাকে ভালবাসি
প্রতিদিন তার গাছের
তেঁতুল চুরি করি, কিন্তু
সে এখনো ধরতে পারেনি!
লেখাটি কে যেন লিখেছিল মনে পড়ছেনা ভাবতে ভাবতে হটাৎ মনে পড়লো ফেসবুকে দেখছিল, কিন্তু কে লিখেছিল সেটা মনে নেই, কে লিখেছিল সেটা জানার জন্য ফেসবুকে লগিং করলো রিন,
::
ফেসবুকে ঢুকে ভাবতে লাগলো কিভাবে পাবো পোষ্টি,লেখাটিতে তো কোন হ্যাশট্যাগও ছিলনা, এমনি মনে হল পোষ্টিতে সে লাইক দিয়ে ছিল,তাই এক্টিভিটি লগ অপশনটিতে ঢুকে সহজেই বের করলো। আইডিটার নেম এঞ্জেল ঝিন, সেটার লোকেশন আর রিনের লোকেশন একই রিন চিন্তায় পড়ে গেলো তাহলে কি মেয়েটি আমাকেই ভালবাসে? কিন্তু কে সে কোন পিকও দেওয়া নাই। মেয়েটির টিমলাইনে ঢুকতেই দেখলো লাস্ট পোষ্টিতে লিখে রাখছে, "আমি আজ ও তার গাছের তেঁতুল চুরি করেছি". সেটাতে একজন কমেন্ট করেছিল "আচ্ছা আপ্পি আপনি প্রতিদিন এভাবে চুরি করেন সে ধরতে পারেনা কেন? কমেন্টে মেয়েটি রিপ্লে দিল, "সে যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন ফেসবুকে ছেকিং দেয় সে কোথায় যাচ্ছে আর এই ফাকে চুরি করে ফেলি। সেটা দেখে রিন ভাবছে, কালই তাকে ধরতে হবে।
::
তারপর মেয়েটির মেসেজ অপশন এ গিয়ে দেখলো অন্তত শতাধিক মেসেজ দিয়ে রাকছে রিনকে সবগুলাই,hi...hlw..hi.. রিন সভাবতই অপরিচিত কারো নকে সাড়া দেইনা। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তাই গল্পটি শেষ না করেই রিন রেগে বাগান থেকে সোজা তার দাদুর কক্ষে চলে আসলো,এসে দেখে দাদু নেই! ডাকতে লাগল দাদু,দাদু তৃতীয় ডাক দিতেই দাদু হাজির...
দাদুঃ কেন ডাকছিস ভাই,
রিনঃ আগে বল কোথায় গেছিলে?
দাদুঃ এইতো তোর রোমে গেছিলাম একটু!
রিনঃ কেনো আমার রোমে কেনো?
দাদুঃ তোকে খুজতেই, একটা কথা ছিল।
রিনঃ বলো।
দাদুঃ না তোকে এখন খুব রাগি দেখাচ্ছে, শান্ত হলে পরে বলবো।
রিনঃ আচ্ছা শোন আমি একটা কথা বলতে এসেছিলাম সারাদিন তুমি কি কর বাগান্টিতে একটু যেতে পারনা? নাকি বাগান্টি আমাকে দিয়েদিছ বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করোনা?
দাদুঃ এমন বলছিস কেনো? কি হয়ছে? আর তুই যখন বাড়িতে থাকিস না তখন তো সারাক্ষণ বাগানেই কাটাই, আর চা খায়, শখের বাগান বলে কথা।
রিনঃ সত্যি বলছো?
দাদুঃ আমি তোর সাথে মিথ্যে বলেছি কখনো?
রিনঃ না, আচ্ছা দাদু তুমি বাগানে গেলে কোথায় বসো?
দাদুঃ কেন তুই যেই বেঞ্চিটাতে বসিস সেটাই, আর এটা ছাড়াত বসতেও ইচ্ছে করেনা।
রিনঃ তাহলে তুমি থাকা সত্ত্বেও একটি মেয়ে কিভাবে গাছ থেকে তেঁতুল চুরি করছে?
রিনের দাদু কিছুই বলছেনা শুধু মুছকি একটি হাসি দিছে।
রিনঃ কিছু না বলে হাসছো কেনো?
দাদুঃ না আসলে কিছু পুরনো কথা মনে পড়েছে তাই।
রিনঃ কি কথা বলো?
দাদুঃ আমি যখন তোর সমান ছিলাম আমিও তখন কলেজে পড়তাম, আমারও একটা তেঁতুল গাছ ছিল। আমি যখন কলেজে চলে যেতাম তখন সেই গাছটি থেকে একটি মেয়ে রোজ তেঁতুল চুরি করতো, একদিন টের পেয়ে মেয়েটিকে ধরে ফেলেছি আর তখন আমি নিজেও ধরা খেয়েছি তার ভালবাসার জালে।জানিস সেই মেয়েটিই তোর দাদি।
রিনঃ তার মানে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছো?
দাদুঃ তোরও এরকমটাই হবে হয়তো।
রিনঃ কি আজেবাজে বলছো এসব।
দাদুঃ দেখ না কি হয়!
::
এই বলাবলির পর দাদা-নাতির কথা শেষ হলো। রিন ভাবতে লাগলো মেয়েটিকে আমার ধরতেই হবে। কিছুক্ষন পড়তে বসে হোমওয়ার্ক গুলো শেষ করে ঘুমুতে গেলো। রাত্রি শেষে সুর্যের আলো যখন জানালা দিয়ে রিনের মাথায় এসে ছুঁইলো তখনি রিনের ঘুম ভেংগে গেলো। রিন মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখলো কাটাকাটা দশটা বাজে! তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ড্রইং রোমে যেয়ে দেখে দাদু নেই! তাই একটি ডাক দিতেই পাশের কক্ষ থেকে চলে এলো,
দাদুঃ কিরে আজতো শুক্রবার তোর তো বারোটা বাজে ঘুম থেকে উঠার কথা,তাই আমি কফি খাচ্ছি আর টিভি দেখছি, তুই উঠলে নাস্তা করবো।
রিনঃ না দাদু আজকে একটু বের হবো তাই সকালেই উঠে গেলাম।
দাদুঃ ওওও,,,আচ্ছা বস বস নাস্তা সেরে নেই খিদে লেগেছে খুব।
::
দাদা-নাতির নাস্তা শেষেই নাতি বেরিয়ে পড়লো, রিন ভাবছে আমার সাথে চালাকি, মেয়েটির সাথে অবশ্যই দাদুর হাত আছে সেটা ধরার জন্য বাগানের অনেক নিরাপত্তা একটি জায়গা বেচে নিল যেখান থেকে তেঁতুল গাছটি স্পষ্ট দেখা যাই কিন্তু সেখানে কেউ আছে কিনা দেখা যাইনা তাইল সেখানে বসে ফেসবুকে ছেক_ইন দিল রিন গুইং টু নানু বাড়ি আম্মুকে অনেকদিন ধরে দেখিনা তাই। আর এই চেক_ইন পাইনা মেয়েটি খুব খুশি কারন প্রতিদিন তেঁতুল চুরি করতে পারলেও শুক্রবারে করতে পারেনা সেদিন রিন কোথাও যাইনা সেইদিন বাগানেই কাটায় আজ যেহেতু সুযোগ পেয়েছে তাই হাত ছাড়া না করে এসে পড়লো বাগানে, এসে চয়েস করতেছে আজ কোন ঝন্টাটি পারবে।
::
এদিকে রিন নাস্তা খাওয়া সত্ত্বেও মেয়েটিকে দেখে ক্রাশ খাইলো, আর ভাবতে লাগলো দাদু তুমি ঠিকি বলেছিলে, রিন আজই প্রথম কোন মেয়ের প্রতি ক্রাশ খাইলো, প্রথম ক্রাশ তো তাই একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছে।এদিকে আকাশে অজস্র কালো মেঘ জমেছে হয়তো এখনি নামবে বৃষ্টি! তাই রিন সেখান থেকে উঠে এসে ওর বাগান থেকেই দু'হাতে একগুচ্ছ লাল-গোলাপ নিল গোলাপসহ হাত দুটো পিছনে লুকিয়ে মেয়েটির বরাবর পিছনে হাটতে লাগলো, হাটতে হাটতে মেয়েটির কাছে যেতে আর দু'হাত বাকি এমন সময় আকাশ থেকে ঘড়ঘড় শব্দ করে অজস্র বৃষ্টি পড়া শুরু করলো আর মেয়েটি চোখ বন্ধ করে পিছন দিকে এক দৌড় দিলো।
::
এক সেকেন্ড পরেই অনুভব করলো কার সাথে যেনো ধাক্কা খেয়েছে ঝিন এবং সে এক হাতে জড়িয়ে ধরেছে তাকে, আর ভাবছে রিন তো বাসাই নাই রিনের দাদু বোধয়, তাই লজ্জায় চোখ খুলছেনা। তখন রিন বলছে চোখ খুলো! মেয়েটি তখন চোখ খুলে বলল আপনি?আপনি না আপনার আম্মুকে দেখতে গেছেন?
হ্যা আমি তোমাকে ধরার জন্যই এই প্ল্যান করেছি কিন্তু তোমাকে ধরতে এসে আমি নিজেই দাদুর মতো ধরা খেয়েছি!
সত্যি? হ্যা সত্যি তখন পিছনে এক হাতে লুকানো একগুচ্ছ ফুল গুলো সামনে এনে যখন হাটো গেড়ে প্রপোজ করবে তখন ঝিন রিনকে টান দিয়ে তুলে নিল আর বললো না না তুমি প্রপোজ করলে হবেনা ভাল আমি আগে বেসেছি সো আমিই প্রপোজ করবো। তারপর ঝিন হাটু গেড়ে রিনকে প্রপোজ করলো, হ্যা আকাশ,হ্যা বৃষ্টি,হ্য বাগান,হ্যা সুমধুর তেঁতুল গাছ তোমরা সাক্ষী থেকো আমি রিনকে আমার নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি! আই লাভ ইউ রিন। রিন আই লাভ ইউ টু বলে গোলাপগুচ্ছ কে এদের মাঝে রেখে দুজন দুজনকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, সেটা আকাশ দেখে সহ্য করতে না পেরে আরো জুড়ে কাঁদতে লাগলো আর রিনঝিন-এর পায়ের পাতা বৃষ্টির পানিতে প্রায় ডুবে গেল, আর রিনের দাদু বারান্দা থেকে দেখে হাত তালি দিয়ে এদেরকে সুস্বাগত জানাইলো!
________________________সমাপ্ত__________________________
ফেসবুকে লেখকের নামঃ অভিমানী ছেলে (বাস্তববাদী লেখক) _______________________________________________________
©somewhere in net ltd.