নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'এম এল গনি\' cut & paste করে Google-এ search করলে আমার সম্পর্কে জানা যাবে। https://www.facebook.com/moh.l.gani

এমএলজি

এমএলজি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুয়েট-ছাত্র আবরার হত্যার দ্রুত বিচার কেন প্রয়োজন? | মতামত

০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০৯

বুয়েট-ছাত্র আবরার হত্যার দ্রুত বিচার কেন প্রয়োজন?|

আমি যে বুয়েটে পড়েছি সেই বুয়েট এই বুয়েট নয়। আমার পড়া বুয়েটে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের পাঠিয়ে পিতামাতা নিশ্চিন্ত থাকতেন। আমার ব্যাচের দেশের সবকটি শিক্ষাবোর্ডের প্রথম স্থান অধিকারকারীরা ছিল আমাদেরই ক্লাসমেইট। এ নিয়ে আমাদের গর্বের সীমা ছিল না। আমার পাঁচ বছরের বুয়েট জীবনে ছাত্ররা একে অন্যকে একটি চড়-থাপ্পর দিয়েছে বলেও কখনো শুনিনি। সিনিয়রদের দেখলে আমরা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতাম। তারাও আমাদের ছোট ভাইবোনের মতই স্নেহ করতেন। অনেক জুনিয়রই সিনিয়রদের সম্মান করে ডাকতো, ‘বস’! আহা, স্নেহ-শ্রদ্ধা-ভালোবাসার কী সুন্দর বুয়েট জীবন যে পেছনে ফেলে এসেছি! শাকুর মজিদ, তৌকির আহমদ, এরা আমাদের মাত্র এক বছরের জুনিয়র। তারপরও তাদের মতো স্বনামধন্য বিশিষ্ট নাগরিকরা যখন আমাদের মতো নগন্যকে ভক্তিভরে ‘ভাই’ সম্বোধন করে বড়ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে, তা দেখে মনটা আনন্দে ভরে যায়। এ-ই আমাদের বুয়েট! এ যেন অনেকগুলো মেধাবীমুখের একটি ছোট্ট পরিবার।

আমাদের সময় ছাত্র রাজনীতি ছিল না তা নয়। দলের সমর্থক হই বা না হই, সিনিয়র ভাইরা ডাকলে অনেকসময় মজা করার জন্যও মিছিলে যোগ দিয়েছি। আমার নিজের কথাই বলি, আমি সম্ভবত বড়ো ভাইদের খুশি করতে বুয়েটের সবকটি দলের মিছিলেই কোন না কোন সময় যোগ দিয়েছি। তারাই বা করবেন কি, মিছিলে লোক পাওয়া যেত না! কেন সব দলের মিছিলে গেলাম তা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্নও করেনি। কারন, তারা জানতো এই পড়ুয়া ছেলেটা বাস্তবে কোন দলের সাথেই নেই। শুধু আমি একা নই, আমাদের ক্লাসের শীর্ষস্থান অধিকারী থেকে শুরু করে অনেকেই তা করতো। সবাই একে স্রেফ মজা করছি বলেই ধরে নিতো। অথচ, আমাদের সময়ই দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ সবচেয়ে উত্তাল ছিল। ছিল শক্তিশালী বিরোধীদল, এখন যা কেবলই কাগজে কলমে। আমি আশির দশকের কথা বলছি।

আজকাল ছাত্ররাজনীতিতে পদপদবী পেতে বুয়েটের ছাত্ররাও অনেক অর্থকড়ি খরচ এবং উচ্চ পর্যায়ে দেনদরবার করে বলে শুনেছি। কিছু শিক্ষকও নাকি একই কাজ করেন। কারণটা কারো অজানা নয়। পদে বসতে পারলে সুদাসলে এ টাকা হাজারোগুণ হয়ে ফিরে আসবে, এছাড়া আর কি? অথচ, আমাদের সময়ে পদে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছাত্র খুঁজে পাওয়া যেত না সহজে। বিশেষ করে বেশি ভালো ছাত্র হিসেবে যাদের সুনাম ছিল, পদ দেবার জন্য নেতারা রীতিমতো তাদের পিছু নিতো। ছাত্ররাজনীতি করে যে কিছু পাওয়া যেতে পারে এ বিষয়টা সিংহভাগ ছেলেমেয়ে আমলেই নিতো না। আর এখন? আজ শুধু ছাত্রছাত্রীরা কেন, শিক্ষকদের একটা অংশও যেভাবে সুযোগ-সুবিধা-পদপদবির আশায় রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিতে নেমেছেন তা একইসাথে আতংক ও হতাশার! নিজেদের স্বার্থে তারা বুয়েটের মতো দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠকে আজ কোন স্তরে নামিয়ে ফেলেছেন তা আবরারের মতো নিরীহ ছাত্রের নির্মম মৃত্যুতে আরো পরিষ্কার বোঝা যায়।

রাজনীতিকদের ব্যাপারে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ধারণা কখনো তেমন সুখকর ছিল না। যার ফলে, ছোটবেলায় মা-বাবা রাজনীতি করে এমন কোন সহপাঠির সাথে মিশতে নিরুৎসাহিত করতেন। কোন ছাত্রের চাল-চরিত্র তেমন ভালো না বোঝাতে অনেক বাবা-মা বলতেন, ‘ওই ছেলে তো রাজনীতি করে!’ তারপরও রাজনীতি বর্তমানের মতো এতটা সহিংস ও আতঙ্কের কখনো ছিল না। রাজনীতি আজ আর আদর্শের অনুসরণ নয়। আমাদের মতো দেশে রাজনীতি মানে ক্ষমতার অপব্যবহার ও লোভলালসা পূরণের অবাধ সুযোগ কেবল। আমার এ বক্তব্য প্রমাণের জন্য বিশেষ কোন উদাহরণ দেয়া নিষ্প্রয়োজন; কেবল প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় চোখ রাখলেই এর অসংখ্য প্রমাণ মেলে।

ভাবা যায়, বিশ-একুশ বছরের একটা তরতাজা তরুণকে তারই সহপাঠী বা সমসাময়িকরা রাজনৈতিক হীনস্বার্থে কিভাবে নির্মম পিটিয়ে হত্যা করতে পারে, যা বুয়েটে ঘটেছে! লোভলালসা কোন পর্যায়ে পৌঁছুলে দেশের সবচেয়ে মেধাবী হিসেবে চিহ্নিত একদল তরুণ এমন একটি কল্পনাতীত, জঘন্য ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে? কেউ একজনকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ‘শিবির সন্দেহে’ তাকে মারা হয়েছে বললেই কি অপরাধ হালকা বা, দোষ মাফ হয়ে যায়? ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির নামে দেশে এসব কি হচ্ছে তা নির্মোহভাবে বিচার বিশ্লেষণ করার মতো বিবেকবান মানুষ বা বুদ্ধিজীবী কি বাংলাদেশে নেই? আমাদের সংবিধানের কোথাও কি লেখা আছে, শিবির বা বিশেষ দলের কর্মী সন্দেহে কাউকে মেরে ফেলা যায়, বা কারো গায়ে হাত তোলা যায়? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই সাধারণের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় কি?

বলতে দ্বিধা নেই, ক্ষেত্রবিশেষে বিচারহীনতা বা বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার সংস্কৃতি এসব অনভিপ্রেত হত্যাকাণ্ড উস্কে দিচ্ছে আমাদের দেশে। এমন উদাহরণ অসংখ্য। যেমন, রাজনৈতিক প্রভাবে নারায়ণগঞ্জের তরুণ ত্বকী হত্যার বিচার জাতি আজও দেখেনি। এছাড়া, আবরারের সাম্প্রতিক ফেইসবুক পোস্টে যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচিত হয়েছে, তাই, অপরাধীরা মনে করেছিল, এ কারণে ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও ক্ষমতাসীনরা তা তেমন আমলে নেবে না। হয়তো বা আবরারকে হত্যার তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে তারা এ সময়টাকেই বেছে নেয়া নিরাপদ মনে করেছে।

আমার আজকের এ লেখার পেছনে বিশেষ আরেকটি কারণ আছে। একজন কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট হিসেবে কোন ক্লায়েন্ট আমার সাথে যোগাযোগ করলে খুশি হই, যা স্বাভাবিক। কারণ, ক্লায়েন্ট যোগাযোগ করেছেন মানে তো ব্যবসার প্রসার! কিন্তু, আজ সকালে মেসেঞ্জারে ইনবক্স চেক করতে গিয়ে দুটো রিকোয়েস্ট দেখে আর কাজে হাত দিতে মন আগালো না। তার চেয়ে বরং ভাবলাম, আবরার হত্যার প্রেক্ষাপটে কিছু একটা লিখি; কাজ করার জন্য তো সারা জীবনই পরে আছে।

একজন ইনবক্সে লিখেছেন: “… বুয়েটে আমি আপনার এক বছরের জুনিয়র। আমার ছেলে গত বছর বুয়েটে চান্স পেল। বর্তমান অবস্থায় তাকে আর এখানে পড়াতে চাইনা। একটু হেল্প করা যাবে? …” তার মানে, ছেলেকে কানাডা পাঠানোর কথা ভাবছেন তিনি। অন্যজন লিখেছেন, ” …ছেলেকে বুয়েটে পড়ানোর ইচ্ছা ছিল, এখন ভাবছি ভিটেমাটি বেঁচে হলেও বিদেশ পাঠিয়ে দেব। সামনের বছর উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। একটু খেয়াল রাখবেন ভাই।”

এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর এমন অনুরোধ আমার কাছে আরো আসবে, আমি নিশ্চিত। কারণ, এইসব পিতামাতা যে ভীতিকর পরিবেশ-পরিস্থিতির শিকার তা বুঝতে আইনস্টাইন হতে হয় না। একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে এসব পিতামাতাকে ইমিগ্রেশন ক্লায়েন্ট বিবেচনা না করে বরং তাদের সাহস জুগিয়ে সন্তানদের দেশের পড়ালেখাই শেষ করতে বলেছি। আমার কাছে ইমিগ্রেশন ব্যবসার চেয়ে তা-ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, যদিও আমি ঠিক জানি না, তাদের স্থানটিতে আমি নিজে হলে ঠিক কি করতাম। প্রশ্ন হলো, এতটা ভয়ভীতির মধ্যে মানুষের জীবন যাপন করতে হলে তিরিশ লাখ শহীদ ও অগুনতি মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করে লাভটা কি হলো? দেশটা কি কেবল যারা যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকবেন তাদের একার? অন্যরা কি কেবলই অসহায় প্রজা?

একটা দেশের অবস্থা খারাপ হতে হতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন দেশটির ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প থাকে না। তাই, এতকিছুর পরও আমরা আশাবাদী। আশাবাদী এ কারণে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ইদানিং কিছু অ্যাকশন দেখতে পাচ্ছি। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে এই ভয়ে অতীতে আমাদের দেশে নিজ দলের নেতাকর্মীদের ধরে আইনি ব্যবস্থা কোন নেতা-নেত্রীকে গ্রহণ করতে দেখা যায় নি। বলা চলে, শেখ হাসিনাই আমাদের দেশে এ ধারা সূচনা করেছেন। তবে, এও ঠিক এ ধরনের ব্যবস্থা তার আরো অনেক আগে নেয়া দরকার ছিল। সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে অপসারণ, যুবলীগ নেতা নামের ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা, ইত্যাদি, তার ইতিবাচক পদক্ষেপেরই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে নিরপেক্ষ ও সুধীজনেরা বিবেচনা করছেন।

আমাদের প্রত্যাশা, দলমতের ঊর্ধ্বে অবস্থান নিয়ে তিনি সম্ভাবনাময় তরুণ আবরার হত্যার দ্রুত বিচারের নির্দেশ দিয়ে, এবং তা নিয়মিত মনিটরিং করে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন। এতে সাধারণ মানুষের মনে সঞ্চার হওয়া ভয়ভীতি কিছুটা হলে নিরসন হবে। একই সাথে, দেশ হতে মেধা পাচারও কমে আসবে।
ML Gani

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫৬

জুল ভার্ন বলেছেন: ঈংগীতের আদালতে প্রত্যাশিত বিচার হবেনা।

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:১১

নতুন বলেছেন: রাজনিতিক নেতারা তাদের লাঠিয়াল বাহিনি হিসেবে ছাত্রদের ব্যবহার করে। এটা কি নেতারা বন্ধ করতে পারবে?

এতো সহজে পারবেনা। দেশের রাজনিতি যারা করে তাদের ভেতরে আমুল পরিবর্তন ছাড়া এমন ঘটনা বন্ধ হবার সম্ভবনা নাই।

বড় একটা পরিবর্তন ছাড়া দেশের অবস্থা পাল্টাবেনা। :(

৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৩০

অক্পটে বলেছেন: যেখানেই লীগ ঢুকেছে সেখানেই সব তছনস করে দেয়া হয়েছে। জাতির জন্য মহা অভিশাপ হলো এই লীগ পরিবার। ওদের ছোঁবল থেকে কারো মুক্তি নেই।

৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৬

গফুর মিয়া১৯১ বলেছেন: অক্পটে এরশাদ এর ব্যাপারে বলেন?
জামাত শিবির এর ব্যাপারে বলেন?
বিএনপি এর ব্যাপারে বলেন?
জাসদ এর ব্যাপারে বলেন?
সব তছনস করে দেয়া ছাত্র দের জিবন।তারাও করছে

৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৯

অক্পটে বলেছেন: গফুর ভাই ধর্ষিতার পিতা দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিচারের আশায়। ধর্ষকলীগ ধর্ষণ করে বহাল তবিয়তে আছে। নপুংশক পুলিশ বলছে সালিশ বসিয়ে মিটিয়ে ফেলতে। মনে হচ্ছে আপনিও সেই কথাই বলছেন।

৬| ১০ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৫১

গফুর মিয়া১৯১ বলেছেন: অক্পটে আমি পক্ষপাতে দুষ্ট নই। যা সত্য তাই আপনাকে বলতে বলেছি..............।ইয়াসমিন গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা দ্বারা ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের দিনাজপুরে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত ইয়াসমিন আক্তার নামক ১৪ বছর বয়স্ক এক বালিকার গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়। এ ঘটনার ফলে দিনাজপুরে তীব্র প্রতিবাদ দেখা দেয়।এ ঘটনা কেন্দ্র করে সৃষ্ট দিনাজপুরবাসীর প্রতিবাদ আন্দোলনে ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট দিনাজপুর ছিল উত্তাল। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাত আন্দোলনকারী। আহত হন দুই শতাধিক। দিনাজপুরসহ সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.