নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবীর মামুন

কবীর মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৪

রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিদিনই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রচুর শিশু। ধর্ষণ, হত্যা এসিড সহিংসতাসহ শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক নানারকম কায়দায় হচ্ছে নিপীড়ন। অন্যান্য সকল প্রকার নির্যাতনের সাথে বর্তমান সময়ে শিশু হত্যার বিষয়টি আমাদের সামনে ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে। অন্যান্য সকল অন্যায়গুলোকে যেমন আমরা প্রতিদিনের ভাত খাওয়ার মতোই সহজ করে নিয়েছি তেমনি শিশু হত্যাও হয়ে উঠছে আমাদের কাছে সাধারণ একটি ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনাগুলোর খবর যেমন এখন আর মানুষের ভেতরে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না নির্যাতন করে শিশু হত্যা করাও সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠতে যাচ্ছে। রাজন, রাকিব, সুমাইয়ারা প্রতিদিনই হত্যার শিকার হচেছ। আর এই হত্যাকান্ডগুলোর ধরণ অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংস। কতগুলো মানুষ একত্রিত হয়ে প্রকাশ্যে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। এধরনের প্রকাশ্য হত্যাকান্ডগুলো আবার উপস্থিত সকলে উপভোগ করছে। প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা খুললে এধরনের বহু খবর পাঠকের চোখে পড়ে। দৈনিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে ভিন্ন ভিন্ন এলাকায়। স্বাধীন দেশে কেন শিশু ও নারীরা নিরাপদ নয়? কেন নিরাপদ নয় কোন মানুষের জীবন? যিনি ন্যায়ের পথ দেখাবেন সেই বিচারকের বাসাতেও নিরাপদ নয় শিশু। রাজন-রাকিবরা কেন জীবন দেবে? রাস্তার উপর নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে শিশুদের? কেন বিথীরা বিচারকের বাসায় কাজ করতে গিয়ে বিচারকের হাতেই নিপীড়নের শিকার হবে? মানুষ হিসাবে জন্ম নেবার সাথে সাথে তার কিছু অধিকার পাওনা হয়ে যায়। সমাজ-রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তার সেই অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা পারছি না। কেন পারছি না? আমাদের না পারার প্রধান অন্তরায় কি? মূল কারণকে চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের বিধান করার কোন উদ্যোগ দেখা যাচেছ না। শুধুমাত্র দুই একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেই সরকার যেভাবে জানান দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে যে তারা গ্রেপ্তার করেই সকল সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ঘটনার কি সমাধান হয় তার আগেই সকল ক্রেডিট দাবি করছে সরকার। এই প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় তা সকলেই জানেন এবং বুঝেন।

আমাদের দেশে সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেন সাধারণত মানবাধিকার কর্মীরা। আর মানবাধিকার কর্মীরা কোন বিষয়ে কোন অন্যায় সম্পর্কে প্রতিবাদ জানালে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন এটা তাদের প্রজেক্ট। তাই তারা চিল্লাচিল্লি করছে। ফলে বিষয়টিকে গায়ে মাখেন না। আর নিজেরাও থাকেন নীরব। তা সরকার হোক বা বিরোধী পক্ষ।

শিশুদের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করা বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্বা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার রাষ্ট্রের শিশুসহ প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের শিশু অধিকার প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৯০ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশ এই সনদটি র্যাটিফাই করে অর্থাৎ সদন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার গ্রহণ করে। এছাড়া এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান শিশু নির্যাতনের চিত্র লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় যে, বাংলাদেশ আর তার আগের অবস্থানে নেই। তার অবস্থান নিচে নেমে এসেছে । এই পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে। শিশুরাই রাষ্ট্রের ভবিষ্যত। এদেরকে রাস্তায় প্রকাশ্যে হত্যা করা চলবে না। বন্ধ করতে হবে শিশুর প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন।

হাজার বছরের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে বিকশিত হয়েছে যে জাতি, সে জাতি কেন অন্যায়ের পথে পা বাড়াবে? অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামতো মানুষকে ধৈর্য্যশীল আর মানবতাবাদী করে তুলে। তবে বর্তমান বাংলাদেশে কেন আমরা এর উল্টো চিত্র লক্ষ্য করছি। কেন আমরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছি? সামান্য কারণে অথবা কারণ ছাড়াই উদ্দেশ্যমূলকভাবে একজন আরেকজনের উপর চড়াও হচ্ছে। শিশু পিটিয়ে কর্তৃত্ব প্রদর্শন করছে। করছে পেশী শক্তির বড়াই। এর নিশ্চয়ই কারণ আছে। রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আর ক্ষমতাবাজি, দখলবাজির রাজনীতিই আমাদের ঠেলে দিয়েছে এই পথে। মাথায় ধরিয়েছে পচন।

প্রতিটি মানুষের জীবনেই একজন করে রোল মডেল থাকে, যাকে সে অনুসরণ বা অনুকরণ করার চেষ্টা করে। একজন মানুষের মানুষ হয়ে গড়ে উঠবার জন্য সেই সঠিক রোল মডেল নির্বাচন করাটা খুবই জরুরী। কোন পারিবারিক- সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-ক্ষমতাকেন্দ্রীক বিভ্রান্তির কারণে কোন বা সকল মানুষ যদি মডেল নির্বাচনে ভুল করে তাহলে সে বা তারা ভুল পথে ধাবিত হবে এটা খুব সহজেই অনুমেয়। রোল মডেল যদি হয় পাড়ার মস্তান ছেলেটি বা কালো টাকার মালিক অথবা সন্ত্রাসী গডফাদার তখনই বিপথে যাবার সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠে। সমাজে যাদেরকে আমরা ভাল মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করি তারা কারো সাতে-পাঁচে থাকেন না। তারা অন্যের বিপদে নিজের ঘরের দরজার খিল আটকে বসে থেকে আরো ভাল মানুষ হয়ে উঠেন। ফলে সমাজটাকে যারা ভুল পথে চালিত করে নিজেদের ক্ষমতাবাজিকে টিকিয়ে রাখেন তারা মানুষকে ভুল পথে ব্যবহার করে সমাজের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আর গণমানুষ তার নিজের শক্তিকে ভুলে গিয়ে ক্ষমতাবাজির কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। আমাদের রাজনীতিকরা উদার, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, মানবতাবাদী হতে পারতেন কিন্তু তারা কালো টাকা আর ক্ষমতাবাজির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। দু’চারজন যে প্রগতিবাদী আর মানবতাদী নেই তা নয় তবে তারা ক্ষমতার দৌড়ে কখনোই এগিয়ে থাকতে পারেন না। তাই তাদের অবস্থাও তথৈবচ।

রাজনৈতিক-সামাজিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হবে এটাই খুব স্বাভাবিক। কারণ একটি আরেকটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য মানুষকে মানবিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে হবে। শুধুমাত্র সরকার বা জনগণ করো একলার দায়িত্ব নয় এটি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে। তাই সেজন্য জনগণের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের নাগরিক এবং সর্বপরি মানুষ হিসাবে নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা এবং আইন মেনে চলা। আর রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্র যদি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে। সরকারি দলের কর্মী সমর্থকদের প্রাধান্য দিয়ে যায় তাহলেই আইনের শাসন বিঘিœত হয়। আবার যদি রাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলেও আইনের শাসন বিঘিœত হয়। আইনের শাসন বিঘিœত হওয়ার একটি অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হলো আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সংস্কৃতি। মানুষ হয়ে উঠে অসহিষ্ণু। যার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই অহরহ। পিটিয়ে মানুষ হত্যার খবর প্রতিনিয়তই আমাদের চোখে পড়ে।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহম্মদ কিউবা সফর করে এসে তার দেখা কিউবা নিয়ে লেখা গ্রন্থ ‘বিপ্লবের স্বপ্নভূমি কিউবা’ নামক গ্রন্থে বলেছিলেন, সেদেশে বাংলাদেশের মতো পাবলিক বাসগুলো সচরাচর পাওয়া যায়না। অনেক যাত্রী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন, অনেকক্ষণ পরে একটা বাস এলে সবাই গাদাগাদি করে গাড়িতে উঠেন এবং একজনের পায়ের উপর অন্যজন পা রেখে মাইলের পর মাইল যাতায়াত করেন। তবুও কারো কাছ থেকে কোন অসহিষ্ণু আচরণ লক্ষ্য করা যায়না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া বাংলাদেশে আমরা গড়তে পারছিনা মানুষের চরিত্র। মানুষ ক্রমাগত ধাবিত হচ্ছে অন্যায়ের দিকে, হয়ে উঠছে অসহিষ্ণু। পিটিয়ে মারছে মানুষকে। প্রকাশে হত্যা করছে শিশুদের। হোটেল-রেস্তোরাঁয়, টি স্টলে, গাড়িতে, কারখানায়, রাস্তায়, বাড়িতে সবজায়গাতে নিপীড়ন করা হচ্ছে শিশুদের। শিশুরা হচ্ছে নিপীড়নের শিকার আর রাষ্ট্রের ভবিষ্যত ক্রমাগত হয়ে পড়ছে বেহাল।

বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আর তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। শিশুদের শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিটি মানুষের অধিকার আর এই অধিকার নিশ্চিত করবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। শিক্ষার পাশাপাশি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি বখে যাওয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকেও মুক্তি আবশ্যক। যেখানে রাজনীতিকদের ভূমিকাটাই হবে মূখ্য। আর রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো সচেতন আচরণ করা। শিশুকে শারীরিক-মানসিক কোন প্রকার নিপীড়ন না করা। আর সেটা ঘরে বাইরে সকল স্থানে।

কবি সুকান্তের সাথে কন্ঠ মিলাই-

এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এশিশুর বাসযোগ্য করে যাবে আমি-
নব জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.