![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের ইতিহাস বড়ই নির্মমতার ইতিহাস, নৃশংসতার ইতিহাস। এমন কথা যদি কেউ বলে তবে তা আজ আর মিথ্যে হবে না। কিন্তু এমন নৃশংসতা-নির্মমতা মানুষের একমাত্র বৈশিষ্ট্য কখনোই ছিল না। মমত্ববোধ-মানবিকতা-শ্রদ্ধা-ভালবাসাই মানুষকে মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মানুষ শব্দটির বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স। এটি একটি ল্যাটিন শব্দ। যার বাংলা প্রতিশব্দ দাঁড়ায় ওয়াইজ ম্যান বা জ্ঞানী মানুষ। মানুষ প্রাণীকূল শ্রেষ্ঠ, তার মানবিক বৈশিষ্ট্য তথা গুণাবলীর কারণে।
মানুষ যেদিন থেকে ব্যক্তি সম্পদের চর্চা শুরু করেছে, সেদিন থেকেই শুরু এই নৃশংসতার। প্রত্যেকটি মতেরই বিরুদ্ধতা থাকে। এই মতেরও নিশ্চয়ই বিরুদ্ধতা থাকবে। তাতে কি? বিরুদ্ধতা থাকলেও খুব বেশিদিন সত্যকে আড়াল করে রাখা যায় না। আর সেটা সম্ভবও নয়। মানবতা আজ বিপন্ন। নৃশংসতার চরম পর্যায় পরিলক্ষিত হচ্ছে দুনিয়াব্যাপী। ভবিষ্যত এর চেয়েও বেশি নৃশংস হবে কি না আজ কল্পনা করা সম্ভব নয়। তবে আজকের মানবতার বিপন্নতা প্রতি বিবেক সম্পন্ন মানুষের চোখে জল আনবে এবং আনছে তা হলফ করেই বলা যায়। আফ্রিকা থেকে ইউরোপ, ইউরোপ থেকে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে যেভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার তা বর্ণনা করে শেষ করা মুশকিল। সোভিয়েতের পতনের পর ফ্রান্সিস ফুকোয়ামা ইন্ড অব হিস্ট্রিতে বললেন, পৃথিবীর ইতিহাসের এক পর্বের সমাপ্তি হলো। শুরু হবে নতুন অধ্যায়ের। সমাজতন্ত্রীদের সাথে সংগ্রাম শেষ। এবার সংগ্রাম মুসলমানদের সাথে। পথ বাতলে দিলেন পশ্চিমাদের। পশ্চিমারা তাদের নিজস্ব কায়দায় সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের হাত বাড়াতে শুরু করলো। নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের তেল আর রাজনীতির। তালেবানদের তৈরি করে লেলিয়ে দিল আফগানিস্তানে। নিজেদের তৈরি করা তালেবানদের উপর নিজেরাই আবার চড়াও হয়ে যুদ্ধ শুরু করল। সে যুদ্ধ ছড়াতে শুরু করলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে। একেক সময় একেক ধোঁয়া তুলে আগ্রাসনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলো। গণতন্ত্রের কথা বলে বসন্ত ছড়িয়ে দিলো আরব বিশ্বে। যে মানুষগুলো এতদিন তন্ত্র-মন্ত্রের তোয়াক্কা না করে সুখে শান্তিতে দিন গুজার করছিল, তাদের উতলা করে দিলো পশ্চিমা এক বসন্তের কোকিল। বসন্ত বাতাসে আজ ছিন্নভিন্ন মানুষের সুখ-শান্তি, ঘর-বাড়ি। দেশ ছেড়ে দেশান্তরি হচ্ছে মানুষ। এত বড় পৃথিবীতে তাদের জন্য আজ এতটুকু মাটিও নেই যে তাদের একটু ঠাঁই দিতে পারে। এ কেমন মানবতা আমাদের? মানুষ কি আদৌ মানুষ আছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণীর দোহাই দিয়ে আর কত আমরা অপমান করবো মানবতাকে? গৃহহীন মানুষগুলো কি দাঁড়াতে পারবে না কোথাও? জীবনের সন্ধানে বের হয়ে দরিয়ার ঢেউয়ে সমর্পণ করছে জীবনকে। সেই জীবন যখন আর জীবন থাকছে না, তখন তার লাশকেও ঠাঁই দিচ্ছে না দরিয়া। ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে মাটিতে। কিন্তু কোন মাটি? যে মাটি তার দেশ নয় সেই মাটিতে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা বলে কাঁটাতার দিয়ে পৃথিবীকে করেছি আমরা বহু বিভক্ত। মানুষে মানুষে বাড়িয়েছি বিভেদ। বেঁধেছে সংঘাত। সুদুর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত সেই একই কথা বলে মানুষ হয়েও মানুষের রক্তে ¯œাত হয়ে উল্লাস করছি আমরা! এটা কি মানুষের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে? যে জ্ঞান-চিন্তা-ভালবাসা-প্রেমের কথা বলে নিজেদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত বলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করি তা কি আদৌ মনুষত্বের পরিচয় বহন করে?
অনেকেই বলেন, পৃথিবীতে বিবেক সম্পন্ন মানুষের পরিমাণ কমে গেছে। পুঁজির দুনিয়ায় মানবতাবাদ-ভালবাসা-আত্মমর্যাদা-মানবিক মর্যাদা সবই আজ বিক্রি হয় টাকার বিনিময়ে। পুঁজিই নাকি সব আর বাকি সব নাকি মিথ্যে। মানবতাবাদীরা মানবতার কথা বলে, তাও আবার পয়সার বিনিময়ে। পয়সা না থাকলে মাঠে নামেন না। তাহলে কি আমাদের এই পৃথিবীকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না? ধীরে ধীরে কি আমরা ধ্বংসের দিকে পা বাড়াচ্ছি? কিন্তু এভাবে আর কত দিন?
আজ বিশ্ব মানবতা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে অবশ্যই আমাদের ফিরতে হবে। বিপন্ন মানবতাকে বাঁচাতে হবে আমাদের। বিপন্ন মানবতাকে আমাদের বাঁচাতেই হবে। নেশার ঘোরে তন্দ্রাচ্ছন্ন মানবিক চেতনাকে করতে হবে জাগ্রত। মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করা মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়। মানুষের বৈশিষ্ট্য নয় ধর্ষণ করা। লাখো বছরের সংগ্রামের ইতিহাস মানুষের। আর এই অধিকারের সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়েই হয়েছে সৃষ্টির সেরা। সেই মানুষ কেন অমানুষে পরিণত হবে? তা হতে পারে না।
বড়াই থেকেই লড়াইয়ের সূত্রপাত। লড়াই থামাতে হলে বড়াইবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে আমাদের। সমস্বরে বলতে হবে, না না না। আমরা মানি না। চলবে না এই বড়াইবাদ। অবসান চাই সকল তন্ত্র-মন্ত্রের। আমরা মানুষ। মানবতাবাদই আমাদের আমাদের শেষ কথা। কোন কিছুর দোহাই দিয়েই আর মানবতাকে অপমান করা চলবে না। আমরা বাঁচতে চাই। বাঁচাতে চাই আমাদের মাতৃসম ধরণীকে।
আর কোন সামিউলকে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা যাবে না। আর কোন আয়লান দেশান্তরি হতে গিয়ে দরিয়ায় পানিতে জীবন দেবে না। আর কোন মাকে তার সন্তানের সামনে ধর্ষণ করা যাবে না। শৃঙ্খলা-কাঁটাতার-শান্তি রক্ষার নামে, তন্ত্র-মন্ত্রের শ্লোগান দিয়ে মানুষ হত্যা করা মনুষত্ব নয়। নিপাত যাক সকল তন্ত্রবাদ। এই পৃথিবী মানুষের, অমানুষের নয়। তাই অবসান হোক সকল ষড়যন্ত্রের। আসুন সকলে জাগ্রত করি আমাদের বিবেককে। বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হওয়ার সময় এসে গেছে আজ। মানুষকে ভালবাসি, আর দাঁড়াই মানুষের পাশে। সমস্বরে করি উচ্চারণ আরেকবার, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।
©somewhere in net ltd.