নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবীর মামুন

কবীর মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা আর একুশের চেতনায় বন্ধ হোক শিশু নির্যাতন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪

কয়েক মাস বন্ধ থেকে দেশে আবার বেড়ে গিয়েছে শিশু নির্যাতন। শিশু নির্যাতন আমাদের দেশে আগেও ছিল কিন্তু এমন বেপরোয়া আকারে ছিল না। গণমাধ্যম বলছে গত জানুয়ারি ২০১৬ মাসে ২০ জনেরও বেশি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেও তা চলছে যথারীতি। কমবার কোন লক্ষণ দেখছি না। হবিগঞ্জে একই পরিবারের চার শিশুকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। অবশ্য সব হত্যাকান্ডই নির্মম হয় সে বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তাছাড়া মারধোরের ঘটনাতো ঘটছেই প্রতিনিয়ত। যারা মারছে তাদের উদ্দেশ্য কি? শুধুই কি ক্রোধের বশে মারছে? তা নিশ্চয়ই হতে পারে না। ক্রোধটাকে দমন করতে পারা তো মানবিক গুণাবলীর অংশ। তবে কি আমরা তা হারিয়ে ফেলেছি। রাকিব রাজনরা জীবন দিয়েও আমাদের কিছু শিখিয়ে যেতে পারলো না। সেদিন রাকিব রাজনের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম। কিন্তু ক্ষমা চেয়ে কি সব হয়? আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে তোমরা আমাদের ক্ষমা করো না। আমরা এখনো মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি। যে পৃথিবী শিশুকে ভালবাসতে জানে না, যে সভ্যতা শিশুকে ভালবাসতে জানে না, ধিকা তাদের। ধিক আমাদের। মানুষরূপী কোন প্রাণী যখন মানুষ হত্যা করে, পিটিয়ে হত্যা করে শিশুদের তখন মনে হয় অন্য যে কোন প্রাণী মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আমরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করি, কিন্তু প্রমাণ কি দিতে পারি শ্রেষ্ঠত্বের?

যে শিশুরা দেশের ভবিষ্যত তাদেরকে আমরা শেষ করে দিচ্ছি কেন? কিসের লোভে? নাকি বিদ্বেষে? এটা একধরনের সংকট বললে ভুল হবে না। সংকট হলে তা কিসের সংকট? হতে পারে এটা আস্থার সংকট কিংবা সংস্কৃতির সংকট। সবমিলেয়ে এটা মানবিক মূল্যবোধের সংকট সে বিষয়ে দ্বিমতের কোন সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এর সাথে আমাদের আর্থ-সামাজিকতা কিংবা আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কি কোন যোগ রয়েছে? তা অবশ্যই বিশ্লেষণের দাবি রাখে। বিষয়গুলোকে ঢালাওভাবে হত্যাকান্ড হিসাবে না দেখে অবশ্যই বিশ্নেষণ করে দেখা প্রয়োজন।

শিশুদের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার রাষ্ট্রের শিশুসহ প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জাতিসংঘের শিশু অধিকার প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৯০ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশ এই সনদটি র্যা টিফাই করে অর্থাৎ সদন বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার গ্রহণ করে। এছাড়া এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান শিশু নির্যাতনের চিত্র লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় যে, বাংলাদেশ আর তার আগের অবস্থানে নেই। তার অবস্থান নিচে নেমে এসেছে । এই পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে। শিশুরাই রাষ্ট্রের ভবিষ্যত। এদেরকে রাস্তায় প্রকাশ্যে হত্যা করা চলবে না। বন্ধ করতে হবে শিশুর প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন।

সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হবে এটাই খুব স্বাভাবিক। কারণ একটি আরেকটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য মানুষকে মানবিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে হবে। শুধুমাত্র সরকার বা জনগণ করো একলার দায়িত্ব নয় এটি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে। তাই সেজন্য জনগণের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের নাগরিক এবং সর্বপরি মানুষ হিসাবে নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা এবং আইন মেনে চলা। আর রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্র যদি ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে যেমন, সরকারি দলের কর্মী সমর্থকদের প্রাধান্য দিয়ে যায় তাহলেই আইনের শাসন বিঘিœত হয়। আবার যদি রাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলেও আইনের শাসন বিঘিœত হয়। আইনের শাসন বিঘিœত হওয়ার একটি অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হলো আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সংস্কৃতি। মানুষ হয়ে উঠে অসহিষ্ণু। যার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই অহরহ। পিটিয়ে মানুষ হত্যার খবর প্রতিনিয়তই আমাদের চোখে পড়ে।

আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরেই তৈরি হয়েছে অসহিষ্ণুতার। এটা হুট করে নেমে আসেনি আমাদের উপরে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালে সামরিকতন্ত্রের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়েই সূত্রপাত এর। পচাত্তর থেকে নব্বই এই দেড় দশকে মানুষ দেখেছে কিভাবে শক্তি থাকলেই ক্ষমতা দখল করা যায়। বন্দুকের নল আর টাকার কাছে মানুষ, মানুষের চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ সবই অর্থহীন। এই সময়ের মধ্যদিয়ে একটা প্রজন্ম বের হয়েছে। স্বাধীনতার যে চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল তা মানুষ ভুলে গিয়েছিল সেই সময়। যারা মনে রেখেছিলেন তারাও শিকার হয়েছেন নির্যাতনের। অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রগতির ধজ্বাধারীরা তাদের চেতনাকে বিকিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতা আর টাকার কাছে। আর বর্তমান প্রজন্মতো ঐ সময়েরই সৃষ্টি। তবে কি আমাদের প্রজন্মের চিন্তার পরিবর্তন মুখের কথা হবে। কোন পরশ পাথর আমাদের কাছে নেই। দুর্নীতিবাদীতা আর পেশীশক্তিই আমাদের প্রজন্মের চেতনার মূল আশ্রয়কেন্দ্র।

নব্বইতে এসে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটেছে ঠিকই কিন্তু রেখে গেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বপন করে যাওয়া বীজ। এটাকে উপড়ে ফেলে মানবিক সমাজ গড়ার কাজটা খুব সহজ নয়। পুঁজিতন্ত্রের সাথে দুর্নীতিবাদীতা আর পেশীশক্তির রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক। এই সম্পর্কের জাল ছিন্ন করা প্রায় অসম্ভব। কারণ সারা বিশ্বেই আজ চলছে পুঁজির দাপট। পুঁজিতান্ত্রিক হেজিমনিই আমাদের প্রতিনিয়ত ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে সংঘাতের দিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাত অথবা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সংকট। এসকল সংকট এবং সংঘাত সৃষ্টি করে তারা সেখানে অস্ত্র ব্যবসা করে নিজেদের অর্থনীতির মূল যোগান দিচ্ছ। আর বিশ্বব্যাপী ছড়াচ্ছে দুর্নীতি আর পেশীশক্তির বিষবাষ্প। ফলে দেখা যাচ্ছে আমাদের মূল্যবোধের সংকট একমূখী নয়, বহুমূখী।

আমাদের আর একটি সংকট তৈরি করেছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধের ধারণা। এই ধারণার বিস্তারের সাথে সাথে মানুষ মানুষের নিকট থেকে দূরে সরে গেছে আর যাচ্ছেও প্রতিনিয়ত। মানুষ প্রতিনিয়ত একা হয়ে পড়ছে। সামাজিক প্রাণী মানুষ ক্রমাগত একা হতে হতে নিঃসঙ্গ। তাই তারা প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। এই ভয় হলো একাকীত্বের বোধ। কারণ সে জানে তার সাথেতো কেউ নেই। তার বাস্তব জীবনটাও ভার্চুয়াল। তাই সে একা। এই একাকীত্বের বোধ মানুষে মানুষে আস্থার সংকটও তৈরি করেছে। এই আস্থার সংকট আমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে প্রতিবাদ করতে পাশাপাশি তৈরি করেছে সন্দেহপ্রবণতার মানসিকতা। ফলে নিজেরাতো প্রতিবাদ করিই না আর অন্যেরা যদি করে সেটার ভেতরেও তার লাভ লোকসানের হিসাব কষি। এরই মধ্যে আবার এসেছে ভার্চুয়াল প্রতিবাদের সংস্কৃতি। আমরা আর মাঠে নামি না। ফেসবুক, টুইটার আর ব্লগে প্রতিবাদ করি। আমরা এখন বাস্তব জগৎ বাদ দিয়ে ভার্চুয়াল বন্ধু খুঁজি। রাজনীতিও করি ভার্চুয়াল। তবে ভার্চুয়াল প্রতিবাদগুলো মানুষকে একত্রিত করে অধিকার আদায়ে মাঠে নামিয়েছে এমন নজিরও থাকলেও তা খুবই নগণ্য সংখ্যক।

কারণ যাই হোক এটা আমাদের বাঙ্গালির সংস্কৃতিগত এবং মূল্যবোধের চরম সংকট তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে এই সংকট থেকে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যত যে চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে তা সহজেই অনুমেয়। বাঙ্গালির স্বাধীনতার চেতনা, একুশের চেতনাকে ধারণ করেই আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে সকল ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন। গড়তে হবে নতুন ভবিষ্যত। আগামীর নতুন ভোরের লাল সূর্যোদয়। যেখানে থাকবে না আর কোন বঞ্চনা-বৈষম্য-নির্যাতন-নিপীড়ন। বোধদয় হোক মানুষের। ভালবাসি এই পৃথিবীকে আর ভালবাসি মানুষকে। বেঁচে থাক সকল শিশু। বেড়ে উঠুক নির্যাতন-নিপীড়নমুক্ত হয়ে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: সহমত,
চমৎকার লিখেছেন,

একুশ নিয়ে আমার এ পোস্টটা পড়ার জন্য অনুরোধ রইল,
পোস্ট লিংক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.