![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এমন নৃশংসভাবে কেউ কাউকে মারতে পারে না যদি সে সত্যিই তাকে ভালোবাসে। ভালোবাসা কখনো নৃশংস হয় না। ভালোবাসা মানে মমতা, ভালোবাসা মানে সহমর্মিতা। ভালোবাসা যদি হন্তারক হয়ে উঠে তবে সেটি ভালোবাসা ছিল নাকি শরীরের লোভ তা অবশ্যই বিচার- বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
আজকে খাদিজার বিষয়টা সামনে এসেছে আমাদের। একজন ছাত্রনেতার হাতে সে নির্মমভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে দিন গুনছে। চিকিৎসক বলেছেন, এমনভাবে আহতদের বাঁচবার সম্ভাবনা মাত্র ৫ শতাংশ। আমরাও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছি দু’দিনের জন্য। তারপর আবার ভুলে যাব। আমাদের সামনে আসবে নতুন কোন ইস্যু।
খাদিজা, তনু, রিশা, মিতু, আফসানা, ইয়াসমিন, সীমা, পারুল, ফাতেমা, শামীমা, জুলিয়া, কল্পনা চাকমা কিংবা আরো হাজারো অনেক নাম রয়েছে এই তালিকায় যাদের সকলের গন্তব্য একটাই। তারা সকলেই পুরুষালি আধিপত্যবাদের শিকার। প্রতিদিনই কোন না কোন নারী শিকার হয় সহিংসতার। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায়, শিক্ষাঙ্গনে কোথাও নিরাপদ নয় তারা। বন্ধু, পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, পুলিশ, রাজনৈতিক কর্মী, সহকর্মী, পরিচিত, অপরিচিত কারো কাছেই নিরাপদ নয় তারা। কিন্তু কেন?
প্রতিদিনই নারী ও শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে। নির্যাতিত হচ্ছে নানাভাবে। ধর্ষণ, হত্যা, এসিড সহিংসতা, মারধোর, কোপানো, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কায়দায় এই নিপীড়নগুলো হয়ে থাকে। কারণগুলোও আমাদের জানা। কোন কারণই ন্যায় সঙ্গত নয়। নিপীড়কেরা কারণের যৌক্তিকতা তৈরি করে নানারকম হেজিমনি তৈরি করে। আমাদের সমাজে নারীকেই দোষারোপ করা হয় সকল কিছুর দায় চাপিয়ে। আর নিজের দায় এড়িয়ে অন্যের উপর দায় চাপানো পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ। তবে মনুষত্বের প্রকাশ ঘটে দায় স্বীকার করবার মধ্য দিয়েই। নিজের ভেতর হিংস্রতা পুষে রেখে নিজেকে মানুষ দাবি করাটা অযৌক্তিক। মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর মমত্ব প্রকাশের মাধ্যমেই আসল মানুষ হওয়া যায়। অন্যায় করাটা পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ। যে কেউ চাইলেই যেকোন সময় সেটা করতে পারে। কিন্তু নিজের লোভ-মোহ সংবরণ করে অন্যায় থেকে নিজেকে নিবৃত রেখে জীবন যাপন করতে হলে প্রতিনিয়ত নিজের কাছে নিজের পরীক্ষা দিয়ে যেতে। নিজের বিবেকটাকে জাগ্রত রাখতে হয়।
আমাদের সমাজের ক্ষতগুলো সারাতে আমরা সবসময় উপরে উপরে মলম লাগাতে ব্যস্ত থাকি। মলম লাগালে উপর থেকে ঘা সেরে যায় কিন্তু ভেতরের জীবাণু দূর করতে যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন তার কথা বলি না আর স্বীকারও করি না। তাই অন্যায়গুলো হতেই থাকে আর আমরা যথাবিহীত সম্মানপূর্বক দুই একটা মানববন্ধন করে আবার নিস্তেজ হয়ে যাই। কারণ আমরা সকলেই আধিপত্যবাদের পদলেহী।
ধনবাদী রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো আধিপত্যবাদ। পুরুষতান্ত্রিকতাকেও স্বযত্নে লালন করে এই ধনবাদ। পুরুষালি সমাজ, আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র আর ধনবাদ একে অপরের পরিপূরক। তাই খাদিজাদের উপর হামলা এখানে অবধারিত। কোন ক্ষমতাই না বলাকে প্রশ্রয় দেয় না। আর পুরুষালি সমাজে পুরুষতো দেয়ইনা। সমাজ নারীকে পুরুষের অধীনস্ত করেছে। সুতরাং একজন নারী একজন পুরুষকে না বলছে মানে হলো সমাজকে চ্যালেঞ্জ করছে। এই চ্যালেঞ্জ হলো পুরুষতন্ত্রের ক্ষমতাবাজির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। সুতরাং পুরুষতন্ত্র এটাকে সহজে ছেড়ে দেবে এটা আসলে স্বাভাবিক নয় আধিপত্যবাদী সমাজে।
নেতৃবৃন্দ পরামর্শ দেন সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘন্টা কে বাঁধবে? আমরা দেখেছি প্রতিবাদ করতে গিয়ে নাটোরের শিক্ষক মিজানুর রহমানকে জীবন দিতে। জীবন দিয়েছেন অনেকের মা-বাবাসহ পরিবারের অনেক পরিজনকেও। ঘটনা যার দ্বারা সংঘটিত হবে তিনিই যদি সমাজের নেতৃত্ব দেন, তবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবার উপায় কি? চারিদিকে শুধু মুখোশের আড়ালের মানুষ।
মানুষের ভেতরের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা না গেলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভবপর বলে আমার কাছে মনে হয় না। আমাদের চারিদিকে প্রতিনিয়ত আমরা আগ্রাসী হয়ে উঠবার উপাদান হাতের নাগালে পাই। লোভের হাতছানি আমাদের নিত্যদিনের অনুষঙ্গ। ধনবাদী সমাজ ব্যবস্থা আমাদেরকে ভোগবাদে প্রলুব্ধ করছে প্রতিদিন। তবে মুক্তির উপায় কি? মানুষ কিভাবে মানুষ হয়ে উঠবে? তবে এটাও সত্য যে, মানুষই পারে মানুষকে ভালোবাসতে। মানুষই প্রমাণ দিয়েছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।
তবে এই যে ক্ষয়ে যাওয়া সময়কে আমরা অতিক্রম করছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা ভুলে গেছি মানুষকে ভালোবাসতে। আমাদের মন থেকে উঠে গেছে মমতা। আমরা প্রতিনিয়ত নতজানু ক্ষমতার কাছে। ক্ষমতার চর্চা আমাদেরকে প্রতিদিনই করে তুলছে লোভাতুর। ফলে কি হবে এই সমাজের? আমরা কি পারবো অপরকে সম্মান করতে শিখতে। আমরা কি পারবো মানুষের মনে মমত্ববোধ জাগাতে। সমাজ কি পারবে মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করতে। নারী-পুরুষ-শিশু-প্রতিবন্ধী-তৃতীয় লিঙ্গ সকলকে সমানভাবে একই কাতারে দেখতে যে মানসিকতার প্রয়োজন তা কি সৃষ্টি হবে সহজে? সেদিন আর কত দূরে?
ভোগবাদ আমাদেরকে যে জায়গাতে এনে দাঁড় করিয়েছে তার থেকে ফিরে আসতে চাইলেই কি আসা সম্ভব? মানসিকতার পরিবর্তন খুব সহজ কথা নয়। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন। সে অনেক কঠিন রাস্তা। আমরা কি পারবো সেই রাস্তায় হাঁটতে? কিন্তু আমাদেরকে পারতেই হবে। আর এর জন্য চাই সমাজ নেতা আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা। স্বাধীনতার চেতনায় দেশ গড়তে হলে সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন অবশ্যই আনতে হবে। এই পরিবর্তনের কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে সকলকে নইলে অপূর্ণ থেকে যাবে সবকিছু।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
ছাত্র রাজনীতি দেশের ছেলেদের হাতে হালাকু খানের মতো ক্ষমতা দিয়েছে।