![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ ২৬ মার্চ, ২০২৫। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালি জাতির গৌরব, সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের প্রতীক। ১৯৭১ সালের এই দিনে শুরু হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক পথচলা, যা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের হাতে এনে দিয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা। আজকের এই ব্লগে আমি চেষ্টা করবো ২৬ মার্চের সেই গৌরবময় ইতিহাসকে নতুন করে তুলে ধরতে, যাতে আমরা সবাই মনে মনে একবার অনুভব করতে পারি সেই দিনের তাৎপর্য।
স্বাধীনতার পটভূমি: কেন এলো ২৬ মার্চ?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা ছিল না। এর পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের শোষণ, বৈষম্য আর অবিচারের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায়, তখন পাকিস্তান নামে একটি নতুন দেশের জন্ম হয়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান, যা আজকের বাংলাদেশ, শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে অবহেলিত ছিল। ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সব ক্ষেত্রেই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক অদৃশ্য শৃঙ্খল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা—বাঙালিরা ধীরে ধীরে জেগে উঠছিল।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ছিল সেই জাগরণের শিখর। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল ভোটে জয়ী হয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী, বিশেষ করে জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে, ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। এই প্রতারণা বাঙালির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয়। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করে। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায়—এবার আর পিছু হটার পথ নেই।
২৫ মার্চের কালরাত্রি
২৫ মার্চ, ১৯৭১। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াল রাত। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে একটি নৃশংস পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা—এসব জায়গায় নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই রাতেই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু গ্রেফতারের আগে, মধ্যরাত পেরিয়ে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
২৬ মার্চ: স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয়
২৬ মার্চের সকালটা ছিল রক্তে মাখা। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল লাশ আর ধ্বংসস্তূপ। কিন্তু এই দিনই বাঙালির জন্য নিয়ে এসেছিল এক নতুন আলো। শেখ মুজিবের ঘোষণার পর চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পড়ে শোনান। পরদিন, ২৭ মার্চ, তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান একই কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবের পক্ষে ঘোষণাটি পুনরাবৃত্তি করেন। এই ঘোষণা বাঙালির মনে সাহস জোগায়। হতবিহ্বল জনতা বুঝতে পারে—এবার লড়াইয়ের সময়।
এখানে একটি প্রশ্ন অনেকের মনে আসতে পারে—স্বাধীনতার ঘোষক কে? শেখ মুজিব, না জিয়াউর রহমান? এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের বিতর্কের বিষয়। আওয়ামী লীগ বলে, শেখ মুজিবই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, যা পরে বেতারে প্রচারিত হয়। অন্যদিকে বিএনপি দাবি করে, জিয়াউর রহমানের ঘোষণাই জনগণের কাছে পৌঁছেছিল। তবে বাংলাদেশের সংবিধানে শেখ মুজিবের ঘোষণাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমার মতে, এই বিতর্কে না গিয়ে আমাদের ফোকাস করা উচিত সেই সংগ্রামের প্রতি, যেখানে লাখো মানুষ জীবন দিয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু
২৬ মার্চ থেকেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। সাধারণ মানুষ, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক—সবাই যোগ দেয় এই লড়াইয়ে। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। ভারতের সহায়তায় এই যুদ্ধ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু ২৬ মার্চ ছিল সেই বীজ, যা থেকে স্বাধীনতার গাছ জন্ম নিয়েছিল। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা কতটা মূল্যবান, আর তা অর্জন করতে কত রক্ত ঝরতে হয়েছে।
আজকের ২৬ মার্চ: আমরা কোথায়?
আজ ৫৪ বছর পর আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। ২৬ মার্চ এখন জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। সারাদেশে জাতীয় পতাকা উড়ে, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়, আর ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনটির শুরু হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা কি সত্যিই সেই স্বাধীনতার চেতনাকে ধরে রেখেছি? রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য—এসব কি আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল?
আমি মনে করি, ২৬ মার্চ শুধু উৎসবের দিন নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞার দিন। আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে আমরা সেই সমতা, ন্যায় আর স্বাধীনতার জন্য কাজ করে যাবো, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের এক হতে হবে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোনো দল—সবার লক্ষ্য তো একটাই, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
শেষ কথা
২৬ মার্চ আমাদের গর্বের দিন। এই দিনটি আমাদের শেখায়—সংগ্রাম ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই দেশ। তাদের প্রতি আমাদের ঋণ কখনো শোধ হবে না। তবে আমরা যদি তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারি, তাহলেই তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আজকের এই দিনে আসুন আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি—বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বের বুকে আরও উঁচুতে তুলে ধরবো।
স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে! লাল-সবুজের পতাকা চিরকাল উড়তে থাকুক।
২| ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: দেশ তো এখন হায়েনাদের হাতে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৬:০৬
ইকবাল স্পেন বলেছেন: স্বাধীনতার গৌরবে ভরা এই দিনে, আপনাকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।
স্বাধীনতা দিবসের এই পবিত্র মুহূর্তে, স্মরণ করি তাদের আত্মত্যাগ, যাঁরা আমাদের মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন।
আপনার জীবনে সাফল্য, শান্তি ও প্রগতি কামনা করি। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা!