![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাফি তার বড় বোন তানিয়ার বাসায় বসে বসে টিভি দেখছিল। তানিয়ার বাসাটা গুলশানের একটা শান্ত এলাকায়, যেখানে তানিয়ার স্বামী রিয়াদ একটা ছোট্ট গবেষণাগার চালায়। রিয়াদ একজন উদ্ভট গবেষক, যিনি সবসময় এমন কিছু নিয়ে কাজ করেন যা সাধারণ মানুষের কাছে অদ্ভুত বা অবাস্তব মনে হয়। রাফির কোনো কাজ না থাকলে সে প্রায়ই এখানে চলে আসে। আজও সে এসেছে সময় কাটাতে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাফি একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছে। প্রথমে মনে হয়েছিল, তার মনের ভুল হতে পারে। এমনটা কীভাবে সম্ভব? কিন্তু যখন টিভিতে একই জিনিস দেখতে পেল, তখন সে আর অবাক না হয়ে পারল না। তার মনে হচ্ছিল, শুধু সে একা নয়, আরো অনেকেই এই অদ্ভুত ঘটনাটা লক্ষ্য করেছে। রাফি ধীরে ধীরে সব নিউজ চ্যানেল বদলাতে শুরু করল। প্রতিটি চ্যানেলে একই খবর চলছে—একই অদ্ভুত দৃশ্য!
এটা কী আশ্চর্যের ব্যাপার! এমনটা কি সত্যিই হয়? রাফি ভাবতে লাগল, কিন্তু তার মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল, পাখি হয়তো একসঙ্গে ডাকতে পারে, কিন্তু মানুষ কেন পাখির মতো একসঙ্গে চিৎকার করবে? এটা কী অদ্ভুত কথা!
ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই রাফি এই ব্যাপারটা টের পাচ্ছিল। প্রতি দুই মিনিট অন্তর তাদের বাসার পোষা পাখিগুলো যেন একযোগে ডেকে উঠছে। রাফির বোনের স্বামী রিয়াদ একজন বিজ্ঞানী। তার গবেষণার বিষয়বস্তু সবসময়ই অদ্ভুত। সে নানান এক্সপেরিমেন্ট করে, কিন্তু বেশিরভাগই কোনো কাজে লাগে না। রাফির বোন তানিয়া প্রায়ই বিরক্ত হয়ে বলে, “এসব করে কী লাভ? যদি গবেষণাই করতে হয়, তাহলে এমন কিছু নিয়ে করো, যাতে মানুষের উপকার হয়। আমরা অন্তত গর্ব করে বলতে পারি!”
রিয়াদ এই কথায় হেসে বলে, “সবাই তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গবেষণা করে। এক-আধজন যদি এমন মজার কিছু নিয়ে কাজ করে, তাতে কী সমস্যা?”
রাফির অবশ্য এসব বেশ ভালো লাগে। রিয়াদ সত্যিই মজার মজার জিনিস নিয়ে কাজ করে। একবার রাফির ছাদে একটা লেবু গাছ ছিল। সে খুব যত্ন করে গাছটাকে বড় করেছিল, অপেক্ষা করত কবে লেবু ধরবে। কিন্তু গাছে কিছুতেই ফল ধরছিল না। রাফি রিয়াদকে বলতেই, রিয়াদ গাছের মাটিতে কী যেন একটা মিশিয়ে দিল। পরের দিন সকালে রাফি দেখে, গাছে থোকায় থোকায় লেবু ঝুলছে!
রাফি তো অবাক! রিয়াদকে চেপে ধরল, “ভাইয়া, এটা কী জাদু করলে? বলতেই হবে!”
রিয়াদ হেসে বলল, “আরে, এটা কোনো জাদু না। আমি শুধু কিছু এনজাইম মিশিয়ে দিয়েছি।”
রাফি কিছুই বুঝতে পারল না। রিয়াদ বোঝাল, “দেখ, গাছের কিছু নির্দিষ্ট কোষের কাজ হলো ফুল আর ফল তৈরি করা। আমি এমন কিছু এনজাইম দিয়েছি, যা ওই কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর বেশি কিছু না!”
রিয়াদের এবারের গবেষণাটাও বেশ চমকপ্রদ। সে এবার মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা যন্ত্র বানাচ্ছে। নাম দিয়েছে “এইচএমআর”—হিউম্যান মুড রেগুলেটর। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রত্যেক মানুষের আবেগ ভিন্ন। একেক জনের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে একেক ধরনের যন্ত্র লাগে। তাই রিয়াদ নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। তার ধারণা, প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু কমন বৈশিষ্ট্য থাকে। সেই কমন বৈশিষ্ট্যকে ভিত্তি করে যদি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
রাফি একদিন রিয়াদের কাছে জানতে চাইল, “ভাইয়া, আবেগকে তুমি কীভাবে ধরবে?”
রিয়াদ একটু চুপ করে থেকে বলল, “তুই কি ‘মনের ঢেউ’ বলে কিছু শুনেছিস?”
“মানে?” রাফি ভ্রু কুঁচকাল।
“দেখ, আমাদের মন থেকে সবসময় কিছু তরঙ্গ বের হয়। যেমন, কেউ যদি তোর দিকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায়, আর কেউ যদি রাগের দৃষ্টিতে তাকায়, তুই কি বুঝতে পারিস না?”
“হ্যাঁ, পারি।”
“ঠিক তাই। ওই দৃষ্টির সঙ্গে একটা তরঙ্গ আমাদের মনে প্রভাব ফেলে। আমি চাই ওই তরঙ্গটা ধরতে।”
“কিন্তু একেক জনের আবেগ তো একেক রকম। তাহলে?”
“হ্যাঁ, এটা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আমি চেষ্টা করছি।” রিয়াদ একটু হাসল।
এই গবেষণার জন্য রিয়াদ গত মাসে কয়েকটা পাখি কিনে এনেছে। মানুষের ওপর তো পরীক্ষা করা যায় না, তাই পাখি দিয়ে শুরু করেছে। পাখিরা সবসময় একসঙ্গে ডাকে, তাদের মধ্যে একটা স্বাভাবিক সংযোগ থাকে। রিয়াদ চায় এই সংযোগের তরঙ্গ ধরতে।
একদিন রাফি রিয়াদের গবেষণাগারে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিল। ভেবেছিল, রিয়াদ হয়তো দরজা খুলবে না। রিয়াদ প্রায়ই দিনের পর দিন দরজা বন্ধ করে কাজ করে, কারো ডাকে সাড়া দেয় না। কিন্তু এবার অবাক করা ব্যাপার, দরজা খুলে গেল। রিয়াদের মুখে হাসি দেখে রাফি বুঝল, সে কোনো কিছুতে সফল হয়েছে।
“আয়, ভেতরে আয়!” রিয়াদ উৎসাহ নিয়ে বলল।
“ভাইয়া, তোমার পাখিগুলো এত ডাকছে কেন?” রাফি জিজ্ঞেস করল।
“কে বলল ডাকছে না? দেখ, ডাকছে তো!” রিয়াদ একটা কাচের বাক্সের দিকে ইশারা করল।
রাফি দেখল, পাখিগুলো বাক্সের ভেতর বসে আছে, আর মাঝে মাঝে একসঙ্গে ডেকে উঠছে। কিন্তু কোনো শব্দ নেই।
“এটা কী?” রাফি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
“ওটা একটা সাউন্ডপ্রুফ বাক্স। তাই শব্দ বাইরে আসছে না।” রিয়াদ হাসল।
“তার মানে তুমি সফল হয়েছ?”
“পুরোপুরি না, তবে কিছুটা। দেখ, আমি পাখিদের একটা নির্দিষ্ট আবেগের তরঙ্গ ধরতে পেরেছি। এই যন্ত্রটা দেখ,” রিয়াদ একটা বড় মেশিনের দিকে ইশারা করল। “এটা দিয়ে আমি তরঙ্গ ছড়িয়ে দিই। এই তরঙ্গে একটা সিগন্যাল থাকে। যে পাখিগুলো এই সিগন্যালের মধ্যে আসে, তারা দুই মিনিট পরপর ডেকে ওঠে।”
“এই তরঙ্গ কতদূর যায়?” রাফি জিজ্ঞেস করল।
“ধর, গুলশানের এই এলাকা পর্যন্ত। কেন?”
“এটা কি মানুষের ওপরও কাজ করবে?”
“না, করার কথা না। তবে…” রিয়াদ একটু থামল।
“তবে যদি কোনো মানুষের মধ্যে পাখির মতো আবেগ থাকে?” রাফি বলল।
রিয়াদ একটু মাথা চুলকালো। “হতে পারে। যদি কেউ কোনো কিছুর প্রতি এতটাই নিবেদিত হয় যে তার আবেগ পাখির মতো হয়ে যায়, তাহলে হয়তো কাজ করতে পারে। কেন বল তো?”
রাফি কিছু না বলে বলল, “চলো, টিভিটা দেখে আসি।”
ওরা দুজনে টিভি রুমে গেল। তখনও একটা নিউজ চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচার চলছে। একজন সাংবাদিক বলছিল, “আমরা লাইভ বলছি গুলশান থেকে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, আমার পিছনে এই লোকগুলো কী করছে। তারা সেই কখন থেকে পাখির মতো শব্দ করে চিৎকার করছে। প্রতি দুই মিনিট পরপর এরা একযোগে ডেকে উঠছে। এর কোনো ব্যাখ্যা আমরা এখনো পাইনি।”
রাফি আর রিয়াদ মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। রাফি বলল, “ভাইয়া, এটা কি তোমার যন্ত্রের কাজ?”
রিয়াদ একটু চিন্তায় পড়ে গেল। “হতে পারে। আমি তো শুধু পাখিদের ওপর পরীক্ষা করছিলাম। কিন্তু যদি এই তরঙ্গ মানুষের মধ্যেও কাজ করে থাকে…”
“তাহলে এখন কী করবে?” রাফি জিজ্ঞেস করল।
“আমাকে যন্ত্রটা বন্ধ করতে হবে। এটা যদি সত্যিই আমার কাজের ফল হয়, তাহলে এর দায় আমার।” রিয়াদ দ্রুত গবেষণাগারে ফিরে গেল।
রিয়াদ যন্ত্রটা বন্ধ করে দিল। কিন্তু টিভিতে খবর চলতে থাকল। লোকজন এখনো পাখির মতো ডাকছে। রাফি বলল, “ভাইয়া, এটা বন্ধ হয়নি কেন?”
রিয়াদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। “আমি জানি না। হয়তো তরঙ্গটা এত শক্তিশালী হয়ে গেছে যে এখন আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই।”
তানিয়া ঘরে ঢুকে বলল, “তোমরা দুজন এত চিন্তিত কেন? বাইরে কী হচ্ছে?”
রাফি আর রিয়াদ সব খুলে বলল। তানিয়া শুনে বলল, “তোমার এই অদ্ভুত গবেষণা আমাদের সবাইকে বিপদে ফেলবে। এখন কী করবে?”
রিয়াদ বলল, “আমাকে আরেকটা যন্ত্র বানাতে হবে। এই তরঙ্গকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য।”
পরের কয়েকদিন রিয়াদ দিন-রাত কাজ করল। রাফি আর তানিয়া তার পাশে থেকে সাহায্য করল। অবশেষে রিয়াদ একটা নতুন যন্ত্র বানাল, যার নাম দিল “এমটিএন”—ইমোশন তরঙ্গ নিষ্ক্রিয়কারী। যন্ত্রটা চালু করার পর গুলশানের লোকজন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এল। টিভিতে খবর এল, “অদ্ভুত ঘটনার সমাধান হয়েছে।”
রাফি হেসে বলল, “ভাইয়া, তোমার গবেষণা সত্যিই অসাধারণ।”
রিয়াদ বলল, “হ্যাঁ, তবে এবার থেকে একটু সাবধানে কাজ করব।”
তানিয়া বলল, “আর না! এবার থেকে কাজের জিনিস নিয়ে গবেষণা করো।”
তিনজনেই হেসে উঠল। গুলশান আবার শান্ত হয়ে এল, কিন্তু রাফি জানে, রিয়াদের মাথায় আরো অদ্ভুত আইডিয়া ঘুরছে।
২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:০২
আমিই সাইফুল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।
২| ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:১৬
জনারণ্যে একজন বলেছেন: চমৎকার!
শৈশবে এই ধরণের কিছু শিশুতোষ কল্পকাহিনী পড়েছি বটে, মাগার এই পরিণত বয়সে, এই প্লাটফর্মে এসেও যে পড়তে হবে ভাবিনি।
যাই হোক, অপরিণত এই গল্প পইড়া একটা বিড়ি খাওয়ার প্রবল তৃষ্ণা জায়গা উঠলো, শেষ কইরা ডিসিশন নিতে হবে পরের পর্বগুলিও পড়া যাবে কিনা।
বিঃ দ্রঃ একটা চ্যালেঞ্জ হাতে নিতে পারেন কিনা ভেবে দ্যাখেন। এক দিনেই এমন পোস্ট করবেন, যেন প্রথম পাতাতে শুধু আপনার লেখায় থাকে। মনেহয়না এই প্লাটফর্মের আর কারো এই রেকর্ড আছে। অন্য যারা পোস্ট করতে চায়, অথবা প্রথম পাতায় তাদের লেখা একটু বেশি সময় ধরে দেখতে চায়, ওদেরকে থোড়াই কেয়ার!
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: ভালোই হয়েছে।