![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তানিয়ার সাথে লিফটে সেই ছোট্ট কথোপকথনের পর আমার মনটা আরও বেশি উৎসুক হয়ে উঠলো। তার সেই হালকা হাসি আর “দেখি, সময় হলে যাবো” কথাটা আমার মাথায় ঘুরতে লাগলো। আমি ভাবলাম, সত্যি সত্যি কি সে আব্দুল চাচার দোকানে চা খেতে আসবে? নাকি এটা শুধুই একটা সৌজন্যমূলক কথা ছিল? যাই হোক, আমি ঠিক করলাম, আজ সন্ধ্যায় আমি গলির মোড়ে অপেক্ষা করবো।
সেদিন অফিসে কাজের চাপ একটু বেশি ছিল। বস আমাকে একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে বলেছিলেন, যেটা শেষ করতে বিকেল গড়িয়ে গেল। কিন্তু মনের এক কোণে সবসময় তানিয়ার কথা ঘুরছিল। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ঘড়িতে দেখলাম, সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, আজ যদি তানিয়ার সাথে দেখা হয়, তাহলে একটু বেশি কথা বলার চেষ্টা করবো
বাসার কাছাকাছি পৌঁছে আমি সোজা আব্দুল চাচার দোকানে গেলাম। চাচা আমাকে দেখে হেসে বললেন, “কী রে রিয়াদ, আজ আবার চা?” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ চাচা, আজ এক কাপ চা দেন। আর একটু বসবো এখানে।” চাচা চা বানাতে বানাতে বললেন, “কী ব্যাপার, আজ বড্ড চিন্তিত মনে হচ্ছে। কিছু হয়েছে নাকি?” আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, “না, চাচা। শুধু একটু চা খেতে ইচ্ছে করলো।”
চাচা চায়ের কাপটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “তোর চোখে-মুখে কিন্তু অন্য কিছু বলছে।” আমি হেসে চুপ করে গেলাম। চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমি গলির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মিনিট দশেক পর দেখি, তানিয়া বিল্ডিং থেকে বের হচ্ছে। তার পরনে একটা কালো কুর্তি, আর হাতে একটা ছোট ব্যাগ। আমার বুকের ভেতরটা আবার ধক করে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালাম।
তানিয়া গলির মোড়ে এসে একটু থমকে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকালো। আমি হাত তুলে একটু ইশারা করলাম। সে ধীরে ধীরে দোকানের দিকে এগিয়ে এলো। আমি বললাম, “আপনি এসেছেন! আমি ভাবছিলাম, আসবেন কি না।” তানিয়া হেসে বলল, “আমি বলেছিলাম না, সময় হলে আসবো। আজ একটু সময় পেয়েছি।” আমি খুশি হয়ে বললাম, “বেশ, তাহলে এক কাপ চা খান। আব্দুল চাচার চা খুব ভালো।”
তানিয়া একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে।” আমি চাচাকে বললাম, “চাচা, আরেক কাপ চা দেন।” চাচা মুচকি হেসে চা বানাতে লাগলেন। তানিয়া দোকানের একটা চেয়ারে বসলো। আমিও তার পাশে বসলাম। আমি বললাম, “আপনার বান্ধবীর বাসায় যাওয়া কেমন হলো?” সে বলল, “ভালো। অনেকদিন পর ওর সাথে দেখা হলো। একটু গল্প করলাম।” আমি বললাম, “ওহ, ভালো। আমার তো এখানে তেমন কেউ নেই। বেশিরভাগ সময় একাই থাকি।”
তানিয়া একটু অবাক হয়ে বলল, “একা? আপনার ফ্যামিলি কোথায়?” আমি বললাম, “আমার বাবা-মা গ্রামে থাকেন। আমি এখানে চাকরির জন্য এসেছি।” সে বলল, “ওহ, তাই। আমারও বাবা-মা গ্রামে। আমি এখানে পড়াশোনা আর চাকরির জন্য থাকি।” আমি বললাম, “তাহলে তো আমরা একই নৌকায়।” সে হেসে বলল, “হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে।”
চাচা চায়ের কাপটা তানিয়ার সামনে রাখলেন। আমরা দুজনে চা খেতে শুরু করলাম। আমি বললাম, “আপনি কী করেন? মানে, চাকরি করেন, না পড়াশোনা?” তানিয়া বলল, “আমি একটা এনজিওতে চাকরি করি। আর পড়াশোনা শেষ করেছি গত বছর। আপনি?” আমি বললাম, “আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করি। মার্কেটিংয়ের কাজ।” সে বলল, “ওহ, বেশ। মার্কেটিং তো বেশ চ্যালেঞ্জিং।” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ, তবে মজাও আছে।”
এভাবে আমাদের কথা চলতে লাগলো। আমি লক্ষ্য করলাম, তানিয়ার সাথে কথা বলতে আমার আর তেমন নার্ভাস লাগছে না। তার কথার মধ্যে একটা সরলতা আছে, যেটা আমাকে আরাম দেয়। আমি বললাম, “আপনি কি প্রায়ই এখানে চা খেতে আসেন?” সে বলল, “না, খুব একটা না। তবে আজ এলাম, কারণ আপনি বলেছিলেন।” আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, “ওহ, তাহলে তো আমার জন্যই এসেছেন।” সে হেসে বলল, “একটু-আধটু তাই।”
আমরা দুজনে হাসলাম। চা শেষ করে তানিয়া বলল, “আমি এখন যাই। একটু কাজ আছে।” আমি বললাম, “ঠিক আছে। আবার কখনো চা খেতে আসবেন?” সে বলল, “দেখি। আপনি যদি আবার ডাকেন, তাহলে আসতে পারি।” আমি হেসে বললাম, “তাহলে ডাকবো।” সে হেসে উঠে চলে গেল।
তানিয়া চলে যাওয়ার পর আমি আরেকটু দোকানে বসে রইলাম। আব্দুল চাচা এসে বললেন, “কী রে, কথা হলো?” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ, চাচা। একটু হলো।” চাচা বললেন, “ভালো। এইভাবে শুরু হয়। তুই একটু ধৈর্য ধর।” আমি বললাম, “দেখি, চাচা। কী হয়।”
রাতে বাসায় ফিরে আমি শুয়ে শুয়ে ভাবলাম। তানিয়ার সাথে এই কথোপকথন আমার জন্য একটা বড় পাওয়া। আমি বুঝতে পারলাম, সে আমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী। কিন্তু আমার মনের কথা কি সে বুঝতে পারে? আমি কি তাকে বলে দেবো যে আমি তাকে পছন্দ করি? নাকি আরেকটু অপেক্ষা করবো?
পরের দিন সকালে আমি আবার জানালা দিয়ে তাকালাম। তানিয়া বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। আমি তাড়াতাড়ি নিচে নামলাম। কিন্তু এবারও সে গাড়িতে উঠে চলে গেল। আমি হতাশ হয়ে আব্দুল চাচার দোকানে গেলাম। চাচা বললেন, “কী রে, আজ আবার চা?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, চাচা। আর একটু অপেক্ষা করবো।”
আমি চা হাতে নিয়ে গলির মোড়ে দাঁড়ালাম। মনে মনে ভাবলাম, তানিয়া যদি আবার আসে, তাহলে এবার আমি একটু বেশি সাহস দেখাবো। আমি জানি, এই অপেক্ষার শেষ কোথায়, তা আমার হাতে নেই। কিন্তু এই গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা আমার জন্য একটা আলাদা জগৎ। আর সেই জগতে তানিয়া একটা উজ্জ্বল তারা।
©somewhere in net ltd.