নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুষার মায়া

১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:১১

পর্ব-১

শেষ বিকেলের অবসাদকে বিসর্জন দিয়ে কোলাহলপূর্ণ ঢাকার মিরপুরে খ্যাপ মারতে রিক্সার পা-দানিতে বসে আজকের শুক্রবারে তার রুজি-ব্যাবস্থার ১ সপ্তাহ পূর্তি’র কথা ভাবছেন কইবদ মিয়াঁ ।আনুমানিক পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন বৎসরের একজন বৃদ্ধলোক, মাথায় পাঁকা চুল গালে অল্প-অল্প দাঁড়ি । গায়ে একটা

ভদ্র-ধাঁচের সাধা শার্ট ,পরনে লুঙ্গি আর পায়ে সস্তা উঁচু প্লাস্টিকের স্যান্ডল। কোঠরাগত চোখের চাহনি

আর অযত্ন-অবহেলায় হাত পায়ের নখ,পানের অমিয় সুধায় লাল হয়ে আছে পাটির সবকয়টা দাত । দেখতেই কেমন নিঃসঙ্গ-নিঃসঙ্গ লাগে । অন্য সব রিক্সাওয়ালাদের সাথেই বসে আছেন , প্রধান সড়ক

থেকে নিরাপদ দূরত্বে।



পর্ব-২

আজকের এই দিনে আমিও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আর অন্য ১৫ জনের (উল্লেখযোগ্য) মতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠি । পাক্কা কয়েক ঘণ্টা দেরি করে হাজির হলাম বাসার অদূরেই মিরপুর-১ এর বাসস্ট্যান্ডে । কেনা টাকার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফাতুঁ,আমি,মিথিলা,মেহেদী ও আরণ্যক আপু মিলে সমুচা আর স্যান্ডউইচ খেলাম। নির্ধারিত ভ্রমণ-সূচির পরিত্যাক্ততায় অর্ধ-ঘণ্টা অপেক্ষা পূর্বক পুনরায়

স্থান ও যাত্রা পথের নির্ধারণ করে জনসেবা পরিবহনে চড়ে সবাই মিলে রওয়ানা করলাম সাভারে জাতীয় সৃতি সৌধ’র উদ্দেশ্যে। পৌঁছেই সবার সাথে আবার রুটি ও গোল্লা খেয়ে ভ্রমণ শুরু হলো। দুপুরে রাজধানী রেস্তরা’র অখ্যাত বিরিয়ানী, বিকেলে বাদাম আর আইচক্রিম , সবশেষে শেষ বিকেলে হাওয়ায়-মিঠাই খেতে-খেতে আর গান গাইতে-গাইতে দিনাতিপাত করেছি। আর ছবি তুলতে ভুল হয়নি একটুও!

গোধূলিলগ্নে ক্লান্ত শরীরে সবাইকে যার-যার মত করে বিদায় দিয়ে বদ্যভুমি থেকে শিয়ালবাড়ির উদ্দেশ্যে রিক্সা খুজতেছিলাম আমি আর মেহেদী। অনেক খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম কইবদ মিয়াঁ নামের এক চাচাকে।

চাচা যাবেন?

চাচাঃ কই যাইবেন, বাবা? আমিতো কিছু চিনি না!

আমরাই চিনিয়ে নিবো,শিয়ালবাড়ি যাবো।

প্যাডেলে ক্লান্ত আর জরাজীর্ণ পা ঘুরাতে-ঘুরাতে রিক্সা সনি-সিনেমা পেরিয়ে এগিয়ে চললো।

আমরাও চাচাকে নির্দেশনা দিতে-দিতে এগিয়ে চললাম।

চাচা আপনি এই বয়সে এইভাবে রোজগার করতে হয় কেন?

আপনার পরিবারে কে কে আছে?

চাচাঃ তিনডা মাইয়্যা আর একটা পোলা,বড় মাইয়্যা দুইডার বিয়া দিয়া দিছি।

পোলাডারে পরাইয়্যা দিছি,এহন চাকরি করে কম্পানীতে।

কি কোম্পানী জানেন কিছু?

চাচাঃ হুনছি বগুরায় অয়ালটন কম্পানিতে আছে,পরে আর কিছু জানি না।এই পোলাডার ছোড আমার শেষ মাইয়্যাডা,ওর বিয়া দিতে এক লাক পোঁচিশ হাজার টেহা লাগে । আমি আগে ব্যাবসা করতাম গঞ্জে, বড় মাইয়্যা দুইডারে পড়াইয়া বিয়া দিতে আর পোলারে পড়াইতে-পড়াইতে মাহাজনের ঘরে মেলা টেকা বাঁকি হইয়্যা গেছিলো তাই পরে আর ব্যাবসা ধইরা রাখতে পারি নাই।এহন আমি দেওলিয়া।

আপনার ছেলে জানে? যে, আপনি ঢাকায় রিক্সা চালান ?

চাচাঃ না বাবা জানে না। আমার বউ,ছেলে,মেয়ে বা পাড়া-পড়শি,আত্মীয়-স্বজন কেহই জানে না।

বাড়ি থেইক্কা যহন ফোন দেয়,ধরি না।দুপরে খাওয়ার সময় কথা বলি।আবার রাইতে,খ্যাপ না থাকলে কথা বলি। আমি যে,ডাহায় আছি এইডাও কেও জানে না। বলছিলাম যে,ব্যাবসা করি।

চাচা আপনি যেইভাবে রিক্সা চালাচ্ছেন যেকোনো সময় বিপদে পরতে পারেন?

চাচাঃ এই সুক্কুর এর আগের সুক্কুর বারে রিক্সা চালানি শুরু করছি, এর আগে কখোনো চালাইনাই!



পর্ব-৩

মেহেদী বললো,চাচা এখন মন আছে সামর্থ্যতো নাই। তাই,রিক্সাই চড়ি আবার দেখা যাবে সামর্থ্য যখন হবে তখন আর রিক্সায় চড়বো না। এই হচ্ছে জীবন।

আমরা চাচা ছাত্র মানুষ আপনার বিপদে আর কি ই বা করতে পারি তাও আপনারে ভাড়া ১০০ টাকাই দিবো।

লাল-নীল ল্যাম্পপোস্ট,পীচ-ডালা রাস্তা আর গগনচুম্বী কংক্রিটের দালান পেরিয়ে কইবদ চাচা আমাদের পৌঁছে দিলেন গন্তব্যে। আমি নেমে যেতে মেহেদীকে বললাম,দোস্ত আমিও ২০ টা টাকা দেই, তুই ভাড়ার সাথে মিলিয়ে নিস।

হইতো আমরা ছেঁড়ে এলাম আমাদের অতি-পরিচিত একটা জীবের অতি অপরিচিত একটা বীভত্স রুপ। কখোনো কি ফেলে যেতে পারবো , আশরাফুল মাখলুকাতের বিবেককে ? আজ কইবদ চাচা’র আর্তনাদ শুধু একটাই ছেলে-মেয়েদের পড়া-লেখা শিখিয়ে তিনি ভুল করছেন? কে জানে, আজ কালকের বাক্স-ভর্তি ভুল নিয়ে বেঁচে থাকা আধুনিকাদের মতো করে হয়তো মোড়ের দোকানে কইবদ চাচার

মেয়েরাও কালো-ধুঁয়ার জন্য আসে কিনা কিংবা আসতো কিনা?হয়তো,বিকৃত মানুষিকতার অধিনস্থ সেই ছেলেটি তার বাবাকে ; বাবার অধিনস্থ থাকার কালের হিসেব-টুকুও ঠিক-ঠাক দিতে পারবে না ।

অসংরক্ষিত বরফের আবার গলে না যাওয়ার হিসেব, এ যে আশায় গুড়েবালি।





এমন হাজারো কইবদ চাচা হইতো তার কৈশোর,যৌবন কিংবা বার্ধক্য অপচয় করচেন কখোনো বাবার জন্য,কখোনো ভাই এর জন্য কিংবা কখোনো তার আদরের দুলাল-দুলালীদের জন্য।সব দুলাল-দুলালীরা জেনে থাকা ভালো, বাবারা কখোনই হতভম্ব কিংবা অসহায় নন। স্বয়ং,সৃষ্টিকর্তার অকৃত্তিম রহমত স্বরূপ বাবাদের জন্মই হয় সকল অসহায়দের সহায় দিতে । তোমরাও যদি কখোনো অসহায় হয়ে পরো চলে এসো।কথা দিচ্ছি,সৃষ্টিকর্তা ধ্বংসলীলায় মত্ত হলেও কষ্ট-ইচ্ছা-বেদনা-দুঃখেদের পিতা কইবদ বুক পেতে দিবে দেখো তোমাদের প্রশান্তি দিতে । শুধু ইচ্ছা আছে বলেই সব কইবদ চাচারা সম্ভাব্য সব করতে

পারেন। আর কি বিস্ময়কর তার প্রতিদান!প্রকৃতি আজ শুধু তুমিই মহান রইলে,আমরা সবাই আজ মৃত্তিকাবিহীন কলুষিত।



_মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন।

১৬ অগাস্ট ২০১৪,

রাত ৩-১৩ মিনিট।





উৎসর্গঃ

১৩ তম ইনটেক

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.