নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু লোক ও একটি সম্প্রচার কেন্দ্র এবং আমরা

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

পর্বঃ১

বদি আর মজনু সাথে গুন্ডা প্রকৃতির লোক বাকের ভাই,যার হাতের তর্জনীতে সবসময় একটা চেইন ঘুরতো ওরা তিনজনই মোটর সাইকেলে করে এলাকা চষে বেড়াতেন।বাকের ভাই গুন্ডা হলেও কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করতেন না,তাই এলাকার লোকজনও তাকে প্রচণ্ড রকমের ভালবাসতো।এলাকার প্রভাবশালী এক নারী'র (কুকুর পালতো বলে সবাই তাকে কুত্তাওয়ালী নামেই ডাকতো) অবৈধ কার্যকলাপে বাঁধা দেয়ার জের ধরে,ঐ মহিলার বাড়ীতে রাতের অন্ধকারে একজন খুন হওয়ার দায় এসে পড়ে বাকের ভাইয়ের কাঁধে।বাকের ভাইয়ের উকিলের আপ্রান চেষ্টার পরেও বাকের ভাইয়ের সঙ্গী বদিকে হাত করে কুত্তাওয়ালী মিথ্যা সাক্ষী যোগাড় করে নেয়। বদি আদালতে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বাকের ভাইকে পাকাপোক্তভাবে ফাঁসিয়ে দেয়।এক কাঁকডাকা ভোরে ঠিক ফযরের আযানের সময় জেলখানার গেট দিয়ে বাকের ভাইয়ের লাশ বের হয়।ভালবাসার মানুষ মুনা ছাড়া কেও কোথাও ছিলো না সেদিন...লাশ সৎকার করে মুনাও একা হয়ে যায়।



বলছিলাম বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হুমায়ুন আহমেদ স্যারের 'কোথাও কেও নেই'-এর কথা,এযাবৎ কাল পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক।একেক টা পর্ব দর্শক হৃদয়ে একেকভাবে দাগ কেটে গেছে।বাকের ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে উকিল হুমায়ুন ফরিদি যখন আর পেরে উঠছিলেন না তখন,তখন দর্শকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে এসে মিছিল করতে থাকেঃ "বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে..."

স্লোগানে স্লোগানে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেঃ

"বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কেন,কুত্তাওয়ালী জবাব চাই,জবাব চাই !"











তখনকার সময়ের সাংবাদিকরা বোধহয় এখনকার সময়ের গনমাধ্যম কর্মীদের তুলনায় ঢের বেশীই সংস্কৃতিমনা ছিলেন।মিডিয়াতে ফলাও ভাবে প্রচারিত হতো বাকের ভাই আর দর্শক উন্মাদনার খবর।সবাই ভেবেছিলো এবার বুঝি হুমায়ুন আহমেদ,জনমতের ভিত্তিতে নাটকের মোড় ঘুরিয়ে দিবেন।না তিনি দেন নি।কিভাবে দিবেন? স্বাধীনতার এতোগুলো বৎসর পরেও আমাদের সামাজিক বাস্তব চিত্রটাই ছিলো এরকম,এখনও এরকমই আছে।বাকের ভাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন,তার ফাঁসি হয়ে গেলো।বাকের ভাই আজ অবধি এতোটাই জনপ্রিয় যে

এই রোল প্লে করা বর্তমান সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর বাকের ভাই নামে ভোট চেয়েই নীলফামারী জেলার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বিটিভি কি না পারে! বাকের ভাই থেকে সাংসদ,আনাড়ি দর্শক থেকে তীব্র প্রতিবাদ মুখর জনতা।



বাকের ভাই বেঁচে থাকলে ভালো হতো।



পর্বঃ২



আশি ও নব্বই-এর দশকে প্রচারিত ফযলে লোহানী'র উপস্থাপনায় বিটিভি'র সর্বপ্রথম দর্শকনন্দিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ছিলো 'যদি কিছু মনে না করেন'।গ্রামে,গ্রামের সবুজ অবারিত মাঠে কিংবা শহুরে যান্ত্রিকতার কিছুটা দূরে ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠান করায় লোহানি ও তার 'যদি কিছু মনে না করেন' তখনকার সময়ে খুবই জনপ্রিয় ছিলো।সুচারু,ছন্দময় এবং উচ্চারণ সচেতনা সমৃদ্ধ উপস্থাপনার জন্য খ্যাত হানিফ সংকেত এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই প্রথম টিভি পর্দায় আসেন।



আমরা সত্যিই কিছু মনে করতে পারি না,আমাদের লজ্জা নেই।আমরা নীতিবাক্য ব্যায়ে বিশ্বাসী,বিশ্বাসে কিংবা প্রতিফলনে বিশ্বাসী নই।আমাদেরকে বলে যেতে পারেন,আঙুল দিয়ে আমাদেরকে দেখিয়ে দিলেও আমরা ভুল স্বীকার করবো না।











নব্বই-এর দশক থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর প্রচার হওয়া কৌতুকাশ্রয়ী এবং ব্যাঙ্গাত্মক অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'-এর উপস্থাপক হানিফ সংকেত। প্রচলিত ভুল ধারণা,অসঙ্গতি,ভুল শব্দচয়ন,নৈতিকতার অবক্ষয় কিংবা জীবনযাত্রার নেতিবাচক বিষয়সমূহ বিদ্রুপ ও রসালো উপস্থাপনায় জীবন্ত হয়ে উঠে এই অনুষ্ঠানে।দেশ,সমাজ,রাজনীতি,অর্থনীতি,ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতি সহ সমসাময়িক সকল সচেতনতামূলক পথ নির্দেশনা এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাওয়া যায়।আর জানেনই তো উপস্থাপক হানিফ সংকেত,বরাবরই দর্শক পর্বে বিজয়ীদের জন্য পুরষ্কার হিসেবে দিয়ে থাকেন-

"আমাদের জন্য সব সময়কার মহা মূল্যবান এই বই।" এবং মাঝে মাঝে কম্পিউটারও।



বই আজ আমাদের দুই চোখের বিষ,বইকে কেও উপহারই মনে করে না।

আর কম্পিউটারের সঠিক ব্যাবহার আমরা এখনো শিখি নি।



পর্বঃ৩



হয় জয় না হয় মৃত্যু অর্থাৎ 'সংশপ্তক',ফেনী জেলার শহীদুল্লাহ কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস 'সংশপ্তক' অবলম্বনে একই নামে নির্মিত (আবদুল্লাহ আল মামুনের নাট্য রুপে) নাটকটি বিটিভি'র অন্যতম জনপ্রিয় আরেকটি ধারাবাহিক নাটক।



আমরা মরবোও না,আবার বেহেস্তেও যেতে চাই।



স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিভা অন্বেষণমূলক অনুষ্ঠান 'নতুন কুঁড়ি' আজকের দিনে আমাদের সামনে বহু প্রতিভা হাজির করেছে। ১২৩ সিসিমপুর কিংবা সাত ভাই জাগানো 'পারুল' দিয়ে মুস্তাফা মনোয়ার এখনো নিরবধি তাকিয়ে আছেন শিশুরা কবে হাল ধরবে কিংবা কবে আমরা সবাই জেগে উঠবো।



কি দরকার! ওরা(বাচ্চারা) এভাবেই থাক না,আমরাওতো ছিলাম।



মানসম্মত বিষয় নির্বাচন, সৃষ্টিশীল আঙ্গিক,জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কিংবা মাঝে মাঝে বিনোদন কেন্দ্রিক বিষয় যেমন বাংলা গান এর চলতি হাল, ক্রিকেট ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য এখনো বহু প্রবীণ টিভি সেটের সামনে বসে থাকেন কখন বিটিভিতে 'সময়ের কথা' শুরু হয়।



আবদুন নূর তুষার ভাই,এগুলো নিয়ে কথা বললেই মন খারাপ হয়ে যায়।

জাতিতো বেশ ভালোই আছে।



আরেকটি অনুষ্ঠান ছিলো শাইখ সিরাজের 'মাটি ও মানুষ'। আধুনিক কৃষি, কৃষি সম্ভাবনা, কৃষিতে প্রযুক্তি, হাঁস-মুরগি কিংবা মৎস্য খামার ইত্যাদি বিষয় ছিলো যার উপস্থাপনার মূল উপজীব্য।



চাষা-ভুষার অনুষ্ঠান।আমরা অন্য চ্যানেল ঘুরাই।



সেই সাদা-কালো থেকে রঙিন পিক্সেলে

সেই ১৯৬৪ থেকে আজ ২০১৪ তে,পাহাড়তলি থেকে রামপুরায়।

কিংবা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে স্যাটেলাইটে,দেশ থেকে বিশ্বে আজ বিটিভি।

শুভ জন্মদিন,বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন)।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮

ইফাত আরা বলেছেন: দুর্দান্ত একটি লেখা পড়লাম। লেখাটি আমাকে নিয়ে গেল আগের সেই সুন্দর দিন গুলোতে, যখন অপেক্ষা করতাম কখন 'আয়োময়' কখন 'কোথাও কেউ নেই' হবে, কখন 'ইত্যাদি' নিয়ে হাজির হবেন ফজলে লোহানী।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন বলেছেন: জী আপু,জেনে ভালো লাগলো।

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৮

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন ভ্রাতা +


অনেক শুভকামনা :)

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন বলেছেন: আমাকে চমৎকৃত করার জন্য আপনাকেও শুভকামনা, #অপূর্ণ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.