নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টাকা ও সংস্কৃতির গল্প

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২

একবার আমরা ক্লাসের কয়েকজন বন্ধু মিলে চিন্তা করলাম যে,এবারের ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ক্লাসের ফুলের ঢালাটা সব ক্লাসের চেয়ে বড় দিবো।চিন্তা-ভাবনা করে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে ক্লাসের সবাইকে জানিয়ে দিলাম,পরদিনের মধ্যে সবাই যেন ২০ টাকা করে নিয়ে আসে।তাহলে,৩৫ জনের কাছ থেকে উঠবে (৩৫*২০ টাকা মানে) ৭০০ টাকা।ঢের,আমাদের আরোও দুইটা ফেব্রুয়ারী কেটে যাবে।আস্তে আস্তে ফান্ড বাড়তে লাগলো,আমার কাছেই জমা হতে থাকলো সব টাকা।টানা তিন দিন টাকা সংগ্রহ করতে করতে আমি আর শাহাদাৎ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।এই তিনদিনের মধ্যেই সবার টাকা উঠে গেলো।কথা ছিলো,১৮ তারিখের মধ্যেই চান্দিনা বাজারের কোন একটা ফুল দোকানে আমাদের ব্যাচের জন্য অনেক বড় আর সুন্দর করে ডিজাইন করা একটা ঢালার অর্ডার উক্ত দোকানদারকে বুঝিয়ে দেয়া এবং ২০ তারিখ রাতের মধ্যেই সেই ফুলের ঢালা হোস্টেলে এনে নিরাপদ ভাবে রেখে দেয়া।কতোগুলো টাকা (৭০০ টাকা,প্রায় হাজার টাকার কাছাকাছি),কতো দিন ধরে আমার আর শাহাদাতের কাছে পড়ে আছে।পকেট ভর্তি টাকা সাথে থেকেও কোথাও কিছুই খরচ করতে পারিনি।এভাবে আর কতো সময় অপেক্ষা করা যায়!

১৮ তারিখ মন ভার করে আমি আর সাধু (ভালো নাম শাহাদাৎ) রওয়ানা হলাম,চান্দিনার উদ্দেশ্যে।পৌঁছেও গেলাম রিক্সায় করে ১ ঘণ্টার মতো সময়ে।পৌঁছেই দু'জন মিলে নাস্তা করে নিলাম,গরম গরম সিঙ্গারা খেলাম তৃপ্তি ভরে।হোটেল থেকে বের হয়েই 'এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে' বাংলা ছবির ছেঁড়া পোষ্টের দেখে সাধু উত্তেজিত হয়ে গেলো। বললো,ল সিনেমাটা দেখেই যাই।কবে আবার 'পালকি'-তে (সিনেমা হল) আসতে পারি তারতো কোন ঠিক নেই। আমি বললাম,টাকা কই?ও মুখ ভেংচিয়ে বললো,ফুলের টাকা থেকেই কিছু খরচ করে ফেলি?কিছুক্ষণ ভেবে আমি বললাম,করা যায়।এই করা যায় থেকেই যে কতো কিছু হয়ে গেলো!সিনেমা দেখলাম,রেস্টুরেন্টে রুটি-গ্রিল খেলাম আবার শপিং ও করে ফেললাম দু'জন মিলে।পকেটে অবশিষ্ট থাকলো ১১৫ টাকা।এ দিয়ে তো আর অনেক বড় ঢালা সাজানো যাবে না।তখনকার সময়ে যেমন-তেমন একটা ফুলের ঢালা সাজাতেও কমপক্ষে ২০০ টাকার মতো লাগতো। আমরা ঠিক করলাম,ঢালার ফ্রেমটা শুধু এই টাকার মধ্যে এখান থেকে বড় করে বাঁধিয়ে নিয়ে যাবো।আর ফুল সংগ্রহে বের হবো তার পরের দু'রাত,অর্থাৎ ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারী এই দু'রাতে।ফিরে এসে কারো সাথে কিছুই বললাম না।সবকিছু চেপে রাখলাম।গুলগুল নামে আমাদের আরেকটা বন্ধু ছিলো যার নামের সাথে চেহারারও অনেক মিল আছে,ওর ভালো নাম হলো জাফর।তো ওর বাড়ীর আশে-পাশের গ্রামে অনেক মানুষ শখ করে ফুল বাগান করতো।তাকে আমাদের দলে ভিড়ালাম।কিছু উপঢৌকনও(টানা তিনদিন ওকে সকাল বেলায় পরোটা আর ডিম ভাজি খাওয়াতে হয়েছে) দিতে হয়েছে এজন্য।

সেই দু'রাতভর চলতে থাকে আমাদের অপারেশান।কোথাও গিয়ে কুকুরের তাড়া খেয়েছি।কোন বাড়ীতে গিয়ে মানুষকে চোর-চোর বলে তেড়ে আসতে দেখেছি।কোনভাবে কিছু ফুল সংগ্রহ করে প্রানটা নিয়ে হোস্টেলে ফিরে এসেছি,সে দু'রাতে।২০ তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ১ঃ৩০ টার দিকে আমাদের একঘরে টাইপের বন্ধু রাব্বু,আমাদের সব কিছু জেনে যায়।এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ক্ষিপ্র হয়ে উঠে।আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে,কিরে ঢালা কই?আমরা বললাম,সময় হলেই দেখবি।সে রাতেই কোনভাবে আমাদের ঢালাটা সাজিয়ে আমার চৌকির নিচে কাগজ মুড়িয়ে রেখে দিলাম।অনেক রাত করে ঘুমাতে গেছি বলে,সকালে উঠতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই প্রভাত ফেরীতে চলে গেছে।কিছুক্ষণ পরে রাব্বুর কাছ থেকে (তখনকার সময়ে আমাদের মধ্যে একমাত্র মোবাইল ফোন ব্যাবহারকারী ছিলো শুধু রাব্বু,স্কুল গেটের বাহিরের ফোন দোকানে রাব্বু ফোন করে বলেছে) খবর পেলাম আমাদের ঢালাটা নাকি শ্লোগানের সময় ঝাঁকুনিতে ভেঙ্গে গেছে।কোনরকম ঐ ভাঙা ঢালা নিয়ে হেঁটে হেঁটে আমাদের ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা প্রভাত ফেরী শেষ করে এসেছে।পরে অ্যাসেম্বলির সময়,আমাদের ক্লাসের রাবেয়া,ফেরদৌসি আর সানজিদা (নির্মল হাসি,পরিপাটি আর পড়া-শুনা এই সব গুণাবলীর জন্য যে তিনজন মেয়ে বার্ষিকভাবে পুরস্কৃত হতো) মিলে আমাদের স্কাউট টিচার খোরশেদ স্যারের কাছে সব কিছু নিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে নালিশ করলো।কোনভাবে অ্যাসেম্বলির একটা লাইনের শেষের দিকে এসে তখন মাত্র দাঁড়ালাম।সামনে থেকে স্যারকে দেখলাম মুখটা কালো করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।এসে জিজ্ঞেস করলেন,কি হয়েছে শরীফ!তোমাদের ক্লাসের সব ছেলে মেয়েরা টাকা দিয়েছে,তোমরা ঢালা কিনে আনো নি কেন?আমি বললাম,স্যার ভেবেছি আমাদের সব টাকা মিলিয়ে পরের বৎসর গুলোর জন্যও কিছু টাকা রেখে দিবো।যাতে করে বার বার টাকা তুলতে না হয়।তাই,অল্প বাজেটে শুধু ফ্রেমটাই করে নিয়ে এসেছি।আমাদের সবার বাড়ী-বাড়ী থেকে ফুল সংগ্রহ করে সবশেষে ঢালাটা অনেক সময় নিয়ে সাজিয়েছি।কথাগুলো বলে শেষ করতে পারলাম না,স্যার স্যাৎ-স্যাৎ করে পিঠের উপর সজোরে বেত্রাঘাত করতে লাগলেন আর বলতে থাকলেন,আমার কাছে খবর আছে,তোরা সিনেমা দেখে টাকা নষ্ট করেছিস।সাধু ঐ সময় অ্যাসেম্বলিতে অনুপস্থিত থাকার কারনে,সাময়িকভাবে বেঁচে গেলো।

সত্যি এমনটা করার ইচ্ছে ছিলো না।সেই ক্লাস সেভেনের কথা বলছিলাম,তখন হয়তো আমরা না বুঝেই এসব করেছি।আমাকে ৭০০ টাকার ফান্ড দেয়া হয়েছিলো,আমি ধরে রাখতে পারি নি।আমি অপরাধী ছিলাম বলে,স্যারের শাসন মেনে নিয়েছি।তবুও ইংরেজিতে কাওকে গালি দেইনি।মনে মনে (বাংলাতেই),অনুতপ্ত হয়েছি।এখনকার দিনে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ গুলোর,ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বাংলা ভাষার কোন ধরনের অনুশীলন নেই।এমনও হয়েছে যে,বাংলা ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের(দেশে) উপস্থাপনা হয়ে থাকে ইংরেজিতে,যদিও উক্ত অনুষ্ঠানের সকল শ্রোতা বাংলা বুঝে এবং বাংলা ভাষাতেই কথা বলে।সংক্ষিপ্ত কাপড় পরিধান করে দিনভর চলে ফ্যাশন সো।ওদের কেও কেও আবার কখনো দেখবেন যে,অদূর ভবিষ্যতে সাহিত্যে 'বাংলা একাডেমী' পুরুস্কারে ভূষিত হচ্ছে।ভবিষ্যৎ ভাষা বিজ্ঞানীরাও হয়তো ৫২'র আমানত রক্ষা করতে পারবে না।যারা এখনই ভাসার জামানতদার হিসেবে বহাল আছে,তারাই পারছেন না,ওরা ভবিষ্যতে কি করে পেরে উঠবে?একটা উদাহরন দেইঃকেও কেও দেশীয় সর্বোচ্চ পুরুস্কার,বাংলা একাডেমী পুরষ্কার প্রাপ্তির পরও একুশে ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে তামাশা করে থাকেন,তারাও আমার মতো (নিজেদেরকে ক্লাস সেভেনের ছাত্র মনে করে) হর-হামেশাই ভিনদেশী ভাষার বিকৃত ছবির (তাও সেই ছবির বিষয়-বস্তু বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে) প্রচারনাও করেই চলেছেন।তো এমনটাই হচ্ছে,এমনটাই হবে।পরিবর্তন চাই মন থেকে,সংস্কৃতি থেকে আর অবশ্যই মুখ থেকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.