নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন

লিখতে চাই না, তবু লিখে যাই..

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোর

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫

এটা করিস না,ওটা করা ভালো না,ছোটবেলায় এমন অনেক কথাই মাথায় থাকতো,মনে থাকতো না।ঐ সময়টাতে,শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলার নেশাটা ছেঁড়ে দেয়ার ব্যাপারে কেও কিছু বললে মেনে নিতে পারতাম না (এখন যেমন সিগারেটকে ছেঁড়ে থাকতে পারি না।)এছাড়া আর বাঁকি সব কথা যেকোনভাবে বুঝিয়ে বললে মেনে নিতাম।রমজান মাসে সেহরি খেয়ে ঘুমাতাম না কখনো।হোস্টেলের ছোট ভাই সাজু আর আমি মিলে একটু আলোর দেখা পেলে তখন থেকে,বি.এস.সি স্যার হোস্টেলের গেটে ঢুকবার আগ পর্যন্ত টেস্ট ইনিংস খেলতে থাকতাম। ব্যাটের কানায় বল লেগে কোনভাবে গাছের (গাছকে স্ট্যাম্প হিসেবে ধরে নিতাম) পিছনে গেলেই আউট অথবা বাঁকি তিন পাশের চার ব্যাট পরিমানের গোল দাগের বাহিরে বল উড়ে গেলেই আউট।খেলতে খেলতে আবারও নতুন করে পড়া-শুনার বাহিরে সময় নষ্ট করতে শুরু করলাম,সেই ছোটবেলার মতো।মাঝে মাঝে বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে দেখা গেলো যে,ভোর বেলা থেকে মাগরিবের আযান পর্যন্ত ব্যাট-বল নিয়ে পড়েই আছি।ক্ষুদা লাগলে,যাদেরকে নিয়ে খেলতাম তাদের সাথে ওভার বাই ওভার সিঙ্গারা বাজীতে খেলতাম।যে ওভারে যে যতো বেশী চার মারতে পারে,সেবার সে দুটি সিঙ্গারা পাবে।কোন ওভারে আমি সিঙ্গারা পেতাম,কোন ওভারে পেতাম না।এভাবে ক্ষিদা যতক্ষণ থাকতো বাজী ততক্ষণ চলতো।ক্ষিদা শেষ,বাজী শেষ।আবার নিয়মিত খেলায় ফিরে আসতাম।ফারুক ভাইয়ের হোটেল থেকে সিঙ্গারা আনা কিংবা মাঝে মাঝে বল কুঁড়িয়ে ফেরত পাঠানোর জন্য হোস্টেলের ছোট ভাই গামা(ভালো নাম ফিরোজ) স্ট্যান্ডবাই থাকতো।তবে কোথাও আমি নিজে টুর্নামেন্ট রাখলেও আমি সাধারনত পাড়ার টিমে চান্স পেতাম না।রিজার্ভ বেঞ্চই বসে থাকতে হতো বেশিরভাগ সময়।একবার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছিলাম,এলাকা থেকে ভোমরকান্দি স্কুলের মাঠে খেলতে গিয়ে ব্যাটিং করে ১ টা চার আর আর বোলিং করে ৩ উইকেট নিয়ে ফেলি।ঐদিন আমার আর রনি'র (পাশের বাড়ির কাক্কু) পারফর্মেন্স সমানে সমান ছিলো।স্পেল বাই স্পেল বল করে প্রতিপক্ষের উইকেট একের পর এক ঘায়েল করেছি।রনি সেদিন ব্যাটিং-এ সুবিধে করতে না পারলেও,ব্যাটিং-এ ২ উইকেট নিয়েছিলো।লম্বায় প্রায় ৬ ফুট আর বিধ্বংসী বোলিং অ্যাকশানের কারনে রনিকে আমাদের কয়েক অঞ্চলের সেরা বোলার হিসেবে বিবেচনা করা হতো।এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে হায়ার করে খেলতে নিয়ে যাওয়া হতো।আরেকটা ছেলের কথা বলতে হয় রিয়াদ,খুব ভালো ব্যাট করে।ফিল্ডিংও চমৎকার,মাঝে মাঝে হাত ঘুরিয়ে দলের প্রয়োজনে দু-চার উইকেটও নিতো।আমাদের এলাকার হয়ে কয়েকটি শিরোপাও জিতেছে সে।যদিও শিরোপার মূল্য অর্থে মূল্যায়ন করা যায় না,তবুও বলতে ইচ্ছে করছে তখনকার সময়ে একেকটি গোল্ডেন কাঁপ কিংবা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট টেলিভিশন জিততে শিরোপার ৩-৪ গুন টাকা খরচ হয়ে যেতো।আমাদের গ্রামের মানুষ খরছের অনেকটা অংশের যোগান দিতেন এবং অনেক আগ্রহ ভরে আমাদের খেলা দেখতে মাঠে (সদ্য ধান কাঁটা নাড়া'র ক্ষ্যাত) যেতেন।আমরা বোলিং-এ উইকেট পেলে হাতে তালি দিয়ে উল্লাস করতেন,ঝড়ো ব্যাটিং করলে প্রতি বাউন্ডারীতে ২০ টাকা বা ৫০ টাকা করে উপহার পাঠিয়ে দিতেন একেবারে সরাসরি মাঠের ব্যাটসম্যানের হাতে। আরেকবার হোস্টেলের রুম ভিত্তিক টুর্নামেন্টের খেলায় মোহাম্মাদ কাইফের মতো ফিল্ডিং দিয়ে সর্টবাউন্ডারীতে আমাদের ২ নাম্বার রুমকে ফাইনালে নিয়ে গেছিলাম (লাফিয়ে পড়ে প্রায় ৫-৭ টি নির্ঘাত চার বাছিয়েছিলাম)।তবে,প্রতিপক্ষ নিপু'র(ভালো নাম শফিকুল) নিপুন খেলোয়াড়ী মনভাবের কাছে আমরা হেরে গেছিলাম শেষ পর্যন্ত।ঐ ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে আমি কিছু করতে না পারলেও আমাদের রুমের সবচেয়ে ক্ষীণ,চিকন আর দুর্বল ছোট ভাই বুড়া(ভালো নাম ফারুক)সর্বশেষ ব্যাটসম্যান হয়ে উইকেটে টিকেছিলো একেবারে ১০ ওভার পর্যন্ত,৩ টা চার ও মেরেছিলো।ঐ সময়ে আমরা উইকেটের শুধু একপ্রান্তে খেলতাম এবং একজন একজন করে ব্যাটিং করতে নামতাম।

ক্রিকেট খেলায় সময় নষ্ট করার জের ধরেই পরে এস.এস.সি পরীক্ষায় এ+ প্লাসটা মিস করেছিলাম। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অতিরিক্ত বিষয় (জীববিজ্ঞান) সহ জি.পি.এ ৪.৫০ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।তারপর এই জি.পি.এ নিয়ে ভালো কোথাও সুযোগ করতে পারছিলাম না।যেখানে আমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় (রাজু) গোল্ডেন এ+ নিয়ে,কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে এক চান্সে ভর্তি হয়ে যায়।সেখানে এলাকার এক বড় ভাই-এর দ্বারস্থ হয়ে জানতে পারলাম মোটামুটি ৫০০০ টাকা হলে আমাকে কুমিল্লা সরকারী কলেজে ভর্তি হওয়ার একটা সুযোগ উনি মিলিয়ে দিতে পারবেন।ঠিক তখনই চিন্তা করলাম,ধ্যাত আর যাই হউক কোন কলেজেই (শহরের) টাকা দিয়ে ভর্তি হবো না আবার গ্রামের কোন কলেজেও পড়বো না।মন খারাপ করে আমাদের এলাকার অদূরেই কোটবাড়িতে শুনলাম একটা সরকারী পলিটেকনিক আছে।ওখানে কয়েকদিন আসা-যাওয়া করে শুনলাম,ওখানে নাকি ছেলে-পেলেরা মারা-মারি করার জন্য ভর্তি হয়।যাই হউক,আমার এতো কিছু জানার দরকার নেই,কেবল এলাকার বাহিরে কোথাও পড়ছি এই ভাবটা থাকলেই হবে।আসা-যাওয়ার মাঝে পলিটেকনিকের একজন ভাইয়ের (স্বপন ভাই) সাথে পরিচয় হলো।উনার ফোন নাম্বার নিয়ে রাখলাম।জামালের দোকান থেকে সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন করে ফোন করে খোজ নিতাম ফর্ম ছেড়েছে কিনা!(উল্লেখ্য যে পলিটেকনিকের ভর্তি,আশ-পাশের অন্যান্য সকল কলেজসমূহের কিছুটা পরেই শুরু হতো)অনেক যুদ্ধ করে ডে শিফটের ফর্ম কিনলাম,পূরণ করে আবার জমাও দিলাম।রেজাল্ট দেয়ার পর দেখলাম ওয়েটিং লিস্টে ১৭ নাম্বারে আছি।ডে শিফটে ভর্তি হওয়ার আশা ছেঁড়ে দিয়ে ইভেনিং শিফটের ফর্ম টানলাম।এবার আর ঝামেলা হলো না,মেধা তালিকায় ৪ নাম্বারে স্থান করে নিলাম।কম্পিউটার বিভাগে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করে দিলাম।আমাদের সময় কম্পিউটার বিভাগে অনেকেই ভর্তি হতে চাইতো না,তখনও পর্যন্ত এই ডিপার্টমেন্টটি বাংলাদেশের বেশিরভাগ পলিটেকনিকে অবহেলিত ছিলো।অনেক মিছিল,অনেক আন্দোলন দেখে দেখে চারটি বৎসর কাঁটিয়ে দিলাম।কোন সেমিস্টারেই কোন ধরনের রেফার্ড ছাড়াই সি.জি.পি.এ ৩.৪৮ নিয়ে ডিপ্লোমা শেষ করলাম।সেকেন্ড সেমিস্টারে এমন হয়েছিলো যে,আমাদের ডে,ইভিনিং উভয় শিফট মিলে প্রায় শত পরীক্ষার্থীর মাঝে মাত্র ৩ জন সব বিষয়ে পাস করে।আমিও সেই তিনজনের একজন ছিলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪

নীল আতঙ্ক বলেছেন: আত্মজীবনী মূলক লেখা ভালো লাগলো।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩০

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানবেন।

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৪

নিলু বলেছেন: লিখে যান

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩১

মুহাম্মাদ শরিফ হোসাইন বলেছেন: আন্তরিক শ্রদ্ধা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.