![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাস্তা যতো বড় নয়,তারচেয়ে বেশী বড় যদি গাড়ী হয় কিংবা একসাথে নিয়মতান্ত্রিকভাবে যতো গাড়ী রাস্তায় চলতে না পারে তার চেয়ে বেশী পরিমান গাড়ী যদি প্রতিযোগিতায় চলতে থাকে,আমাদের বেঁচে থাকার বারোটাতো সবসময়ই বেজে থাকবে।অপেক্ষা থাকবে শুধু ১২ টা ০১ বাজার।তখন শুরু হয়ে যাবে অর্ধ নগ্ন নর্তকীর খোলামেলা নাচন,হ্যাঁ আমি তাইতো দেখলাম আজ।ড্রাইভার যদি নর্তকী হয়,ভাঙা আর খাঁদে ভরা রাস্তা যদি তার পোষাক হয় তবে আমরা মনোরঞ্জনরত দর্শক হতে সমস্যা কোথায়?না হতে চাইলেও আপনাকে এসব দেখতেই হবে।নর্তকীর নাচনে ক্ষতি যে কার হয়,আমি খুঁজে পাই না।সবারই মনোরঞ্জন হয়ে থাকে,তবে ড্রাইভারের নাচনে আমরা হাত-ঘুঁটিয়ে দাঁড়িয়ে সার্কাস দেখলেও কেও না কেও এর কুফল ভোগে থাকে।যতক্ষণ পর্যন্ত আমার-আপনার ভাই,বোন,বাপ কিংবা রক্তের কেও এই নাচনের শিকার না হন,আমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টাকে আনাড়ী এক উপাখ্যান ভেবে এড়িয়ে আসি।পারিপার্শ্বিক আরও অনেক কারন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকলেও এই প্রথম দেখলাম যে,কোন সড়ক ৬০% দায়ীও হয়ে থাকে কোন কোন ক্ষেত্রে। সশ্রদ্ধ ভালোবাসা জানাই তাকে যিনি পুরো বাংলার মানুষের জন্য আজ পর্যন্ত অন্তত একটা দাবী করে যাচ্ছেন- 'নিরাপদ সড়ক চাই..',উনি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং এমন কোন হিরু আজকের গল্পের,বন্ধু ইমরানের মতো।
শিয়ালবাড়ী মোড়ে আমরা ট্র্যাফিক পুলিশ চাইনা,ওভারব্রীজ ও না।বর্ষায় কাঁদা-পানির রাস্তায় ইউনিভার্সিটি যেতে যেতে যতোই ছোটবেলায় গ্রামের সাঁকো,কাঁচা রাস্তা কিংবা পলিথিনে বই-খাতা মুড়িয়ে বুক সমান পানি পেড়িয়ে স্কুলে যাবার কথা মনে পড়ুক না কেন,আমরা কখনো মুখ ফোটে কিছু বলি নাই।গ্রীষ্মে ধূলা-বালি নাকে-মুখে নিতে নিতে যতোই আমাদের অ্যাজমা রোগ কাবু করুক না কেন,আমরা কারো কাছে চিকিৎসা খরচ চাই না।গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরির ময়লা পানি কিংবা যানবাহনের ভেপু থেকে আমরা যতোই ১০০ হাত দূরে থাকতে চাই না কেন,পথই পথিকের জন্ম দেয়ার মতো আমরাও সপ্তাহে ছয়দিন পথিক হয়ে হেঁটে যাই শিয়ালবাড়ী মোড়ের রাস্তা ধরে কবরস্থানের সামনের বিশ্ববিদ্যালয়ে।যারা একটু দূর থেকে ইউনিভার্সিটিতে আসে তাদেরকেও ভাঁড়া গুনতে হয় আগের চেয়ে দ্বিগুন।আমাদের মতো এমন বহু মানুষ এই পথের,এই রাস্তার পথিক।
এই রাস্তাটির মাথা (শিয়ালবাড়ী মোড়) থেকে পশ্চিমে গেলে বিইউবিটি'র অস্থায়ি ক্যাম্পাস,তার সাথে আবার কমার্স কলেজও,ঐ রাস্তা ধরেই আরো ও সামনে চিরিয়াখানা রোডে বিসিআইসি কলেজ,মিরপুর-১ এর দিকে যেতে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ।পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে সাইক পলিটেকনিক,মিরপুর বাঙলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে যেতে হয়।উত্তর দিকে বিইউবিটি'র স্থায়ী ক্যাম্পাস(যেখানে আমাদের নিয়মিত ক্লাস হয়)।তাছাড়াও এই রাস্তার চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় কোচিং,কম্পিউটার ট্রেইনিং সেন্টার সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।হাজার-হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারনায় শিয়ালবাড়ী মোড়ের এই রাস্তাটি ব্যাস্ত থাকে কাঁক ডাকা ভোর থেকে সেই রাত ৯-১০ টা অবধি।শুধুমাত্র দুই কিলোমিটার রাস্তার কারনে এতো শ্রেণী-পেশার মানুষগুলোর আজ এতো দুর্ভোগ।ফুট-পাত এমন ভাবে দখল হয়েছে,বুঝাই ভাঁড় যে এসব জায়গা দখল হয়েছে মনে হয় যেন দখলকারীরা এখানেই থাকার কথা,তার উপর নগর মানুষের জীবন রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসা,যারা ঢাকার কয়েকটি নদীর ঐকাল থেকে আজকের কালের বিবর্তনে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে (উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই,নদী গর্ভে ওয়াসার স্টর্ম ড্রেনেজ,পরিবেশ ও নদীতে অক্সিজেন উৎপাদনে কিংবা জলজীবী প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজননে কতোটা ভয়ংকর),ওয়াসা দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন অজুহাত ও মন ভোলানো কথায় রাস্তার বুক-পিঠ সব ছিন্ন-ভিন্ন করে রেখেছে।
আমি আসলে কিছু চাইতে আসি নি,কিছু বলতে এসেছি।আজ রাত ৯ টা বেজে ০৫ মিনিটে প্রতিরাতের মতো ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লাস করে ফিরছিলাম বাসার পথে।সাথে আমার সহপাঠী,কম্পিউটার বিজ্ঞানের কয়েকজন বন্ধু রুহুল,ফাতিমা,মাহমুদা,মিঞ্জু,সাব্বির,শিমুল সহ আরও কয়েকজন ছিলো।আমি,ফাতিমা,মাহমুদা আর মিঞ্জু'র থেকে কিছুটা সামনে ছিলো ইমরান আর শিমুল,আমরা রাস্তার যেপাশে ছিলাম ওরা তার বিপরীত পাশে ছিলো ইমতিয়াজ আর ইমরান।আমরা অনিয়মিত কিছু বিষয় (যে টপিকগুলো নিয়ে সচরাচর কথা বলা হয় না)কথা বলতে বলতে শিয়াল বাড়ী কবরস্থান ক্রস করছি, ততক্ষণে ইমরান আর শিমুল প্রায় বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে চলে গেছে।আমরা বিসমিল্লাহ হোটেল থেকে কিছুটা দূরে একটা সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে আসতেই দেখলাম ইমরান একটা রক্তাক্ত ছেলেকে এক হাতে কোমর আর আরেক হাতে ঐ ছেলেটার মাথা বরাবর ধরে রেখেছে।আমরাতো দেখেই ধরে নিয়েছিলাম,হয়তো আমাদের ইউনিভার্সিটির কোন ছেলে।ছেলেটার মুখমণ্ডল সহ মাথার একটা পাশ পুরো থেঁতলে আছে,ট্যাপের পানির মতো রক্ত ঝরছে তার মাথা,হাত,পা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে।ইমরান একাই একশ হয়ে,লোকটিকে আপন ভাইয়ের মতো কোলে তুলে নিলো।আমরা এই অবস্থা দেখে দ্রুত একটা রিক্সা দাড় করিয়ে ইমরান ও অপর আরেকজন লোকের (সম্ভবত দুর্ঘটনার শিকার হওয়া লোকের সাথের কেও একজন) সহায়তায় ভুক্তভোগীকে রিক্সায় উঠিয়ে দিলাম।রিক্সার ড্রাইভারকে বলে দেয়া হলো যেন,মিরপুর-১০ নম্বরের ইসলামী ব্যাংক হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়া হয়,আমাদের চোখের সামনে যতক্ষণ লোকটা ছিলো,দেখেছি নিথর হয়ে আছে মৃত মানুষের মতো,জানিনা গভীর রাত হতে হতে সে আমাদের সাথে সাথে পৃথিবীর অক্সিজেন নিবে কি না।তাজা রক্ত দেখে হঠাৎ করে মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় আমাদের ক্লাসের মাহমুদার,ফাতেমা তাকে আরেকটা রিক্সায় করে বাসায় নিয়ে যায়।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের ক্লাসের সঞ্জয়ের বরাতে শিমুলের মুখ থেকে জানতে পারলাম,ঐ লোকটা সাইকেল চালিয়ে দুয়ারীপাড়া থেকে শিয়ালবাড়ী রোড হয়ে তার গন্তব্যে (অজানা) ফিরছিলো।খুব সম্ভবত লোকটা স্টাফ কোয়ার্টারের বিপরীত পাশের রাস্তা ধরে শিয়ালবাড়ী মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। রাস্তার অনেকাংশ দখল করে রাখা কিছু লম্বা ফিলারের পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে মালবাহী ট্র্যাককে অতিক্রম করতে চাইলে বড়-বড় ইটের টুকরোতে সাইকেলের চাকা ফসকে পড়ে যান,ট্র্যাকের পিছনের চাকায় সাইকেল সহ পড়ে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হন নাম না জানা লোকটি।সাইকেলটা নিয়ে বাম পাশে পিলালের উপর পড়লেও এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটতনা,ডানপাশে পরে গিয়ে ট্র্যাকের বামপাশের চাকার নিচে তার বুকের একাংশ,মাথাও।এলাকার কয়েকজন মানুষ মিলে তৎক্ষণাৎ উক্ত ট্র্যাক ড্রাইভারকে তার গাড়ী সহ থামিয়ে দেয়।রূপনগর থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর ঘটনার কিছুক্ষণ পর এসে যখন লোকজনদের জিজ্ঞেস করছিলেন,ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কে কে আছেন?সঞ্জয় যতোই পুলিশের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে ততোই পিছন থেকে আজাদ আর ইমতিয়াজের শঙ্কা বেঁড়ে চলছে,এই না জানি পুলিশের ঘ্যাড়াকলে পড়ে কি বিপদ না নাযিল হয়ে যায় সঞ্জয়ের ভাগ্যে,শত হলেও সহপাঠীতো।একপর্যায়ে,সঞ্জয় যখন পুলিশের কাছে সব কিছু খুলে বলে ট্র্যাক ড্রাইভারের অবস্থান ব্যাখ্যা করলো,তখন পুলিশের কাছে সঞ্জয়ের জবানবন্দী দেয়াটা আজাদ আর ইমতিইয়াজের ভালো লাগলো না।ওরা এগিয়ে গিয়ে এ.এস.আই কে বললো,এদিকে আসেন,আমরা বলছি।পুলিশ আসতেই ওরা এলাকার মানুষের কাছ থেকে জব্দ হওয়া গাড়ীর চাবি নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বললো,নেন আর এখানে দোষী কাওকেই সাব্যস্ত করা যায় না,দোষ সবারই।একথা বলতে বলতে সঞ্জয়কে একপাশে সড়িয়ে দিলো,কিছুক্ষণ গল্প করে নিজেরাও ফিরে আসলো।পরে সঞ্জয়কে বললো,দেখ ভাই কিছু মনে করিস না।পুলিশ হইলো সরকারী গুন্ডা,কখন কোন বিপদে কিভাবে ফেলে দিবে বুঝবি না।আমরা রাজনীতির নোংরা বাজারের সাথে বহুদিন ধরে পরিচিত,আমরা এসব ঝামেলা বুঝি।আর পিছনের চাকায় পড়ছে তো,বড় জোর হলে ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকলে,বিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হবে।ওরে বাচাইতে তোর এতো মরিয়া হয়ে উঠা ঠিক ছিলো না।
ঘটনার একদিন পর দুর্ঘটনাস্থলে,নাম না জানা ব্যাক্তিটির সাইকেলটা যে পুড়ি দোকানদারের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছিলো তার কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ঐ ব্যাক্তিটি আর বেঁচে নেই।তার মৃত্যুতে কোনধরনের তদন্ত হবে কি না,কিংবা এই সড়কের বেহাল দশার কোন ধরনের পরিবর্তন হবে কি না,আমি জানি না।আমি এখনও অনেক কিছু চাইতে বসে নেই, আমি শুধু এতটুকো জানতে চাই,একটি রাষ্ট্রে যেকোন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় গতিরোধক কোন ব্যাবস্থা থাকে কি না?এই বিষয়টি যেন,আজই প্রথম খেয়াল করলাম!আমরা মনে হয়,আমাদের ইউনিভার্সিটি যেন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়।তার সামনে অন্তত দুইটা স্পীডব্রেকার না থাকাটা যেন খুবই সাধারণ একটা বিষয়।হয়তো আরেকটা পরিচিত লাশ পড়লে আমরাদুইটা স্পীডব্রেকার পাবো।আরও কয়েক যুগ গেলে,আমাদের দুই কিলোমিটার রাস্তার দুঃখ ঘুছে যাবে।
আমি জানি এই লোক আমাদের ইউনিভার্সিটির কেও নন,উনি আমাদের রক্তের কেও নন,উনি মানুষ।উনাকে নিয়ে হয়তো কোন পত্রিকা সংবাদ করবে না।উনার জন্য কেও দুই কিলোমিটার রাস্তা ঠিক করে দিতে বলবে না,কেও আমার কথা শুনে দুই কিলোমিটার রাস্তাও মেরামতে কোন পদক্ষেপ নিবে না।আজ এই ছেলেটি হতে পারতাম আমি,আমার ইউনিভার্সিটির কোন বন্ধু কিংবা আমাদের আত্মীয়পক্ষের কেও।হয়তো তখন কোন একটা মানববন্ধন হতো,আমরা আবার নিরাপদ সড়ক চাইতাম,আমরা সংবাদ সম্মেলন করতাম।আমরা হলে হয়তো টাকা খরচ করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতাম।আমরা হয়তো প্রতিবাদ,মিটিং,মিছিল করতাম।সমাধান চাইতাম।আমি কিন্তু সমাধান চেয়েই ফেলেছি,হউক সেটা শব্দের গাঁথুনিতে।মানবতার স্বার্থে,কোমলমতি শিক্ষার্থীদের করুন চাহনির দিকে তাকিয়ে কিংবা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের চোখের দিকে অন্তত একবার চোখ রেখে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন এই দুই কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করে,শুধু যেন দুই কিলোমিটার রাস্তার ফুটপাতে দখল হওয়া জায়গা দখলকারীদেরকে পুনর্বাসন সাপেক্ষে,পথচারীদের ফিরিয়ে দেয়।শুধু যেন এই দুই কিলোমিটার রাস্তায় বেপরোয়া কোন ড্রাইভার গাড়ী চালিয়ে,আর কোন প্রান কেঁড়ে না নেয়।শুধু যেন এই দুই কিলোমিটার রাস্তায় গাড়ীতে,মানুষে ১০০ হাত দূরত্ব বজায় থাকে।ভালো হউক রাস্তা,বেঁড়ে উঠুক সব সম্ভাবনা।
#দুই_কিলোমিটার_রাস্তা
[http://www.somewhereinblog.net/blog/MSH/30005210]
©somewhere in net ltd.