![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধলেশ্বরীর শাখা নদী বুড়িগঙ্গা সৃষ্টি হয়েছিল ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যার পানি এক স্রোতে মিশে। বাংলার সুবেদার মুকাররম খাঁ বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক কাজ করেছিলেন, তিনির শাষণামলে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে প্রতি রাতে আলোক সজ্জা করা হতো, নদীর বুকে জ্বলতো অজস্র ফানুস বাতি। টেইলর ১৮০০ সালে বুড়িগঙ্গা দেখে মুগ্ধ হয়ে ঢাকাকে ভেনিসের সাথে তুলনা করেছিলেন।
অথচ এখন নদীর জায়গা ভরাট হওয়ার পর তা ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়ে যায়।সংশ্লিষ্ট কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়-এ ও এসব বিষয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। অস্তিত্ব হারাচ্ছে বংশী নদীও, দখল হওয়া জায়গা সমুহের মালিক দাবীকারীগন কাগজপত্র থাকার কথা বলে থাকলেও দলিল দেখাতে চান না কখনো। নদীগর্ভ দখল করে তৈরি হচ্ছে স্থাপনা, বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জেনারেল হাসপাতাল, অ্যাপার্টমেন্ট, মুক্তিযোদ্ধা আবাসন প্রকল্প, রাস্তা, দোকান, শিল্পকারখানা, বহুতল ভবন ও মাদ্রাসা।
বুড়িগঙ্গার জন্য ১৭ কোটি আর তুরাগের জন্য ৪ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট। মোট ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত বুড়িগঙ্গায় বাবুবাজার-বাদামতলী থেকে নবাবগঞ্জ কামরাঙ্গীচরের দিকে তিন কিলোমিটার ও তুরাগের টঙ্গী বাজার এলাকায় এক কিলোমিটার অংশের বর্জ্য সরানো হয়।।অপসারিত মোট বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৮.০৮৭ লাখ ঘনমিটার প্রায়। এ সময় নদীর তলা থেকে উঠে আসে পলিথিনের অসংখ্য ব্যাগ ছাড়াও প্লাস্টিকের বোতল, নারকেলের খোসা, কাঠ ও লোহার টুকরা, কাদামাটি বালুসহ অন্যান্য বর্জ্য। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রের জরিপ মতে, (পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা অনুযায়ী)বর্জ্য অপ্সারনের আগে ওই ৩ কিলোমিটার অংশে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল লিটারে প্রায় ০.০০। খনন ও বর্জ্য অপসারণের পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১.৫০।
যাকে এতো কষ্ট করে, এতো অর্থ ব্যয়ে কলঙ্কমুক্ত করলাম তাকেই আবার ভরিয়ে ফেলছি সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনার গাড়ি থেকে সরাসরি নদীতে বর্জ্য ফেলে। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে সদরঘাটে পানিকে এখন কুচকুচে কালো দেখায়, কোথাও কোথাও রক্তের মতো লাল, কোথাও গাঢ় নীল লাগে। প্রতি বছর ১.৭০ থেকে ২.৪০ বিলিয়ন টন পর্যন্ত রাসায়নিক পদার্থের বর্জ্য জমে জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে উঠেছে। এছাড়া বুড়িগঙ্গার তলদেশে প্রায় ৭ ফুট পলিথিনের স্তর জমে গেছে। নির্মল বিনোদনের সাথী নদী এখন পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়।
নদী বাঁচাতে সভা, সেমিনার, মানববন্ধন, মিছিল অনেক কিছু হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগেরও ঘাটতি কম ছিল না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদফতর, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এক ডজনেরও বেশি এনজিও আর পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগেও প্রতি বছর চলে পরিচ্ছন্নতার নানা অভিযান।নদী দখল ও দূষণ রোধে অন্তত ১৫টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে, তাও নদী এখনো চরমভাবে অবহেলিত,ধর্ষিত। বিষক্রিয়ায় নদী-ঘেঁষা আবাদি জমি সমুহের ফলনও কমে গেছে। নদীর বিষাক্ত তরল বর্জ্যে জনজীবন আজ বিপন্ন। লাখ- লাখ মানুষ পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে জন্ডিস, ডায়রিয়া, উচ্চরক্তচাপ, মূত্রনালি ও কিডনিজনিত রোগ, চর্মরোগসহ ভয়াবহ ক্যান্সারেও আক্রান্ত হয়ে পড়ছে রোজ-রোজ। আফসোস !
©somewhere in net ltd.