![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী
মাঝ রাত্রিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে অদ্ভুত সব চিন্তা এসে ভিড় করে। বহু বছর আগে একবার হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, তখন হয়তো রাত তিনটে-সাড়ে তিনটে হবে। চোখ খুলতেই দেখি আমার স্ত্রী ঘুমুচ্ছে। মুখটা ঠিক আমার চোখ বরাবর। জানালা গলে পূর্ণিমার আলো লেপ্টে আছে ওর গালে। দেখতে ওকে অন্য জগতের কোনো মানবী মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমার মনে হঠাৎ উদয় হলো এই সময় যদি ওর নাক-মুখ বালিশ দিয়ে চেপে ধরি তাহলে কি হবে? ও মরে যাবে!
তারপর?
সবাই খুব কান্নাকাটি করবে হয়তো। কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরে কল্পনাও করতে পারবে না ওকে আমি হত্যা করেছি। বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছি। এই উদ্ভট চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিলাম ভোর হওয়া পর্যন্ত। সেদিন জায়নামাযে হঠাৎ খুব কান্না পেয়েছিল, নিজেকে খুব নিকৃষ্ট আর ভয়ংকর মনে হচ্ছিল। পরে আমার স্ত্রী মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিল, “মা’র কথা মনে পড়ছে? যিয়ারত করে আসবে?”
সেদিন তাকে কোনো জবাব দিইনি।
আজও ঘুম ভাঙতেই উদ্ভট এক চিন্তা পেয়ে বসল। আত্মজীবনী লিখলে কেমন হয়? এই তো একা আছি, লেখালেখির এই তো সুযোগ। আজকাল আত্মজীবনী নিয়ে খুব আলোচনা-সমালোচনা হয়। আমার জীবনী নিয়েও কি তেমন কিছু হবে? মনে হয় না। রসকষহীন মানুষ আমি। জীবনী লিখতে বসলেই হয়তো তত্ত্বকথা লিখে ভরিয়ে ফেলবো। প্রাণহীন, তামাশাহীন ওই তত্ত্বকথা পড়বে টা কে? তার চেয়ে যদি নিজের কোনো নষ্টামি তুলে ধরি, কোনো নারী-কেলেংকারী কিংবা খুন-টুন জাতীয় কিছু, তাহলে হয়তো কিছু পাঠক পাওয়া যাবে। খুব আলোচনা-সমালোচনা পাওয়া যাবে। বইয়ের কাটতিও হয়তো বেড়ে যাবে।
ধুর ছাই! এই সুবহে সাদিকের সময় কোন ভুতে যে পেয়েছে কি সব অবান্তর ভাবনায় সময় ক্ষেপণ করছি!
মুয়াজ্জিন মাইক দিয়ে ডেকে দিচ্ছেন সবাইকে। ফজরের আযানের আগে এই কাজটা তিনি নিষ্ঠার সাথে নিয়মিতই করেন। নামাযের সময় হয়েছে, ঘুম থেকে জাগতে বলেন। মুয়াজ্জিনের এত ডাকাডাকির পরও আমরা ছ’সাত জন বুড়ো আর দু-চারজন ছোকরাই কেবল জেগে উঠি।
আমিও হয়তো উঠতাম না। যদি না শেষের বাঁশির প্রহর গুণতাম!
আরিফ নামায সেরে কুর’আন নিয়ে বসে। কি সুমধুর সুরে সুললিত কন্ঠে যে তিলাওয়াত করে! আমি বসে বসে শুনি। ওর কন্ঠটা ভারী মিষ্টি। ছেলেবেলায় ওকে হিফজখানায় ভর্তি করিয়েছিল ওর বাবা। আজগরের খুব শখ ছিল একমাত্র ছেলেটা হাফেজ হবে, ওর জানাযা পড়াবে। আরিফ হাফেজ হতে পারেনি ঠিক, তবে বাবার জানাযা ঠিকই পড়িয়েছিল।
২২ পারা পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। তারপর আরিফের মাথায় কোন শয়তান যে ভর করলো, পালিয়ে গেল হিফজখানা থেকে। ওর বাবা কত দূর দূরান্ত থেকে ওকে ধরে নিয়ে আসত, পেটাতো। আবার দিয়ে আসত হেফজখানায়। কিন্তু আরিফের তখন কুকুরের লেজের চেয়েও ভয়ংকর অবস্থা। কুকুরের লেজ তো তা-ও চোঙের ভেতর সোজা থাকে, আরিফের সে অবস্থাও ছিল না। সাধারণ চড়-থাপ্পর থেকে বেদম মারেও কিছু হলো না। রশি দিয়ে বেঁধে, গাছের সাথে বেঁধে পেটালেও যেনো তার কোনো বিকার নেই। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বোঝালেও হয় না, মেরে ফেলার ভয় দেখালেও কিছু হয় না। কিছুতেই কিছু হয় না।
হিফজখানার হুজুররা কি মারটাই না দিলেন! তাও ওর বোধ হলো না। শেষ পর্যন্ত আজগর হাল ছেড়ে দিল। ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল। সেখানেও সে পড়বে না। তিন-চার বছর মতো হবে বোধহয় টো টো গিরি করেই কাটিয়ে দিল। অনেকে চিকিৎসা করতে বললেন। একটা মাত্র ছেলে। আজগরও তাই যেভাবেই হোক ছেলে সুস্থ করতে পীর-ফকির থেকে বড় বড় নিউরো ও মানসিক ডাক্তার পর্যন্ত সবার শরণাপন্ন হয়েছিল। কোনো ফল হয়নি। শহরে ডাক্তার দেখাতে আসলে ওরা আমার বাসাতেই উঠত। খুব দুঃখ করে বলত, “ভাইজান, আল্লাহ আমাকে একটাই ধন দিয়েছেন। সেটা নিয়েও তিনি আমাকে এত বড় পরীক্ষায় কেন ফেললেন?” আমি চুপ করে থাকতাম। ওর কান্না দেখতাম। এছাড়া আর কী-ই বা করার ছিল আমার?
একবার তো মজার এক কান্ড করে বসেছিল আজগর। ছেলেকে আমার কাছে এনে বলেছিল, “ওর মাথায় হাত রাখেন ভাইজান। আপনার মতো পবিত্র মানুষের ছোঁয়া ছাড়া আমার ছেলেটা ঠিক হবে না।”
চোখে পানি চলে আসলেও আড়াল করে হেসে উঠেছিলাম। “কি সব পাগলামি করিস তোরা!” বললেও মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলাম। মানুষের বিশ্বাস ও ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলার মতো শক্তি আমার তখনো ছিল না, এখনো নেই। চাইলে আমার মনুষ্য সত্ত্বার নোংরা অংশটার স্বীকারোক্তি হয়তো করা যায়। কিন্তু সে সাহসও আমার নেই। এই ঢের ভালো আছি। মানুষ আমাকে শুদ্ধ ও সাচ্চা ভাবুক!
আরিফের উড়নচন্ডী ভাব আরো বছর খানেক ছিল। তারপর জাদুমন্ত্রের মতো সব ঠিক হয়ে গেল একদিন। আরিফ একটা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিল। ফাযিল নাকি কামিল, ওদের হিসাব আমি ঠিক বুঝি না; পাশ করলো। ছেলের জন্য আজগর চমৎকার একটা মেয়েকে বৌ করে আনলো। ক্ষেত-খামার, ব্যবসা নিয়ে ভালোই আছে এখন আরিফ।
আজগর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিশ্বাস করত, আমি মাথায় হাত রেখেছিলাম বলে তার ছেলের কপালে এমন শান্তি আর সমৃদ্ধি জুটেছে। আরিফ আর তার বৌয়ের বিশ্বাসও তার ব্যতিক্রম কিছু বলে মনে হয় না।
একটু পর আরিফের বউ হয়তো চা-মুড়ি নিয়ে হাজির হবে। সেসব খেতে খেতে আমি ভাবনার মহাসমুদ্রে ডুবে যাবো। সেই সমুদ্রে যদি তলিয়ে যেতে পারতাম! সাঁতরে যদি তীরে আর না ভিড়তে হতো!
ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে পাখির কলরব শুনি, মোরগের ডাক শুনি। আরিফের সুমিষ্ট তিলাওয়াত শুনতে শুনতে আঁধারের উপর ধীরে ধীরে সূর্যটা কেমন প্রভাব ছড়ায় তা দেখি। হিম ঠান্ডায় ভোরের আত্মপ্রকাশ দেখাটা কত যে আনন্দদায়ক, শহুরে জীবনে কোনোদিন বুঝতে পারিনি!
বেলা যে যায়... : ০১
বেলা যে যায়... : ০২
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩৯
মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: আচ্ছা!
তবে দেখা যাক...।
২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১০
মাইনুল ইসলাম আলিফ বলেছেন: লাইক দিতে হলো।
কোরআন তেলোয়াতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সুরের মুর্ছনা।
ভোরের আত্নপ্রকাশ সত্যি অসাধারণ দৃশ্য।
শুভ কামনা আর কৃতজ্ঞতা রইল।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৭
মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: কৃতজ্ঞতা ভাই।
ভালো থাকবেন।
৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৫
খামচি বাবা বলেছেন: ভালো লিখেছেন
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৫
মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ধারাবাহিকতা ভালই লাগছে। এগিয়ে চলুন।
নতুন বছর ভাল কাটুক।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩
মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: আপনার জন্যেও শুভকামনা, ভাই।
৫| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা অব্যহত রাখুন।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪
মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: চেষ্টা থাকবে অবশ্যই।
দোয়া রাখবেন। কেমন!
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০০
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার জীবনী লেখা তো চলছে, দেখছি। নারী টারী যোগ করলে কি পাঠক বাড়বে, আপনি মনে করেন? থাকলে চেপে না গিয়ে যোগ করেই দেন সাহস করে?