নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে

মোঃ ইয়াসির ইরফান

পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী

মোঃ ইয়াসির ইরফান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেলা যে যায়... : ০৪

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪২

গ্রামে এসেছি কতদিন হলো? নয় মাস নাকি দশমাস? দিন-মাসের হিসাবও আজকাল বড্ড গোলমেলে লাগে। শুনেছি, সামনের সপ্তাহে আমার স্ত্রী আসবে। আগেও এসেছে। তবে তখন মেহমানের মতো করে এসে আবার চলে গিয়েছিল। কিন্তু এবার নাকি শহুরে-পাট সব চুকিয়ে আসবে। চিরতরে চলে আসবে একদম। আমার মতো!

ভেতরটা কেমন হাঁসফাঁস করছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে। খুব খারাপ কিছু। ওর এখানে আসা কিছুতেই ঠিক হবে না। ও যেখানে আছে ভালো আছে। এই গাঁ, এই মাটি, ওর জন্য নয়।
কঠিন স্বরে যে নিষেধ করবো সেই সাহসও পাচ্ছি না। সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছে দু’দিন আগে-পরে ঠিকই চলে আসবে। আমি নিষেধ করলে হয়তো জেদ করেই চলে আসবে। তার চেয়ে আমি উদাসীন থাকি, সেই ভালো। কিন্তু আমার এমন লাগছে কেনো? আরিফের ছেলেটাকে দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। অথচ আজ যখন ও ‘দাদ্দাভাই’ বলে দৌঁড়ে আসল, বুকটা কেমন ধক করে উঠল। কোনো বইয়েও মন দিতে পারছি না। সকাল থেকে চার-পাঁচটা বই হাতে তুলেছি আর রেখেছি। চিন্তার সাগরে ডুব দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। কিছুই করতে পারছি না। কেমন যেন ভয় ভয় করছে।
তবে কি আমার সময় শেষের পথে? নাকি সুরাইয়ার? ওকে কি মাটি ডাকছে? উঁহু, সুরাইয়ার এখানে আসা কিছুতেই উচিৎ হবে না। কিছুতেই না।

“মা, তুই কি খুব ব্যস্ত?” আরিফের ঘরের সামনে গিয়ে গলা খাঁকারি দিই, ওর বৌকে ডাকি। জানি, যত ব্যস্ততা থাক ঠিক ছুটে আসবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাজির হলো মেয়েটা। “চাচা, কিছু খাবেন?” শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে বললো।
“হ্যাঁ রে মা, একটু পানি-টানি বা শরবত করে দিতে পারবি?” আমতা আমতা করে বলি। এভাবে কখনো কিছু চাইনি। এমনিতেই ওরা আমার মতো বুড়ো ধামড়াকে কত ভালোবাসা দিয়ে সহ্য করছে। তাই নিজ থেকে কোনো আহ্লাদ করিনি। প্রয়োজনও হয়নি। না চাইতেই সব হাজির করেছে ওরা। প্রথমবারের মতো এভাবে চাইতে একটু লজ্জা লজ্জা বোধ হচ্ছে।

আরিফের বউকে আমি ‘মা’ ডাকি। সেই মা ডাকের স্বার্থকতা প্রমাণের জন্যেই বোধহয় মেয়েটা বলে উঠল, “আপনার কি খারাপ লাগছে চাচা? আপনার ছেলেকে খবর দিই? ও কাছেই আছে। ডাকলেই এসে পড়বে।” বলেই জবাবের অপেক্ষা না করে আমাকে ধরে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল। বোধহয় আরিফকে ফোন করতে যাচ্ছে। আমি “না না, ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই।” বললেও তা বোধহয় শুনতে পেল না মেয়েটা।

আমার আসলেই ভালো লাগছে না। দম বন্ধ হয়ে আসবে মনে হচ্ছে। আমি আরিফের ঘরটার চারপাশে চোখ বুলাই। এই ঘরে আগে কখনো বসেছি বলে মনে পড়ছে না। আমার কেমন ঘুম পাচ্ছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। মাথা এলিয়ে দেবো কি না ভাবছি, এই সময় “দাদ্দাভাই দাদ্দাভাই, তোমার কি অসুখ হয়েছে?” বলতে বলতে আরিফের ছেলেটা বিছানায় উঠে আমাকে কাঁধের পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমি ওর তুলতুলে হাতে হাত রাখি। এই সময় দেখি ওর মাও চলে এলো। “চাচা, ডাবের পানি খান। আপনার ছেলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আসছে।” গ্লাসটা হাতে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আরিফের বউ। আমি ওর দিকে তাকানোর চেষ্টা করি। দৃষ্টি কেমন ঝাপসা লাগছে। তবুও মেয়েটার চোখে বিন্দু বিন্দু অশ্রুর খেলা ঠিক বুঝতে পারি।

মুখের ভেতর শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। মুখ দিয়ে কথা যেনো বেরোতেই চাইছে না। এক ঢোঁক ডাবের পানি খেয়ে “তোরা শুধু শুধু বেশী বেশী করছিস, মা!” বলতেই হাঁপিয়ে উঠি। আবার ঢক ঢক করে পুরোটা খেয়ে নিই। পাশের নাতিটার দিকে চোখ পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাই আমি। একটু হেসে বলার চেষ্টা করি, “ওকে একটু দে না, মা! আমি তো খেয়ালই করিনি!”

হাতের গ্লাসটা নিয়ে মেয়েটা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এই সময় কোনো এক নারী কন্ঠ বাহির থেকে ডেকে উঠে। “বৌমা, শরবত আর ফল এনেছি। নিয়ে যাও।” ডাক লক্ষ্য করে হেঁটে যায় ও। আমি বুঝতে পারি, কাউকে হয়তো কিছু নির্দেশনা দিয়ে এসেছিল। আরিফের ভাগ্যটা আসলেই খুব ভালো। একই সাথে লক্ষী আর বুদ্ধিমতী বউ পাওয়া সহজ কথা না।

ফল আর শরবত বাড়িয়ে ধরলেও নেয়ার শক্তি পাচ্ছি না। আমাকে জড়িয়ে ধরা নাতিটার দিকে এক পলক তাকাই। ওকে এখনো ডাবের পানি দিচ্ছে না কেন বুঝতে পারছি না। আমার শরীরে আর কূলোচ্ছে না। আমি আর ভাবতে পারছি না। মাথাটা এলিয়ে দিতেই হচ্ছে। আস্তে করে বালিশটা টেনে নিই। চোখের পাতা নেমে আসছে। কোত্থেকে যেন আমার মা ডেকে উঠেন। আমি শুনছি, খুব জোরে ডেকে চলেছেন মা। মা কি কাঁদছেন? কান্নার শব্দ শুনলাম মনে হলো!

আমার ভারী ঘুম পেয়েছে। চেষ্টা করেও মাকে নিয়ে আর কিছু ভাবার ফুরসত পেলাম না।


বেলা যে যায়... : ০৩




মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩৩

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: গহনবেলায়....

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.