![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী
"আমার কবিতা আমার শক্তি নয়; আল্লার দেওয়া শক্তি আমি উপলক্ষ মাত্র। বীণার বেণুকে সুর বাজে কিন্তু বাজান যে গুণী, সমস্ত প্রশংসা তারই। আমার কবিতা যারা পড়েছেন, তাঁরাই সাক্ষী। আমি মুসলিমকে সঙ্ঘবদ্ধ করার জন্য তাদের জড়ত্ব, আলস্য কর্মবিমুখতা, কৈব, অবিশ্বাস দূর করার জন্য আজীবন চেষ্টা করেছি। বাংলার মুসলমানকে শির উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য যে শির এক আল্লাহ ছাড়া কোন সম্রাটের কাছেও নত হয়নি; আল্লাহ যতটুকু শক্তি দিয়েছেন তাই নিয়ে বলেছি, লিখেছি ও নিজের জীবন দিয়েও তার সাধনা করেছি। আমার কাব্যশক্তিকে তথাকথিত ‘খাট’ করেও গ্রামোফোন রেকর্ডে শত শত ইসলামী গান রেকর্ড করে নিরক্ষর তিন কোটি মুসলমানের ইমান অটুট রাখারই চেষ্টা করেছি। আমি এর প্রতিদানে সমাজের কাছে জাতির কাছে কিছু চাইনি।
আমি আজ জিজ্ঞাসা করি : আমি লীগের মেম্বার নই বলে কি কোন লীগ-কর্মী বা নেতার চেয়ে কম কাজ করেছি? আজও ‘নবযুগে’ এসেছি শুধু মুসলমানকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে, তাদের প্রবল করে তুলতে, তাদের আবার ‘মার্টায়ার’-শহীদি সেনা করতে। বাংলার মুসলমান বাংলার অর্ধেক অঙ্গ। কিন্তু এই অঙ্গ আলস্যে জড়তায় পঙ্গু। এই অঙ্গকে প্রবল না করলে বাংলা কখনো পূর্ণাঙ্গ হবে না। বাংলার এই ছত্রভঙ্গ ছিন্নমূল মুসলমানদের আবার এক আকাশের ছত্রতলে, এক ঈদগাহের ময়দানে সমবেত করার জন্যই আমি চিরদিন আজান দিয়ে এসেছি। ‘নবযুগ’-এ এসেও সেই কথা বলছি ও লিখেছি। এই ‘নবযুগ’-এ আসার আগে বাংলার মুসলমান নেতায় নেতায় যে ন্যাতা টানাটানির ব্যাপার চলেছিল, সেই গ্লানিকর বিদ্বেষ ও কলহকে দূর করতেই আমি লেখনী ও তলোয়ার নিয়ে আমার অনুগত নির্ভীক, দুর্জয়, মৃত্যুঞ্জয়ী ‘নৌ-জোয়ানদের’ নিয়ে ভাই-এ ভাই-এ পূর্ণ প্রচেষ্টা চালাতে এসেছি। আমি কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করতে আসিনি। আল্লাহ জানেন, আর জানেন যাঁরা আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত তাঁরা আমি কোনো প্রলোভন নিয়ে এই কলহের কুরুক্ষেত্রে যোগদান করিনি ‘লীগ’ কেন, ‘কংগ্রেসেকে’ও আমি কোনো দিন স্বীকার করিনি। আমার ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা তার প্রমাণ। মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কোন দিন লিখিনি কিন্তু তার নেতাদের বিরুদ্ধে লিখেছি। যে কোনো আন্দোলনেরই হোক নেতারা যদি পূর্ণ নির্লোভ, নিরহঙ্কার ও নির্ভর না হন, সে আন্দোলনকে একদিন না একদিন ব্যর্থ হতেই হবে।
মুসলমানের জন্য আমার দান কোন নেতার চেয়ে কম নয়; যে সব মুসলমান যুবক আজ নব জীবনের সাড়া পেয়ে দেশের জাতির কল্যাণে সাহায্য করছে তাদের প্রায় সকলেই অনুপ্রেরণা পেয়েছে এই ভিুকের ভিক্ষা-ঝুলি থেকে।
আল্লাহর সৃষ্টি এই পৃথিবী আজ অসুন্দরের নির্যাতনে, বিদ্বেষে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। মানুষ মাত্রেই আল্লাহর সৈনিক। অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করতে সব নির্যাতন, সব অশান্তি থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে মানুষের জন্ম। আমি সেই কথাই আজীবন বলে যাব, লিখে যাব, গেয়ে যাব; এই জগতের মৃত্তিকা, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশকে আবার পূর্ণ শুদ্ধ পূর্ণ নির্মল করব এই আমার সাধনা। পূর্ণ চৈতন্যময় হবে আল্লাহর সৃষ্টি এই আমার সাধ।
পূর্ণ আনন্দময়, পূর্ণ শান্তিময় হবে এ পৃথিবী এ আমার বিশ্বাস। এ বিশ্বাস আল্লাহতে বিশ্বাসের মতোই অটল।"
"মুসলমান সমাজ আমাকে আঘাতের পর আঘাত দিয়েছে নির্মমভাবে। তবু আমি দুঃখ করিনি বা নিরাশ হইনি। তার কারণ, বাংলার অশিক্ষিত মুসলমানরা গোঁড়া এবং শিক্ষিত মুসলমানরা ঈর্ষাপরায়ণ। এ আমি একটুও বানিয়ে বলছিনে। মুসলমান সমাজ কেবলই ভুল করেছে আমার কবিতার সঙ্গে আমার ব্যক্তিত্বকে অর্থাৎ নজরুল ইসলামকে জড়িয়ে। আমি মুসলমান কিন্তু আমার কবিতা সকল দেশের, সকল কালের এবং সকল জাতির। কবিকে হিন্দুকবি, মুসলমানকবি ইত্যাদি বলে বিচার করতে গিয়েই এত ভুলের সৃষ্টি।"
"হিন্দু-মুসলমানে দিনরাত হানাহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মানুষের জীবনে এক দিকে কঠোর দারিদ্র্য, ঋণ, অভাব অন্য দিকে লোভী অসুরের যক্ষের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা পাষাণ- স্তূপের মতো জমা হয়ে আছে- এই অসাম্য, এই ভেদজ্ঞান দূর করতেই আমি এসেছিলাম। আমার কাব্যে, সঙ্গীতে, কর্মজীবনে, অভেদ-সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম- অসুন্দরকে ক্ষমা করতে, অসুরকে সংহার করতে এসেছিলাম- আপনারা সাক্ষী আর সাক্ষী আমার পরম সুন্দর। আমি যশ চাই না, খ্যাতি চাই না, প্রতিষ্ঠা চাই না, নেতৃত্ব চাই না- তবু আপনারা আদর করে যখন নেতৃত্বের আসনে বসান, তখন অশ্রু সংবরণ করতে পারি না।"
_______
আহা, প্রিয় কবি!
কি সব কথা বলে গেছেন। আজ ৮০-৯০ বছর পরও কথাগুলো কেমন লোমকূপের গোড়ায় শিহরণ জাগায়। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা অবশ্যই আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিয়েছেন, ইনশাআল্লাহ।
আমি সবসময়ই বলি, মানুষকে কবিতার কাছে আসতেই হবে। মানুষ যত কবিতা থেকে দূরে সরে যাবে, ততই প্রাণহীন, জড়পদার্থের মতো হয়ে যাবে।
জন এফ কেনেডি বলেছিলেন না, 'অনেক বেশী রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালবাসতেন, কিংবা অনেক বেশী কবি যদি রাজনীতি করতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো বাসযোগ্য হতো, আরো সুন্দর হতো।'
এই কথাটা একবার কবিতা-বিদ্বেষী এক বন্ধুকে বলেছিলাম। শুনে বলেছিল, 'তাহলে পুরো দুনিয়াটা পাগলে ভরে যেতো আর কি! কবিরা তো সব পাগল।'
তাই কী? আমাদের জাতীয় কবি পাগল ছিলেন? পাগলেও তো বোধহয় এই কথা শুনলে পাগলামী ছেড়ে দেবে! যে মানুষ অকপটে ঘোষণা দেন,
"বিদ্রোহী মানে কাউকে না মানা নয়। যা বুঝি না, তা মাথা উঁচু করে বুঝি না বলা।"
তিনি সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, নিয়ম ভঙ্গের উচ্ছ্বাসে মাততে পারেন। তিনি জাহান্নামের আগুনে বসে পুষ্পের হাসি হাসতে পারেন। তিনি সব ধরণের শৃংখল ভাঙতে, উচ্ছৃংখল হতে পারেন। কিন্তু পাগল হতে পারেন না কখনোই।
আমাদের দূর্ভাগ্য, আমরা তাঁর জীবদ্দশায়, তাঁর কবিত্বের সময়টুকুতে তাঁকে সাহচর্য দিতে পারিনি। উলটো ভুল বুঝেছি। ভুল বকেছি। তাঁকে যা নয়, তা বলে, সমালোচনার আগুনে দগ্ধ করেছি। অপমান করেছি। কেড়ে নিয়েছি তাঁর কবিত্বের সবটুকু শক্তি। ফলে কবিতা-ছাড়া তিনি হয়ে পড়েছিলেন প্রাণহীন জড় পদার্থের মতো।
ক্ষমা করবেন, প্রিয় কবি! আমাদের ক্ষমা করবেন।
যা কিছু রেখে গেছেন, তা মাথায় করে রেখে যদি কিছু প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি!
লেখার উৎস : নজরুলকে দ্রুত দেখা
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫০
ঢাকার লোক বলেছেন: "বাংলার অশিক্ষিত মুসলমানরা গোঁড়া আর শিক্ষিত মুসলমানরা ঈর্ষাপরায়ণ।"
আফসোস , আজও সেই একই ট্রেডিশন সমানে চলিতেছে !!
৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: এই জীবনে সবচেয়ে কঠিন কাজ নিজেকে ক্ষমা করা। শেষ পর্যন্ত কি নিজেকে ক্ষমা করে দেয়া যায়?
৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৫
রাকু হাসান বলেছেন:
খুব সুন্দর লিখেছেন ভাই! কিন্তু এসবের পর খুব কষ্ট হয় ,এই নজরুল কে মুসলমান সমাজ বুঝেনি,কবির বিপদে খুব একটা এগিয়ে আসেনি । এখনও একটা প্রজন্ম নজরুল স্বীকার করে মুসলিম বলে । তখন খুব দুঃখ হয়!
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি বলেছেন, " মহান আল্লাহ সোনহানাহু তায়ালা ... উত্তম প্রতিদান দিয়াছেন ... "
-মহান আল্লাহ উনাকে দিয়েছেন রোগ আর শোক; অমহান শেখ মুজিব উনাকে দিয়েছেন সামান্য প্রশান্তি