নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশা ব্যবসা ও চাকরি। জ্ঞানভিত্তিক জীবনদর্শনে বিশ্বাসী। নির্জনে ও নীরবে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করতে ভালোবাসি। বই পড়তে, ভ্রমণ করতে, একলা চলতে এবং জটিল চরিত্রের মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। –এম. জেড. ফারুক

এমজেডএফ

কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী

এমজেডএফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘পতিত’ রাজনীতিবীদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের চিরবিদায়

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪০



বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সময়ের আলোচিত চরিত্র শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আর নেই। গতকাল (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২) ৮৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। তিনি এক মেয়ে, এক ছেলে রেখে গেছেন। তার স্ত্রী আগেই মারা যান। তার ছেলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেসব নীতিহীন নেতারা ক্ষমতা ও অর্থের লোভে বারবার দল নিয়ে ডিগবাজী ও জনগণের সাথে বেঈমানী করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। সর্বশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম। তবে বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়া সবগুলো রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি) সঙ্গে কখনওবা কখনও যুক্ত ছিলেন তিনি। নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল, সব প্রতীকে শুধু ভোটই করেননি তিনি, মন্ত্রীও ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাক সরকারেরও মন্ত্রী হয়েছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সময় মন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, খোন্দকার মোশতাকের ডেমোক্রেটিক লীগ, এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং পরিশেষে খালেদা জিয়ার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই নেতা।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার দোগাছি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে গমনসহ তৎকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

পাকিস্তান আমলে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি তার; ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর আইএ পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তখন ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন শাহ মোয়াজ্জেম। ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ১৯৫৮ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন, পরে সভাপতিও নির্বাচিত হন। তখন অনেকবারই জেল খাটতে হয়েছিল তাকে।

ছাত্রজীবন শেষে শাহ মোয়াজ্জেম আওয়ামী লীগেই মনোনিবেশ করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথম সংসদে তাকে চিফ হুইপ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের যে কজন শপথ নিয়েছিলেন তাদের একজন শাহ মোয়াজ্জেম।

এরপর তিনি সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এরশাদ সরকারে উপ-প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি, জাতীয় পার্টির মহাসচিবও করা হয়েছিল তাকে। তিনি রংপুর-৬ আসন থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরশাদের প্রশংসা আর বিরোধী দলের নিন্দা জানিয়ে শাহ মোয়াজ্জেমের তখনকার নানা মন্তব্য ছিল ব্যাপক সমালোচিত। তবে ১৯৯২ সালে শাহ মোয়াজ্জেমকে জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদ বহিষ্কার করলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বিএনপিতে থাকলেও রাজনীতিতে তার আগের গুরুত্ব আর ফিরে আসেনি।

লেখালেখিও করতেন শাহ মোয়াজ্জেম। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘নিত্য কারাগারে’, ‘বলেছি বলছি বলবো’, ‘ছাব্বিশ সেল’, ‘জেল হত্যা মামলা’।

শাহ মোয়াজ্জেমের বিতর্কিত কয়েকটি উক্তি

নব্বইয়ের গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে জেলে নেয়ার পর রাখা হয়েছিল এই এক নম্বর নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারটিতে। ১৯৯১ সালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির এক প্রতিবাদ সভায় জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমার নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আপনি জেলে দিয়েছেন। এরশাদ একদিন মুক্ত হবেন। তবে ওই এক নম্বর নাজিমুদ্দিন রোডের বাড়িটি খালি থাকবে না। আপনাকেও আমরা ওই একই বাড়িতে এনে রাখব।’ ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, ওই একই কারাগারেই থাকতে হলো বেগম খালেদা জিয়াকে। আর শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন হচ্ছেন এখন জাতীয় পার্টি ছেড়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের ভাইস চেয়ারম্যান।

শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিষোদগার করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। তিনি বলেছেন, ‘বিয়ের পরও স্বামীর পদবী না নিয়ে শেখ পদবী ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নারী ও সমাজকে অপমান করেছেন’। তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ শব্দটি ব্যবহার করছেন। অথচ বাংলাদেশের নারীরা বিয়ের পরে স্বামীর পরিচয় ব্যবহার করেন। কিন্তু তিনি স্বামীর পরিচয় ব্যবহার না করে বাংলাদেশের নারী ও সমাজকে অপমানিত করেছেন। এ কারণে বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে রিজেক্ট করেছে।'

সময়টা ১৯৯০ সাল। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তীব্র। এসময় শাহ মোয়াজ্জেম এক বক্তৃতায় বললেন ‘ দুই মহিলা মিলিত হলে কিছুই উৎপাদন হয় না।’ সেসময় এরশাদের বিরুদ্ধে দুই নেত্রীর ঐতিহাসিক ঐক্যের প্রেক্ষাপটে শাহ মোয়াজ্জেম এই কদর্য মন্তব্য করেছিলেন।

ক্ষমতার লোভে বহুরূপী রাজনীতিবিদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের পদলেহীতার আলোচিত একটি ঘটনা:
জাতীয় পার্টি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় এরশাদের মা মারা গেছেন। পারিষদসহ এরশাদ গেলেন রংপুরে। মায়ের কবরে দোয়ার সময় কান্নার প্রতিযোগিতা হলো কাজী জাফর আর শাহ মোয়াজ্জেমের। কান্নার তীব্রতা দেখে এরশাদও অবাক হলেন। তারপর মোয়াজ্জেমকে ধমক দিয়ে এরশাদ বললেন ‘এই মোয়াজ্জেম তোমার মা মারা যায় নি।’

এরশাদের পতনের পর শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আর বেশী দিন জাতীয় পার্টি করেননি। বঙ্গবন্ধুর খুনীর দোসরের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা তো চিরদিনের জন্য বন্ধ। জাতীয় পাট্টিও এই আপদকে আর নিতে চায়নি। তাই শেষ জীবনে উপেক্ষিত হয়েও বিএনপিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আদর্শহীন রাজনীতির এক বড় উদাহরণ হলেন এই ব্যক্তিটি। এক সময় খালেদা জিয়াকে নোংরা ভাষায় আক্রমন করা ব্যক্তিটিই পরে খালেদা জিয়ার সন্মতিতে বিএনপির নেতা হলেন। বিএনপির রাজনীতিতে যেমন আদর্শের বালাই নেই তেমনি শাহ মোয়াজ্জেমেরও। ইতোমধ্যে বিএনপির কোনো এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করার কারণে বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, 'যে পাত্রে খায়, সেই পাত্রে মল ত্যাগই শাহ মোয়াজ্জেমের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ করে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেঈমানী করেছে। জাতীয় পার্টি করে এরশাদের সঙ্গে বেঈমানী করেছে, এখন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও গাদ্দারী করছে।’

মওদুদ, শাহ মোয়াজ্জেম, আবদুর রব এবং আরো কিছু প্রবীন নেতা রাজনীতিতে 'পল্টিবাজী'কে রাজনৈতিক সৃজনশীলতার শিল্পে পরিণত করেছিলেন। ৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর জনসমর্থন না থাকা সত্বেও অনেক নেতা এমপি-মন্ত্রি হয়ে নিজের আখের গোছানোর জন্য সহজ পথ হিসাবে দল ও নীতি পরিবর্তন করে সরকারি দলে যোগদানকে বেছে নেন। নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে দল পরিবর্তনের এই হিরিক বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল সামরিক শাসক জিয়ার আমলে। তা অব্যাহত ছিল এরশাদের আমলেও। রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের ‘ডিগবাজী’ খেলায় যারা সফল হয়েছিলেন তারা পরবর্তীতে আর রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। কারণ ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ পন্থায় আয় করা অর্থে এখন তারা বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। আর যারা এখনও সফল হতে পারেন নি তারা এই দল থেকে সেই দল, এই জোট থকে সেই জোটে এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তথ্যসূত্র:
bdnews24
ভোরের কাগজ
মুন্সিগঞ্জের খবর
banglainsider

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:৪৫

বিটপি বলেছেন: বিশ্ববেহায়া এরশাদের সংস্পর্শে যখনই যারা গিয়েছেন, তারাই লজ্জাহীনতা, তোষামোদী আর পদলেহিতার নজীর গড়ে তুলেছেন। শাহ মোয়াজ্জেম তার ব্যতিক্রম নন। এরকম রাজনীতিকদেরকে আমার কাছে বেশ্যার চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়না।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪১

এমজেডএফ বলেছেন: বেশ্যা চরিত্রের এই রাজনীতিকদের এ দেশের দলকানা লোকগুলো সেসময় সমর্থনও করতেন। তাই তারা পল্টিবাজিতে লজ্জা পেতেন না। বরংচ নিজেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে মনে করতেন। তবে আশার কথা, এখন পল্টিবাজ নেতাদেরকে জনগণ প্রত্যাখান করা শুরু করেছে।

২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৩

কামাল৮০ বলেছেন: বাংলাদেশে এমন কিছু নেতা আছে তারা সব সময় ক্ষমতাসীন দলে থাকতে চায়।এটাই তাদের নীতি।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪৮

এমজেডএফ বলেছেন: 'বাংলাদেশে এমন কিছু নেতা আছে তারা সব সময় ক্ষমতাসীন দলে থাকতে চায়।এটাই তাদের নীতি।' -এটা নীতি নয়, দুর্নীতি। নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত লোভ-লালসার কারণে যারা সবসময় ক্ষমতাসীন দলে থাকতে চায় তারা হলেন রাজনৈতিক বেশ্যা।

৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: আর ও অনেক শাহ মোয়াজ্জেম আছে আমাদের রাজনীতিতে। বলতে গেলে ঠোগ বাছতে গাঁও উজাড়।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫১

এমজেডএফ বলেছেন: আপনার সাথে একমত। এবে এখন শাহ মোয়াজ্জেমের মতো অন্যান্য পল্টিবাজ নেতাদের ওপরও সাধারণ মানুষের আস্থা নাই। দল-মত নির্বিশেষে অনেকে এদেরকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে।

৪| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জন্মিলে মরিতে হবে
অমর কে কোথা ভবে।
তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.