![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুপ্রিয়,সামহোয়্যার ইন ব্লগ সম্প্রদায়। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার ব্লগ পোস্ট।আজকে তোমাদের সাথে মাদ্রাসা বিষয়ে চমকপ্রদ কিছু তথ্য শেয়ার করব । (ছবিতে: উসমানীয় যুগে মসজিদে নববী (১৯ শতক))।প্রথম মাদ্রাসাটি ছিল সাফা পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত যায়েদ-বিন-আরকামের বাড়িতে (দারুল আরকাম), যেখানে স্বয়ং রসুল (সঃ) ছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তার কয়েকজন অনুসারী।হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববি-র পূর্বপাশে স্থাপিত হয় মাদ্রাসা আহলে সুফ্ফা। শিক্ষক ছিলেন উবাদা-ইবন সামিত আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন আবু হুরাইরা,মুয়াজ-ইবন জাবাল গিফারি প্রমুখ। সেকালের মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল, কুরআন, হাদিস, ফারায়েজ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বংশ শাস্ত্র, তাজবিদ ইত্যাদি। এছাড়া অশ্ব চালনা, যুদ্ধবিদ্যা, হস্তলিপি বিদ্যা, শরীর চর্চা ইত্যাদিও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।নবী (সাঃ) , মাছআব্ ইবনে উমায়ের কে মদিনায় পাঠিয়েছিলেন ইসলামের দাওয়াত,ইসলামের শিক্ষা দেওয়া ও হিজরতের জন্য প্রস্তুত (তাবলীগ) করার জন্য।
●●●(ছবিতে:আজ-জাইতুনা মাদ্রাসা,বর্তমানে তিউনিশিয়ার আজ-জাইতুনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়)।প্রতিষ্ঠিত ৭৩৭ সালে (১২০ হিজরি)।ইসলামি দুনিয়ার একটি প্রাচীনতম মাদ্রাসা ও মসজিদ।দীর্ঘ সময় ধরে (১৩ শতক পর্যন্ত) এটি সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্র স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাক্তন ছাত্র পণ্ডিত ইবনে খালদুন এর মতে এর পাঠ্য তালিকায় ছিল ইসলামি ধর্মীয় ও সাহিত্যিক বিষয়াবলী,দর্শন,বুদ্ধিবৃত্তিক বিজ্ঞান,গণিতশাস্ত্র ,চিকিৎসাশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিদ্যা।
●●●(ছবিতে: আল-কুরাআইন মাদ্রাসা ও মসজিদ, বর্তমানে মরক্কোর আল-কুরাআইন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়)।একজন আরব নারী ফাতিমা মুহাম্মদ আল ফিহরি এর প্রতিষ্ঠাতা।ইউনেস্কো ও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এক মতে ; ৮৫৯ সালে ফাতিমা উচ্চশিক্ষায় বিশ্বের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি প্রদানকারি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যা মরক্কোর ফেজে আল-কুরাআইন বিশ্ববিদ্যালয় নামে এখনও প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। এটি ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হত।এর ব্যাপক সুনাম গার্বার্ট অব অভার্গনেকে এখানে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত করে। অভার্গনে পরবর্তীতে পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার হন। বাকি ইউরোপে আরবি সংখ্যা পদ্ধতি ও শূণ্যের ধারণার প্রচলন ঘটনার জন্য তাকে কৃতিত্ব দেয়া হয়।এর লাইব্রেরীতে অনেক অমূল্য পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে ।এই মাদ্রাসা থেকে আসা বেশ কিছু পণ্ডিত মুসলিম দুনিয়ার ইতিহাসে প্রভাব রেখেছিলেন। ইবনে রশিদ আল সাবিতি,মুহাম্মাদ ইবন আলহাজ আল আব্দারি আল ফাছি ,আল ইমরান আল ফাছি বিখ্যাত লেখক ও পর্যটক লিও আফ্রিকানুস এদের কয়েকজন । বিখ্যাত পণ্ডিতের মধ্যে আল-ইদ্রিসি ,ইবন আল-আরাবি,ইবন খালদুন,আল- বিটরুজি, ইবন বিদরুচ্চী (আল পেত্রাগুইজ) ,ইবন আল খাতিব ,আলি ইবনে হিরজিহিম( হারাজিম) এবং আল-ওয়াজ্জেন সবাই ছাত্র বা শিক্ষক হিসেবে এর সাথে যুক্ত ছিলেন ।
●●●(ছবিতে :ইসলামি স্বর্ণযুগে বাইতুল হিকমাহ (জ্ঞানগৃহ/প্রজ্ঞার ঘর)ছিল মধ্যযুগের প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র । এটি ছিল একটি গ্রন্থাগার,অনুবাদকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান)।আরবিতে গ্রন্থ অনুবাদ ও সংরক্ষণ সহ বাইতুল হিকমাহ সাথে জড়িত পণ্ডিত গন বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন ।তাঁদের কয়েকজন হলেন,সাহল ইবনে হারুন (মৃত্যু ৮৩০), প্রধান গ্রন্থগারিক;হুনায়ন ইবনে ইসহাক (৮০৯-৮৭৩), চিকিৎসক;ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কিন্দি, (৮০১-৮৭৩), দার্শনিক ও বহুবিদ্যাবিশারদ;মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খোয়ারিজমি, (৭৮০-৮৫০), গনিতবিদ;বনু মুসা ভ্রাতৃবৃন্দ, প্রকৌশলী ও গনিতবিদ;সিন্দ ইবনে আলি (মৃত্যু ৮৬৪), জ্যোতির্বিজ্ঞানী;আবু উসমান, সাধারণত আল জাহিজ নামে পরিচিত (৭৮১-৮৬১), লেখক ও জীববিজ্ঞানী;আল জাজারি (১১৩৬-১২০৬), চিকিৎসক ও প্রকৌশলী।৯ম থেকে ১৩ শতক পর্যন্ত ইহুদী ও খ্রিষ্টানসহ অসংখ্য পন্ডিত ব্যক্তি এই গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। আল মামুনের শাসনামলে এখানে একটি মানমন্দিরটি স্থাপন করা হয়। এসময় এই প্রতিষ্ঠানটি গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, আলকেমি ও রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, ভূগোল ও মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানচর্চার অপ্রতিদ্বন্দ্বী স্থান হয়ে উঠে। ভারতীয়, গ্রীক ও পারসিয়ান রচনা ব্যবহার করে পন্ডিতরা বৈশ্বিক জ্ঞানের বিরাট ভান্ডার অর্জন করেন এবং এর মাধ্যমে তাদের নিজেদের আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে যান। নবম শতকের মধ্যভাগে বাইতুল হিকমাহ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গ্রন্থভান্ডার।বাইতুল হিকমাহতে ছিল বিজ্ঞানী ও পন্ডিতদের একটি গোষ্ঠী,অনুবাদ দপ্তর ও একটি গ্রন্থাগার যা ছিল শতাব্দীকাল যাবত সংগৃহীত জ্ঞানের রক্ষণাবেক্ষণের স্থান।এছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যা মানমন্দির ও অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার সাথে এটি যুক্ত ছিল ।প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু একটি গ্রন্থাগারের চেয়েও বেশি কিছু ছিল।এখানে পন্ডিত ও বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মৌলিক বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক কর্ম সম্পন্ন হয়েছিল।
তার পূর্বসূরির অনুকরণে আল মামুন বিদেশে জ্ঞান সংক্রান্ত রচনার অনুসন্ধানে বাইতুল হিকমাহর পন্ডিতদের প্রেরণ করেন। এমনকি এর একজন পরিচালককে কনস্টান্টিনোপল এ উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছিল।দেড়শত বছর যাবত সহজলভ্য গ্রিক ভাষার সকল বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক কর্ম অনুবাদ করা হয়েছিল। আপোলোনিয়াস, আর্কিমিডিস, ইউক্লিড , টলেমি,পিথাগোরাস, প্লেটো, এরিস্টটল, হিপোক্রেটিস, প্লটিনাস, গ্যালন, চরক, আর্যভট্ট ও ব্রহ্মগুপ্তের লেখা অনুবাদ করা হয়েছিল।এবং নতুন আবিষ্কার অনুবাদের পরীক্ষাকে উতসাহিত করেছিল ফলে প্রাচীন লেখা কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন করা হয়েছিল বা নতুন তথ্য যোগ করা হয়েছিল।এছাড়াও জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণি্ত ,চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞানে অনেক মৌলিক গবেষণা হয়েছিল।আল খোয়ারিজমি বীজগণিতের উপর ব্যাপক অবদান রাখেন।মুহাম্মদ জাফর ইবনে মুসা মুহাম্মদ মুসা পদার্থবিজ্ঞানে অবদান রাখেন।আল হাসান আলোকবিজ্ঞানে অবদান রাখেন। তার এসকল অর্জন এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে ।আল কিন্দি তথ্যের গোপনীয়তা বিষয়ক ক্রিপোটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করেন।মুহাম্মদ মুসা ও তার ভ্রাতৃদ্বয় আহমেদ ইবনে মুসা ও হাসান ইবনে মুসা প্রকৌশলবিদ্যায় অবদান রাখেন।চিকিৎসাবিজ্ঞানে হুনায়ন ইবনে ইসহাক চক্ষুরোগ নিয়ে আলোচনা করেন। অন্যান্য পন্ডিতরা গুটিবসন্ত, সংক্রমণ ও অস্ত্রোপচার বিষয়ে লিখেছেন। এসকল গ্রন্থ পরবর্তীকালে রেনেসার সময় চিকিতসাশাস্ত্রের আদর্শ পাঠ্যপুস্তকে পরিণত হয়েছিল।
(ছবিতে : বাইতুল হিকমাহ বর্তমানে আল-মুসতানসিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত । ইরাকের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ।এর গ্রন্থাগারের সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৪,০০,০০০।১২৩৫ সালে পানির শক্তি ব্যবহার করে দিনে ও রাতে নামাজের সময় জানানোর জন্য একটি এলার্ম ঘড়ি তৈরী হয়। এটি মাদ্রাসার প্রবেশ কক্ষে স্থাপিত ছিল।) টলেমির পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা করার জন্য খলিফা বাগদাদে প্রথম মানমন্দির নির্মাণের আদেশ দেন। টলেমির তথ্যউপাত্তগুলো পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং দক্ষ ভূগোলবিদ, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তার পুনর্নির্মাণ করেন। ৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয় মুমতাহান মানমন্দির । সূর্য, চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের পর্যবেক্ষণের পর দ্বিতীয় একটি মানমন্দির দামেস্কের কাছে কাসিউন পর্বতের উপর স্থাপন করা হয়। এসব পরিশ্রমলব্ধ ফলাফল ‘’আল জিজ আল মুমতাহান’’ নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।আল মামুনের প্রচেষ্টায় এসময় পৃথিবীর প্রথম বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করা হয়।
[বিঃদ্রঃ ইসলামি স্বর্ণযুগে মুসলিম বিশ্বে স্বাক্ষরতার হার তুলনামূলক বেশী ছিল যার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় মক্তব,মাদ্রাসাকে] ●●●(ছবিতে: মাদ্রাসা নিজামিয়ার ধ্বংসাবশেষ।)নিজামিয়া হল উচ্চশিক্ষার জন্য মধ্যযুগের একপ্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমষ্টি যা খাজা- নিজামুল মুলক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । সেলজুক সাম্রাজ্যের সূচনালগ্ন থেকে এসব ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাদ্রাসার মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলো ছিল মুসলিম বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রথম সুসংগঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানকার শিক্ষার মান মুসলিম বিশ্বে সর্বোৎকৃষ্ট ছিল এবং ইউরোপেও এগুলো সমাদৃত ছিল।সবচেয়ে বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা যা ১০৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।অনেক উৎসে এটকে "মধ্য যুগের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় " বলে অভিহিত করা হয়েছে । এখানে বিনা খরচে শিক্ষাদান করা হত। দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক আল-গাজ্জালি এর অধ্যাপক ছিলেন। ইবন তুমার্ত এখানে আল - গাজ্জালির ছাত্র ছিলেন ।পারস্যের কবি সাদি বাগদাদ নিজামিয়ার ছাত্র ছিলেন।আল-গাজ্জালি ১০৯৬ সালে যখন এই নিজামিয়া ত্যাগ করেন তখনও এখানে ৩০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিলেন । আশ সাহারাস্তানি ১১১৬ সালে ও বাহা উদ্দিন জুহাইর ১১৭০ সালে এখানে অধ্যাপনা করেছেন ।এই মাদ্রাসাগুলোকে সর্বপ্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বিভিন্ন বিষয়কে ফ্যাকাল্টিতে বা অনুষদে বিভক্ত করে অভিজ্ঞ আবাসিক স্কলারদের দ্বারা এসব মাদ্রাসা পরিচালিত হত। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রফেসরদের অধীনে কয়েক বছর পড়াশুনা করত। ইবন খালদুনের লেখনি থেকে পাওয়া যায় যে তাঁর সময় মরক্কোতে মাদ্রাসা পাঠক্রম ১৬ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি যুক্তি দেখান যে, এটাই (১৬ বছর) সবচেয়ে কম সময় যার মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বুঝতে পারে সে তার কাঙ্খিত বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারবে কি পারবে না।এর পাঠ্যসূচীতে ছিল ইসলামিক স্টাডিজ ,ইসলামি আইন , আরবি সাহিত্য ও হিসাববিজ্ঞান এবং পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিল ইতিহাস, গণিতশাস্ত্র , পদার্থবিজ্ঞান ও সঙ্গীত।শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা শেষ হলে “ইজাযা” কিংবা লাইসেন্স প্রদান করা হতো যা স্বীকৃতি দিতো যে তারা উক্ত পড়াশুনা শেষ করেছে এবং শিক্ষকতা করার যোগ্য। একজন শিক্ষক নিজে ব্যক্তিগতভাবে তার শিক্ষার্থীদের ইজাযা দিতে পারতেন অথবা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন মাদ্রাসাও শিক্ষার্থীদের এই স্বীকৃতি দিতে পারত। ইজাযার তুলনা করা যায় এই যুগে উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রদানকৃত বিভিন্ন ডিগ্রির সাথে।
●●●(ছবিতে : আল-আজাহার মাদ্রাসা (১৮৬৯ সালে প্রকাশিত ইলাস্ট্রেশন ), বর্তমানে আল-আজাহার বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত (মিশর ))। ৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে সর্বোচ্চ শরিয়া শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে । এখানে কুরআন ও ইসলামি আইনশাস্ত্র শিক্ষা দেয়া হত। এর পাঠ্যসূচিতে ছিল যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ, অলঙ্কারশাস্ত্র ও চন্দ্রকলা হিসাব করা, আরবি বাকারন, ইসলামি জ্যোতির্বিদ্যা ও ইসলামি দর্শন । নারীদের জন্য পৃথক পাঠদানের ব্যবস্থা থাকত ।
(ছবিতেঃ মিসরের প্রথম চিকিৎসা বিদ্যালয়ে ক্লট বে প্রথম আধুনিক অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা শিক্ষা দিচ্ছেন (২০ জুন ১৮২৯) । এসময় আল আজহারের বেশ কয়েকজন পণ্ডিত উপস্থিত ছিলেন)।এটি আরব দুনিয়ার উচ্চশিক্ষায় ডিগ্রি প্রদানকারি প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে ।এছাড়াও এটি মিসরীয় সরকার নিযুক্ত দা'ঈ দেরকে ধর্মপ্রচার প্রশিক্ষণ দেয়। এর সাথে যুক্ত উল্লেখ যোগ্য ব্যাক্তি হলেন খলিফা আল মুইজ ,আল আজিজ বিল্লাহ ,আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহ, আল মুস্তানজির বিল্লাহ , মুহাম্মাদ আব্দুহ , সৈয়দ জামাল উদ্দিন আফগানী , ইজ উদ্দিন আল কাসাম , মুফতি মুহাম্মদ আমিন আল হুসেইনি , আহমেদ উরাবি প্রমুখ । ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ূতি সহ অনেক বিখ্যাত স্কলার এখানে শিক্ষকতা করেছেন।বর্তমানে গ্রান্ড মুফতি হলেন বৃহৎ এই ইনস্টিটিউশনের প্রধান। এই ইনস্টিটিউশনের তিনটি বিভাগের একটি হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়। অন্য একটি বিভাগ ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা, ফতোয়া জারি, ম্যাগাজিন প্রকাশ ও ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পালন করে থাকে ।
●●●(ছবিতেঃ দারুল উলুম দেওবন্দ,এর অর্থ “জ্ঞানালয়”)।৩১ মে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠীত । ব্রিটিষ বিরোধী আন্দোলন , সিপাহি বিদ্রোহ তে তাদের অবদান ছিল । এখানকার কয়েক জন পণ্ডিত হলেন , আব্দুল হামিদ খান ভাসানি , মাওলানা আনয়ার শাহ কাশ্মীরি , মাওলানা আশরাফ আলী থানভি , হাবিব উর রাহমান নাদভি,হুসেইন আহমেদ মাদানি ,মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলভি , নিক আব্দুল মাজিদ নিকমাত,সাব্বির আহমেদ ওসমানী ,মাহমুদ হাসান দেওবন্দী প্রমুখ ।মাওলানা ইলিয়াস রহ. তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠিতা ।আশরাফ আলী থানভি অনেক বিখ্যাত গ্রন্থের লেখক ।
(ছবিতেঃ উজবেকিস্তান এর সমরকন্দ তে রেগিস্তান চত্বরে অবস্থিত বিখ্যাত তিনটি মাদ্রাসা।বাম থেকে ডানে: উলুগ বেগ মাদ্রাসা, তিলইয়া-কুরি মাদ্রাসা ও শের-দুর মাদ্রাসা)।১৫শ শতাব্দীতে উলুগ বেগ মাদ্রাসা মুসলিম প্রাচ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ছিল। পারস্যের কবি, পন্ডিত, সুফি জামি এখানে পড়েছেন । উলুগ বেগ স্বয়ং এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন।তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ।আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে বেয়ার’স স্টার চার্ট বা বেয়ারের তারাতালিকা ব্যবহারের আগ পর্যন্ত প্রচলিত ছিলো ‘জিজ-ই-উলুগ বেগ’ বা উলুগ বেগের তারাতালিকা।এসময় এখানে ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষাদান করা হত।শিক্ষার উৎকর্ষের দিক দিয়েও এই মাদ্রাসা ছিল প্রথম সারিতে।
●●●(ভিডিওতেঃ ইউরোপের মাদ্রাসা সমন্ধে জানতে এই ডকুমেন্টারি বা পোস্টটি দেখতে পার।স্পেনের কর্ডোবা মাদ্রাসা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।সমগ্র ইউরোপের শিক্ষার্থীরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তিও জন্য আবেদন করত।কর্ডোবা খিলাফতের সময় আল-আন্দালুস জ্ঞানের আলোকে পরিণত হয় এবং কর্ডোবা ইউরোপসহ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়।)●●●(ছবিতেঃ সৌদী আরবের প্রিন্সেস নোরা বিনত আবদুল রহমান ইউনিভার্সিটি (পিএনইউ) বিশ্বের সর্ববৃহৎ মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।) বর্তমানে দেশী বিদেশী মিলিয়ে ৬০ সহস্রাধিক নারী শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।৮০ লাখ মিটার ভূমির উপর ১৫টি ফ্যাকাল্টি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় । এর অন্তর্গত রয়েছে ৩৪ টি কলেজ ।এর প্রাতিষ্ঠানিক স্টাফ ৩৭৬৭ জন ও প্রশাসনিক স্টাফ ২০০০ জন । বিশ্ববিদ্যালটিতে জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি রয়েছে। ক্যাম্পাসের ভবনসমূহ এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে সূর্যালোককে আলোর উৎস হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ৪০ হাজার বর্গমিটারের সোলার প্যানেল ক্যাম্পাসকে উষ্ণ রাখতে জ্বালানির ১৬ শতাংশ সরবরাহ করে। ১৮ শতাংশ ব্যবহৃত হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কাজে। এছাড়াও একটি ওয়াটার-রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট রয়েছে ।ক্যাম্পাসে চিকিৎসা সুবিধা, গবেষণা কেন্দ্র ও পাঠাগার রয়েছে। পাঠাগারে প্রায় ২ মিলিয়ন ইংরেজি ও আরবি বই ও জার্নাল রয়েছে, যার ধারন ক্ষমতা ৫ মিলিয়ন পর্যন্ত।এছাড়াও রয়েছে পাণ্ডুলিপি , সরকারি প্রকাশনা ও ডাটাবেস।পরিবহনের জন্য রয়েছে ১১.৫ কিলো মিটার ব্যাপী অটোমেটেড গাইডওয়ে ট্রানজিট সিস্টেম (চালকবিহিন স্বয়ংক্রিয় ট্রেন)।৪ টি লাইন ও ১৮ টি স্টেশনও রয়েছে ।পিএনএর আবাসিক এলাকায় ১৪শ’ ভিলা রয়েছে। ১২ হাজার ছাত্রীর থাকার জন্য বিশাল হোস্টেল সুবিধা রয়েছে। এছাড়া মেয়েদের জন্য স্পোর্টস সিটি রয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানে রয়েছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পিএনইউতে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত প্লান্টসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক পরিবেশবান্ধব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।সারা বিশ্বে অনারবদের জন্য আরবী শিক্ষার সবচেয়ে চমৎকার কেন্দ্রটি রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর নাম ‘ইনস্টিটিউট অব অ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজ ফর নন অ্যারাবস।’ বর্তমানে বিশ্বের ৫০ টি দেশের প্রায় ৪শ’ বিদেশী শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়নরত।এই ইনস্টিটিউট আরবী ভাষার উপর একটি উচ্চতর ডিপ্লোমা প্রদান করে ।
●●● (ছবিতেঃ ১৯৬৯ সালে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় )। শিক্ষার্থীরা এখানে শারীয়াহ কুরআন, দাওয়াত বা উসূল আল দ্বীন, হাদীস এবং আরবি বিষয়ে পড়তে পারে।এখান থেকে স্নাতক, স্নাতোকত্তর ও ডক্টরেট এ তিন শ্রেণীতে শিক্ষাদান ও ডিগ্রী প্রদান করা হয়।এর অন্তর্গত প্রতিষ্ঠানগুলো হল , আরবি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ( আরবি নয় এমন ভাষাভাষীদের জন্য ),মাধ্যমিক শিক্ষালয় , ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষালয়, মক্কা দারুল হাদিস ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষালয়,দারুল হাদিস অব আল মদিনা ।এখানকার কিছু বিখ্যাত পণ্ডিত হলেন ,আব্দুল আজিজ আল হারবি ,বিলাল ফিলিপস ,আবু উসামাহ ,আবু আম্মার ইয়াসির কাজি,মুহাম্মদ আলশরীফ ,ইয়াসের বিরজাস ,এহসান এলাহি জহির ,রাবি আল মাজখালি ,আতিক আহমেদ খান ,ফায়েজ মুহাম্মদ ,সৈয়দ আবু বকর জাকারিয়া,সফিউর রহমান মোবারকপুরী ।
●●● কিভাবে ইসলামিক স্কলার হব ?: তোমার বয়স যতই হোক না কেন বা যেকোন সেকুলার মাধ্যমের শিক্ষার্থী বা পেশাজীবী হও না কেন ,তুমি পারবে।ঢাকার "জামিয়াতুল আস’আদ" নামে একটি উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই সুবিধা দিচ্ছে ।তাদের শিরোনাম অনুসারে, "এগিয়ে চলছে বয়স্কদের আলেম হওয়ার কার্যক্রম"।এটি একটি একটি উচ্চতর ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান।" দাওয়া" ও " বয়স্কশিক্ষা" নামে এর আরও দুটি বিভাগ রয়েছে।২০০০ সালে ,জেনারেল শিক্ষার্থী ও দ্বীনী ইলম শিক্ষার প্রতি আগ্রহীদের কথা বিবেচনা করে এই বিভাগটি খোলা হয়েছিল।এই বিভাগে শিক্ষা গ্রহণ করে মাত্র চার বছরে দাওরায়ে হাদীসে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়।তোমাদের সময় ও সামর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সহজে দ্বীন শিখার উপযোগি করে নতুন আঙ্গিকে ৪ বছর মেয়াদী সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে ।এতে আরবী ভাষা থেকে সরাসরি কুরআন ও হাদীস বোঝার যোগ্যতা অর্জনের জন্য আরবী ভাষা শিখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।এজন্য শুরুতেই আরবী ব্যকরণের সরফ ও নাহু শাস্ত্র অনুশিলন করে শিখানো হয়। সাথে সাথে আরবী কথোপকথন ও লিখনিরও চর্চা করানো হয়। এরই মধ্যে এক ব্যাচের শিক্ষা সমাপ্ত হয়েছে যাদের অনেকেই দাওরায়ে হাদীসে পড়া-লেখা করছে।এখন সকাল ও রাতে দুই ব্যাচে নতুন শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম চলছে। বছরের যে কোন সময় ভর্তি হওয়া যায়।এ কোর্স সমাপ্তির দ্বারা সরাসরি মিশকাত জামাতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন হয়।প্রথম বর্ষের পাঠ্য তালিকা হলঃ মীযানুস সরফের বাংলা অনুবাদ,ইলমুন নাহু এর বাংলা অনুবাদ,উর্দু কা কায়দা এবং তালীমুল ইসলাম ১ম ও ২য় খন্ড,এসো আরবী শিখি ১ম-২য়,সূরা ফাতেহা সহ ৩০ পারার শেষ ১০সূরার তরজমা,আল হাদী ইলাস সরফ (বাংলা),যারা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেনি তাদের জন্য বেফাকের প্রথম বছরের বাংলা ইংরেজী। তাদের সম্পূর্ণ পাঠ্যতালিকা এখানে দেখতে পার।
সবাইকে ধন্যবাদ ও স্বাগতম ।
এখন 👌 "লেখাটি ভাল লাগল" ও ☆ "প্রিয় পোস্ট তালিকায় নিন" এ ক্লিক কর।😁
এই ব্লগ পোস্টটি সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শের জন্য মন্তব্য করতে পার। তোমাদের গঠনমূলক মন্তব্যই আমাকে পোস্ট করার প্রেরনা যোগায় ।সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।