নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেসবুক প্রেম

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯




অস্বাভাবিকহারে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পেয়ে অবাক না হয়ে উপায় ছিল না।
বোঝার শতচেষ্টা করেও প্রকৃত কারণ বের করতে পারিনি। অনেকগুলো অপশন পর্যালোচনা করে, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অনুমিত যুক্তি হিসেবে - প্রোফাইলের ছবিটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে নিজেকে বোঝালাম। যদিও ছবিটাতে অসাধারণ কিছুই ছিল না।

ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এর পাশাপাশি মেসেঞ্জারে মেসেজ পেতে শুরু করেছি, মোসুমী বৃষ্টির মত অবিরাম।
যার প্রায় শতভাগই চিরাচরিত কপি-পেস্ট টাইপের মেসেজ – হাই, হ্যালো, হাই বিউটিফুল বা কেমন আছো, আপনার হাঁসিটা সুন্দর বা আপনার ছবিটা সুন্দর হয়েছে - দিয়ে শুরু হয়।
কোনভাবেই আমার মাথায় আসে না, কতটুকু নির্বোধ হলে, একজন আশা করে যে, সম্পূর্ণ অপরিচিতা একজনকে এমন একটা মেসেজ দিলেই মেয়েটি তার বন্ধুত্বের আহবানে সাড়া দিবে!

কয়েকজন আবার স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সদ্ব্যবহার করে সরাসরি ভিডিও কল করে বসে।
অনেক ক্ষেত্রেই এদের কমনসেন্স আর কল করার সময়জ্ঞানের দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখে যতটা না বিরক্তি বা করুণার উদ্রেক হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশী রাগ আর ঘৃণা সৃস্টি হয়েছে এই সকল অর্বাচীনদের প্রতি।

আমার ফেসবুকের স্বল্প অভিজ্ঞতায় প্রতিদিন প্রায় গোটা বিশেক নতুন মেসেজ পাচ্ছি। অন্যদের কথা বলতে পারছি না। তবে আমি কম অভিভূত হইনি, আমার এই অকস্মাৎ জনপ্রিয়তা অর্জনে। দু একবার ভয় হচ্ছিল, কোন কাঙ্গালী বাবু আবার আমাকে শ্রীযুক্ত দুকড়ি দত্ত উকিলের মত খ্যাতির বিড়ম্বনায় ফেলে দিলো কিনা!

এর মধ্যেও আজাদের মেসেজটা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।
মেসেজের বক্তব্যে আমার গাঁ রীতিমত শিউড়ে উঠে - আমার ইমেইল থেকে তার কাছে মেইল পাঠানো হয়েছে, যেখানে আপত্তিকর কনটেন্ট আছে। চেক করে দেখলাম, ইমেইল এড্রেসটা আমারই। তবে, এটা রেগুলার ইমেইল হিসেবে ব্যবহার করি না। শুধুমাত্র, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য সাইট সাবস্ক্রাইব করার জন্যে ব্যবহার করি।

আমার মেইলটা পেয়েই সে বুঝেছিল যে, আমার আইডি হ্যাক হয়েছে।
তাই, ফেসবুকে আমাকে খুঁজে বের করে, মেসেজ পাঠিয়েছে।
এমন উদ্যোগ কখনো আশা করিনি, তাও আবার সম্পূর্ণ অপরিচিত একজনের কাছ থেকে।

ধন্যবাদ দিয়ে মেসেজ পাঠানোর পরে বেশিক্ষন দেরী হলোনা, তার ফিরতি মেসেজ পেতে।
এভাবে কয়েকটা মেসেজ আদান-প্রদান করেই বুঝে ফেললাম যে, সে ফ্রেন্ডলি, সবসময় হালকা ফান করতে পছন্দ করে এবং গুরুত্ব সহকারে কোন কিছু নেয় না। কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে, তার ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুঁ মেরে উল্লেখযোগ্য কিছু পেলাম না। তার বয়সী তরুণেরা যেভাবে পোজ দিয়ে সেলফি তুলে, তেমন একটাও নেই। অল্প কিছু ছবি আছে, যার কোনটাই ঠিকমতো তোলা হয়নি। কেমন একটু হাবাগোবা টাইপের, লিকলিকে এক ছেলে – দেখে মনে হচ্ছে না এটা কোন ভার্সিটির ছাত্র হতে পারে। মোদ্দা কথা, পোশাক-আশাক, হেয়ার স্টাইল এমনকি ছবির সাথের মানুষদের দেখেও ইমপ্রেস হওয়ার মত কিছু খুঁজে বের করতে পারলাম না।

আকর্ষণীয় কোন কিছু না দেখলেও তার সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং অনেকটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এর পিছনে তার হালকা ফানগুলোর যথেষ্ট অবদান আছে। এছাড়াও কথাবার্তায় তাকে কেন জানি নির্লোভ মনে হয়েছে। যে গুণটি আমাকে সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করেছে, সেটি হল - তার কোন দুর্বলতা আড়ালের চেষ্টা করছে না এবং আমাকে ইমপ্রেস করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ চোখে পড়েনি।

স্বাভাবিকভাবেই মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদানে সময় লাগলো না।
মাসখানেকের মধ্যেই ঠিক হয়ে গেল – দেখা করবো। দেখা করতে রাজী হওয়ার পিছনে দুজনেই একই শহরের বাসিন্দা হওয়া ছাড়াও আমার নিজের কৌতূহলও দায়ী। বস্তুত, অনেকগুলো জিজ্ঞাসা আমাকে প্রতিনয়ত কুরে কুরে খাচ্ছিল।

অপরিচিতা একজনের মেইল হ্যাক হয়েছে দেখে তাকে খুঁজে বের করার এই প্রচেষ্টার পিছনে আসলে কী আছে ?
এই বয়সী একজন তরুণ এতটা নির্লোভ আর নির্মোহ আচরণ কিসের জোরে করতে পারে?
নিজের উপর তার এমন আত্নবিশ্বাস কেন?

দেখতে দেখতে দেখা করার দিন ঘনিয়ে এল।
আমার ভিতরে বিন্দুমাত্র টেনশন কাজ করছে না, পেটের ভিতরে কোন প্রজাপতিও উড়ছে না।
আজাদকে মুগ্ধ করার কোন প্রকার ইচ্ছা বা আকাংখা অনুভব করছি না। অন্যান্য দিনের মতই সাদামাটা একটা ড্রেস পড়ে ক্লাশে চলে গেলাম। ক্লাশ শেষে হাতিরপুলে বাসায় ফেরার পথে নিউ মার্কেট থেকে কয়েকটা টুকটাক জিনিস মা কিনতে বলেছিল। সেগুলো কেনার সময় তার সাথে দেখা করার প্ল্যান করি।

ইচ্ছে করেই, তাকে অপেক্ষায় রেখে একটু দেরীতে হাজির হই, যথাস্থানে।
খাবার দোকানের সামনে বসে থাকা লোকদের উপর নজর বুলিয়ে, কঙ্কালসার চ্যাংড়া গোছের কাউকে না দেখে এবার আশে পাশের লোকজনের দিকে তাকাই। আজাদের মত কাউকে না দেখে, কিছুটা নার্ভাস ফিল করে নিজেকেই ধিক্কার দেই – কেন যে এত তাড়াতাড়ি রাজী হয়েছিলাম দেখা করতে।

- এক্সিউজ মি, আপনি নিশ্চয়ই, শায়লা? আমি আজাদ।

আমার সামনে সুঠামদেহী, পরিপাটী বেশভূষার স্মিতহাস্য মুখের এক তরুনকে দেখে মুহূর্তের জন্যে হলেও আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।
কিভাবে সম্ভব!
কোন দুঃখে এমন একজন মানুষ, বয়ঃসন্ধি পেরোনো এক ছ্যাবলা মার্কা তরুনের ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করবে ?

বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে বসে, কথা বলতে বলতে জানতে চাইলাম, কেন সে এমন ছবি ফেসবুকে দিয়ে রেখেছে।

- আমার আসলে বেশী ছবি নেই। তাই কিছু পুরনো ছবি দেয়া রয়েছে। মনে হয় কিছুটা চেঞ্জ হয়েছে, আমার, তাই না?

আজাদের এই ‘কিছুটা’ বলতে নিয়মিত জিমে গিয়ে বানানো বডি বিল্ডারের মত একটা ফিগার নির্দেশ করছে।
আমি বলার কিছু খুঁজে পাই না। সে কি আসলেই জানে না যে, তার পরিবর্তন কতটা হয়েছে? নাকি সে এসবের থোরাই কেয়ার করে!

এরপরে তার সাথে আরো অনেকবার দেখা হয়েছে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে, তার মানবিক গুণাবলী ছিল অসাধারণ। প্রকৃত মানবিক গুনসম্পন্ন যে ধরণের মানুষ আমি মনে মনে খুঁজছিলাম, সে ছিল তেমনি একজন। তার সাথে কাটানো সময়গুলো আমি সবসময় উপভোগ করতাম। তার ভিতরের গুণাবলীই তাকে বাইরে এতটা নিখুত একজন মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

বলতে দ্বিধা নেই যে, আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম

পরের পর্ব অনুভূতির বর্ণবিন্যাস

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৫

চাঙ্কু বলেছেন: পেম ভালা হইছে। পেম ভাঙ্গার পরে আরেকটা পোষ্ট দিয়েন ;)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪২

মাহের ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।
আশা করি পেয়ে যাবেন, শীগগিরই।
তবে, প্রেম ভাঙ্গার কিনা , বলতে পারছি না।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: এই যে এখন এত এত্ত তালাক হয়। তার কারন এই ফেসবুক। ফেসবুকে থেকে সম্পর্ক। তার পর বিয়ে এবং তালাক।
ফেসবুকের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

মাহের ইসলাম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার সাথে একমত।
বাস্তবে যত বিচ্ছেদ হচ্ছে, তার প্রায় শতভাগের পিছনে কোন না কোনভাবে ফেসবুকের ভূমিকা আছে।

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৪

চিটাগং এক্সপ্রেস বলেছেন: আমি তো ফেসবুকে কোন মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারলাম না। কিছু টিপস দিন

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: শুনে দুঃখিত হওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে আপনার জন্য শুভ কামনা করতে পারি।

দেখেন, আগামী ১০০ দিনে কিছু একটা ঘটে যেতে পারে, সাহস রাখেন।

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমিই একমাত্র পুরুষ যার ফ্রেন্ডলিস্টে কোন মেয়ে নেই...

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৫

মাহের ইসলাম বলেছেন: এইটা কিভাবে সম্ভব !!!

আমি তো কল্পনা করতেও ডরাইতেছি !!

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় মাহেরভাই,

গল্প বেশ ভালো লাগলো। আমিও আপনার ফেবুর প্রেমে পড়লাম । লায়লার জন্য শুভকামনা ।

আর আপনার জন্য নিরন্তর শুভেচ্ছা।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
আশা করি ভালো আছেন।

আসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্যেও শুভ কামনা রইল।

৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এ সময়ের গল্প ; বেশ লিখেছেন।
শুভ কামনা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক দিন পরে আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার জন্যেও রইল একরাশ শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.