নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মিতালী চাকমা এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য ও প্রতিক্রিয়ার অসঙ্গতি

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫



স্থানীয় এক ডিগ্রী কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তাব দেয়া হচ্ছিল এক রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়ার। কিন্তু মেয়েটি সেই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে চলছিল। কে জানে, কি ছিল তার মনে? এমন হতে পারে, পড়ার খরচ যোগাতে বাবা-মা আর বড় বোনের কষ্টের ছবি তার মানসপটে এমনি গ্রোথিত ছিল যে, পড়ালেখার বাইরে অন্য কোনো কিছুতে জড়ানো মানেই নিজের দরিদ্র ও সমস্যাজর্জরিত পরিবারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সামিল বলে বিবেচিত হয়েছিল। অথবা, বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত উপার্জনে পড়তে এসে লেখাপড়ার বাইরে অন্য কোন কিছুতে জড়াতে মন সায় দেয়নি। লেখাপড়াকে ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে গ্রহন করে সে হয়ত ভেবেছিল, লেখাপড়ার পিছনেই সমস্ত প্রচেষ্টা নিয়োগ করবে যেন সকলের মুখ উজ্জল করতে পারে। আশা ছিল, একদিন দেশবাসী তার নাম জানবে। তার অর্জনে পিতা-মাতার দুঃখক্লিষ্ট মুখে ফুটবে গর্বের হাঁসি, গর্বিত হবে ভাই-বোন, সহপাঠিরা, এমনকি এলাকার সকলে।

দেশবাসীর কাছে তার নাম কতটা পৌঁছেছে, সেটা জানা না থাকলেও এলাকাবাসীর কাছে তার নাম এখন পৌঁছে গেছে সেটা নিশ্চিত। তেমনি এটাও নিরদ্বিধায় বলা যায় যে, গর্বিত হওয়ার পরিবর্তে কন্যার কল্যাণে তার পিতা-মাতা এখন প্রাণ হারানোর শংকায় ভুগছে। বাস্তবে তারা কোথায় আছে, কেমন আছে – কেউ জানে না।

রাঙ্গামাটির এক প্রত্যন্ত গ্রামে দুই বোন আর এক ভাইয়ের সংসারে মিতালী চাকমা মাঝের জন। দুনিয়াবী প্রাচুর্যে লাগাতার ঘাটতির ঢেউ সংসারের সকলকে প্রতিনিয়ত ভিজে চুপসে দিলেও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার কমতি কখনো শিশিরের ফোটা হয়েও কারো গায়ে লাগেনি। দিন এনে দিন খেতে না হলেও সাধ আর সামর্থ্যের যোজন যোজন দূরত্ব কখনই সন্তানদের উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সংকল্প থেকে এই পরিবারের কর্তাকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

বৃষ্টিতে ভেজা চোখের জলের মতই এই বাস্তবতা পরিবারের বড় মেয়েটি বুঝে ফেলে একটু বড় হওয়ার পরেই। তাই বাবা-মায়ের কাধ থেকে সংসারের জোয়ালের ভার কিছুটা হলেও লাঘবের অভিপ্রায়ে, সে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে প্রিয় বাবা-মা আর আদরের ছোট ভাই-বোনদের ছেড়ে শহরে ছোট-খাটো এক চাকুরিতে যোগ দিতে অনেকটাই বাধ্য হয়েছে আগেই। আর তাদের সকলের অতি আদরের ছোট ভাই এখনো স্কুলের গন্ডী পেরুতে পারেনি।

পারিবারিক বন্ধনে ভালবাসায় বেড়ে উঠা সন্তানদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা আর দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি বাস্তবতার আলোকে কষ্ট আর পরিশ্রমকে পাথেয় বানিয়ে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার এমন অনেক গল্প হয়ত পাঠকের জানা আছে। সেদিক থেকে মিতালী চাকমাকে নিয়ে কিছু লেখার কোন প্রয়োজন ছিল না। তবে, তার জীবনের ক্যনাভাসে কিছু দুর্জনের আঁচড়ের বিভীষিকা এবং তৎপ্রেক্ষিতে আমাদের সমাজের প্রতিক্রিয়ার অসঙ্গতির উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়া নিতান্তই অমানবিক বিবেচিত হওয়ার কারণেই এই লেখার অবতারনা করা হয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং এর পরেই মিতালী চাকমার ঘটনাবলী আলোচিত হতে থাকে। বিভিন্ন সুত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যাবলী থেকে তার অপহরনের ঘটনার পরিস্কার একটা চিত্র পাওয়া যায়।

আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়ার আহবান উপেক্ষা করায় ১৭ আগস্ট ২০১৮ তারিখে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। এর পরে তাকে আটকে রেখেই বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। সে রাজী না হলে, তাকে স্থানীয় দুই নেতার হাতে তুলে দেয়া হলে, তার প্রতি চালানো শুরু হয় অবর্ণনীয় শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের ষ্টীম রোলার।

তার বিভীষিকাময় জীবনের একাংশ কিছুটা হলেও উঠে এসেছে, তার কান্নামিশ্রিত কন্ঠে,
“তাদেরকে বলাবলি করতে শুনেছি যে, আমাকে গর্ভবতী না করলে আমি হয়তো ইউপিডিএফ এ যোগ দিতে রাজী হবো না। এমতাবস্থায় গত ৩০/৮/২০১৮ তারিখ হইতে ১৯/১১/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত ইউপিডিএফ কর্মীরা আমাকে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার রেপ করে। ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর কর্মীদের পাশবিক নির্যাতনে আমি শারীরিক ও মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। বেশ কয়েকবার আত্নহত্যার চেষ্টা করেও করতে পারি নাই।"

তার কাছ থেকে আরো জানা যায় যে, তাকে সব সময় দুইজন অস্ত্রসহ পাহারা দিয়ে রাখত, যেন সে পালাতে না পারে। তবে, যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে সেনাবাহিনীর এক টহল দলের আনাগোনা টের পেয়ে অস্ত্রধারীরা সরে পড়ে। এই সুযোগে, সে টহল দলের কাছে এসে তার দুর্দশার কথা জানালে, তারা তাকে এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। প্রয়োজনীয় ডাক্তারী পরীক্ষা শেষ হলেও প্রানভয়ে সে এখন বাড়ীতে ফিরতে পারেনি। সে এখন চিন্তিত আছে এই ভয়ে যে, তার বাবা-মাকে এই সন্ত্রাসীরা মেরে ফেলবে। তার সাথে আরো দুই জন নারী বন্দি ছিল, তাদেরকে উদ্ধারের আবেদনও সে জানিয়েছে।

ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর পক্ষ থেকে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবী করা হয়েছে যে, তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যেই এমন পরিকল্পিত নাটক সাজানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন দাবীর সপক্ষে বেশ কিছু প্রচারণাও লক্ষ্য করা গেছে।

এক চাকমা নারীকে কোনো বাঙ্গালী কতৃক ধর্ষণের শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতেই কি পরিমাণ প্রতিবাদ হতে পারে – সেটা বলার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ, এমন প্রতিবাদ মিছিল ঢাকার শাহবাগ ছাড়াও চট্রগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। আর যদি কোনোভাবে একটা ধর্ষণের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে আঙ্গুল তোলা যায়, তাহলে কি লঙ্গাকান্ড ঘটবে – সেটা বলাই বাহুল্য। এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে অপরাধীর শাস্তি দাবী করে আন্দোলন বা নারী নির্যাতনের প্রতিবাদের যাবতীয় পদ্ধতি প্রয়োগে কখনো পিছপা হননি, এমনকি দ্বিধা করেননি– এমন হৃদয়বান মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

অথচ, নারীর প্রতি সংবেদনশীল এই মানুষগুলোই আবার একদম চুপ মেরে যান, যদি ধর্ষক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ হয়, বা অবাঙ্গালী কেউ হয়। তেমনটি ঘটে থাকলে, অনেক সময় আবার অপপ্রচার চালানো হয় ঘটনার দায় বাঙ্গালী বা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেস্টায়। এক বছরের মধ্যেই সংঘঠিত মাত্র দু’টি ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে সামনে উপস্থাপন করে আমাদের সমাজের কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্যের পাশাপাশি প্রতিক্রিয়ার অসঙ্গতির এই চিত্র পরিস্কারভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

এই বছরের জানুয়ারীতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির দুই মারমা বোনের ঘটনা নিয়ে কী না করা হয়েছে! দেশের বড় বড় শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও মানব বন্ধন, শাহবাগে সেনাবাহিনীকে বিদ্রুপ করে আয়োজিত পথনাটক, ব্লগ ও সংবাদপত্রে নারীবাদীদের লেখালেখি, মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি, উদবিগ্ন সুশীল সমাজের বিবৃতি, সুপ্রিম কোর্টে কিছু দেশবরণ্য ব্যক্তির দৌড়াদৌড়ি, ঢাকার বুকে মশাল মিছিল, চাকমা সার্কেল চীফের পত্নীর আবেগঘন মিথ্যাচার ইত্যাদি ইত্যাদির বাইরে আরও অনেক কিছুই ছিল। অথচ, ঐ সময়ে আবেগে আপ্লূত হওয়া ব্যক্তিবর্গের অনেকেই আজো জানে না যে এক মিথ্যে অভিযোগকে কেন্দ্র করে কিভাবে তাদের অনুভূতিকে ব্লাকমেইল করা হয়েছে।

বেশী দুরের কোথাও নয়, আর বেশিদিন আগের কথাও নয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রাঙামাটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এক নারী নিজের মুখে যা শুনিয়েছে, তা অনেকটাই ভৌতিক সিনেমার কাহিনী বলে মনে হচ্ছিল। ভিন্ন সম্প্রদায়ের একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করায় জোসনা চাকমাকে দুই মাস হাতে-পায়ে শিকল বেঁধে অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন করেছিল ইউপিডিএফ। ১৬ জানুয়ারী ২০১৭ এর মধ্যরাতে কোনমতে পালিয়ে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করে নিকটস্থ সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। এরপর সেনাবাহিনী তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তিন দিন পরে সংবাদ সম্মেলনের সময় বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিল হতভাগা এই নারী। সংবাদ সম্মেলনে সে নিজেই জানায় যে, তার স্বামী বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হলেও শুধুমাত্র বাঙালী বড়ুয়া সম্প্রদায়ের একজনকে বিয়ে করার অপরাধেই এই নির্মম ও লোমহর্ষক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল তাকে।

একজন নির্যাতিতা নারী প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে তার জীবনের উপর বয়ে যাওয়া সুনামীর দুর্বিষহ যন্ত্রণা জানান দিলেও এর প্রতিবাদের আওয়াজ দেশের কোনো দিক থেকেই শোনা যায়নি। এমনকি, কোনো নারীবাদী সংগঠন বা মানবাধিকার কমিশন যাদের জেলা অফিস এই রাঙ্গামাটিতেই অবস্থিত – প্রতিবাদতো দুরের কথা এমন ভয়াবহ এবং গাঁ শিউরে উঠা ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্যে হলেও নির্যাতিতার সাথে কথা বলার প্রয়োজনও অনুভব করেননি। আমাদের সমাজের যে মহিয়সী নারীগণ আর কিছু না হলেও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অন্তত কলম দিয়ে যুদ্ধ করেন, তাদের মধ্য হতেও কেউ এই হতভাগ্যার কান্নায় নিদেনপক্ষে সহমর্মিতা পর্যন্ত ব্যক্ত করেননি। রাস্তায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে মানববন্ধনেও দেখা যায়নি কাউকে।

কেউ কি একবার ভেবে দেখেছেন যে, নির্যাতনের ভয়াবহতার পারদ কোন উচ্চতায় উঠলে একজন নারী ধর্ষণের মতো অসম্মানের বিষয় প্রকাশ্যে উচ্চারণ করে! তাও আবার পার্বত্য চট্রগ্রামে ! যেখানে হত্যার বিচার পর্যন্ত চাইতে ভয় পায় সাধারণ মানুষ। অথচ, অতি সাম্প্রতিক এই মিতালী চাকমার ঘটনার প্রতিবাদের কোন ধরণের লক্ষণ চোখে পড়ছে না কোথাও – না পার্বত্য চট্রগ্রামে, না দেশের অন্য কোন স্থানে। নারীর প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে তৃতীয় পক্ষের শুধুমাত্র অভিযোগেই যারা এর আগে বহূবার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যেভাবে সম্ভব প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন, তারা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এই ঘটনায় কঠোর নিরবতা পালন করছেন। যদিও এখানে নির্যাতিতা নিজেই ভয়াবহ নির্যাতনের কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন । জোসনা চাকমার ঘটনাতেও এর ব্যতিক্রম কিছু ছিল না।

নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা আর পাহাড়ের নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকল সময়ে যারা উচ্চকিত, সেই সুলতানা কামাল, বাঞ্চিতা চাকমা, ইয়ান ইয়ান প্রমুখদের মিতালী চাকমা’র জন্যে কোন ধরনের পদক্ষেপ যেমন চোখে পড়ছে না, তেমনি তাদের এই হতভাগার জন্যে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ আর উতকন্ঠা আছে বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে না। একজন নারী হিসেবে এবং বিশেষতঃ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশবাসীর সামনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ইমেজের কথা মাথায় রেখে নিতান্ত দায়সারা গোছের হলেও অন্তত ক্ষীণ কন্ঠে কিছু একটা বলা যেত – অথচ তেমন কিছুও করা হচ্ছে না। একই ধরনের নির্লিপ্ততা প্রকাশ পেয়েছে সি এইচ টি কমিশনের আচরনে – যারা কিনা পার্বত্য চট্রগ্রামের ইস্যুতে নিজেদের সম্পৃক্ততা প্রমানের জন্যে এর আগে অসংখ্যবার নিদেনপক্ষে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।

পার্বত্য চট্রগ্রামের সংঘটিত ঘটনাবলীর প্রতি আমাদের দেশের কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য কতটা চরম হতে পারে, তার সর্বশেষ উদাহরণ মিতালী চাকমা’র ঘটনাবলী। যারা এই ধরণের ঘটনায় প্রতিবাদ করেন বা ইতিপূর্বে করেছিলেন – তাদের কাউকেই এখন আর দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য আমাদের সমাজের কিছু লোকের এমন আপাতদৃষ্টিতে রহস্যজনক কিন্তু বাস্তবে দ্বিমুখী আচরণ একেবারে আনকোরা কিছু নয়। গুইমারার উমাচিং মারমা (মার্চ, ২০১৫), দীঘিনালার দীপা ত্রিপুরা ( জুন, ২০১৫), বিলাইছড়ির আয়না চাকমা ( মে, ২০১৬), নানিয়ারচরের শুবলপুরি চাকমা (জুলাই, ২০১৭), পানছড়ির নয়না ত্রিপুরা ওরফে ফাতেমা বেগম ( সেপ্টেম্বর, ২০১৭), দীঘিনালার আয়না চাকমা ওরফে রিমা আক্তার (অক্টোবর, ২০১৭) এবং আরো অনেকের ঘটনার ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা এমন ঘৃন্য এবং লজ্জাজনকই ছিল।

অতীতের ঘটনাবলীর আলোকে মিতালী চাকমার উপর যে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে তার প্রতিবাদ বা বিচারের দাবী করে হয়ত তেমন কেউ সরব হবেন না। কারণ, সচরাচর এই ধরণের ঘটনায় দেশের মূল জনগোষ্ঠীর যারা প্রতিবাদ করেন - অদ্যবধি তারা অপরাধী দেখে প্রতিবাদ করেছেন, অপরাধ বিবেচনা করে প্রতিবাদ করেননি। অপরপক্ষে, পাহাড়ের নেতৃবৃন্দের “প্রতিবাদের চর্চাটা অনেকটা এরকম যে, স্বগোত্রের দুবৃত্তরা যাই করুক না কেন, প্রতিবাদ করা যাবে না; কারণ প্রতিবাদ অপরাধ অনুযায়ী হবে না, অপরাধী অথবা নির্যাতিতার পরিচয় অনুযায়ী হবে।"

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন রয়ে যায়, সাধারণ জুম্ম, যাদের কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, তারা কি মিতালী চাকমার কথা বিশ্বাস করছে? কারণ, তারা তো এখন আর বোকা নেই, অনেক বুদ্ধিমান। পার্বত্য চট্রগ্রামের যে কোন আন্দোলনে নারীরা এখনের পুরুষের ঢাল হিসেবে সামনে থাকে। তাদের হাতে থাকে লম্বা লাঠি, আর নারীর ঢালে আশ্রয় নেয়া পালোয়ানের হাতে থাকে ছোট্ট গুলতি। বছরের যে কোন সময়ে, যে কোন উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিছিল বা প্রতিবাদে এখন নারীদের সরব উপস্থিতি নজর এড়ানোর উপায় নেই।

তবে বলাই বাহুল্য, ৩০ মে ২০১৮ তারিখে স্বজাতির হাতে মহালছড়ির তিনজন মারমা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরেও যখন কেউ কোন প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেনি – তখন বুঝতে বাকী থাকে না যে, পাহাড়ে নারীরা এখনো যতটা না মানুষ হিসেবে স্বীকৃত, তার চেয়ে অনেক বেশী কার্যোদ্ধারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মোক্ষম অস্ত্র আর ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের সবচেয়ে পছন্দের হাতিয়ার হিসেবেই তাদেরকে শ্রেয় বিবেচনা করা হয়।

তাই, অবধারিতভাবেই প্রশ্নের উদ্রেক হয়, মিতালী চাকমা কি নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে আমাদের ‘সমাজের কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্যের পাশাপাশি প্রতিক্রিয়ার অসঙ্গতির’ শুধুমাত্র আরেকটি উদাহরণ হিসেবেই থেকে যাবে? নাকি, প্রতিটি জুম্ম নারীরও যে একজন মানুষ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার অধিকার থাকতে পারে – তা অন্যরা বিশেষতঃ নারীরা অনুধাবন করবেন ? এই ঘটনায় এমন সৎসাহস কি দেখানোর সুযোগ আছে যে, জুম্ম নারীরা ভবিষ্যতে আর কখনো কারো ‘কার্যোদ্ধারের মাধ্যম’ কিংবা ‘স্বার্থ হাসিলের সবচেয়ে পছন্দের হাতিয়ার’ অথবা ‘প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মোক্ষম অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে চাইবে না ?

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০১

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমাকে গর্ভবতী না করলে আমি হয়তো ইউপিডিএফ এ যোগ দিতে রাজী হবো না। এমতাবস্থায় গত ৩০/৮/২০১৮ তারিখ হইতে ১৯/১১/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত ইউপিডিএফ কর্মীরা আমাকে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার রেপ করে। ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর কর্মীদের পাশবিক নির্যাতনে আমি শারীরিক ও মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। বেশ কয়েকবার আত্নহত্যার চেষ্টা করেও করতে পারি নাই।"
...............................................................................................
এমন পাশবিক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২০

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমিও চাই এমন পাশবিকতার দৃস্টান্তমুলক শাস্তি দেওয়া হোক।

আফসোস ! যাদের চাওয়াতে কিছু পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ সৃস্টি হতে পারে - তাদের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না।

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৪

তাজেরুল ইসলাম স্বাধীন বলেছেন: প্রথমত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে হবে।
অতপর অসহায় দের জন্য নিজে থেকে কাজ করতে হবে।
একটা পরিবর্তন প্রয়োজন। সরকার একা তা পারবে বলে মমে হয় না।
সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক শক্তিকে এরকম একটি জনকল্যানকর কাজে নিয়োজিত করতে হবে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৩

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত পোষন করছি।
সবাই এগিয়ে এলে, সরকারের পক্ষেও অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ভাই, আপনার উপরের আর নিচের মন্তব্য দুইটি ডিলিট করে দিতে পারেন। আমি শিওর, ইন্টারনেট প্রব্লেমের কারনে ডাবল পোস্ট হয়ে গেছে।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চারদিক থেকে আওয়াজ উঠুক, এমন পাশবিক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০০

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। আমিও তাই চাই।
আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় থেকে যতটুকু সম্ভব চেস্টা করলে, অনেক কিছুই সম্ভব।

অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৭

নীল আকাশ বলেছেন: আমাকে গর্ভবতী না করলে আমি হয়তো ইউপিডিএফ এ যোগ দিতে রাজী হবো না। এমতাবস্থায় গত ৩০/৮/২০১৮ তারিখ হইতে ১৯/১১/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত ইউপিডিএফ কর্মীরা আমাকে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার রেপ করে। ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর কর্মীদের পাশবিক নির্যাতনে আমি শারীরিক ও মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। বেশ কয়েকবার আত্নহত্যার চেষ্টা করেও করতে পারি নাই।"
উপরের লাইন গুলিই বলে দেয় এদের মন মানসিকতা কত নীচু পর্যায়ে পৌছিয়েছে.......
ভালো লিখেছেন। চমৎকার।
শুভ কামনা রইল!

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০০

মাহের ইসলাম বলেছেন:
একটা ছোট্ট লেখায় অনেক কিছু কাভার করা যায় না। আর আমার নিজের ভাষার দখলের সীমাবদ্ধতাতো আছেই।
তাই, ভয়াবহতা ব্যাপকতা বুঝানোর জন্য যত উদাহরন বা বিস্তারিত লেখার দরকার ছিল - সম্ভব হয়নি। কিছু মানুষের মানসিকতা কিরকম নিচু সেটার জন্যে হয়ত সৈকত ভদ্রের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার উদাহরন টানা যেতে পারে। ঢাকা রিপোরটারস ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানিয়েছিলেন যে, বাঙ্গালী বিয়ে করার অপরাধে তার চাকমা স্ত্রীকে নিলামে তোলা হবে।
কল্পনা করা যায় !!

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাকে উতসাহিত করার জন্যে।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

মায়াবী ঘাতক বলেছেন: এসব পাশবিক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য আমাদের সকলেরই একযোগে কাজ করা উচিৎ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০১

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার সাথে সহমত পোষন করছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবে

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: কিচ্ছু হবে না।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫

মাহের ইসলাম বলেছেন: জোর গলায় আপনার সাথে দ্বিমত পোষন করার সাহস পাচ্ছি না।

তবে, অনেক সময় কিন্তু আমরা চেস্টার কাংখিত ফল পেতে পারি, যদি যথাযথভাবে সবাই মিলে চেস্টা করি।
হয়ত আপনার কথাই ঠিক বলে মেনে নেবো, একদিন। তারপরেও, চেস্টা করতে তো দোষ নেই। যেমন, আমার চেস্টার ফলে হলো আপনাকে পাঠক হিসেবে পেয়েছি।
তেমনিভাবে সবার চেস্টাতে মঙ্গলজনক কিছু না কিছু কিন্তু পাওয়া যেতেই পারে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৭| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তথাকথিক সুশীল গং দলান্ধ, বর্ণান্ধ. স্বার্থান্ধ!

রিমোটে চাপ পড়লেই তারা চিৎকার শুরু করে, অন্য সকল অন্যায়ে বোবা কালা হয়ে থাকে।
ধিক তাদের!

এসব পাশবিক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, পরিস্কারভাবে সঠিক কথাটি বলার জন্যে।
কিছু মানুষ সঠিক কথা বলার সাহস পর্যন্ত করতে পারে না, কেমন যেন দ্বিধায় ভোগে।

আপনার মতের সাথে সহমত পোষণ করে আমিও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

শুভ কামনা রইল।

৮| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৯

করুণাধারা বলেছেন: আপনার পোস্টগুলো আমি নিয়মিত পড়ি, যদিও সব সময় মন্তব্য করা হয় না। আপনি যে বিষয় নিয়ে লিখেছেন তাও ভালো, আপনার ভাষার দখলও ভালো। লিখতে থাকুন এভাবে।

প্রার্থনা করি এমন বর্বর ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, আর এবারকার ঘটনার বিচার হয়।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার সুন্দর এবং উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যে অনুপ্রানিতবোধ করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আমিও প্রার্থনা করি যেন পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের নারীরাই নিরাপদ থাকুক - ভিক্টিমের পরিচয় বিবেচনায় বাঙ্গালী আর পাহাড়ীর মধ্যে কোন ব্যবধান থাকতে পারে না। অপরাধী সে পাহাড়ি হোক আর বাঙালী হোক - উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।

আশাকরি অন্তত এবারকার ঘটনায় অবশ্যই এবং এখন হতে সকল অপরাধীকে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।

৯| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: অপরাধী যেই হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

মাহের ইসলাম বলেছেন: সহমত জ্ঞাপন করছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

১০| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: একটা ভয়ঙ্কর প্রবণতা । কি করে সমাজ যে এই কলুষতা থেকে মুক্তি পাবে । লেখাটা ভালো হয়েছে, কিন্তু ঘটনাটাই শিউরে উঠলাম।


শুভকামনা প্রিয় মাহেরভাইকে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪১

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে ভালো লাগলো, দাদা।
সবচেয়ে বেশী ভয়ংকর দিক হলো এই যে, এই প্রবণতা থামার কোন লক্ষণ নেই।
পার্বত্য চট্রগ্রামে পাহাড়ি বা বাঙ্গালী উভয়েই ভুক্তভোগী। মূলত, সাধারণ আর নিরীহ জনসাধারণের দুর্দশাই সবচেয়ে বেশী।

শুভ কামনা রইল, ভালো থাকবেন।

১১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়লাম। কিন্তু আমি কোনো মন্তব্য করবো না।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪২

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে খুশী হয়েছি।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আপনাকে পাঠক হিসেবে পেয়ে গর্বিত বোধ করি।

ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।

১২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
উন্নয়নের এই যোয়ারে নারী আজও অন্ধকারে।

এমন বর্বরতার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১১

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষন করছি।

অনেক অনেক ধন্যবাদ, শুভ কামনা রইল।

১৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৩

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: এই ঘটনার বিচার চাই

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১২

মাহের ইসলাম বলেছেন: আমিও এই ঘটনার বিচার চাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.