নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০১

প্রথম খন্ড পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নের অগ্রগতিঃ প্রচারণা ও বাস্তবতা

পাঠককুলের সুবিধার্থে, পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নের কয়েকটি বিশেষ দিক নিচের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছেঃ
১। ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে।
২। ১৯৯৯ সালের ৭ মে পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
৩। পার্বত্য চট্রগ্রামের তিনটি জেলাতেই ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে এবং জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীনে ২৮ – ৩০টি বিষয় হস্তান্তর করা হয়েছে।
৪। ১৯৯৯ সালে ভুমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পাহাড়িদের দাবীর প্রেক্ষিতে ভুমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এ সংশোধনী এনে ভুমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন ২০১৬ প্রণয়ন করা হয়েছে।
৫। ভারত হতে প্রত্যাগত ১২,২২৩ টি উপজাতি শরণার্থী পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
৬। শান্তি বাহিনীর সদস্যদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।
৭। ৭১৫ জন শান্তি বাহিনী সদস্যকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
৮। ২৫২৪ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৯৯৯টি মামলার তালিকার মধ্যে ৮৮৪টি মামলা যাচাই-বাছাই এবং তন্মধ্যে ৭২০টি মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চলমান।
৯। একটি পদাতিক ব্রিগেডসহ ২৪০টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে।
১০। ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটি’ গঠন করা হয়েছে, যার দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং সংসদ উপনেতা ।
১১। পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক ‘ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
১২। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে সরকার উপজাতিদের নিজস্ব ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ‘সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল ২০১০’ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিউট’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা সংরক্ষনের অভিপ্রায়ে মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামুল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।
১৩। সরকারী চাকুরিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নির্ধারিত কোটা/অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে।
১৪। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্যে কোটা সংরক্ষন করা হচ্ছে।
১৫। পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় পদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্য হতে প্রতিনিধি নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
১৬। পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ‘সম্প্রদায়ের একজন মাননীয় সংসদ সদস্যকে প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
১৭। ১৯৯৮ সালের পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।
১৮। ১৯৭৬ সালে জারীকৃত ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ অধ্যাদেশ বাতিল করে ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪ ‘ জাতীয় সংসদে পাশ করা হয়েছে।
১৯। ২০১৮ সালে ঢাকার বেইলী রোডে ১.৯৪ একর জমিতে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতিদের জন্যে ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়ছে।

পার্বত্য চট্রগ্রামের ১৬ লাখ অধিবাসীর প্রায় অর্ধেক বাঙালি হলেও উপরোল্লিখিত তালিকার সুবিধাভোগী প্রায় শতভাগই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অন্তর্গত। এছাড়াও পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর হতে বিগত ২১ বছরে পার্বত্য অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে – তার সুফল কারা ভোগ করছে সেটা বলাই বাহুল্য। পার্বত্য চট্রগ্রামের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের একটা খণ্ড চিত্র নিচে তুলে ধরা হলোঃ

১। পার্বত্য চুক্তির পূর্বে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৫০.৫৭ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৯১৫.৮৩ কোটি টাকা।
২। চুক্তি স্বাক্ষরের পরে পার্বত্য চট্রগ্রামে ১৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ কোটার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছর ৩২৫ জন উপজাতি ছাত্রছাত্রী বিশেষ কোটা সুবিধা ভোগ করছে।
৩। সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রেও উপজাতিদের জন্যে বিশেষ কোটা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং মন্ত্রনালয়ে কর্মকর্তা – কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় চার শত উপজাতি চাকুরীতে নিয়োজিত রয়েছে।
৪। পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ৫১% উপজাতি আর ৪৯% বাঙালি। এতদসত্তেও, শিক্ষা বৃত্তির ৭৭% বরাদ্দ করা হয়েছে উপজাতি শিক্ষার্থীদের জন্যে। অথচ, বাঙালীদের জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৩% শিক্ষা বৃত্তি।
৫। পার্বত্য চুক্তির পূর্বে পার্বত্য চট্রগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল না। চুক্তির পরে ইতোমধ্যেই তিন জেলায় ৫০৭ কিমি (৩৩কেভি), ৯৮৩ কিমি (১১কেভি) এবং ১,৩৫৫ কিমি (৪কেভি) বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। উপরোন্ত, তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরন উন্নয়নের জন্যে ৮৭৯.৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
৬। জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয়, এমন প্রত্যন্ত এলাকায় ৫০৫০টি পরিবারকে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের এক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। অথচ, পার্বত্য চুক্তির পূর্বে পার্বত্য চট্রগ্রামের কোথাও সৌর বিদ্যুৎ সুবিধাদি ছিল না।
৭। মাত্র ২০০ কিমি পাকা রাস্তা ছিল সমগ্র পার্বত্য চট্রগ্রামে, শান্তি চুক্তির পূর্বে। চুক্তির পরে ইতোমধ্যেই প্রচুর ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ করা ছাড়াও ১৫৩২কিমি পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ১০৫কিমি পাকা রাস্তা নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ৮৬০কিমি রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ব্রিজের মধ্যে নির্মিত থানচি ব্রিজ এবং নির্মাণাধীন নানিয়ারচর ব্রিজ অন্যতম।
৮। শান্তি চুক্তির পরে টেলিযোগাযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সুবিধাদির আওতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
৯। তিন পার্বত্য জেলায় কৃষি ও কৃষি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যে বিভিন্ন স্কিমের আওতায় ২৯৯ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
১০। চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় স্থানীয়দের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে চুক্তি পরবর্তী সময়ে ১৩০টির অধিক দেশি ও বিদেশি এনজিও বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তন্মধ্যে ইউ এন ডি পি এককভাবে বিগত ১০ বছরে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এছাড়াও ৭ বছর মেয়াদি দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

১১। পার্বত্য চট্রগ্রামে উপজাতিরা প্রভূত আর্থিক সুবিধাদি ভোগ করছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তুলনামূলক ভাবে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। যেমনঃ
ক। উপজাতিদের আর্থিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ব্যয় ২ লাখ টাকার মধ্যে হলে ১০০% উপজাতিদের জন্যে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ২ লাখ টাকার বেশী হলে ১০% উপজাতিদের জন্যে সংরক্ষিত আর ৯০% উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়।
খ। উপজাতি জনগোষ্ঠীর আয়কর দিতে হয় না। তাই, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার প্রকল্পে তারা বাঙালীদের তুলনায় কম দরে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
গ। পার্বত্য চট্রগ্রামে ব্যাংক ঋনের ক্ষেত্রে উপজাতিরা ৫% আর বাঙালিরা ১৬% হারে সুদ প্রদান করে।
ঘ। বিশেষ অঞ্চল এবং অনগ্রসর অঞ্চল হিসেবে যেসব সুযোগ সুবিধা স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে, তার পুরোটাই উপজাতিরা ভোগ করে।

১২। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় উপজাতিদের বিভিন্ন ধরণের সুবিধাদি নিয়মিতভাবে প্রদান করা হচ্ছে। যেমনঃ
ক। ৪১,৮৪৭ জনকে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
খ। ২২,৪১০ জনকে বিধবা ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
গ। ৭,৩১১ জনকে প্রতিবন্ধী ভাতা এবং ৯৮১ জনকে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
ঘ। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ৫২,১৭২ জনের দারিদ্র বিমোচন তথা জীবন মান উন্নয়ন করা হয়েছে।
ঙ। ৬২৩টি পরিবারকের পুনর্বাসনের জন্যে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

১৩। চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্রগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিগত বছরগুলোতে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটছে। এতে স্থানীয় জনসাধারনের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সক্ষমতা বাড়ছে এবং জীবনমানের দ্রুত সার্বিক উন্নয়ন ঘটছে।

চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি কিংবা শতভাগ বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্যে কার দায় বেশী - তা নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু এই আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফলের বড় ভোক্তা যে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাজের সদস্যগন - সেটা নিয়ে তো দ্বিমত পোষন করার কোন উপায় নেই।

১৯৯৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম প্রসঙ্গ’ বইয়ে শ্রদ্ধেয় সালাম আজাদ এক কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য উল্লেখ করেছেন। “সম্প্রতি বান্দরবানের এই জনসভায় সন্তু লারমা পাহাড়ি জনগণকে পুনরায় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে আহবান জানিয়ছেন।“ (আজাদ, ১৯৯৯, p. ১৯)। পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের মাত্র দুই বছরের মাথায় চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে তৎকালীন সরকারের আন্তরিকতার অভাবের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন সন্তু লারমা। অথচ, তখনো চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকার ক্ষমতাসীন ছিল। সন্তু লারমার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। অথচ, তিনি চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যেই আন্দোলনের প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন।

মনীষ দেওয়ানের নাম কারো কাছে অপরিচিত মনে হলে, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ তিনি ছিলেন শান্তিবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট মাত্র। অস্ত্রসমর্পণের প্রেক্ষাপটে শ্রদ্ধেয় সালাম আজাদের জিজ্ঞাসার উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন, “ চুক্তির সব শর্ত বাস্তবায়নের জন্য কমপক্ষে আট/দশ বছর লাগবে”। (আজাদ, শান্তিবাহিনী ও শান্তিচুক্তি, ২০১৩, পৃ. ১১)। শান্তিবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট যেখানে বুঝে যে, এই চুক্তি বাস্তবায়নে সময়ের প্রয়োজন। সেখানে শান্তিবাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা সন্তু লারমা যখন চুক্তি স্বাক্ষরের বছর খানেকের মাথায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহবান জানান – তখন চুক্তির প্রতি তাদের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হওয়াই স্বাভাবিক।

এই সন্দেহ দৃঢ়তা পায় যখন দেখা যায় যে, শান্তিবাহিনীর অপেক্ষাকৃত তরুন ও শিক্ষিত অংশ চুক্তির বিরোধিতা করে অস্ত্র সমর্পণের অনুষ্ঠানে খোদ খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামেই ব্যানার উচিয়ে ধরে। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এবং পাহাড়ি গণ পরিষদ এর নেতা কর্মীরা যখন প্রকাশ্যে চুক্তির বিরোধিতা করতে শুরু করে। অথচ, এরা কিছুদিন আগেও শান্তি বাহিনীর অন্য সকলের সাথেই একত্রে সংগ্রামে নিয়োজিত ছিল।

পার্বত্য চট্রগ্রামে সশস্ত্র দলের অবস্থান ও কর্মকান্ড সর্বজনবিদীত। চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা, গুম, ধর্ষণ ইত্যাদি পার্বত্য চট্রগ্রামের নিরীহ জনসাধারনের জীবনে নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই সমস্ত অনাচার, অত্যাচার এবং আইন-শৃংখলা পরিপন্থী কাজের সাথে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই উপজাতিরাই জড়িত। এরাই, যাদের একাংশ প্রকাশ্য চুক্তির বিরোধিতা করছে, শুরু থেকেই। আর, অন্য অংশ প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও শুরু থেকেই আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে আসছে - যে ঘোষণা প্রতি বছর নবায়ন করা হচ্ছে।

সেই সাথে, পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদের আর্থ-সামাজিক ও জীবন-মান উন্নয়নে এবং চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত উপরে বর্ণিত পদক্ষেপসমূহের বিপরীতে পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সমুহের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বিবেচনার আবশ্যকীয়তা স্মরন করিয়ে দেয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কার্যকলাপের বিপরীতে সরকার একতরফাভাবে চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে – যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ঢাকার বুকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতৃক ‘পার্বত্য চট্রগ্রাম কমপ্লেক্স‘ উদ্বোধন। অথচ অপরপক্ষে অনুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বরং অস্ত্রের ঝনঝনানি ক্রমশ বাড়ছে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর প্রচেষ্টা প্রতিনয়তই চোখে পড়ছে। সরকার যেখানে চেষ্টা করছে সাধারণ উপজাতির ভাগ্যোন্নয়নের, সেখানে আরেক পক্ষ সর্বদাই তাদের দুর্দশা বাড়িয়ে চলছে। এমনকি, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সমুহের সুফল ভোগ করা সত্ত্বেও প্রতি বছরই তোতাপাখির মত বুলি আওরায় যে, চুক্তি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

এমতাবস্থায়, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার মাত্রার বিপরীতে কিছু উপজাতীয় দলের আন্তরিকতা এবং চুক্তি শতভাগ বাস্তবায়নের দেরীর পিছনে কার দায় কত বেশী বা কম সেটা পাঠককুলের সুবিবেচনার হাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

তথ্যসুত্রঃ
১। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির সংবাদ সম্মেলন, ২৯ নভেম্বর ২০১৮, হোটেল সুন্দরবন, ঢাকা।
২। পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, (২০১৭), পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতিঃ শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের দুই দশক, ঢাকা, ইন্সটিউট অব কনফ্লিক্ট ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ।
৩। পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি, (২০১৭), পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ২ ডিসেম্বর ২০১৭, রাঙামাটি।
৪। সালাম আজাদ, (১৯৯৯), পার্বত্য চট্রগ্রাম প্রসঙ্গ, ঢাকা, আফসার ব্রাদার্স।
৫। সালাম আজাদ, (২০১৩), শান্তি বাহিনী ও শান্তিচুক্তি, ঢাকা, আফসার ব্রাদার্স।
৬। মোহাম্মদ সা’দাত আলী (সম্পাদনায়), (১৯৯৮), পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তি, ঢাকা, বনলতা প্রকাশনী।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: এখানে শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকা আছে।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩১

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
আপনার ছবি তোলা শেষ হবে কবে?

আপনার মতের সাথে আমি শতভাগ একমত।

আরেকটু কথা না বললেই নয়। পার্বত্য চট্রগ্রাম সমস্যার বীজ রোপণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, এই গাছটির ফল পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। অথচ, আমরা এই গাছের বীজ বপন থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত কোন ভুমিকাতেই ছিলাম না। পরবর্তীতে, বিভিন্ন সরকার যার যার দৃষ্টি ভঙ্গীতে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছে।
তবে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘাত বন্ধে এই স্থায়ী সমাধানের পথ বেছে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩০

রসায়ন বলেছেন: উপজাতীয়দের ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গীরা ।
দরকারী পোস্ট । প্লাস ।

তবে ভাই বানানটা চট্রগ্রাম নয়, চট্টগ্রাম হবে ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনার মতামতের সাথে দ্বিমত পোষন করার উপায় নেই, সম্পূর্ণ একমত।
আসলেই, গুটিকয়েক লোকের ব্যক্তিস্বার্থ আর অদুরদর্শীতা সাধারণ নিরীহ পাহাড়িদের দুর্দশা বাড়িয়ে চলছে, দিনের পর দিন।

বানানের ব্যাপারে, ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে শুধরে দেয়ার জন্যে। ভবিষ্যতে আরো যত্নবান হওয়ার চেষ্টা করব।

ভালো থাকবেন।

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৪

নজসু বলেছেন:


ধন্যবাদ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কষ্ট করে এই বোরিং লেখাটা পড়ার জন্যে এবং মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করার জন্যে।

ভালো থাকবেন।

৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অত্যন্ত পরিশ্রমী তথ্য বহুল পোস্ট। আপনি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।পোস্ট থেকে বুঝলাম সরকার অত্যন্ত সদর্থক ভাবেই উপজাতি জনগোষ্ঠীদের উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে যেটা অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। তবুও কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি উপজাতীদেরকে নিজ অনুকূলে বিচ্ছিন্নতাবাদে মদত দিয়ে দেশের মেইনস্ট্রিম থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। অশুভ শক্তির পতন হবেই - কামনা করি। যাইহোক মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকার জন্য প্রশংসা করতেই হবে।

শুভকামনা জানবেন ।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে খুশী হলাম। আশাকরি ভালো আছেন।

আপনি ঠিকই ধরেছেন।
বাস্তবে, নিরীহ সাধারণ পাহাড়িরা আজ জিম্মি হয়ে আছে কিছু স্বার্থপর নেতার লোভের কাছে।
সরকারের আন্তরিকতা অনেক ক্ষেত্রেই চাঁপা পরে যাচ্ছে, তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আর অপপ্রচারের ব্যাপকতায়।
আমরা আশাবাদি, এদেশের প্রতিটি মানুষ একদিন না একদিন এই বিচ্ছিনতাবাদী আর সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত হবেই।

ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.