নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাহমুদকলী

সবাই ভাল থাকুন এবং অন্যকে ভাল থাকতে িদন।

মাহমুদকলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিথ্যা বলার অধিকার- দায়ী কারা?

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:২৩

মিথ্যা বলা মহাপাপ- ছোটবেলায় এই নীতি বাক্যটি শোনেননি বা হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য বারবার লিখতে হয়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। বিশেষ করে আমাদের বয়সী যাঁরা সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন, তাঁদের এই বাক্যটি কমপক্ষে হাজারবার শুনতে হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পাড়ি দেওয়ার আগে। আজ আমার বয়স ৪০ হওয়ার আগেই 'মিথ্যা বলার অধিকার' শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা পড়তে হলো। লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, যিনি স্বনামে সবার কাছে পরিচিত। জাতি বিভিন্ন সংকটে যাঁদের দিকনির্দেশনা নিয়ে থাকে, তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন জাফর ইকবাল স্যার।

চমৎকার একটি বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। আমরা বাকস্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা তা বলে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। সত্য-মিথ্যার বালাই নেই। কোনো কথা কিংবা লেখা যখন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখনো অনেক ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয় না। রাজনৈতিক দল কিংবা মতবাদের হলুদ চশমা আমাদের অনেকটা অন্ধ করে রেখেছে। এই অন্ধত্ব যখন পেশাজীবীদের ওপর ভর করে তখন জাতির আর কোনো ভরসার জায়গা থাকে না। ইদানীং রাজনৈতিক বক্তব্যে সব কথা যে সত্য হবে না সেটা অনেকটা সবাই মেনে নিয়েছেন। তাই কোনো তর্ক-বিতর্কে যখন কোনো রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের প্রসঙ্গ আসে, তখন তা এড়িয়ে যাওয়া হয় রাজনৈতিক বক্তব্য বলে। অথচ রাজনীতিকদের বক্তব্য-বিবৃতি সবচেয়ে বেশি তথ্যভিত্তিক হওয়া উচিত ছিল। অন্য পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকরা জাতির সামনে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে থাকেন। যেকোনো মিথ্যা তথ্য বা সংবাদ মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রাজনীতিবিদ আর মিডিয়া এক হয়ে যেকোনো মিথ্যাকে জনগণের সামনে সত্যের মতো উপস্থাপনের ক্ষমতা রাখে। একটা মিথ্যা যখন সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে উঠে আসে, তখন তা সত্যে পরিণত হয়। অথবা জনগণকে এটা যে মিথ্যা তা বোঝানো কঠিন হয়ে পড়ে।

হলুদ সাংবাদিকতা ছাড়াও রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে মিথ্যার যে বেসাতি চলছে, যার শিকার হয়ে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মানুষের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে নতুন করে মিথ্যা বলার অধিকার সংযুক্ত করার কথা বলছেন, মূলত মানুষের বিবেককে ধাক্কা দেওয়ার জন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মিথ্যা বলা মহাপাপ- এই নীতিবাক্যের মাধ্যমে যে জাতির বাল্যশিক্ষা শুরু হলো তারা কেন কয়েক দশক পরে আজ মিথ্যা বলার অধিকার চাচ্ছে? এর জন্য কারা দায়ী? জাফর ইকবাল স্যারের মতো গুণী ব্যক্তিরা কী এর দায় এড়াতে পারবেন? অসাম্প্রদায়িক, বহুমত ও পথের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বর্ণিল সমাজ বিনির্মাণের জন্য বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে আমরা আজ স্বাধীন চিন্তা প্রকাশে সংকোচবোধ করছি কেন? দায়ী কারা? এসব বিষয়ে নির্মোহ বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা ব্যতীত আমরা সবাই একসময় নিজ ঘরে পরাধীন হয়ে যাব।

আজকে জামায়াত-হেফাজতসহ ধর্মীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু লিখলে বা বললে অনেক সময় নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আবার সেক্যুলার কারো বিপক্ষে কোনো লেখা বা বক্তব্য গেলে লেখককে বলা হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী।

জাফর ইকবাল স্যারকে ৫ মে যে এসএমএস দেওয়া হয়েছে তা কোনো মস্তিষ্ক বিকৃত মানুষ অথবা কাপুরুষের কাজ হবে। এর তীব্র নিন্দা জানানো সবারই উচিত।

কোনো মানুষ যখন কারো আদর্শ, চিন্তা ও নীতিনৈতিকতার কাছে হেরে যায়, এই আদর্শের বিরুদ্ধে তার পাল্টা কোনো বক্তব্য থাকে না এবং যদি সে কাপুরুষ হয় তখন সে বা তারা আদর্শবাদী মানুষটির মৃত্যুঘণ্টা বাজাতে চায়। তারা চায় দৃশ্যপট থেকে জাফর ইকবাল স্যারের মতো মানুষকে সরিয়ে দিতে। কারণ তারা তাঁকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, পরাজিত হয়েছে। এখন স্যারের লেখা থেকে আমার দেশ পত্রিকার জেলে বন্দি সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি এবং আমি স্যারের বিরুদ্ধে এসএমএস প্রদানকারীর চিন্তার সঙ্গে স্যারের চিন্তার এক আশ্চর্য মিল পেয়েছি। জেলবন্দি মাহমুদুর রহমানের পক্ষে ১৫ জন সম্পাদক বিবৃতি দেওয়ায় স্যার বেজায় নাখোশ হয়েছেন। আমার জানা মতে, এই সম্পাদকদের বেশির ভাগই চিন্তাচেতনায় মাহমুদুর রহমানের প্রতিপক্ষ, তবু তাঁরা বিবৃতি দিয়েছেন নীতির প্রশ্নে, তাঁরা কলমকে কলমের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চান। কাপুরুষের মতো মাহমুদুর রহমানকে দৃশ্যপট থেকে ভিন্ন উপায়ে সরিয়ে দিয়ে বিজয়ী হতে চান না বলেই আদর্শিক অমিল থাকা সত্ত্বেও তাঁরা মাহমুদুর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। অথচ জাতির অভিভাবকতুল্য শিক্ষক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বিরোধিতা করে মাহমুদুর রহমান ও তাঁর পত্রিকার বিরুদ্ধে নেওয়া বর্তমান আইনি ব্যবস্থাকে সমর্থন করলেন। তাহলে কী ধরে নেব জাফর ইকবাল স্যার মাহমুদুর রহমানের লেখনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন? জেলবন্দি করা ছাড়া লেখনী দিয়ে বা স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় মাহমুদুর রহমানকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়? তাহলে জাফর ইকবাল স্যার আর তাঁর বিরুদ্ধে এসএমএস প্রদানকারীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তাঁর হাতে রাষ্ট্রীয় শক্তি নেই বিধায় সে স্যারের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে তাঁকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিতে চায় আর জাফর ইকবাল স্যাররা রাষ্ট্রীয় শক্তির সুযোগে লেখাকে লেখা দিয়ে মোকাবিলা না করে জেলবন্দি করে মাহমুদুর রহমানকে দৃশ্যপট থেকে বিদায় করতে চান। একই লেখায় তিনি আমার দেশ পত্রিকাকে রাজনীতিবিদদের মতো স্বাধীনতাবিরোধীদের পত্রিকা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। এই বক্তব্যটিও আমার কাছে মনে হয়েছে তাঁর প্রতিপক্ষের মতো, যাঁরা তাঁকে নাস্তিক বলেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যখন মিথ্যা, অর্ধ-সত্য ও সত্য প্রকাশে নীরবতার মাধ্যমে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া শুরু করেন তখন মিথ্যা বলা অধিকারে পরিণত হতে বেশি সময় লাগে না।

'মিথ্যা বলার অধিকার' শিরোনামে ১৬ আগস্ট দৈনিক যুগান্তরসহ আরো দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় দুটি পত্রিকার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ ও প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। জাফর ইকবাল স্যারের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এবং সাংবাদিক কর্তৃক স্যারের ভাষায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এলেও পত্রিকার নাম কিন্তু তিনি প্রকাশ করেননি। অন্যদিকে অপর পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও তাঁর পত্রিকা আমার দেশের বিরুদ্ধে সব ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমার দেশ পত্রিকায় কোনো মিথ্যা খবর প্রকাশিত হয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- জাফর ইকবাল স্যার একটি পত্রিকার নাম নিলেন না কেন? তিনি কী কোনো কিছু গোপন করলেন? বিষয়টি কী অর্ধ-সত্য প্রকাশের মতো নয়?

'অধিকার' নামক মানবাধিকার সংগঠনের প্রকাশিত রিপোর্ট মিথ্যা কি না, পুলিশ তা যাচাই করছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কোনো মামলা হলে প্রথমে তা তদন্ত করতে হয়, তদন্তে প্রচারিত তথ্যের সত্যতা পেলে তিনি ছাড়া পাবেন আর তথ্যটি মিথ্যা হলে আইনানুযায়ী আদিলুর রহমান খানের বিচার হবে এবং হওয়া উচিতও। এখন তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই জাফর ইকবাল স্যার তথ্যটিকে মিথ্যা বলে নিজেই কী কোনো মিথ্যাচারে জড়িয়ে পড়ছেন, তা কিন্তু ভেবে দেখেননি।

এভাবে দেশের বেশির ভাগ বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা যখন অর্ধ-সত্য ও সত্য প্রকাশে নীরবতার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে মিথ্যা প্রচারে উৎসাহ প্রদান করেন, মুক্তচিন্তা প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, তখন সাধারণ মানুষ মিথ্যায় গা ভাসিয়ে দেয়। তখন মিথ্যা ও অন্ধকার আমাদের গ্রাস করে নেয়। আয়নায় নিজের চেহারা দেখে আমরা সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে মিথ্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিই তাহলে একসময় মিথ্যা বলার অধিকার নয়, মিথ্যার অন্ধকার দূরীভূত হয়ে সত্যের আলো ফুটবেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.