![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে অনেকে লিখছেন,অনেকভাবে লিখছেন।কারও লেখা দলিয় পক্ষপাত দুষ্ট,কারও লেখা নিজস্ব আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত,কারও লেখা নিজের পান্ডিত্য জাহির করার উদ্দেশ্যে,কারও লেখা বিশেষ কোনো ব্যাক্তি বা পক্ষকে সন্তুষ্ট করার জন্য ইত্যাদি নানা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।তবে কিছু কিছু লেখা শুধুমাত্র দেশ ও জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে নিজের চিন্তা-চেতনা ও বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে লিখা তা লেখা পড়লেই এবং লেখকের সামাজিক অবস্থানের দন্যতা দেখলেই সচেতন পাঠক উপলব্ধি করতে পারেন। সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত কথা বলতে গেলে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো ব্যাক্তি বা কোনো পক্ষকে সমালোচনার উর্ধ্বে রেখে সত্য কথা বলা এবং দেশের পক্ষে কিছু লিখা যে সম্ভব নয় তা সবাই জানি।আর এই কঠিন কাজটি করতে গেলে কোনো পক্ষই ভালো চোখে দেখেননা এবং কত ধরণের বালা-মোসিবতের সম্মূখীন হয়ে চলতে হয়,কত পক্ষের কত ঠেলা-ধাক্কা সহ্য করতে হয়।তবু তাঁরা বলেন,তবু তাঁরা চলেন বড় কষ্ট সহ্য করে এবং সপ্ন দেখেন এজাতির কষ্ট লাঘবের সেই সুদিনের জন্য।
যাইহোক,এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।আলোচনার শুরু করবো এমন একটি কথা বলে যে কথাটি আমার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে আমি বলছি এবং যা করে আল্লাহ সকল দায়িত্ব নিয়েই বলছি।কথাটি হলো- বাংলাদেশে (পূর্ববঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্থান আমল সহ)হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী,শেরেবাংলা এ,কে,ফজলুল হক,মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের পরে শুধুমাত্র দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থ রাজনীতি কোন জাতিয় পর্যায়ের নেতা-নেত্রি করেছেন বা করছেন?আমি বলবো আমাদের হাতে তেমন কোনো প্রমান নেই।আমার সাথে যদি একমত হন তাহলে একথা প্রমানিত হলো যে,জিয়াউর রহমানই জনকল্য্যাণমুখি রাজনীতির শেষ জাতীয় নেতা।তাহলে ইতিহাসের আলোকে এই কথা স্বীকার করা উচিত নয় কি- এদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য পরাধীন বাংলাদেশে যে জনকল্যানমুখি রাজনীতি সরওয়ার্দী,শেরেবাংলা ও মৌলানা ভাসানী শুরু করেছিলেন তা ছিলো স্বাধিনতা এনে দেওয়ার লক্ষ্যে জনকল্যানমুখি রাজনীতি; যদিও তাঁরা কৌশলগত কারণে এবং নানা প্রতিকূলতা ও পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ভিন্ন ভিন্ন রণকৌশল অবলম্বন করে এগিয়ে গেছেন যেমন,কখনও রাজপথে আবার কখনও ক্ষমতায় কিন্তু লক্ষ্য ছিলো একটি এদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি।তাই তাঁরা উপযুক্ত উত্তরসূরী তৈরি করতে ভুল করেননি,তাইতো তাঁরা তিন জনেই স্বাধিনতার ক্ষেত্র প্রস্তত করে দিয়েছিলেন এবং নেতৃত্ব দেওয়ার উপযুক্ত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তৈরি করেছিলেন।তাই এদেশের জনগণকে স্বাধিনতা এনে দেওয়ার তাঁদের অসম্পূর্ণ কাজটি সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।এটি ছিলো নেতৃত্বের স্বভাবিক ধারাবাহিকতা। এর প্রমান মৌলানা ভাসানীতো স্বাধিনতার আন্দোলনে সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুও যেকোন রাজনৈতিক সঙ্কটে ছুটে যেতেন তাঁর রাজনৈতিক গুরুর কাছে।একটি কথা সবাইকে মনে রাখা উচিত, ইতিহাস নিয়ে মিত্যাচার বা বাড়াবাড়ি খুবই ক্ষণিকের।যুগ পাল্টালেই সত্য বেরিয়ে আসে তখন ইতিহাস বিকৃতিকারীর নিজের সকল অবদানই বিকৃত হয়ে যায়,অনেকটা নিজের পায়ে কূড়াল মারার মত।বঙ্গবন্ধুর স্বাধিনতার নেতৃত্বের বিকল্প কেউ ছিলেন না বা এখনও যদি আমরা পরাধীন থাকতাম তাহলে কী হতো বর্তমান নেতৃত্ব শুন্যতাই এর প্রমাণ।তবে স্বাধিনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের ও তাঁর দলের নেতা-কর্মী সহ পরিবারের লোকজনের অনেক ভুল-ভ্রান্তি,অন্যায় আচরণ ছিলো যা তাঁর সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলো অর্থাৎ নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এজাতি তাঁর কাছে চীর কৃতজ্ঞ কিন্তু রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সমালোচনা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কিছু নয়;তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্যাক্তিগত আক্রমনাত্বক এবং তাঁর স্বাধিনতার নেতৃত্বের প্রশ্নে আলতু-ফালতু কথা বলার মত বেয়াদবি মারাত্বক পরিণতি ডেকে আনতে পারে তাই এসব রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত।তাছাড়া এসব কথা-বার্তায় আদৌ কোনো রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সম্ভাবনা আছে কিনা, নাকি এসব গ্রাম্যরাজনীতি(ভিলেজ পলিটিক্স)দ্বারা প্রভাবিত ‘গিবৎ’ গাওয়া রাজনীতি তা ভেবে দেখা উচিত।
আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনের দ্বারা যে স্বাধিনতা সংগ্রামী নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়েছিলো সেই ধারার চড়ান্ত নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এদেশকে স্বাধিনতা এনে দিয়েছিলেন। সেই নেতৃত্বের পরিসমাপ্তি অকৃতজ্ঞ জাতি খুব নিষ্টুর ভাবেই ঘটিয়ে ছিলো।সেই রাজনৈতিকধারা ও নেতৃত্বের অবসান ঘটে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার মর্মান্তীক হত্যার মধ্যদিয়ে।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও হত্যাকারীদের সহযোগিতায় বা সহযোগিদের দ্বারা (হতে পারে দেশকে আরও অধিক ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য,হতে পারে কৌশলে উচ্ছৃঙ্খল আর্মি অফিসারদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধারের জন্য,হতে পারে পাকিস্থানপন্থি ধারার রাজনৈতিক চক্রান্ত,হতে পারে ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষা,হতে পারে সেনা বাহিনীর সেই খুনি অফিসারদের হাতে প্রাণ হারানোর ভয় - হতে পারে এসব কিছুর যে কোনোটি অথবা কয়েকটি কারণ, যা বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সরকার ঘটন সহ সকল রাজনৈতিক ঘটনাবলীর পিছনের কারণ;তাই এই বিষয় নিয়ে নিরপেক্ষ আলোচনা করতে হলে আরও গবেষণার ও তথ্য প্রমানের প্রয়োজন আছে) যে সরকার ঘটিত হলো এবং সেই সরকার যে রাজনৈতিক ধারার সৃষ্টি করলো তা শুরু থেকেই ইসলাম ও পা্কিস্তান ঘেষা এবং ভারত বিরোধি রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন।এতে করে সেই সময়কার রাজিনীতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে পাকিস্তানের দালাল ভাবার যেমন যথেষ্ট কারণ আছে তেমনি মোসলমান ও ইসলামের পক্ষের শক্তি হিসেবে আপন ভাবারও যুক্তিসঙ্গত ভাবমূর্তী জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে তৎকালীন রাজনীতিবিদরা সক্ষম হয়েছিলেন।অর্থাৎ তাঁরা বঙ্গবন্ধুর ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ধারার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে নতুন আরেকটি ধারার প্রবর্তন করতে পেরেছিলেন যা তাঁরা সাধারণ জনগণের কাছে ইসলামের আবরণ দিয়ে এবং শিক্ষিত সমাজের কাছে ‘বাংলাদেশি’জাতিয়তাবাদের মোড়কে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করেছিলেন।এছাড়া তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ)-র ভারত বিরোধি প্রচারণার ফসল অপরিপক্ষ রাজনীতির কারণে জাসদ নিজেদের ঘরে তুলতে না পারলেও বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সরকার দলিয় রাজনীতিকরা নিজেদের ঘরে তুলে নিতে পেরেছিলেন।আর এই কাজে তাঁরা জাসদকে বার বার নিজেদের রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন এবং আজও করছে্ন।এর সর্বোৎকৃষ্ট প্রমান কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে জাসদের ৭ই নভেম্বর,১৯৭৫সালের সিপাহী বিপ্লব,যা ছিলো ভারত বিরোধি অপপ্রচারের জাসদের আত্মঘাতী ভুল রাজনীতি।কারণ,খালেদ মোশাররফ জিয়াউর রহমান বা কোনো সেনা ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিকে হত্যা করেননি তিনি নিশ্চয়ই চেয়েছিলেন সেনা বাহিনীতে ‘চেইন ইন কমান্ড’ ফিরিয়ে আনতে;কিন্তু তাঁকে হত্যা করা হলো অবসর প্রাপ্ত অফিসার কর্ণেল তাহেরের দ্বারা সেনা বাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের সাথে জাসদের দলিয় ক্যাডারদের সম্মিলিত অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ।সুতরাং কর্ণেল তাহেরের পরিণতি এভাবেই রাজিনীতিতে স্বাভাবিক ছিলো।জিয়াউর রহমান তাঁর কোর্ট মার্শেল না করলে জাসদের তথাকথিত ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক’ বিপ্লব ঘটানোর সখ বার বার দেখা দিতো এবং বার বার রক্তপাত ঘটতো।
সত্যিকার অর্থে কর্ণেল তাহের ও তাঁর সিপাহী বিপ্লবই এদেশের মানুষকে একজন দেশ প্রেমিক,যোগ্য ও সাহসি নেতা উপহার দিয়েছিলো।আমরা আরেকটি নতুন ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করলাম এবং এজাতি আরেকজন ত্রানকর্তা জাতিয় নেতা জন্ম দিলো তিনি হলেন, জিয়াউর রহমান।তিনি পিছনের সকল রাজনৈতিক ধারাকে নিজের রাজনীতিতে ধারন করে এবং ভিন্ন ভিন্ন ধারার অভিজ্ঞ রাজনিতিবিদদের পিছনের সকল ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশি জাতিয়তাবাদি চেতনায় একমত ও একপথে সমবেত করার মত কঠিন এক রাজনীতির ঘোষণা দিলেন, বললেন- “ আমি (এদেশের) রাজনীতিকে রজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে ছাড়বো” অর্থাৎ রাজনীতি জনগনের কল্যানের জন্য করতে রাজনীতিবিদদের বাধ্য করবেন এবং করলেনও তাই।তাঁর সরকার বা দল কেউই দুর্নীতি ও দেশের স্বার্থ বিরোধি কিছু করতে সাহস পাননি।তাছাড়া,উন্নয়নের রাজনীতি এদেশে জিয়াউর রহমানই শুরু করেছিলেন।কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতি ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাছে আরেক বার এদেশের জনগণ ও ‘জনগণের জন্য রাজনীতি’ পরাজিত হলো।জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলো কিন্তু এদেশের রাজিনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য চীরদিনের জন্য কঠিন করে গেলেন অর্থাৎ তাঁর প্রবর্তিত রাজনৈতিক ধারাকে অস্বীকার করে কিংবা নিশ্চিহ্ন করে বা পাশ কেটে বিকল্প কোনো রাজনীতি সত্যি এদেশে কঠিন। (চলবে)
©somewhere in net ltd.