![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গবন্ধু ও শীর্ষ চার নেতা হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগে নেতৃত্ব শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং দল সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য জিয়াউর রহমানের ‘বহুদলিয় গণতন্ত্র’-র সুযোগ ব্যবহার করে মালেক উকিল,ডঃ কামাল হোসেন,জেনারেল আতাউল গণি উসমানির(নৌকা প্রতীক নিয়ে জোটের প্রার্থী হিসে্বে)মত প্রবীণ নেতাদের দিয়ে কখনও দলিয় প্রধান মনোনীত করে,কখনও রাষ্ট্রপতি পদে দলিয় প্রার্থী করে চেষ্টা করা হয়।কিন্তু কোনো কিছুই জিয়াউর রহমানের অপ্রতিরূদ্ধ জনপ্রিয়তার কাছে আওয়ামীলীগকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করতে পারেনি।নৌকা কান্ডারীবিহীনভাবে কোনো মতে ভেসে থাকে।জিয়াউর রহমানের শাসনামল আওয়ামীলীগের জন্য মোটেই সুখের ছিলোনা,অস্থিত্ব নিয়ে টিকে থাকার মধ্যেই আওয়ামীলীগের রাজনীতি সীমাবদ্ধ ছিলো।এভাবেই জিয়া তাঁর রাজনীতিকে আওয়ামীলীগ সহ সকল রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের জন্য ‘কঠিন’(তাঁর ভাষায় )করে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই দূঃখজনকভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়।জিয়াউর রহমান হত্যার মধ্য দিয়ে এদেশের রাজনীতিতে আরেকটি অধ্যায়ের সূচণা হয়।জিয়াউর রহমানের মৃত্যু তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয়তাবাদি দল(বিএনপি)-তেও নেতৃত্ব শূণ্যতার সৃষ্টি করলো।তাই বিএনপি-ও, আওয়ামীলীগের মত বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে দিয়ে সঙ্কট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করে,কিন্তু ফলাফল একই।দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত বা সর্বজন গ্রাহ্য নেতার অভাব প্রখট হতে থাকলো।
শুরু হলো জেনারেল হোসেন মহাম্মদ এরশাদের সামরিক ও পরবর্তিতে বেসামরিক একনায়কতান্ত্রিক শাসনামল।এরশাদের শাসনকাল এদেশের রাজনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা এই সল্প পরিসরে আলোচনা অসম্ভব,কারণ এরশাদ দীর্ঘ নয় বৎসর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন এবং এখনও এদেশের রাজনীতিকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে চলেছেন।সুতরাং,যে যাই বলুন এবং যত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করুন,কিন্তু হোসেন মুহাম্মদ এরশাদকে পাশকেটে এদেশের রাজনীতির গতীপথ নির্ধারন সম্ভব নয়।এভাবে এরশাদের শাসনামলের প্রথম দিকে আওয়ামীলীগ-বিএনপি নেতৃত্বের সংকটের ভোগান্তির কারণে একপর্যায় দুই দলই নিজ নিজ দলের শীর্ষ পদে দুই নেত্রিকে বসালেন।শুরু হলো আরেকটি অধ্যায়।
প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন(১৯৮২ সাল)সেনাপ্রধান হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করলেন।এরশাদের ক্ষমতা দখলের একটি বিশেষত্ব ছিলো তিনি কোনো রক্তপাত ঘটাননি।এরশাদের ক্ষমতা দখল জনমনে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেনি,কারণ জিয়ারউর রহমান জীবিত নেই এবং বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের কোনো জনপ্রিয়তা বা জনসম্পৃক্ততা ছিলোনা।এরশাদ অনায়াসে উপযুক্ত সময় বুঝে সামরিক আইন তুলে নিয়ে এবং উর্দি খুলে পূর্ববর্তী সামরিক শাসকদের পথ অনুসরণ করে নিজেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে বসিয়ে নিলেন।এরশাদের শাসনকাল চললো।জিয়াউর রহমানের মত এরশাদও বিভিন্ন দলের দলছুট ও কোণঠাসা অভিজ্ঞ নেতাদের ক্ষমতার লোভে ফেলে নিজের কাছে টেনে অবশেষে রাজনৈতিক দল গঠন করে (জাতিয় পার্টি)অবস্থান পাকাপুক্ত করেনিলেন।এরশাদ মুখে পূর্ববর্তী সকল সেনাপ্রধানদের দ্বারা গঠিত সরকার গুলোর মত নিজের সরকারকে গণতান্ত্রিক সরকার বললেও আসলে এরশাদের পুরো শাসন কালই ছিলো একনায়কতান্ত্রিক।তবে মফসসল এলাকায় বিশেষ করে উত্তর বঙ্গ ও সিলেটে এরশাদের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ছিলো।কিন্তু ঢাকা শহরে এরশাদের তেমন কোনো জনপ্রিয়তা ছিলোনা।এর মূল কারণ ছিলো ঢাকা শহরে রাজনৈতিক আন্দোলন ও মিছিল-মিটিং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে,কিন্তু এরশাদের দলের তেমন কোনো শক্তিশালী অঙ্গ সংগঠন বা ছাত্র সংগঠন না থাকায় বিরোধি দল গুলোর সরকার বিরোধি আন্দোলনকে মোকাবিলা করার মত প্রশাসন ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম ছিলোনা।তাই শুধুমাত্র ঢাকা শহরের আন্দোলনের মাধ্যমেই এরশাদকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে বিরোধি দল গুলো সফল হয়েছিলো।তাছাড়া,বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেত্রিত্বে উজ্জীবিত আওয়ামীলীগ এবং জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার দ্বারা ঐক্যবদ্ধ বিএনপি প্রবল শক্তিতে এরশাদ বিরোধি আন্দোলনকে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধা্রের আন্দোলনে রূপ দিতে পেরেছিলো;যদিও এরশাদের শাসনের প্রথম দিকে দুই দলের আন্দোলন তেমন কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি।সত্যকথা বলতে গেলে জামাতে ইসলামি বাংলাদেশ প্রস্থাবিত তত্বাবদায়ক সরকারের দ্বারা নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির যুগপৎ অংশগ্রহন এরশাদকে মিত্রবিহীন করে ফেলে এবং আন্দোলনের তিব্রতার মুখে বিরোধি দল গুলোর দাবি মেনে তত্বাবদায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর করতে বাধ্য হোন।তবে এরশাদের রাজনীতির একটি বিশেষ দিক হলো,এরশাদ ক্ষমতা দখল বা ক্ষমতা ত্যাগের সময় কোনো রক্তপাত ঘটাননি।শহীদ নুর হোসেন,শহীদ ডাঃ মিলনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুধু সত্য ইতিহাস বলার তাগিদে এটুকু বলা উচিত,বাংলাদেশের ক্ষমতার রদ-বদলের ইতিহাস বড় করুণ,বড়ই অযতা রক্তপাতের;কিন্ত সেই তুলনায় হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের নয় বৎসরের শাসনামল ও ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা ত্যাগের প্রকৃয়া ছিলো তুলনামূলক শান্তিপুর্ণ।
হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের নয় বৎসরের শাসন আমল এদেশ ও জাতির জন্য কী লাভ করেছে বা কী ক্ষতি করেছে সে আলোচনা বিভিন্নভাবে করা সম্ভব।কিন্তু আমি এখানে তাঁর আমলের ভালো দিক গুলো নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো, কারণ আমার লেখাটি কারো ভাবমূর্তী নষ্ট করার উদ্দেশ্যে নয় বরং, সত্য ইতিহাস তুলে ধরে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিয় ঐক্ষ্যের উদ্দেশ্যে একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠা।
এরশাদ তাঁর শাসনামলে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন,এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও যথেষ্ট কাজ করেছিলেন।কিন্তু সাধারণ মানুষকে কিছুটা আকৃষ্ট করতে পারলেও শিক্ষিত ও সচেতন জনগণের কাছে তাঁর তেমন কোনো গ্রহণযোগ্যতা গড়ে তুলতে পারেননি।জনগনের গণতন্ত্রের প্রত্যাশাকে এরশাদ কোনো কিছুতেই ভুলাতে পারেননি।তাই আওয়ামীলীগ ও বিএনপির গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জনগণ সাড়া দিয়ে এরশাদ বিরোধি আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলো।
এভাবে জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার লাভের সপ্নে বিভোর হয়ে আওয়ামীলীগ-বিএনপির পিছনে অর্থাৎ তাঁদের দুই প্রিয় নেতার উত্তরসূরী দুই নেত্রীর আঁচলের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলো।ভেবেছিলো,এই দুই নেত্রীই তাঁদের চীরকালের প্রত্যাশা সকল গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে একটি সুখি-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে দেবেন।তাই, বুকে পিঠে লিখলো, “স্বৈরাচার নিপাত যাক,গণতন্ত্র মুক্তি পাক”- মেলে দিলো বুক স্বৈরাচারের বন্দুকের সামনে!আবারও বাঙ্গালীর সন্তান (শহীদ নূর হোসেন) রাজপথে ঢেলে দিলো বুকের তাজা রক্ত!
এরশাদের সরকারের পতন হলো।আন্দোলনকারী সকল দলের সম্মতিতে প্রধান বিচারপতি শাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের লক্ষ্যে (১৯৯১ সাল)নির্বাচন অনুষ্টিত হলো।বিএনপি নির্বাচনে জয়ি হয়ে সরকার গঠন করলো।শুরু হলো বহু প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের যাত্রা।শহীদ নূর হোসেনের আত্মা খুশী হলো কিন্তু তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের সামনে রয়ে গেল কান্না ও আরও রক্তের বন্যা ! (চলবে)
©somewhere in net ltd.