নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক কথার কিছু কথা

মালেক চৌধুরী

মালেক চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের রাজনীতি ও নেতা- নেতৃত্ব প্রসঙ্গ - (চতুর্থ অংশ)

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬

তত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় অথবা অন্তরবর্তীকালীন সরকা্রের(যে নামেই বলেন) অধিনে ১৯৯১ সালে নির্বাচনে জয়ি হয়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলেন।আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ডঃ কামাল হোসেন নির্বাচন সুষ্টু হয়েছে বললেও শেখ হাসিনা সুক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ আনলেন।যদিও আওয়ামীলীগ শপথ গ্রহন করলো কিন্তু সংসদ অধিবেশন বর্জন করতে শুরু করে।কিছুদিনের মধ্যে জামাতে ইসলামি তত্বাবধায়ক পদ্ধতির জন্য সংসদে বিল উত্থাপন করে।আওয়ামীলীগ সরাসরি জামাতের সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলনে না গেলোও সমান্তরাল ভাবে একই ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে গেলো।খালেদা জিয়া বা বিএনপি রহস্যজনকভাবে তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন;যদিও নিজেরা একই পদ্ধতির অধিনে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছিলেন।তাই শুরু হলো আন্দোলনের নামে হরতাল-অবরোধ,আবারও একই দাবি অর্থাৎ ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’।সরকার মানবেনা, তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নাকি অযৌক্তিক,কারণ নিরপেক্ষ বলতে “পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নেই”(বেগম খালেদা জিয়ার ভাষায়)।বিরোধি দল সরকারকে মানতে বাধ্য করার সকল রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে আন্দোলন চালিয়ে নিলো।জনগণ মরলো!মরবেইতো,বাংলাদেশের বাঙালি মরার জন্যইতো বেঁচে থাকে,শুধু নেতা-নেত্রীরা কোন কোন অযুহাতে কখন কীভাবে মারাবেন সেই অপেক্ষার সময়কালই বাঙ্গালী মায়ের সন্তানদের জীবনকাল।

খালেদা জিয়া এরশাদ বিরোধি আন্দোলনে ‘আপোষহীন জননেত্রী’-র খেতাব (ভাবমূর্তী) অর্জন করেছিলেন,তাই তিনি তাঁর সেই ভাবমূর্তী রক্ষার জন্য কোনো ছাড় নাদিয়ে এগিয়ে গেলেন।বিরোধিদলও তাদের কর্মসূচি চালিয়ে নিলো এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করলো।এই অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচন অনুষ্টিত হলো।কিন্তু বিরোধি দলবিহীন নির্বাচন সরকারকে দেশে-বিদেশে এক ঘরি করে ফেললো।অবশেষে সকল নাটকের অবসান ঘটিয়ে খালেদা জিয়া তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে তাঁর একক সংখ্যা গরিষ্ঠ সংসদে সংবিধান সংশোধন করে বিল পাশ করে তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর করলেন।জনগণ ভাবলো, এবার আর কোনো সমস্যা রইলোনা।সকল রাজনৈতিক দল যেহেতু একমত হয়ে এবং সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েগেছে,সেহেতু গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আর রক্তপাত ঘটবেনা।এবার নেতা-নেত্রীরা আমাদের সার্বিক উন্নয়নের রাজনীতি শুরু করবেন।তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্টিত হলো;নির্বাচনের পূর্বে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা বিফল হওয়াতে গণতন্ত্র আরেকটি হোঁচুট খেয়েও রক্ষা পায়(জেনারেল মোহাম্মদ নাসিমের ঘটনা)।এই নির্বাচনে (১৯৯৬ সাল) আওয়ামীলীগ জয়ি হয়ে সরকার গঠন করে।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে প্রথম বারের মত এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বৎসর পর আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় পেয়ে আওয়ামীলীগ সমর্থক গোষ্ঠী আবেগ আপ্লোত হয়ে পড়ে,তাঁদের এই আনন্দ শুধু ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আনন্দের সাথে তুলনা করা যায়।সত্য কথা বলতে কি,আওয়ামীলীগ বিরোধিরা পর্যন্ত আওয়ামীলীগের ’৯৬-র বিজয়ে ‘সহানুভূতিশীল-আনন্দ’ প্রকাশ করেছিলো।অনেক আওয়ামীলীগ বিরোধি মানুষকে বলতে শোনাগেছে, “ঠিক আছে এতো বৎসর পর তারা ক্ষমতায় এসেছে নিশ্চয় এবার দেশের জন্য কাজ করবে”। আর জনগনের প্রত্যাশা ঐ পর্যায় উন্নিত হয়েছিলো যে,প্রতিটি মানুষ শেখ হাসিনাকে প্রধান মন্ত্রী নয়,আপন বোন ভাবতে শুরু করে।এমন ভাব জনগণের মধ্যে দেখা দেয়, “এবার আমার বোন ক্ষমতায় এসেছে,আমাদের আর কোনো অভাব-অভিযোগ থাকবেনা”।তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেও বললেন “ আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই,আপনারাই (জনগণ)আমার সব”। জনগণ তাঁকে ‘জননেত্রী’-র আসনে বসালো।শুরু হলো শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের যাত্রা।জনগণ প্রত্যাশিত কিছুই পেলোনা।যা কিছু পেলো তাঁর দল,দলীয় নেতা-কর্মিরা।তিনি সকল জনগণের জননেত্রীর ভুমিকা পালন করতে ব্যর্থ হলেন।তিনি জাতীর সকল জনগণের বোন হতে পারলেন না, তিনি শুধু তাঁর দলের নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠীত করলেন এবং শুধু তাঁর দলীয় ছটাকি-আধা ছটাকি নেতা-কর্মী ও দলীয় ক্যাডারদের ‘আপা’ বনেই রইলেন।কিন্তু একটি কাজ তিনি ভালো করলেন,বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করে জাতীকে কলঙ্ক মুক্ত করলেন।এই কাজটির জন্য জাতী তাঁকে নীরব সমর্থন দিলো এবং পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিলো।

শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকার পূর্ণ মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১ সাল) সরকার পরিচালনা করে যদিও তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন জনগণের জন্য রেখে যেতে পারেনি তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি তাঁর সরকারের দুটি উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিলো একথা অস্বীকার করার উপায় নেই।কিন্তু তাঁর সরকারের অর্জন গুলো ম্লান করে দিয়েছিলো দলিয় তথাকথিত ‘গডফাদার’-দের বাড়াবাড়ি ও নেতা-কর্মীদের অতীমাত্রায় দলবাজী,চাঁদাবাজী,টেন্ডারবাজী,হল দখল,নদি দখল,খাল দখল,চর দখল,প্রশাসনের সর্ব ক্ষেত্রে দলিয়করণ,দলপ্রীতি,স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি।কিন্তু জনগণ নীরবে সব কিছু সহ্য করে যায় এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে নীরব প্রতিবাদসরূপ বিএনপি-জামাত নেতৃত্বাদিন চারদলিয় জোটকে নির্বাচিত করে।বেগম খালেদা জিয়া জামাত সহ জোটের অন্যান্য শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন করেন।আওয়ামীলীগ জামাতকে নিয়ে সরকার গঠনকে নীতিগত ভাবে মেনে নিতে পারেনি তাই বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মধ্যে দূরত্ব ও অবিশ্বাস বাড়তে থাকে।এদিকে বিএনপি সরকারের দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি,দলবাজি,চাঁদাবাজি ইত্যাদি আওয়ামীলীগের গত আমলের মত বরং কোনো ক্ষেত্রে অধিক মাত্রায় জাতিকে আক্রান্ত করে।খালেদা জিয়ার পুত্রগন, বিশেষ করে তারেক রহমানের ‘যুবরাজ’-র মত আচরণ , বিতর্কিত ‘হাওয়া ভবন’ থেকে সরকারের সমান্তরাল সরকার পরিচালনা এবং দলের প্রবীণ নেতাদের ডিঙ্গিয়ে দলকে স্বেচ্ছাচারীতায় পরিচালনা করে এমন এক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যান যা দেশকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়।আওয়ামীলীগ বিএনপি বিভিন্ন কারণে ও বিভিন্ন ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে উপনিত হয়।এসবের সুযোগ নিয়ে বা প্রশ্রয় পেয়ে উগ্র ইসলাম পন্থি জংগী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।তাঁরা রমনার সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে,আওয়ামীলীগের জনসভায় ও সারা বাংলাদেশের ৫০০টি স্থানে একযোগে বোমা হামলা করে।দুই দলের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলে।জামাতে ইসলামি বিএনপির কাঁধে ও কমিনিষ্ট দল গুলো আওয়ামীলীগের ঘাড়ে ভর করে নিজেদের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলার জন্য এবং নিজেদের আদর্শের বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে পরিস্থিতিকে আরও মারাত্বক আকার দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায় ।দেশ জুড়ে গুপ্ত হত্যা শুরু হয়,এক দল আরেক দলের নেতা-কর্মিদের হত্যা শুরু করে।ঢাকায় সমাবেশের নামে তথাকথিত ‘লগি-বৈঠা’ ও ‘দড়ি-কাস্তে’ সমাবেশ করে সভ্য সমাজে বর্বরোচিত হত্যা কান্ড সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে।জাতির সাধারণ মানুষ সহ সর্বস্থরের জনগণ এই অবস্থা থেকে মুক্তি খোঁজে।বিভিন্ন ইশারায় ইঙ্গিতে দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হতে থাকে।অবশেষে চরম পর্যায় উপনিত হলে সেনা বাহিনী এগিয়ে আসে এবং জনগণের মৌন সমর্থনে সেনা-সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ডঃ ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় (২০০৬ সাল),ফলে জাতি রাজনৈতিক দলবাজি সৃষ্ট অরাজকতা থেকে আপাতত রক্ষা পায়।সেনা-সমর্থিত তত্বাবাধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং এর অংশ হিসেবে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রস্তুত করে ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু করে।এর এক পর্যায় ফখরুদ্দিন সরকার রাজনীতিতে সংস্কারের চেষ্টা চালায় এবং দুই দলের দুই নেত্রীকে বন্দী করে তাঁদের দলের অভ্যন্তরে সংস্কার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করে।কিন্তু কোনো ভাবে যখন এই দুই নেত্রীর নিয়ন্ত্রণ থেকে দুই দলকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছিলো না তখন তাঁদেরকে দেশের বাহিরে পাঠানো বা নেতৃত্ব থেকে সরে যেথে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়।তবু কোনো ফর্মুলাই কোনো কাজে আসেনি ।তিন বৎসর সময় চেষ্টা করে এই দুই নেত্রীর নিয়ন্ত্রন থেকে তাঁদের দলকে এবং তাঁদের প্রভাব থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে না পেরে নির্বাচনের মাধ্যমে (২০০৯ সাল) আবার তাঁদের হাতেই দেশ ও জাতিকে তুলে দিতে বাধ্য হয়ে এবং নিজেরা সমালোচিত হয়ে সেই সরকারের কেউ দেশ ছেড়ে এবং কেউ লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যেতে হয়েছে। এরই নাম বাংলাদেশ,আর এই হলো বাংলাদেশের রাজনীতি।এভাবেই দেশ চলতে থাকলো,আসলো সামনের দিলগুলো। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.