নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক এবং ফ্রিল্যান্স লেখক। আমার উভয় চোখ ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন। তাই ছোট কাল থেকেই অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। তাই পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে দেশের ১২ টি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকে লেখালিখি করি। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের উপর অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছি। বর্তমানে হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। ইতোপূর্বে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। দেশের ১৩টি দৈনিকে প্রতিবন্ধিতা, নারী ও শিশু এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রায় ৩০০ প্রবন্ধ, ফিচার এবং মতামত প্রকাশিত হয়েছে।যোগাযোগের ঠিকানা:আজমাল হোসেন মামুনসহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাপাইনবাবগঞ্জ। মোবাইল নং-০১৭০৪২৪৪০৮৯
জাতিসংঘ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ দশমিক ৬ শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও ৩ দশমিক ৯ হচ্ছে বাক প্রতিবন্ধী। এরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তুলনায় একেবারে পিছিয়ে বলা যেতে পারে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সাতটি বিদ্যালয়ে আসন রয়েছে মাত্র ২৭০ জন এবং বে-সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা খরচ ব্যয়বহুল হওয়ায় কেবল উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা সুযোগ পান।
অথচ সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুদের জন্য দেশে রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও সোশাল অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ফর দি ভলনারেবল (সার্ভ) এর যৌথ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আমাদের দেশে প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ জন শ্রবণ ও ৬২ হাজার ৪০০ বাক প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে যারা স্কুলে যাওয়ার উপযোগী। অথচ মাত্র ৪ ভাগ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। যে সব বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা শিার সুযোগ পাচ্ছে তারা উচ্চবিত্ত বা ধনাঢ্য পরিবারের। গ্রাম বা মফস্বল অঞ্চলের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা মোটেই শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।
তবে আমাদের দেশে প্রায় ২৪ লাখ গুরুতর শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী রয়েছে। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিশুদের চেয়ে জটিল। এরা কথা বলতে পারে না। কানে শুনতে পায় না। একমাত্র তাদের পরিবারই কিছুটা বুঝে তাদের ভাষা। তা আবার সম্পূর্ণ রূপে নয়। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে ‘ইশারা ভাষা (Sign language) । এই ইশারা ভাষা বা Sign language জানা লোকের সংখ্যা খুবই কম। বলা যেতে পারে বাংলাদেশে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। ফলে এরা এখনোও শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিশুদের চেয়ে বেশি বঞ্চিত। সরকারিভাবে এদের শিক্ষার ব্যাপারে তেমন গবেষণা করা হয় না। বে-সরকারী সংস্থা সমূহ তেমন জোড়ালো ভূমিকা রাখে না। এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কর্মরত সংগঠন সমূহের কার্যক্রমও তাদের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নয়। স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই বৈষম্য নীতি-চর্চার সমাধান করতে পারে নি।
ফলে সাধারণ শিক্ষায় ঠাইঁ হয়নি সিংহভাগ শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশুদের। তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ইশারা ভাষা। হিয়ারিং এইড সহায়ক উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে মৃদু শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের একুশে বই মেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে ইশারা ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ফলে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ভাষা ইন্সটিটিউটে ইশারা ভাষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও সর্বক্ষেত্রে ইশারা ভাষার ব্যবহার নেই বললেই চলে। পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়া-লেখার সুযোগ নেই ইশারাভাষায় আমাদের দেশে। গ্রামাঞ্চলের শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আজও ‘হিয়ারিং এইড’ ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন নয়। তাছাড়া ‘হিয়ারিং এইড’ দরিদ্রদের জন্য কেনা সম্ভব নয়।
শ্রবণ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিার ভার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত করা প্রয়োজন। এছাড়াও দেশব্যাপী ইশারা ভাষার প্রচলন করা, প্রতিটি শিা প্রতিষ্ঠানের শিকদের ইশারা ভাষার ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলা ও সমাজ বিষয়ক পাঠ্য গ্রন্থে ‘ইশারা ভাষা’ সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের সময় ইশারা ভাষা প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সমূহের মাধ্যমে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ইশারা ভাষায় লেকচারের ব্যবস্থা করলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী উপকৃত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশ টিভি শুধু সন্ধ্যা ৭ টার সংবাদ ইশারা ভাষায় প্রচার করছে। অথচ দেশে অনেক স্যাটেলাইট চ্যানেল সংবাদ প্রচার করে থাকে।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব সম্মেলনে গৃহীত হয় মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল্ড (এমডিজি) বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য। এটাতে আটটি টার্গেট দেয়া হয়েছে। টার্গেটসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে- ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার শতকরা ১০০ ভাগ উন্নীত করা এবং প্রাথমিক শিক্ষায় ড্রপ আউটের হার শুণ্যে নামিয়ে আনা। বিশ্বের ১৯৩ টি রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশও এই ঘোষণায় একাত্মতা প্রকাশ করে সাক্ষর করে। সেখানেও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কথা উল্লেখ নেই। আর কয়েকমাস পর এমডিজি’র মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশের মাত্র ৪% সকল ধরনের প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে লেখা-পড়ার সুযোগ পাচ্ছে বলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা জরিপে পাওয়া যায়। বিষয়টির প্রতি বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি আশা করছি।
লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
সহকারী শিক্ষক, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
মোবাইল নং-০১৭০৪২৪৪০৮৯।
২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩২
অাজমাল েহােসন মামুন বলেছেন: বালক বন্ধু, আমি এক সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করতাম একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায়। এছাড়া আমি নিজেও একজন ক্ষীণ দৃষ্টিজনিত মারাত্মক সমস্যায় ভুগছি জন্মগতভাবে। আমি প্র্যাথলজিকাল মাইওপিয়া'য় ও ডিজেনারেটিং এর সমস্যায় ভুগছি। সে জন্য আমি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওপর লেখালেখি করে থাকি।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৩১
বালক বন্ধু বলেছেন: চমৎকার লিখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে ব্লগে খুব বেশী লিখা আসে না বা এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করতে খুব বেশী লিখ দেখা যায় না।
আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি লিখা সবার সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শুধু শিক্ষা নয়, অনেক কিছুই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করতে হবে। নাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টা কল্যাণের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে!
খুব জানতে ইচ্ছে করছে। আপনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে কি ভাবে সম্পৃক্ত?