পৃথিবী - আজ আমার ছেলে প্রথম স্কুলে যাচ্ছে।

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১৫

হে পৃথিবী, আমার সন্তানের হাতধর, সে আজ তার স্কুলের পাঠ শুরু করল। কিছুদিন তার কাছে সবই নতুন বিম্ময়কর মনে হবে, এবং আমার আশা

তুমি তার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করবে। দেশ এ পর্যন্ত সে কাটিয়েছে এই বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই, মুরগীর ঘর গুলিতে ছিল তার আধিপত্য, বাড়ির পিছনে বাগানের সে ছিল মালিক। তার ক্ষতে ঔষুধ লাগাতে আমি সব সময়েই কাছাকাছি ছিলাম, এবং যখন সে মনে আঘাত পেয়েছে, আমি তাকে সাত্বনা দিয়েছি।



কিন্তু এখন অবস্থা অন্য রকম হবে। আজ সকালেই বাড়ির সামনের সিঁটি দিয়ে নেমে গিয়ে পিছন ফিরে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়বে, তারপর শুরু হবে সেই মহৎ অভিযান, যা তাকে নিয়ে যাবে আনেক যুদ্ধ, বিচ্ছেদ এবং দু:খের মধ্যে দিয়ে।



পৃথিবী বাঁচকে হলে বিশ্বাস , ভালবাসা ও সাহসের প্রয়োজন। সুতরাং হে পৃথিবী, আমার বাসনা তুমি তার তরুণ হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে চল, এবং জীবনে যা শেখার প্রয়োজন তা শিখিয়ে দাও-কিন্তু যদি পার সহ্রদয়তার সঙ্গে শিখিয়ে দিও। আমি জানি, ওকে জানতে হবে যে সব মানুষই ন্যায়পরায়ন নয়, সব নারী পুরুষই সৎ নয়, তাকে শিখিয়ে দিও যে সংসারে দুর্বৃত্ত যেমন আছে তেমনি বিরাচিত গুনাবলীর মানুষও আছে, শত্রু যেমন আছে, তেমনি মিত্রও আছে। প্রথম দিকেই তাকে শিখিয়ে দিও যে উৎপীড়নকারীরা সহজেই পদানত হয়।



বইয়ের পাতায় যে অত্যাশ্বর্য ভান্ডার আছে তা ওকে চিনিয়ে দিও। ওকে কিছু নির্জনতা দিও, যখন ও আকাশে পাখির ওড়া, সূর্যের আলোয় মৌমাছিদের ঘোরাফেরা কিংবা সবুজ পাহাড়ে ফুলের সমারোহ দেখে ভাবতে পারবে। ওকে শিখিয়ো , অসৎ উপায় অবলম্বন করার থেকে অসফল হওয়া অনেক সম্মান জনক। ওকে শিক্ষা দিও, যদি অন্য সকলে বলে যে ওর ধারণাগুলি ভুল তবুও যেন ও নিজের বিশ্বাস অটল থাকে।আমার ছেলেকে শক্তি দিও, অন্য সকলে যখন ঠেলাঠেলি করে কোনও প্রত্যাশায় গাড়িতে ওঠে, তখন ও যেন জনতাকে অনুসরণ না করে। শিক্ষা দিও যেন অন্যের কথা শোনে, কিন্তু যা শোনে তা যেন সত্যের ছাঁকুনিতে ছেঁকে নিয়ে যে সার টুকু থাকে তাই গ্রহন করে।



শিক্ষা দিও, কখনও নিজের হ্রদয় ও আত্মকে বিক্রয়যোগ্য না করে। শিক্ষা দিও যেন উচ্ছৃঙ্খল জনতার চিৎকার কান না দিয়ে নিজে যা সঠিক মনে করে তার জন্য লড়াই করতে পারে।



সহ্রদয়ভাবে শিক্ষা দিও, পৃথিবী, কিন্তু অধিক প্রশ্রয় দিও না, কারণ আগুনের মধ্য দিয়ে গেলেই উত্তম ইস্পাত তৈরি হয়।



এটি খুবই দীর্ঘ প্রত্যাশা, কিন্তু দেখো কতটা করা যায়। ও এত ভাল ছেলে।

আব্রাহাম লিঙ্কন।

০ টি +০/-০