নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরব্য উপন্যাসের সেই মরুচারী যে সত্যান্বেষণে জীবন উৎসর্গ করে। সেই উপন্যাসের চরিত্র নিজের ভিতরে লালন পালন ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই পথচলা।

মামুন রেজওয়ান

মামুন রেজওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"উনার সাথে কিছু সময় / ক্ষনিকের_ডায়েরী_২৩"

২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০০

আমার অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে বাইরে যাওয়া হয় খুব কম। বাইরে নির্মল বাতাসে দুইজন পাশাপাশি হেঁটে বেড়ানোর তেমন একটা পরিবেশ পাইনা। তারপরেও উনার বাসায় গেলে চেষ্টা করি একটা বিকাল উনাকে নিয়ে বাইরে বের হতে। এখানেও একটা সমস্যা হয়। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খুব সামান্য সময় পাওয়া যায়। আসরের নামাজ পড়ে বের হতে হতে গন্তব্যস্থলে গিয়ে দেখা যায় মাগরিব হয়ে যায়। একবার এরকম হল আসরের নামাজ পড়ে বেরিয়েছি অটো থেকে নেমে একটু হাঁটাহাঁটি করতেই মাগরিবের আজান দিয়ে দিল। আমি বাজারের মসজিদে ঢুকে গেলাম, মসজিদে মহিলাদের আলাদা নামাজের ব্যবস্থা না থাকায় উনাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হল। আমি অবশ্য দোকানের একটা টুলে উনাকে বসিয়ে রেখেছিলাম।

যাইহোক বাইরে যাওয়া বলতে এখন দুইজন ফাঁকা পাঁকা রাস্তায় হাঁটা আর হোটেলে গিয়ে আমার একটা লাচ্ছি খাওয়া। দুইটা লাচ্ছি অর্ডার করা হয় কিন্তু আমাকে খেতে হয় দেঢ় গ্লাস। মানে আমারটাসহ উনারটার অর্ধেক। উনাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, বাইরে গেলে আমার ভাজাপোড়া হাবিজাবি খেতে খুব ইচ্ছা করে কিন্তু উনার মুখ খোলার উপায় না থাকায় খেতে পারেননা ফলশ্রুতিতে আমারও কিছু খাওয়া হয়না। একবার আমাদের বাড়িতে চটপটির ভ্যান দেখে খুব খেতে ইচ্ছা করল। জায়গাটা সুন্দর নদীর পাশে। আমি উনাকে আমার পাশে বসিয়ে এক প্লেট চটপটির অর্ডার করলাম। চটপটিটা খুব মজাদার ছিল। উনাকে বললাম নদীর দিকে ফিরে এক চামচ খেতে। অনেক বলার পরেও উনাকে খাওয়াতে পারলাম না।

একবার উনাকে নিয়ে একটা ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকেছি, মুলত লাচ্ছি খাব। লাচ্ছিটা খাওয়া হয় উনাকে সাথে নিয়ে কারন নিকাবের নিচ দিয়ে স্ট্র দিয়ে উনার পক্ষ্যে এটা খাওয়া সম্ভব হয়, যদিও অর্ধেকের বেশী খান না উনি। তো সেখানে যাওয়ার পর মেন্যু কার্ডে চিকেন উইংস ফ্রাই খুব পছন্দ হোল আমার। অর্ডার দিলাম। এই ফাঁকে উনি চেক করে নিয়েছেন ক্যামেরা কোনদিকে আছে। ক্যামেরার বিপরীতে উনি বসলেন আর আমি উনার মুখোমুখি ক্যামেরার দিকে মুখ করে বসেছি। খাবার চলে আসল সেই মুহূর্তে। মোট চার পিস উইংস। আমি উনাকে বললাম দুই পিস খেতে হবে। সমস্যা হচ্ছে কিভাবে নিকাব না খুলে খাওয়া যায় সেটা উনি বুঝতে পারছেন না। অগত্যা আমি আমার সিট ছেড়ে উনার পাশে গিয়ে বসলাম। উনি দেওয়ালের দিকে ফিরে বসলেন। আমি ছোট ছোট টুকরা করে দিচ্ছি চিকেন আর উনি সামনের নিকাবটা একটু উঁচু করে ধরে চিকেনের টুকরা মুখে পুরেই আবার নিকাব নামিয়ে ফেলছেন।

ফাস্ট ফুডের দোকানটা থেকে বের হবার সময়। ওয়েটার খুব নিচু স্বরে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল। আসলে আমাদের স্পেস খুব কমতো তাই আলাদা করে কোন কেবিনের ব্যবস্থা এখানে করতে পারিনি। ইন-শা-আল্লাহ স্পেস বাড়াতে পারলে পর্দার বিঘ্নতা যাতে না ঘটে সেরকম ব্যবস্থা করব।

আমি ১৪শত বছর আগে চলে গেলাম। তখন মানুষ মুসলিমদের দেখে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করত। মানুষের ব্যবহার, আচরন তাদেরকে মুগ্ধ করত। মুসলিম ব্যবসায়ীরা নিজের বিক্রি ভাল হলে কাস্টোমারকে পাশের বিধর্মীদের দোকানে পাঠিয়ে দিতেন যাতে পাশের দোকানদারটার পরিবারকে না খেয়ে থাকতে না হয়। আমার গা থেকে যদি ইসলামের গন্ধ বের না হয় তবে আমি কিসের ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। আমার হাঁটা চলা থেকে যদি ইসলাম ঠিকরে বের না হয় আমি কিসের ইসলাম পালন করছি। আমার কথায় যদি ইসলামের সুবাস না থাকে তবে আমি কার ইসলাম পালন নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছি? নিজের উপর বিশাল বিশাল প্রশ্নের বোঝা।

#ক্ষনিকের_ডায়েরী_২৩

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা। বাস্তব লেখা।

আমি বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। বোরকা পরা নারীদের খেতে কষ্ট হয়। মুখের সামনে থাকে আবার কাপড়। কাপড় সরিয়ে, সবার চোখ আড়াল করে খেতে হয়।

কেন এভাবে খেতে হবে? একটা মানুষ কি আরাম করে খেতে পারবে না? ধর্ম কি একজন নারীকে আরাম করে খেতে দিবে না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.