নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Be real, be yourself, be unique, be true, be honest, be humble, be happy”

নিক্সন

“মানুষকে ভালবাসার মধ্যে নিহিত আছে পরম তৃপ্তী”

নিক্সন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আইনে ‘মৃত্যুদণ্ড’ লিখলেই সমস্যার সমাধান

১৩ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০১

[link|https://www.prothomalo.com/opinion/আইনে-

‘মৃত্যুদণ্ড’ দিয়ে যদি অপরাধ থামানো যেত তাহলে কি এতো আপরাধ হতো?
আইনে ‘মৃত্যুদণ্ড’ লিখলেই সমস্যার সমাধান
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৬ এবং ২০১৯ এই তিন বছরের ব্যবধানে ধর্ষণের বিচারে গতি আনতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন। বর্তমান সরকারের আমলে সুপ্রিম কোর্ট, পুলিশ এবং সরকারি প্রসিকিউশন ধর্ষণ দমনে কীভাবে বাস্তবে কাজ করেন, সেটি এতে ফুটে উঠেছে। ২০১৬ সালে মিলাদ হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার না হওয়া এবং সে কারণে কোনো জবাবদিহি না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে সংশ্লিষ্টরা একদমই কর্ণপাত করছেন না।

হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৯ সালে রাহেল ওরফে রায়হান বনাম রাষ্ট্র মামলায় এসেও বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে দেশের বিভিন্ন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ধর্ষণ এবং ধর্ষণ–পরবর্তী হত্যা সম্পর্কিত মামলা বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ।’ যার মধ্যে চার–পাঁচ বছরের পুরোনো মামলার সংখ্যাও ‘নেহাত কম নয়’। এসব মামলার অভিযোগ গঠনে বিলম্ব এবং ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী উপস্থিত না হওয়া, বিরামহীনভাবে শুনানি না করা, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দুই থেকে পাঁচ মাস পরপর তারিখ নির্ধারণে হাইকোর্টের উদ্বেগ প্রকাশ পায়।

আইনের বিধান হলো, ১৮০ দিনে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষ করতে ব্যর্থ হলে বিচারক, পুলিশ ও প্রসিকিউটর যথাক্রমে সুপ্রিম কোর্ট, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা (পুলিশ ও প্রসিকিউটরের ব্যাখ্যার অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া বাধ্যতামূলক) করবেন। সংশ্লিষ্টরা ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু হাইকোর্ট দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেন, দু-একটা বিরল ব্যতিক্রম বাদে এই বিধানের আদৌ কোনো কার্যকরতা নেই বাস্তবে।


হাইকোর্ট বিভাগ এরপর বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ ও ধর্ষণ–পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করাই এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এখানে আমরা দেখব যে হাইকোর্ট বলেননি এবং সমাজের সুচিন্তিত মত এটা নয় যে মৃত্যুদণ্ড না থাকাই ধর্ষণ বাড়ার কারণ। বরং হাইকোর্ট ২০১৬ সালে ও ২০১৯ সালে নির্দিষ্টভাবে দুটি কমিটি গঠনের উপায় বাতলে দেন। একটির দায়িত্ব ছিল সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের। অন্যটি জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

আমাদের জানামতে, কেউ দায়িত্ব পালন করেননি। ২০১৬ সালের আদেশ ছিল, হাইকোর্ট রেজিস্ট্রার এবং আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার দুজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। তাঁরা ১৮০ দিনে বিচার না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে নিয়মিত রিপোর্ট দেবেন। এই কমিটি হয়নি।

২০১৯ সালে তাঁরা সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তায় প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও প্রসিকিউশনের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের আদেশ দেন। কমিটিকে প্রতি মাসে রিপোর্ট দিতে বলেন। সমন জারির পরও সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তারদের দরকারে বেতন বন্ধের সুপারিশও তাঁরা করেছিলেন।

হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ডিসেম্বরেই বলছেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো যে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলার আসামিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়া ও দুর্দান্ত। তারা বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল অবলম্বন, ক্ষেত্রবিশেষে সামাজিক বিচার করে ভিকটিম পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য এবং আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে চাপ দিয়ে থাকে। তাই হাইকোর্ট বলেন, আমাদের সুচিন্তিত অভিমত এই যে অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন তৈরি হোক। সেই আইন কেউ দিচ্ছে না।


এখন সরকার একটি নতুন আইনের পথে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সেখানে ‘মৃত্যুদণ্ড’ বিষয়টি থাকবে। সংবাদমাধ্যমে এর বড় শিরোনাম হবে। অনেকেই আশা করবেন এতে অপরাধীরা বেশি ভয় পাবে। কিন্তু বিশ্বের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিলে আমরা দেখব এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ধর্ষণ ঠেকানোর কথা ভাবেনি। ভেবেছে, উত্তর কোরিয়া, ইরান, মিসরের মতো অল্প কিছু দেশ। ভারত সম্প্রতি শিশু ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ড এনেছে। অনেকে অবশ্য বলবেন, এর একটি ধর্মাশ্রয়ী সাংস্কৃতিক অভিঘাতও আছে। শরিয়া আইনের একটি শর্ত কাগজে–কলমে আসাটাকেও একটা ‘অগ্রগতি’ হিসেবে দেখবেন অনেকে।

কিন্তু একজন ধর্ষক যখন এই জঘন্য কাজ করে, তখন কি তার মাথায় এটা থাকে যে এই কাজের জন্য তার মৃত্যুদণ্ড হবে না, হবে বড়জোর যাবজ্জীবন, তাই নো চিন্তা। তাই তারা ধর্ষণ করে। এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ধর্ষকেরা যদি জানত তাদের মৃত্যুদণ্ড হবে, যাবজ্জীবন নয়, তাহলে তারা অপরাধ করত না? বর্তমান বাস্তবতায় ১৮০ দিনে জাতি ধর্ষকদের যাবজ্জীবন দেখে না, শাস্তি ফাঁসি হলে কি তা দেখবে?

ধর্ষণের মাধ্যমে হত্যার ঘটনায় ১৯৯৫ সালে বিএনপি বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছিল। সেটা কি অপরাধ ঠেকিয়েছিল? ওই আইন পাঁচ বছর টিকেছিল। ২০১৫ সালে শুকুর আলীর মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড অসাংবিধানিক। কারণ তা বিচারকের স্বাধীনতাকে হরণ করে। আশা করি সংসদ এটা মনে রাখবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে অপরাধবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কী দেখেছেন। তাঁরা দেখেছেন, যারা ধর্ষণ করে তারা সাধারণত ভিকটিমের জানাশোনা বা পূর্বপরিচিত থাকে। এবং তারা পরস্পরকে চিনে ফেলে। এখন যদি ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ড করা হয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বরং এটা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে কি না, সেটা বিবেচ্য। কারণ সমীক্ষা বলছে, যদি অপরাধী এটা বিবেচনায় নেয় যে মেয়েটি সাক্ষী হয়ে গেল এবং সে মুখ খুলতে পারে, তখন তাকে মেরে ফেলবে।


গবেষকেরা আরও দেখেছেন, হত্যা নয়, ধর্ষণ সিরিয়াল অপরাধ। খুনের পর অপরাধীর চূড়ান্ত জিঘাংসা চরিতার্থ হয়। ধর্ষণে সেটা ঘটে না। তাই বিশ্বে সিরিয়াল সেক্স অফেন্ডারের সংখ্যা বেশি। একজন সিরিয়াল অপরাধীর মনস্তত্ত্ব হচ্ছে সে বিষয়টিকে ধর্ষণ মনে করে না। সে ভাবে যে কার্যত মেয়েটির সম্মতিতেই সে ধর্ষণ করেছে। মেয়েরা মুখে না বলে থাকে মাত্র। এ কারণে উন্নত বিশ্বে যৌন অপরাধীদের ডেটাবেইস থাকে। তারা সাজার পরে খালাস পেলেও পুলিশ এলাকাবাসীকে তার বিষয়ে সজাগ রাখে।

মন্ত্রিসভা যে সংশোধন আনছে, তা আনা ছাড়া তাদের পক্ষে দ্রুত সম্ভবত আর কিছুই করে দেখানো সম্ভব নয়। কিংবা করার সক্ষমতা নেই। এরপরও যখন অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে, তখন তারা কী বলবে?

তবে বড় প্রশ্ন, আমরা নারীর নিরাপত্তার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি কি না, পারব কি না, পারতে চাই কি না? যেসব ক্ষেত্রে ‘মৃত্যুদণ্ড’ রয়েছে, সেই সব অপরাধ হচ্ছে কেন? কেউ কি যুক্তি দিয়ে বলবেন, মৃত্যুদণ্ড নেই বলেই ধর্ষণ বেড়ে গেছে? বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোনো শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটলে মৃত্যুদণ্ড, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি নষ্ট বা মুখমণ্ডল, স্তন বা যৌনাঙ্গ বিকৃত বা নষ্ট করা হলে মৃত্যুদণ্ড। পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য, মুক্তিপণ বা পাচার করলে মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ বা ওই ধর্ষণ–পরবর্তী অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে অভিযুক্ত প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। এটা প্রমাণিত যে এই মৃত্যুদণ্ডগুলো অপরাধ কমাতে পারেনি। দলবদ্ধ ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড আমরা স্মরণ করতে পারি না। ধর্ষণের দায়ে ‘মৃত্যুদণ্ড’ শব্দটি আইনে নেই। এটা লিখলেই ষোলো কলা পূর্ণতা পাবে?

মিজানুর রহমান খান : প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.