![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি - আড্ডাবাজি করতে, গান শুনতে, উপন্যাস-কবিতা। ফুল ভালবাসি পাখি ভালবাসি, আকাশ ভালবাসি, গ্রাম ভালবাসি। ভালবাসি মাটি, মানুষ, দেশ। যতটা আড্ডাবাজি পছন্দ ঠিক ততটা একা থাকতে ভালবাসি। বিশ্বাস করি- আল্লাহ পাকে, স্বাধীনতায়, ভালবাসায় ও সততায়। পছন্দ করি- ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলতে। টুইন্টি নাইন আমার অনেক প্রিয় একটা খেলা। হুমায়ূন আহমেদ, সমরেশ মজুদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হেলাল হাফিজ, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, নির্মলেন্দু গুন, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎ চন্দ্র, মহাদেব সাহ আমার প্রিয় লেখক ও কবি। এনাদের আমার ঘরের মানুষ বলেই মনে হয়! প্রিয় গায়ক বা গায়িকা বলে আমার কেউ নাই। যার গায়িকি ভাল লাগে তার ভক্ত হয়ে যাই। প্রিয় খাবার বলে কিছুই নাই। ক্ষুধা পেলে সবই অমৃত! প্রিয় রং বলে কিছু নাই ,সব রঙ্গের একটা আলাদা সৌন্দর্য আমার চোখে ধরা দেয়। সহ্য করতে পারিনা- মিথ্যা কথা, অন্যায়, প্রিয়জনের অবহেলা আর বাঁকা কথা ও নোংরামি। মানুষ হিসেবে খুব জেদী, ভীষন অভিমানি, বদরাগী। কষ্ট দেয়- শিশুদের কান্না, ধর্ষিতার আহাজারি, অসহায়ের আদ্র চোখ। কম বুঝি- রাজনীতি, সামাজিকতা ও আধুনিকতা। অক্ষমতা- অভিনয় করতে পারি না। স্ট্রেইট কাট চলি ও বলি। ভয় করি- আল্লাহকে এবং ভালবাসার মানুষগুলোর নীরবতা। নেশা- লেখালেখি করা, সিগারেট ও চা। এক কথায় বলতে গেলে আমি স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ। আমার স্বাধীনতার সঙ্গা হলো- অন্যের ক্ষতি না করে নিজে ভাল থাকার নাম স্বাধীনতা। অন্যের প্রতি অহেতুক কৌতুহল আমার নেই। কেউ অযথা তা আমার প্রতি দেখালে ভাল লাগে না তবে প্রিয় মানুষ ছাড়া। অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করা আমা কাছে সবচেয়ে বড় নোংরামি মনে হয়।
আমি এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক টিকিটে দুজন রেল ভ্রমন করছি। সময়ের কান্ডজ্ঞান ভোলা ভুল ট্রেনটা চলছে নিজের ইচ্ছে মতন। কখনো গতির ঝড় তুলছে আবার কখনো অযথা দাঁডিয়ে দম নিচ্ছে।
আমার এসব নিয়ে কোন যন্ত্রনা হচ্ছে না। কারন আজ আমি আর সুনীল'দা এক টিকিটে দুজন রেল ভ্রমন করছি। ভদ্রলোক তার প্রেমের গল্পে আমাকে বেশ মাতিয়ে রেখেছেন।
কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিষয়টি আষাঢ়ে গল্প! হয়ত বিষয়টি অনেকের কাছে সেরকম কিন্তু আমার কাছে নয়। আমার কাছে মনে হয়, একজন লেখকের বই হাতে রাখা আর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলায় কোন পার্থক্য নেই। সেই অর্থে আজ আমার ভ্রমন সঙ্গী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
আমি সুনীল দা'র "প্রেমের গল্প" নামের উপন্যাসে ডুবে আছি। হঠাৎ ঝড়ের মত ছুটে চলা ট্রেনটা থেমে গেল যদিও তার এখানে থামবার কথা নয়। লোকমুখে শুনলাম, এবারের থামাটা ভদ্রতা করেই থামা। অপর প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ধুমকেতু গতির ট্রেনটাকে সমিহ দেখিয়ে চলে যাবার সুবন্দোবস্ত করে দিতেই থেমেছে আমাদের ট্রেনটা। সরল বাক্যে যাকে বলে ক্রসিং।
ইতিমধ্যে আমার রক্তে নিকোটিনের অভাব পড়েছে খুব। একটি সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে তার ঘাটতি পূরন করতে হবে। কিন্তু সুনীল দা এমন করে গল্প ফেঁদেছেন এই মুহুর্তে তাকে থামিয়ে দিলে বেশ অন্যায় হবে আমার। তাই সুনীল'দাকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম।
সিগারেট ধরাতে গিয়ে চোখ আটকালো আকাশে। বেলা গড়িয়ে শেষ বেলায় গিয়ে ঠেকেছে। বিদায় বেলায় বোধয় সবার চোখেই জল আসে এমন কি তেজী সূর্যটারও। কেমন কেঁদে কেঁদে লাল করে ফেলেছে ওর চোখ।
যা হোক, আমি সিগারেট জ্বালিয়ে আবার পড়ায় মন দিলাম। পৃথিবীর কোন কিছুই আমাকে টানছে না এমন কি ঐ আকাশটাও। এ সময় হয়ত আমি আমার প্রানের মানুষটার ডাকও উপেক্ষা করতে পারবো!
আমার মনে হচ্ছে, আজ ট্রেনে যাত্রীর চেয়ে হকারের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশের ট্রেন যে এত বড় বাহারি বাজার হয়ে উঠেছে আমার জানা ছিল না। মাছ-গোস্ত ছাড়া ট্রেনে বোধয় সবই পাওয়া যায়! অনেক ঘুতঘুতির মাঝেও আমি সুনীলদার গল্প শুনছি! আশ্চর্য! আমার এতটুকু বিরক্ত হচ্ছে না।
হঠাৎ দশ কিংবা বারো বছরের একটি মেয়ে আমাকে বলল, কি পড়েন? আমি শুনেও না শোনার ভান করলাম। মেয়েটি এবার বেশ সুন্দর করে বলল, বাব্বা! প্রেমের গল্প! সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়! আমি এ কথা শুনে মেয়েটির দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকালাম। মেয়েটির এক হাতে একটি মাত্র পানির বোতল। আমি তাকাতেই মেয়েটি বলল, স্যার পানি লাগবে?
মেয়েটির চোখ আদ্র। অবহেলার অযত্নে বেড়ে উঠেছে চুলগুলো। মনে হয় ঐ চুলে হাত রাখলে সেচা পুকুরের মত নরম কাদা হাতে উঠে আসব। আমি পরম যত্নে ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, কি নাম তোর? মেয়েটি হেসে বলল, জরিফা। আমার পানির তৃষ্ণা নেই। সুনীল'দা এতক্ষনে আমার সব তৃষ্ণা প্রেমে পরিনত করে দিয়েছেন। আমি বললাম, পানির দাম কত? মেয়ে মৃদু হেসে বলল, বিশ টাকা। আমি মানি ব্যাগ বের করতে করতে বললাম, পড়াশুনা করিস, সোনা! মেয়েটি ছোট্ট করে উত্তর দিল, হুম।
হঠাৎ আমার মনে হল, আমার এই মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো উচিত। অনেকক্ষন হয়ত নয় কিন্তু কিছুটা সময়ের জন্য হলেও। আমি জরিফাকে বললাম, জরিফা আমার এত ছোট পানিতে হবে না। আমাকে একটা বড় পানির বোতল এনে দিতে পারবি? জরিফা হেসে বলল, অবশ্যই পারবো, স্যার!। আমি ইষৎ হেসে ওকে পাঁচ শত টাকার নোট দিয়ে বললাম, যা একটা বড় পানির বোতল নিয়ে আয়। জরিফা টাকা নিয়ে ছুটে গেল।
আমি ইতিমধ্যে দেখে ফেলেছি, ধুমকেতু গতিতে অপর প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে ট্রেন। আমি জানি ছোট্ট এই স্টেশনে মেয়েটি পাঁচ শত টাকার নোট ভেঙ্গে এক লিটার পানির বোতল কিনতে পারবে না। আমি দেখছি, জরিফা এ দোকান থেকে ও দোকান ছুটাছুটি করছে।
ইতিমধ্যে ট্রেন ঢুকে পড়েছে স্টেশনে! জরিফা একটি পানির বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে দোকান থেকে সে পানি কিনেছে সেই দোকানদার হন্তদন্ত হয়ে টাকা ভাঙ্গানোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
ইতিমধ্যে আমাদের ট্রেন ভেঁপু বাজিয়ে চলতে শুরু করেছে। জরিফার চোখে স্পষ্ট তাড়াহুড়া! তার পুরো শরীরে চঞ্চলতা দৌড় ঝাপ দিচ্ছে। আমি কোমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে।
ট্রেনের গতি বাড়ছে। জরিফা টাকা আর পানি নিয়ে ছুটে আসছে আমার দিকে। ট্রেনের গতি বাড়ছে, জরিফারও গতি বাড়ছে। ছোট্ট শরির পেরে উঠছে না এত বড় দানব যন্ত্রটার সাথে। তবুও প্রান পনে ছুটে আসছে জরিফা। খুব কাছাকাছি এসে জরিফা বলল, স্যার, হাত বাড়ান। আমি এবার চিৎকার করে বললাম, জরিফা ওটা তোর জন্য, মন দিয়ে পড়িস!
মেয়েটা হঠাৎ থেমে গেল। খুব হাপাচ্ছে ওর ছোট্ট বুকটা! আমি ইষৎ হাসলাম। জরিফাও হাসছে। কি নির্মল সে হাসি! আমার হাসি গাঢ় হলো। জরিফাও হাসছে সাথে হাসছে ওর আদ্র চোখ! জানি না, আমি জানি না কার হাসিতে এখন ইশ্বর বসে হাসছেন!
©somewhere in net ltd.